Connect with us

বাংলাদেশ

ওয়াল স্ট্রিট খেয়ে রিয়াজ এখন মতিঝিলপাড়ায়

Published

on

তখন তাঁর বয়স সবে ৩২। ওই বয়সেই ওয়াল স্ট্রিটখ্যাত যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শেয়ারবাজারে বৈশ্বিক আর্থিক খাতের জায়ান্ট সিটি গ্রুপের হেজ ফান্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বনে যান রিয়াজ ইসলাম। সেখানে সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিলেন বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার।

রিয়াজ তাদের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, এ ফান্ডে বিনিয়োগ নিরাপদ; আছে বেশি মুনাফার সুযোগ। তবে লাভ দূরের কথা, ২০০৭ সালের ধসে সেসব ফান্ড প্রায় ৮৪ শতাংশ সম্পদমূল্য হারায়। এতে পথে বসেন শত শত বিনিয়োগকারী।

ঠগবাজির জেরে ২০০৮ সালে সেখানকার চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়ে দেশে ফেরেন এই শেয়ার ‘শাসক’রিয়াজ দেশে এসে গড়ে তোলেন সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি ‘এলআর গ্লোবাল’।

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তিনি। ওয়াল স্ট্রিটে সবাইকে ঘোল খাইয়ে দেশের পুঁজিবাজারে ঢুকে এখন সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাঁধে চড়ে বসেছেন। কায়দা করে শেয়ারবাজারের টাকা নিজের করে নিচ্ছেন ধাপে ধাপে। মতিঝিলপাড়া তাঁর শেষ কেরামতি দেখেছে ২০২৩ সালের জুনে। ছয় থেকে সাত বছর মেয়াদ আছে– এমন ছয় মিউচুয়াল ফান্ডের টাকায় নামসর্বস্ব ‘পদ্মা প্রিন্টার্স’ কোম্পানির ৫১ শতাংশ শেয়ার চড়া দরে কিনে নেন তিনি। বিস্ময়কর হলো, পদ্মা প্রিন্টার্স নিজেই ‘ফোকলা’। ঢাকার সাভারে পরিত্যক্ত ভবন ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির আর কিছুই নেই। শুধু তাই নয়, বছরের পর বছর বিনিয়োগকারীকে লভ্যাংশ না দেওয়া এবং বার্ষিক সাধারণ সভা না করার অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটিকে ২০০৯ সালে মূল শেয়ারবাজার থেকে তালিকাচ্যুত করে ওটিসিতে পাঠিয়েছিল পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

পদ্মা প্রিন্টার্সের শেয়ার কেনা মিউচুয়াল ফান্ড হলো– এআইবিএল প্রথম, ডিবিএইচ প্রথম, গ্রিনডেল্টা, এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ, এমবিএল প্রথম ও এনসিসি ব্যাংক প্রথম। ২০১০ সালের পরের তিন বছর এসব ফান্ডে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে সাধারণ বিনিয়োগকারী। ‘অন্ন দেখে দেবে ঘি, পাত্র দেখে দেবে ঝি’– পদপদবিতে বড় দেখে রিয়াজের হাতে টাকা তুলে দিয়ে এ প্রবাদবাক্যের মর্ম হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন ছয় মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগকারী। তাদের বিনিয়োগের বাজারমূল্য কমে এখন অর্ধেকে নেমেছে।

আসল টাকা ফিরে পাবেন কিনা, সে শঙ্কায় দিন গুনছেন মতিঝিলপাড়ার হাজার হাজার বিনিয়োগকারী। গেল ১৫ বছরে গড়ে ৫ শতাংশ মুনাফাও বিনিয়োগকারীর পকেটে আসেনি। উল্টো নিজের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসহ অতালিকাভুক্ত কোম্পানিতে ২০১৩ সালের পরের সাত বছর বিতর্কিত বিনিয়োগের অভিযোগ আছে রিয়াজ ও তাঁর প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। আইনের দুর্বলতার সুযোগে রিয়াজ এলআর গ্লোবালের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনামসহ একাধিক দেশের বিনিয়োগ কোম্পানির এমডি ও পরামর্শকের দায়িত্ব নিয়েছেন।

