বাংলাদেশ
পরীমণির সঙ্গে রাত্রিযাপন করে চাকরি হারাচ্ছেন এডিসি সাকলায়েন
Published
3 months agoon
ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত নায়িকা পরীমনির সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের জেরে চাকরি হারাতে বসেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম সাকলায়েন। পরীমণির বাসায় দিনের পর দিন রাত্রিযাপন করা ও স্ত্রীর অবর্তমানে রাজারবাগের বাসায় নিয়ে ১৭ ঘণ্টা অবস্থানের প্রমাণ মিলেছে তদন্তে। সেই তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে চাকরি হারাচ্ছেন তৎকালীন ঢাকা মেট্রোপলিটন গুলশান গোয়েন্দা পুলিশের এডিসি ও বর্তমানে ঝিনাইদহ জেলার ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম সাকলায়েন।
গত ১৩ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের শৃঙ্খলা-২ শাখার উপ-সচিব পারভীন জুঁই স্বাক্ষরিত স্মারকে বিভাগীয় মামলায় তাকে চাকরি থেকে ‘বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান’ গুরুদণ্ড দেওয়ার বিষয়ে সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়ের সচিবকে অনুরোধ করা হয়েছে।
তাতে বলা হয়েছে, ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের এডিসি থাকাকালে নায়িকা পরীমণির সঙ্গে পরিচয় ও যোগাযোগ শুরু হয় গোলাম সাকলায়েনের। তিনি নায়িকা পরীমণির বাসায় নিয়মিত রাত্রিযাপন করতে শুরু করেন। পুলিশ অধিদপ্তরের এলআইসি শাখা থেকে দেওয়া ফোনের সিডিআর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ২০২১ সালের ৪ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে (দিনে ও রাতে) নায়িকা পরীমণির বাসায় অবস্থান করেছেন তৎকালীন ডিবির এই কর্মকর্তা।
ওই আদেশে বলা হয়, বিভিন্ন সময়ে (দিনে ও রাতে) নায়িকা পরীমণির বাসায় এডিসি গোলাম সাকলায়েন অবস্থান করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় মোবাইলের ফরেনসিক রিপোর্ট দেখে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ১৩ জুন বোট ক্লাবের ঘটনার পর পরীমণিকে ধর্ষণচেষ্টা ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ আনলে মামলা হয়। মামলার পরদিনই আসামি হিসেবে ক্লাব নেতা ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদকে রাজধানীর উত্তরার একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মামলা তদন্তের অংশ হিসেবে পরীমণিকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়। তখনই ডিবির গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) গোলাম সাকলায়েন শিথিলের সঙ্গে পরিচয় হয় পরীমণির। এরপর দুজনের মধ্যে শুরু হয় যোগাযোগ। নিয়মিত পরীমণির বাসায় যাতায়াত শুরু করেন গোলাম সাকলায়েন। মাঝে-মধ্যেই গাড়ি নিয়ে বের হতেন দু’জনে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যানুযায়ী, সবশেষ পরীমণি ডিবির কর্মকর্তা গোলাম সাকলায়েনের রাজারবাগের মধুমতি ভবনের বাসায় গিয়ে প্রায় ১৭ ঘণ্টা অবস্থান করেন। ২০২১ সালের ৪ আগস্ট রাতে গ্রেপ্তারের পর পরীমণি অকপটে স্বীকার করেন সবকিছু।
তবে এবার সাকলায়েনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন আরেক শোবিজ তারকা, মডেল ও আইনজীবী পিয়া জান্নাতুল।
সাকলায়েন ও পরীমনিকে নিয়ে যখন চারদিকে শোরগোল তখনই নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট করেছেন পিয়া। তিনি লিখেছেন, ‘এই সেই ব্যক্তি (গোলাম সাকলায়েন), যিনি আব্বার এফআর টাওয়ার মামলায় ডিবি থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। প্রায় ৬-৭ দিন আমি ও আম্মা আব্বাকে দেখতে প্রতিদিনই ডিবি অফিসে যেতাম।’
দীর্ঘ স্ট্যাটাসে ঘটনার আদ্যোপান্তও তুলে ধরেছেন পিয়া। তিনি লিখেছেন, ‘এই সেই ব্যক্তি, যিনি প্রতারণামূলক এবং জোরপূর্বকভাবে সিআরপিসির ১৬৪ ধারার অধীনে জবানবন্দি নিতে আব্বার সম্মতি নেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। আমি সম্মতি না দেয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলাম আব্বাকে। কেননা, এ ঘটনায় মোটেও জড়িত ছিলেন না তিনি। কিন্তু আমি ডিবি অফিসে যাওয়ার আগেই তিনি আব্বার কাছ থেকে লিখিত বক্তব্য নিয়ে আদালতে পরদিন জমা দিয়ে দেন। এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করায় আমার ওপরও ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন এবং আব্বাকে বলেন, আমি যাতে চুপ থাকি। তাঁর জানা ছিল না যে চুপ থাকার জন্য জন্মগ্রহণ করিনি আমি।’
আইনজীবী পিয়া জান্নাতুল বলেন, ‘তিনি (গোলাম সাকলায়েন) যেদিন এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের জন্য জমির মালিক হিসেবে আব্বাকে গ্রেপ্তার করেছিলেন, তখন আব্বা এতটাই অসুস্থ ছিলেন যে তাঁকে হাসপাতালে যেতে হয়েছিল। আব্বার বয়স তখন ৭৭ বছরের বেশি।
তিনি বলেন, “আজ আমার ছেলের স্কুলে অনুষ্ঠান। আমার জন্য বড় একটি দিন হলেও এখানে আমি ডিউটি করছি।” বেচারা পরিবারকেন্দ্রিক মানুষটি এখন সব হারাল। আমার দেখামতে, এই জনাব গোলাম সাকলায়েন ব্যক্তিটি খুবই তীক্ষ্ণ, প্রতিভাবান ও ধূর্ত। কিন্তু একটি ভুল তাঁর সবকিছু শেষ করে দিল। যদিও আমরা মানুষের অপকর্মের জন্য তাকে ক্ষমা করে দিই। কিন্তু প্রকৃতি ও সর্বশক্তিমান সব সময় সঠিক বিচার করার জন্য রয়েছেন।’
২০১৯ সালের ২৮ মার্চ আগুন লাগে। এই ঘটনায় ২৭ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন অন্তত ৭৫ জন। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে বনানী থানায় মামলা হয়। মামলার বাদী বনানী থানা-পুলিশ। এই মামলার অন্যতম আসামি এস এম এইচ আই ফারুক শোবিজ তারকা পিয়া জান্নাতুলের শ্বশুর। এস এম এইচ আই ফারুক জমির মূল মালিক।