Connect with us

বাংলাদেশ

কোটা আন্দোলনে সহিংসতায় যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের চাপে শেখ হাসিনা

Published

on

কোটা আন্দোলনে সহিংসতায় যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের চাপে শেখ হাসিনা

গত ১৬ই জুলাই থেকে ২১ শে জুলাই পর্যন্ত কোটা আন্দোলন নিয়ে টানা বাংলাদেশে নজিরবিহীন বিক্ষোভ আর সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে এ ধরণের বিক্ষোভ কখনোই দেখা যায়নি। এতো কম সময়ের মধ্যে প্রায় দুইশ’ মানুষ নিহত হবার ঘটনা ঘটেনি। যদিও হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে।
কোটা বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে টানা বিক্ষোভ, সহিংসতা, ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ জারি – সব মিলিয়ে জীবনযাত্রা থমকে গিয়েছিল। যদিও পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে এখনো আরো সময় লাগবে বলে মনে করছেন সমাজ বিশ্লেষকরা। সেনাবাহিনী কখন ব্যারাকে ফিরবে সেটি এখনো পরিষ্কার নয়, কারফিউ পুরোপুরি তুলে নেয়া হয়নি, ইন্টারনেট পুরোপুরি ফিরে আসেনি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।
নাজুক এই পরিস্থিতি অভ্যন্তরীণ বিষয় হলেও এর একটি আন্তর্জাতিক প্রভাব রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্ধারিত স্পেন ও ব্রাজিল সফর বাতিল করেছেন। বিভিন্ন দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বর্তমান ঘটনাবলি নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বা মন্তব্যও করেছে। ফলে আন্তর্জাতিভাবে নানামুখী চাপের মুখে রয়েছে শেখ হাসিনা সরকার।
যুক্তরাষ্ট্রের নিন্দা:
এরইমধ্যে বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শান্তি বজায় রাখতে ও উত্তেজনা কমাতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটি। বাংলাদেশের ঘটনা যুক্তরাষ্ট্র নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে উল্লেখ করে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকে তাঁরা সমর্থন করেন। গত মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে ম্যাথিউ মিলারের কাছে বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় প্রাণহানি প্রশ্ন করেন এক সাংবাদিক।

জবাবে মিলার বলেন, ‘বাংলাদেশের ঘটনা আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা শান্তি বজায় রাখতে ও উত্তেজনা কমাতে সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আমি আগেও বলেছি, আমরা সব ধরনের সহিংসতার নিন্দা জানাই। সেটা যেমন সহিংসতাই হোক—শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা হোক বা সরকারের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের সহিংসতা হোক। আমরা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকে সমর্থন করি। কিন্তু সব অবস্থায় বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ হতে হবে। আর সরকারকে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের বিরুদ্ধে সহিংসতা থেকে বিরত থাকতে হবে।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে মিলার বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সব সময় বিশ্বব্যাপী গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষা করার আহ্বান জানায়। আমরা স্পষ্টভাবে বলি, বিশ্বের যে কোনো জায়গায় দেশগুলো যখন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধগুলো ধারণ করে, তখনই সেসব দেশ সবচেয়ে শক্তিশালী হয়। এটাই আমরা অব্যাহত রাখব। এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। আমাদের কর্মপদ্ধতি এই নীতি দ্বারাই পরিচালিত হবে।’
জাতিসংঘের লোগো-সংবলিত গাড়ি ব্যবহার:
এদিকে বাংলাদেশে বিক্ষোভ দমনে জাতিসংঘের লোগো-সংবলিত গাড়ি ব্যবহার নিয়ে জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, জাতিসংঘের লোগো শুধু শান্তিরক্ষা মিশনে নিযুক্ত থাকার সময় ব্যবহারের বিধান রয়েছে। বাংলাদেশে বিক্ষোভ চলাকালে জাতিসংঘের লোগোসংবলিত যানের ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগের বিষয়টি বাংলাদেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরা হয়েছে।

যদিও পরবর্তীতে বাংলাদেশে বিক্ষোভের সময় জাতিসংঘের যান ব্যবহারের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘জাতিসংঘের কোনো যান ব্যবহৃত হচ্ছে না। আমি এখানে বিষয়টি পরিষ্কার করি। এগুলো জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। লোগোটা মোছা হয়নি, ভুলে। সেই লোগোগুলো এখন মুছে দেওয়া হয়েছে।’
এছাড়া কোটা আন্দোলনে সহিংসতার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ আরও অনেক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে এমন দেশগুলো বর্তমান পরিস্থিতি আরো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে। ওই দেশগুলো বাংলাদেশের গণতন্ত্র, সামাজিক কাঠামো, জটিল সমস্যা সমাধানে সরকারের সক্ষমতা, অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জসহ বিভিন্ন বিষয় বিচার-বিশ্লেষণ করবে। তাদের বিচার-বিশ্লেষণ এই মুহূর্তে তেমনভাবে প্রকাশ না পেলেও ভবিষ্যৎ ভূ-রাজনৈতিক ও ভূ-অর্থনৈতিক পরিস্থিতির আলোকে তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে ওইসব দেশের অবস্থান স্পষ্ট হবে।

Advertisement
Comments
Advertisement

Trending