বাংলাদেশ
উত্তপ্ত সংসদ : বেনজীরের চার ফ্ল্যাট দুদকের হেফাজতে
Published
3 months agoon
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজি) বেনজীর আহমেদের পরিবারের মালিকানাধীন গুলশানের চারটি ফ্ল্যাট রক্ষণাবেক্ষণ ও দেখভালে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) দায়িত্ব দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুরে তাঁদের যেসব কৃষিজমি রয়েছে, সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলা দুটির কৃষি কর্মকর্তাদের। একই সঙ্গে বেনজীর আহমেদের পরিবারের মৎস্য ও প্রাণীর খামার দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলার প্রাণিসম্পদবিষয়ক কর্মকর্তাকে।
আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুর জেলার কৃষি কর্মকর্তা ও প্রাণিসম্পদবিষয়ক কর্মকর্তাদের সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য দুই জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এর বাইরে কক্সবাজারের জমি দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসককে। বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের এসব সম্পদ থেকে যে আয় হবে, তা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হবে।
বেনজীরকাণ্ডে উত্তপ্ত সংসদ: এদিকে বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়ে বিচার করবার দাবি উঠেছে জাতীয় সংসদে। কারা কারা বিদেশে টাকা পাচার করেছেন, বাড়ি করেছেন, পানামা পেপারসে কাদের নাম এসেছে, সেসব সংসদে প্রকাশ করারও দাবি জানানো হয়েছে। ৫ জুলাই, বুধবার জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে তিনজন সংসদ সদস্য এসব দাবি জানান। বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, বেনজীরের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে আরও যারা বেনজীর আছেন, তারা আশকারা পাবেন। বেনজীর আহমেদের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সম্পাদকীয় পড়ে শুনিয়ে তিনি বলেন, ‘আসলেই কি বিচিত্র!’
দেশের বিভিন্ন জায়গায় বেনজীরের বিপুল সম্পদের তথ্য তুলে ধরে জাতীয় পার্টির মহাসচিব চুন্নু বলেন, ‘বেনজীর যখন র্যাবের ডিজি ও ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার ছিলেন, তখন হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেককে ভয় দেখিয়ে জমি কিনেছেন। কয়েকদিন আগে ৮০ কোটি টাকা ব্যাংক থেকে তুলে বিদেশে চলে গেলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বেনজীর আহমেদ বিদেশে চলে গেছেন কি না, তিনি জানেন না। তিনি জানবেন না কেন? সারা দেশে আলোচিত এই ব্যক্তি ইমিগ্রেশন পার হয়েছেন, ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তা সরকারকে জানায়নি, তাহলে সব কর্মচারীকে বরখাস্ত করা উচিত।‘
তিনি আরও বলেন, ‘বিরোধী দলের কোনো নেতা যখন চিকিৎসার জন্য বিদেশে যান, তখন বিমানবন্দরে তাদের অন্তত দুই ঘণ্টা আটকে রাখা হয়।‘ বিরোধীদলীয় এই চিফ হুইপ বলেন, ‘সরকারের দায় নেই বললে মানুষ তা মানবে না। কারণ, এ সরকারের আমলে বেনজীর আহমেদের পদোন্নতি, পোস্টিং হয়েছে। এ সরকারের আমলে দুর্নীতি করে তিনি এসব সম্পদ গড়েছেন।‘ স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘বেনজীর, আজিজ, আনোয়ারুল আজিমের ঘটনায় আমি নিজেও নির্বিকার।‘ লতিফ সিদ্দিকীর পর বক্তব্য দিতে দাঁড়ান সরকারি দলের সদস্য তারানা হালিম। তিনি বলেন, ‘যার (বেনজীর) কথা বলা হলো এতক্ষণ, তার মন খারাপ হলে ১০টা বাড়ি কিনতেন। আমাদের মন খারাপ হলে আমরা বড়জোর দু-একটা শাড়ি কিনতে পারি। তারানা হালিম বলেন, যানবাহনে সিন্ডিকেট, রাস্তাঘাটে সিন্ডিকেট, বাজার নিয়ন্ত্রণে আসছে না। ওমুক খানে সিন্ডিকেট, চালের গুদামে সিন্ডিকেট, বস্ত্র বিতরণে সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট কারা? নাম প্রকাশ করা হোক। কাদের পানামা পেপারসে, প্যারাডাইস পেপারে নাম আছে, আমরা জানতে চাই।’ কানাডায় বেগমপাড়ায় কার কার বাড়ি আছে সবার নাম সংসদে প্রকাশ করার দাবি জানান তারানা হালিম।
দুদকে হাজির হতে ১৫ দিন সময় চাইলেন বেনজীর:
দুদকের কাছে সময় চেয়েছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ। গতকাল সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে বেনজীরের পক্ষে তার আইনজীবী ১৫ দিনের সময় চেয়ে সংস্থার উপ-পরিচালক বরাবর আবেদন করেন। এ বিষয়ে দুদক কমিশনার জহুরুল হক সাংবাদিকদের বলেন, আমি শুনেছি, দুদকের অনুসন্ধান দলের কাছে বেনজীর ১৫ দিনের সময় চেয়েছেন। আইন অনুযায়ী তাকে সময় দেওয়া হবে।
গোপালগঞ্জে বেনজীরের সাভানা পরিদর্শন করেছে দুদক:
জমি ও সড়ক দখলসহ অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে অভিযুক্ত সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে গোপালগঞ্জে নির্মিত সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্ক পরিদর্শন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের দুটি প্রতিনিধি দল। ৫ জুলাই সন্ধ্যায় গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুর দুর্নীতি দমন কমিশনের যৌথ একটি প্রতিনিধি দল পরিদর্শন করে।