পেশাদার ব্যবস্থাপক দিয়ে ফান্ডের বিনিয়োগ পরিচালনা করছেন– এ কথা বলে ‘বাজার গরম’ করলেও এলআর গ্লোবালের ওয়েবসাইট ঘেঁটে সিইও রিয়াজ ইসলাম ছাড়া আর কারও তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে লিডারশিপ ও অ্যাডভাইজরি বোর্ডে রিয়াজ ছাড়াও আছেন তিনজন। তারা হলেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, দাবাড়ু নিয়াজ মোর্শেদ ও ক্রীড়া সাংবাদিক রেজাউর রহমান সোহাগ। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের মতো জটিল বিষয়ে খেলোয়াড় ও সাংবাদিক কী পরামর্শ দেন, তা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন।

রিয়াজের এলআর গ্লোবালের বিনিয়োগ উপদেষ্টা দাবাড়ু নিয়াজ মোর্শেদ শেয়ারে বিনিয়োগে কী ধরনের পরামর্শ দেন– এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ঠিক বিনিয়োগ নয়, মূলত রেগুলেটরি ম্যাটার দেখি।’ সর্বশেষ কী পরামর্শ দিয়েছেন– জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা ওভার অল বিষয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কিছু পরামর্শ দিই। তবে রিয়াজই মূলত এক্সপার্ট।’

সাকিব আল হাসান আপনাদের কী পরামর্শ দেন– এ প্রশ্নে নিয়াজ মোর্শেদ বলেন, ‘সে মূলত পরামর্শক নয়, অনেকটা ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডরের কাজ করে। ও তো এ বিষয়ে অভিজ্ঞ নয়। এখানে রেজাউর রহমান সোহাগ বেশি সম্পৃক্ত। তিনি মূলত রেগুলেটরি বিষয়, বিএসইসি বা অন্যান্য সংস্থার বিষয়গুলো দেখভাল করেন।’

ছয় ফান্ড নিয়ে রিয়াজকাণ্ড

কোনোভাবে ব্যবসায় ফেরানো সম্ভব নয়– ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ওটিসিভুক্ত এমন ২৯ কোম্পানির তালিকা করে বিএসইসি। সে তালিকায় নাম ছিল পদ্মা প্রিন্টার্সের। সে সময় কোম্পানির মালিককে সাধারণ বিনিয়োগকারীর শেয়ার কিনে নিয়ে স্বেচ্ছায় তালিকাচ্যুত হতে নির্দেশ দিয়েছিল বিএসইসি। ওই আদেশ মেনে কোম্পানির মূল উদ্যোক্তা ও সাবেক এমডি খান মোহাম্মেদ আমীরও স্বেচ্ছায় তালিকাচুত্যির আবেদন করেছিলেন।

তবে বর্তমান নিয়ন্ত্রক সংস্থার শীর্ষ এক কর্মকর্তার সঙ্গে রিয়াজের মধুর রসায়নে স্বেচ্ছায় তালিকাচ্যুতি থেকে নাম উঠে যায় পদ্মা প্রিন্টার্সের। ওই কর্মকর্তার ‘নেকনজর’ থাকায় ছয় ফান্ডের টাকায় এ কোম্পানির নিয়ন্ত্রণমূলক শেয়ার (৫১ শতাংশ) কিনে কোম্পানির ‘রাজা’ হয়ে যান রিয়াজ। এরই ধারাবাহিকতায় ছয় মিউচুয়াল ফান্ড থেকে নিজেসহ এলআর গ্লোবালের ছয় কর্মকর্তা পরিচালক পদে বসেন। পদ্মা প্রিন্টার্সের নিয়ন্ত্রণ নিতে সব উদ্যোক্তা-পরিচালকের প্রায় সব শেয়ার প্রতিটি ২৮৯ টাকা ৪৮ পয়সা করে কিনে নেন। অথচ ওটিসিতে এ কোম্পানির শেয়ারই ১৯ টাকা দরে কেনাবেচা হয়েছিল। উদ্যোক্তাদের শেয়ার কেনার পর কোম্পানিটির মূলধন বাড়াতে আরও বিনিয়োগের নামে ছয় ফান্ড থেকে ৪৫ কোটি টাকা শেয়ার মানি ডিপোজিট দেন রিয়াজ। এ বিনিয়োগের বিপরীতে ১৫ টাকা ৮৮ পয়সা দরে শেয়ার বরাদ্দ নেন।

এক বছর আগে যাদের টাকায় কোম্পানিটি কিনে সর্বেসর্বা হয়েছেন, সেই বিনিয়োগকারী এখনও এক পয়সাও পাননি, তবে ঠিকই বালু থেকে স্বর্ণ বের করে নিয়েছেন রিয়াজ। বিনিয়োগের প্রথম সপ্তাহেই নিজের লোকসানি কোম্পানি থাইরোকেয়ারের ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ার ৫২ টাকা দরে এলআরজি ভেঞ্চারের কাছ থেকে কিনেছেন পদ্মা প্রিন্টার্সের নামে। এলআরজি ভেঞ্চারও রিয়াজের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। এতে রিয়াজের কোম্পানি অন্তত ২০ কোটি টাকা পকেটে তুলেছে।

