Connect with us

বাংলাদেশ

দেশজুড়ে ফের আন্দোলনে নামছে শিক্ষার্থীরা

দেশজুড়ে ফের আন্দোলনে নামছে শিক্ষার্থীরা

লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা

দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে বিপুল প্রাণহানির ঘটনায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিলো। গেল কয়েক দিনে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিকের দিকে যাচ্ছিলো। পর্যায়ক্রমে শিথিল হচ্ছিলো কারফিউ পরিস্থিতি। তবে বুধবার (৩১ জুলাই) থেকে হঠাৎই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে। আন্দোলনের মধ্যেই জামায়াত-শিবিরকে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। এতে নতুন করে শঙ্কা তৈরি হয়েছে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির।
আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করছেন, বাসা বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। যার তার নামে মামলা দেওয়া হচ্ছে। অবৈধ ভাবে আটক করে নির্যাতন চালানো হচ্ছে। এসবের প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন জেলায় এখনো আন্দোলন চলছে। পুলিশের সাথে ছোটখাটো সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে।
বিবিসির প্রতিবেদন: দেশের চলমান পরিস্থিতি তুলে ধরে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি ‘ফ্রেশ ভায়োলেন্স ইন বাংলাদেশ স্টুডেন্ট প্রটেস্ট’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাপক ধর-পাকড় এবং শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের চড়াও হওয়াকে কেন্দ্র করে আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর সিলেটে শিক্ষার্থী এবং পুলিশের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ সেখানে কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে বাধ্য হয়েছে বলে জানায় এক পুলিশ কর্মকর্তা। এছাড়া বুধবার রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায়ও পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে।
বলা হয় কোটা আন্দোলনে এখন পর্যন্ত দেড় শতাধিক নিহতসহ প্রায় ১০ হাজার ছাত্র ও সাধারণ মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এদিকে নিহতদের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার এবং আটক ছাত্রজনতার মুক্তির দাবিতে আবারও উত্তাল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। এছাড় দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর বরিশালে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়েছে পুলিশ। এমনকি শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ ও গ্রেপ্তারের ঘটনাও ঘটেছে। এদিন গ্রেপ্তার হওয়া অনেকেই নারী শিক্ষার্থী ছিল।
এদিকে দেশের এমন সহিংস পরিস্থিতির জন্য সরকার প্রধান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীকে দায়ী করেছে। অন্যদিকে দেশজুড়ে সরকারের দমন-পীড়নের সমালোচনা করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তির আলোচনা স্থগিত করেছে। সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতির প্রধান জোসেপ বোরেল বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের নিন্দা জানিয়েছেন এবং অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানায়।
ফেসবুক লালে লাল: এর মধ্যে ডিবি হেফাজতে থাকা ৬ সমন্বয়েকের মুক্তির পর নতুন মোড় নিয়েছে আন্দোলন। ডিবিতে থাকা অবস্থায় ওই ৬ সমন্বয়ক সব আন্দোলন প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেয় ভিডিও বার্তায়। তবে সেই বার্তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় অন্য সমন্বয়করা। তাদের সেই কর্মসূচি সফল করতে দেশের প্রায় বেশিরভাগ ব্যবহারকারী তাদের ফেসবুক প্রোফাইল লাল করে ফেলেন। সেই তালিকায় সবশেষ যুক্ত হয়েছেন নোবেলজয়ী ড. মোহাম্মাদ ইউনূসও।
