বাংলাদেশ
পাসপোর্টেও ভুল তথ্য দিয়েছিলেন বেনজীর
Published
3 months agoon
২০২১ সালে পুলিশের নবীন সদস্যদের সংবর্ধনার এক অনুষ্ঠানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিহাদ’ ঘোষণার ডাক দিয়েছিলেন বেনজীর আহমেদ। অথচ সময়ের ব্যবধানে তারই মুখোশ উন্মোচিত হয়ে পড়লো। আমরা তাকে তাকে আবিষ্কার করলাম বড় দুর্নীতিবাজ হিসেবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ পদধারী একজন ব্যক্তির এই দ্বিমুখী চরিত্র আমাদের আইন ও তার রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়ে কী বার্তা দেয়! সেই সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশের সকল সদস্যকেই বা কতটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে এই ঘটনা?
জমি, সম্পদ ইত্যাদি নিয়ে দুর্নীতিতো রয়েছেই, নিজের পাসপোর্টটিও তিনি করিয়েছেন মিথ্যা তথ্য দিয়ে। তিনি পুলিশ বাহিনীর বড় পদে থেকেও পাসপোর্ট নিয়েছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী হিসেবে, যেটা সরকারি চাকরিবিধি ও পাসপোর্ট আইনে অপরাধ।
২০২০ সালের ২৪ জুলাই দৈনিক সমকালে বেনজীর আহমেদের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। সেই সাক্ষাৎকারে শেষ প্রশ্ন ছিল, যখন অবসরে যাবেন, পুলিশকে কোন জায়গায় দেখতে চান? জবাবে বেনজীর বলেন, ‘অবসরে গেলে কেমন পুলিশ দেখতে চাই, গত ৩২ বছর নিজে সেই পুলিশ হওয়ার চেষ্টা করেছি। আবার আমার সহকর্মীদের সেই পথে মোটিভেট (উৎসাহিত) করেছি।’
বেনজীর আহমেদের ‘মোটিভেশনে’ পুলিশের কারা কারা উৎসাহিত হয়েছেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কি সেই খোঁজ নেবে?
এমন নেতৃত্ব তার বাহিনীকে এতদিন কোন পথে দেখায় মূলত? এই প্রশ্নের উত্তর জনগণ কার কাছে চাইবে?
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের সম্পদ অনুসন্ধানে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় গত ১৮ এপ্রিল। এরপর সংস্থাটির অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে বেনজীর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিপুল সম্পদ। কিন্তু অনুসন্ধান চলার মধ্যেই গত ৪ মে সপরিবার দেশ ছেড়েছেন বেনজীর।
প্রশ্ন উঠেছে, দুদক, গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থাকে ফাঁকি দিয়ে কীভাবে এই আলোচিত ব্যক্তিরা বিদেশে চলে গেলেন?
নাকি তাঁদের বিদেশ চলে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে এবং এখন চলছে লোকদেখানো অনুসন্ধান ও আইনি ব্যবস্থা। পর্যবেক্ষক মহল মনে করে, বেনজীর আগেও সরকারের ছাড় পেয়েছেন। এখনো পাচ্ছেন।
এদিকে দুদক অনুসন্ধান চালিয়ে এখন পর্যন্ত বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের ৬২১ বিঘা জমি, ১৯টি কোম্পানির শেয়ার, গুলশানে ৪টি ফ্ল্যাট, ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, ৩৩টি ব্যাংক হিসাব এবং তিনটি বিও হিসাব (শেয়ার ব্যবসার বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট) খুঁজে পেয়েছে। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এসব সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন। বেনজীর ও তাঁর পরিবারের বিভিন্ন জায়গায় আরও জমি আছে বলে বেরিয়ে আসছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের অনুসন্ধানে।