পদ্মা প্রিন্টার্সের প্রতিটি শেয়ারের গড় দর পড়েছে সাড়ে ২৩ টাকা। অথচ রিয়াজ তাঁর নিজের প্রতিষ্ঠান এলআরজি ভেঞ্চারকে মাত্র ১০ টাকা দরে পদ্মা প্রিন্টার্সের পৌনে দুই কোটি শেয়ার বরাদ্দ দিয়েছেন। পাবলিক ফান্ডগুলো সম্মিলিতভাবে এ কোম্পানির ৫৮ শতাংশের মালিক হলেও এককভাবে সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশের মালিক রিয়াজের এলআর ভেঞ্চার।

শুধু নিজের প্রতিষ্ঠান নয়, ব্যবসায় অংশীদারসহ মোট আট প্রভাবশালীর নামে পদ্মা প্রিন্টার্সের ২৩ লাখ শেয়ার বরাদ্দ দিয়েছেন অভিহিত মূল্য ১০ টাকায়। যারা এ শেয়ার পেয়েছেন, তাদের একজন আবদুল মাবুদ মাসুম; যিনি ‘ব্যারিস্টার মাসুম’ নামে পরিচিত। ২৩ লাখ শেয়ারের মধ্যে ব্যারিস্টার মাসুম একাই নিয়েছেন ১০ লাখ শেয়ার।

এভাবে ফান্ডের টাকায় প্রথমে পদ্মা প্রিন্টার্সে বিনিয়োগ করে এর নিয়ন্ত্রণ নেওয়া, পরে স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ঘুরিয়ে শেয়ার কেনা এবং ওই টাকায় আবার পদ্মা প্রিন্টার্সের শেয়ার কেনার মতো মাথা ঘোরানো সব কাজ একাই সামলেছেন রিয়াজ ইসলাম। এসব সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও ছিল তাঁর একার।

আরও বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের স্বল্প মূলধনি কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচার প্ল্যাটফর্ম এসএমই মার্কেটে পদ্মা প্রিন্টার্সকে তালিকাভুক্ত করার সব আয়োজন করে ফেলেছেন। গত বছরের জুনে নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে স্রেফ কাগজে-কলমের ব্যবসায় লোকসানি কোম্পানিটিকে লাভজনক দেখিয়েছেন। এমনকি শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য বা এনএভির হিসাবে সম্পদশালী কোম্পানিতে রূপান্তর করেছেন।

এসএমই মার্কেটে তালিকাভুক্তির পর কোম্পানিটির শেয়ারদর আকাশে চড়াতে যাতে এর খারাপ ভাবমূর্তি বাধা হয়ে না দাঁড়ায়, এ জন্য পদ্মা প্রিন্টার্সের নামই বদলে নিয়েছেন। নতুন নাম দিয়েছেন ‘কোয়েস্ট বিডিসি’।

বিনিয়োগকারীর মাথায় কাঁঠাল ভেঙে নিজের লাভ আগেভাগে বুঝে নিতে আরও কৌশল করেছেন রিয়াজ। এসএমই মার্কেটে তালিকাভুক্তির শর্ত পূরণে ছয় ফান্ডের নামে কেনা সব শেয়ার তিনি লক-ইন (ঘোষণা ছাড়া বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা) রেখেছেন। তবে যে কোনো সময় শেয়ার বিক্রি করতে এলআরজি ভেঞ্চার এবং প্লেসমেন্টহোল্ডারের শেয়ারে লক রাখেননি।

তবে রিয়াজের সব চাতুরী বুঝতে পেরে বেঁকে বসেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। ছয় ফান্ডের বিনিয়োগ ও সংশ্লিষ্ট নথি পর্যালোচনা করে নানা অনিয়মের প্রমাণ পেয়ে মাসখানেক আগে এসএমই মার্কেটে তালিকাভুক্তির আবেদন নাকচ করে দিয়েছে স্টক এক্সচেঞ্জ পরিচালনা পর্ষদ।