সারজিসের স্ট্যাটাস: ডিবি থেকে ছাড়া পেয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে দীর্ঘ স্ট্যাটাস দেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম এবং হাসনাত আব্দুল্লাহ। যদিও রহস্যজনক কারণে সেই স্ট্যাটাস কয়েক ঘণ্টা পর তাদের ফেসবুক থেকে হাওয়া হয়ে যায়। এ নিয়েও ধোঁয়াশা দেখা দিয়েছে। সারজিস আলম তার স্ট্যাটাসে লেখেন, কথা দিয়েছিলেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের থেকে কাউকে গ্রেফতার করবেন না, মামলা দিয়ে হয়রানি করবেন না৷ আপনারা কথা রাখেননি৷
প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়, আপনারা আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপর আঘাত করেছেন৷ সারাদেশে আমার স্কুল কলেজের ভাইবোনদের উপর লাঠিচার্জ করেছেন৷ যাকে ইচ্ছা তাকে জেলে পাঠিয়েছেন৷ আন্দোলনকারীকে খুঁজে না পেলে বাসা থেকে ভাইকে তুলে নিয়েছেন, বাবাকে হুমকি দিয়েছেন! মাশরুর তার উদাহরণ৷
উল্লেখ করেন, যারা একটিবারের জন্যও এই আন্দোলনে এসেছে তারা শান্তিতে ঘুমাতে পারেনা, গ্রেফতারের ভয়ে থাকে৷ এমন অনেকে আছে যাদের পরিবার এখনো তাদের খোঁজ পায়নি৷ এমন তো হওয়া উচিৎ ছিল না! কোথায় মহাখালীর সেতু ভবন আর কোথায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়! অথচ আপনারা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আরিফ সোহেলকে মহাখালীর সেতুভবনে হামলার জন্য গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিলেন৷ সাথে আছে আসিফ মাহতাব স্যার, মাশরুরসহ আন্দোলনে অংশগ্রহনকারী অসংখ্য শিক্ষার্থী৷
রিকশা থেকে নামিয়ে প্রিজন ভ্যানে তুলছেন, বাসা থেকে তুলে নিয়ে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন৷ আমার বোনদের রাস্তায় ফেলে পিটিয়েছেন৷ কী ভাবছেন? এভাবেই সবকিছু শেষ হয়ে যাবে? প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, ৬ দিনের ডিবি হেফাজত দিয়ে ৬জনকে আটকে রাখা যায় কিন্তু এই বাংলাদেশের পুরো তরুণ প্রজন্মকে কিভাবে আটকে রাখবেন? দূর্নীতি, লুটপাট, অর্থ পাচার, ক্ষমতার অপব্যবহার করে যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছেন প্রতিনিয়ত সেগুলো কিভাবে নিবৃত করবেন?
পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এ দেশের মানুষের ক্ষোভ আপনাদের উপর নয়, পুলিশের উপর নয় ৷ এই ক্ষোভ আপনার গায়ের ওই পোশাকটার উপর ৷ যে পোশাকটাকে ইউজ করে বছরের পর বছর আপনাদের দিয়ে এ দেশের অসংখ্য মানুষকে দমন-পীড়ন করা হয়েছে, অত্যাচার-নির্যাতন করা হয়েছে, জেল আর আদালতের প্রাঙ্গনে চক্কর কাটানো হয়েছে, সেই পোশাকটার উপর৷ ওই পোশাকটা ছেড়ে আসুন আমাদের সাথে, বুকে টেনে নিব।
এ পথ যেহেতু সত্যের পথ, ন্যায়ের পথ, তাই যেকোনো কিছু মোকাবেলা করতে আমরা বিন্দুমাত্র বিচলিত নই ৷ যতদিন না এ বাংলাদেশ আন্দোলনকারীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠছে; গণগ্রেফতার, জুলুম, নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে; ততদিন এ লড়াই চলব ৷
এদিকে, সারজিসের এমন স্ট্যাটাস দেওয়ার আগেই অন্য সমন্বয়করা শুক্রবার ‘প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ফলে পরিস্থিতি সামনের দিনগুলোতে আরও খারাপ হতে পারে বলে শঙ্কা করছে খোদ সরকারী দলের শীর্ষ নেতারাও। এমন মধ্যে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করায় তারাও মাঠে নেমে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে বলে শঙ্কা করছে পুলিশ। সেই শঙ্কা থেকে রাজধানীতে বৃহস্পতিবার রাত থেকে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সূত্র বলছে, ঢাকায় যে পুলিশের জনবল তাতে পরিস্থিতি খারাপ হলে শামাল দেওয়া মুশকিল। তাই আশপাশের জেলাগুলো থেকে অতিরিক্ত কিছু পুলিশ সদস্যকে ঢাকায় আনা হচ্ছে।

Advertisement
Comments
Advertisement

Trending