এ ঘটনায় বিএসইসির ওই শীর্ষ কর্মকর্তা স্টক এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তাদের ওপর চটেন। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, যেসব আইনি কারণ দেখিয়ে স্টক এক্সচেঞ্জ পদ্মার তালিকাভুক্তি আটকে দিয়েছে, সেসব আইন পরিপালন থেকে অব্যাহতির পরিকল্পনা করছেন ওই শীর্ষ কর্তা; যাতে ওই অব্যাহতি নিয়ে পদ্মা প্রিন্টার্স (কোয়েস্ট বিডিসি) স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হতে পারে।

বিএসইসির ওই শীর্ষ কর্তা ক্ষমতা দেখিয়ে এবারই যে প্রথম এলআর গ্লোবালকে সুবিধা দেওয়ার ছক কষছেন, তা নয়। বেআইনি ও স্বার্থ পরিপন্থি বিনিয়োগ কর্মকাণ্ডের দায়ে ২০১৯ সালে ড. এম খায়রুল আলমের নেতৃত্বাধীন বিএসইসি ডিবিএইচ প্রথম ও গ্রিনডেল্টা নামে দুই মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালনা থেকে এলআর গ্লোবালকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন। ২০২১ সালে বিএসইসির আগের সিদ্ধান্ত বদলে দিয়ে শীর্ষ ওই কর্মকর্তা ফান্ড দুটির দায়িত্ব ফের এলআর গ্লোবালকে দেন। এ জন্য বিনিয়োগকারী বা সংশ্লিষ্ট কারও মতামত নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি।

২০২১ সালে বিএসইসির শীর্ষ ওই কর্মকর্তা যখন আগের কমিশনের সিদ্ধান্ত বদলে দুই ফান্ডের দায়িত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেন, তখন তার বিরোধীতা করে তাকে দাপ্তরিক চিঠি দেন মিউচুয়াল ফান্ড বিভাগের তৎকালীন কমিশনার মিজানুর রহমান। তিনি ওই চিঠিতে ফান্ড ফেরত নয়, নানা অপরাধ ও অপকর্ম করার কারণে এলআর গ্লোবালের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার পরামর্শ দেন।

রিয়াজের স্বার্থ বাস্তবায়নে বিএসইসির ওই শীর্ষ কর্মকর্তার এমন উদারহস্ত হওয়ার কারণ উভয়ের মধ্যে ব্যক্তিগত সখ্য। ২০২২ সালে বিএসইসির ওই কর্মকর্তার বড় ছেলে যুহায়ের ইসলামকে অংশীদার করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ দুবাইয়ে ‘সিগমা ম্যানেজমেন্ট’ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছেন রিয়াজ। কোম্পানিটির তিন অংশীদারের একজন যুহায়ের।

পদ্মা প্রিন্টার্স ‘ফোকলা’

সম্প্রতি সাভারের আনন্দপুরের তালতলায় গিয়ে পদ্মা প্রিন্টার্সের ১২৮ শতাংশ জমি ও পরিত্যক্ত তিন ভবন ছাড়া কিছুই দেখা যায়নি। এসব ভবন দেখভাল করেন হাফেজ বোরহান উদ্দিন। তিনি সমকালকে বলেন, কোম্পানিটি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চললেও ২০১৯ সালে বন্যায় কারখানায় পানি জমলে সব যন্ত্রপাতি বিক্রি করে দেওয়া হয়। এখন পরিত্যক্ত তিন ভবন ছাড়া কিছু নেই। কয়েক মাস আগে রিয়াজ নামে একজন কোম্পানির মালিকানা কিনেছেন। নতুন মালিকরা কারখানা আগের অফিস ভবনের একাধিক কক্ষ মেরামত করে বসার ব্যবস্থা করেছেন। তবে কেউ আসেন না। এখানে কোনো ব্যবসা কার্যক্রম চলে না।

১৬ লাখ টাকা আয়, নিট মুনাফা ৩৮ লাখ

উদ্যোক্তার শেয়ার কিনে নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার তিন সপ্তাহে কাগুজে ও চাতুরীপূর্ণ ব্যবসা বা লেনদেন দেখিয়ে নামসর্বস্ব কোম্পানিটিকে লাভজনক দেখাতে আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করেন রিয়াজ ইসলাম। প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২৩ সালের ৩০ জুন কোম্পানিটির আয় ১৬ লাখ টাকা। করের জন্য টাকা সংরক্ষণ ও নানা খরচ শেষে পরবর্তী নিট মুনাফা ৩৭ লাখ ৭৮ হাজার টাকা।

যে পণ্য বা সেবা বিক্রি থেকে ১৬ লাখ টাকা আয় হয়েছে, এ জন্য এক টাকাও খরচা করতে হয়নি কোম্পানিটিকে। আর্থিক হিসাবে কোম্পানিটির কস্ট অব গুডস সোল্ড দেখানো হয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। খরচের বিবরণে বলা হয়েছে, এটি ফ্যাক্টরি ওভারহেড খাতে অবচয়। আদতে যে সময়ের অবচয় দেখানো হয়, তখন এর ফ্যাক্টরি বলে কিছুই ছিল না।

১৬ লাখ টাকা আয়ের বিপরীতে কর-পরবর্তী নিট ৩৮ লাখ টাকা মুনাফা এসেছে মূলত কোম্পানিটির অন্য আয়ের খাত থেকে। আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, শেয়ার মানি ডিপোজিটের বিপরীতে সুদ আয় হয় ১৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া অন্য খাত থেকে আয় হয় ১ কোটি ৪২ লাখ ৭১ হাজার টাকা। নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের নোটে দেখা গেছে, পদ্মা প্রিন্টার্সের কাছে এর সাবেক তিন সিস্টার্ন কনসার্ন কোম্পানির সমপরিমাণ টাকা পাওনা ছিল। ওই তিন কোম্পানি সমুদয় পাওনা মওকুফ করে দিলে তা অন্য আয়ের খাতে যোগ হয়।

আয় খাতের বাইরে পরিচালন ব্যয় ও অপরিচালন ব্যয় হিসেবে নগদে ১ কোটি ৩১ লাখ টাকার বেশি খরচ দেখানো হয়েছে আর্থিক প্রতিবেদনে। এর নোটে দেখা গেছে, অফিস ও প্রশাসনিক খরচ দেখানো হয়েছে ২৫ লাখ ৫৪ হাজার টাকা, যেখানে বেতন-ভাতা ছিল ২২ লাখ ১৫ হাজার টাকা। অথচ কোম্পানিটির অফিস বাবদ কোনো খরচ নেই।

আদতে তখন পর্যন্ত কোম্পানির কোনো অফিসই ছিল না। ফলে কাদের বেতন-ভাতা দেওয়া হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। আবার শেয়ার ট্রান্সফার, প্রয়োজনীয় নথি সংগ্রহ কাজে এজিএম, আইনি সহায়তা ও ফি বাবদ ৬৫ লাখ ৬৬ হাজার টাকা খরচ দেখিয়েছেন; যার যৌক্তিকতাই ছিল না। বিশেষত শেয়ার সনদ, ট্রান্সফার, রেজিস্টার অ্যান্ড প্রিপারেশন করতে সংশ্লিষ্ট প্রফেশনাল খরচ বাবদ ১৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা এবং শেয়ার ট্রান্সফার করতে আরজেএসসির ফরম ৯, ১২ ও ১৫ সংগ্রহে ১৫ লাখ ১৪ হাজার টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। এসব কাজে কেন এত খরচ হলো এবং তা কেন কোম্পানিকে দিতে হলো, এরও যৌক্তিকতা মেলেনি।

আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, ২০২৩ হিসাব বছরের শেষ তিন সপ্তাহে যে ১৬ লাখ টাকার হয়েছে, সে আয় এসেছে থাইরোকেয়ার বাংলাদেশ থেকে, যার মালিকানায় এখন পদ্মা প্রিন্টার্সও আছে। থাইরোকেয়ারকে সফটওয়্যার সরবরাহ করে সাড়ে ১০ লাখ টাকা পেয়েছে পদ্মা প্রিন্টার্স। এ ছাড়া থাইরোকেয়ারের জন্যই ডিজিটাল মার্কেটিং করে মাসিক ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা করে দুই মাসের জন্য (২০২৩ সালের মে ও জুন) মোট ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা পেয়েছে। যেখানে কোম্পানিটির অফিস নেই, ফলে এসব কাজ কীভাবে করল– এর সদুত্তর মেলেনি।

এভাবেই ২০২৩ হিসাব বছর শেষে কোম্পানিটির ইপিএস দেখানো হয় ২ টাকা ৩৬ পয়সা। যেখানে ২০২২ হিসাব বছরে শেয়ারপ্রতি দেড় পয়সা লোকসান ছিল। নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান শফিক বসাক অ্যান্ড কোং এ আর্থিক প্রতিবেদন সার্টিফাই করেছে।

ইপিএস বাড়িয়ে দেখাতে বড় চাতুরীর আশ্রয় নেন রিয়াজ। ছয় ফান্ড থেকে একই সময়ে ৬৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করলেও প্রথমে ২৩ কোটি ৬২ লাখ টাকায় উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার কিনে কোম্পানিটির নিয়ন্ত্রণ নেন। বাকি ৪৫ কোটি টাকা পদ্মা প্রিন্টার্সের হিসাবে জমা রাখেন। তবে ৩০ জুন ২০২৩ সমাপ্ত হিসাব বছর শেষ হওয়ার আগে কোনো শেয়ার নেননি। ফলে আগের ১৬ লাখ শেয়ার হিসেবে ইপিএস গণনা করেছেন।

লোকসানি কোম্পানিকে সম্পদশালী দেখাতেও চাতুরী

এলআর গ্লোবালের ছয় মিউচুয়াল ফান্ডের নামে শেয়ার কেনার আগপর্যন্ত পদ্মা প্রিন্টার্সের লোকসান ছিল ২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ছয় ফান্ড থেকে ৬৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা বিনিয়োগের আগে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ছিল ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা। সম্পদমূল্য বাড়াতে ছয় ফান্ড থেকে ৪৫ কোটি টাকা শেয়ার মানি ডিপোজিট দেখানো হয়। এর সঙ্গে রিয়াজের এলআরজি ভেঞ্চার থেকে সাড়ে ১৭ কোটি টাকা শেয়ার মানি ডিপোজিটও যোগ হয়। দুই শেয়ার মানি ডিপোজিটের সাড়ে ৬২ কোটি টাকা সম্পদমূল্যে যোগ হয়।

এর সঙ্গে কোম্পানিটির সম্পদ পুনর্মূল্যায়ন করিয়ে এর জমির দাম দেখানো হয় ৪৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এ জমির দাম ও শেয়ার মানি ডিপোজিট মিলে কোম্পানিটির সম্পদমূল্য বেড়ে হয় ১১২ কোটি ১২ লাখ টাকা। এরপর শেয়ার মানি ডিপোজিট ও সম্পদ পুনর্মূল্যায়ন হিসাব যোগ করে তার থেকে পুঞ্জীভূত লোকসান ২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা বাদ দিয়ে সম্পদমূল্য বেড়ে দাঁড়ায় ১১১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এতে আগের বছর পদ্মা প্রিন্টার্সের শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য যেখানে ঋণাত্মক পৌনে তিন টাকা ছিল, সেখানে তা বেড়ে ৭০০ টাকা ছাড়ায়।

নিজের মুনাফা সবার আগে

এলআর গ্লোবালের ব্যবস্থাপনায় ছয় ফান্ডকে মুনাফা করিয়ে দিতে নয়, নিজের মুনাফা বাগিয়ে নিতে সব আয়োজন করেন রিয়াজ ইসলাম। নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পদ্মা প্রিন্টার্সে আরও বিনিয়োগের জন্য ৪৫ কোটি টাকা কোম্পানি হিসাবে জমা দেন। এ টাকা থেকে ২৫ কোটি দিয়ে পদ্মা প্রিন্টার্সের নামে থাইরোকেয়ার বিডি লিমিটেডের ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ার কিনেছেন ৫২ টাকা দরে। এ শেয়ার কেনা হয়েছে নিজের আরেক স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এলআরজি ভেঞ্চার এবং এনসিসি প্রথম ফান্ড থেকে। এতে প্রায় ২০ কোটি টাকা মুনাফা হয় রিয়াজের প্রতিষ্ঠানের।

২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত থাইরোকেয়ার বাংলাদেশ একটি লোকসানি কোম্পানি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য অনুযায়ী, পুঞ্জীভূত লোকসান ৩০ কোটি ৬২ লাখ টাকা। লোকসানি এ কোম্পানিরই শেয়ার ৫২ টাকা দরে বিক্রি করতে সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্সেস নামক মার্চেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে এর সম্ভাব্য শেয়ারমূল্য নির্ধারণ করেছেন রিয়াজ। এই শেয়ারমূল্য নির্ধারণে কোম্পানিটির গত ১১ বছরের ব্যবসার ইতিহাস নয়, মনগড়া ভবিষ্যৎ আয় কল্পনা করে শেয়ারমূল্য হিসাব করেছে দি সিটি ব্যাংকের মালিকানাধীন মার্চেন্ট ব্যাংকটি।

কোম্পানির ভেল্যুয়েশন প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালে থাইরোকেয়ার বাংলাদেশের টার্নওভার ছিল ১৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। ২০২৩ সালে যা নামে ১৭ কোটি ২৭ লাখে। তবে ২০২৪ সালে টার্নওভার ২৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, ২০২৫ সালে ৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা হবে বলে ধারণা দেওয়া হয়েছে। এভাবে ২০২৮ সালে কোম্পানিটির টার্নওভার ৫৩ কোটি ২১ লাখ টাকা ছাড়াবে বলা হয়েছে।

ব্যবসা বাড়ানোর জন্য আন্দাজের ওপর ভর করে থাইরোকেয়ারের ইপিএস ২০২৪ সালে ১ টাকা ৪৮ পয়সা হবে বলে ধারণা দেওয়া হয়েছে। ২০২৫ থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত ক্রমে বেড়ে যা ২ টাকা ৩৮ পয়সা, ৩ টাকা ২২ পয়সা, ৪ টাকা শূন্য ৮ পয়সা এবং ৫ টাকায় উন্নীত হবে বলে বলা হয়েছে। অথচ ২০২২ সালের ইপিএস ছিল ২ পয়সা, ২০২৩ সালে ছিল ৫ পয়সা।

এই থাইরোকেয়ার বাংলাদেশের শেয়ারই নিজের এলআরজি ভেঞ্চার এবং ছয় ফান্ডের একটি থেকে ৫২ টাকা দরে পদ্মা প্রিন্টার্সের নামে কিনেছেন রিয়াজ। শেয়ার কেনা বাবদ প্রায় ২১ কোটি টাকা পরিশোধের পর তার থেকে সাড়ে ১৭ কোটি টাকা শেয়ার মানি ডিপোজিট দেন পদ্মা প্রিন্টার্সকে। এ শেয়ার মানি ডিপোজিটের বিপরীতে এলআরজি ভেঞ্চারের নামে ১০ টাকা দরে ১ কোটি ৭৫ লাখ নতুন শেয়ার নিয়েছেন। সম্মিলিত হিসাবে ছয় ফান্ডের নামে প্রায় ৫৮ শতাংশ শেয়ার থাকলেও এ প্রতিষ্ঠান এখন এককভাবে পদ্মা প্রিন্টার্সের (কোয়েস্ট বিডিসি) সর্বোচ্চ শেয়ারহোল্ডার।

বিনিয়োগে আইন ও বিএসইসির শর্ত লঙ্ঘন

মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো মিউচুয়াল ফান্ড থেকে একক কোনো কোম্পানি ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার কিনতে পারে না। তবে এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ ফান্ডের নামে পদ্মা প্রিন্টার্সের ১৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ এবং গ্রিনডেল্টা মিউচুয়াল ফান্ডের নামে ১০ দশমিক ৫৬ শতাংশ শেয়ার কেনা হয়েছে।

এ ছাড়া ছয় ফান্ড থেকে পদ্মা প্রিন্টার্সে বিনিয়োগের এলআর গ্লোবালের প্রস্তাব অনুযায়ী এর মূলধন ৫০ কোটি রাখার শর্ত দিয়েছিল বিএসইসি। ওই শর্ত লঙ্ঘন করে নিজের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ও প্রাইভেট প্লেসমেন্টে আট ব্যক্তির কাছে শেয়ার বিক্রি করে মূলধন বাড়িয়েছেন।

এলআর গ্লোবালের ঠিকানাতেই পদ্মা

পদ্মা প্রিন্টার্স বা কোয়েস্ট বিডিসির ঠিকানা– গুলশান-২-এর আই-কে টাওয়ারের পঞ্চম তলা। এটি এলআর গ্লোবালের ঠিকানা। কোম্পানির ওয়েবসাইটে গিয়ে টেলিফোন বা মোবাইল নম্বর মেলেনি। কোম্পানিটির কয়েকশ সাধারণ শেয়ারহোল্ডার থাকলেও ইমেইল ছাড়া এ কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগের কোনো মাধ্যম নেই।

নয়ছয়ের পথে রিয়াজ পুরোনো

২০১৪ সালেও রিয়াজ ইসলাম ও তাঁর সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির বিরুদ্ধে নিজের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিমালিকানাধীন কোম্পানি থাইরোকেয়ারে ৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা বিনিয়োগের অভিযোগ ছিল। ২০১৩ সালের ২০ অক্টোবর এ বিনিয়োগ করেছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে আইন না মেনে ফান্ডের টাকা খরচ করারও অভিযোগ ছিল। এমনকি যৌক্তিক কারণ ছাড়া ফান্ডের গচ্ছিত অর্থ এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে নেওয়ার অভিযোগ বিএসইসির তদন্তে ধরা পড়েছিল।

এসব অভিযোগে ২০১৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি এলআর গ্লোবালকে বিনিয়োগ ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি ৫০ লাখ টাকা আর্থিক জরিমানা করেছিল বিএসইসি। এ ঘটনায় ফান্ডগুলোর ট্রাস্টি বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সকে দায়িত্ব পালনে অবহেলার দায়ে ২৫ লাখ টাকা এবং নিরীক্ষা প্রতিবেদনে অনিয়ম তুলে না ধরায় অডিট প্রতিষ্ঠান হুদা ভাসিকেও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

ফোনই ধরেন না রিয়াজ

ফোনালাপে নামসর্বস্ব পদ্মা প্রিন্টার্সে বিনিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে রিয়াজ ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘এখন পদ্মা প্রিন্টার্স বলে কিছু নেই। এটি এখন কোয়েস্ট বিডিসি।’ সেটির কারখানা সাভারে– এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এর ব্যবসা কার্যক্রম তিন জায়গা থেকে হচ্ছে।’ কোথায় হচ্ছে– জানতে চাইলে কোম্পানির ওয়েবসাইট দেখার পরামর্শ দেন। তবে ওয়েবসাইটে এমন কোনো তথ্য মেলেনি।

ফান্ড থেকে উচ্চমূল্যে শেয়ার কেনার পর স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ১০ টাকা শেয়ার কেনার বিষয়ে জানতে চাইলে রিয়াজ ইসলাম তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্য করতে অস্বীকার করে বলেন, ‘অফিসে এসে কথা বলেন।’ কখন আসব– জানতে চাইলে পরে ফোন করে জেনে নিতে বলেন। পরে একাধিক দিন ফোন ও এসএমএস করা হলেও সাড়া দেননি তিনি।

ট্রাস্টির ভাষ্য, নিয়ন্ত্রণে নেই ফান্ড

আইন অনুযায়ী বিনিয়োগকারীর পক্ষে মিউচুয়াল ফান্ডের টাকার দেখভাল করার কথা ট্রাস্টি প্রতিষ্ঠানের। এলআর গ্লোবালের ব্যবস্থাপনায় ফান্ডগুলোর ট্রাস্টি বীমা কোম্পানি বিজিআইসি। পদ্মা প্রিন্টার্সে বিতর্কিত বিনিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিআইসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ সাইফুদ্দিন চৌধুরী সমকালকে বলেন, ‘নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এ বিষয়ে তদন্ত করছে। ট্রাস্টির পক্ষ থেকে যা জানানোর, বিএসইসিকে জানানো হয়েছে।’

এলআর গ্লোবালের বিরুদ্ধে বিতর্কিত বিনিয়োগের অভিযোগ নতুন নয়। ট্রাস্টি হিসেবে বিজিআইসি কেনো ভূমিকা রাখতে পারছে না– এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটি আইনি সংকট। আইনে যদি থাকত ফান্ডের টাকা কাস্টডিয়ান প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে থাকবে, বিনিয়োগে টাকা লাগলে অ্যাসেট ম্যানেজার সেখান থেকে নেবে; তাহলে তার বিনিয়োগ কার্যক্রম নজরে থাকত ও নিয়ন্ত্রণ করা যেত। এখন সবকিছু থাকে ফান্ড ম্যানেজারের কাছে। ফলে সে যখন যা ইচ্ছা করতে পারছে; নিয়ন্ত্রণ নেই। আমাদেরও হাত-পা বাঁধা। এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে আইন সংশোধনের প্রস্তাব করেছি।’

বিএসইসির গৎবাঁধা ভাষ্য

এ ব্যাপারে জানতে বিএসইসির শীর্ষ কর্মকর্তাদের একাধিকবার ফোন করা হলে তারা সাড়া দেননি। তবে সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম সমকালকে বলেন, ‘আইন অনুযায়ী বিনিয়োগকারীর পক্ষে ফান্ডের দেখভাল করবে ট্রাস্টি। এ ক্ষেত্রে ব্যত্যয় হলে ফান্ড ফিরিয়ে আনা বা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব এ প্রতিষ্ঠানের। ফান্ড ম্যানেজার সহযোগিতা না করলে বিএসইসির কাছে লিখিত অভিযোগ জানালে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’ ট্রাস্টি বিজিআইসির বক্তব্য পড়ে শোনানো হলে বিএসইসির মুখপাত্র বলেন, ‘ট্রাস্টির কিছু করার নেই– এ কথা ঠিক নয়। মন্দ বিনিয়োগ হলে তা ফিরিয়ে আনতে অ্যাসেট ম্যানেজারকে নির্দেশ দিতে পারে।’
– সমকাল

Advertisement
Comments
Advertisement

Trending