বাংলাদেশ
পুলিশ ছাড়াও অন্য উৎস থেকে গুলি হয়েছে
Published
2 months agoon
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে রাজধানীর উত্তরায় ১৮ জুলাই গুলিতে হতাহতের ঘটনার পর পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়। সেদিন দুপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছিল আবদুল্লাহপুরে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ১৭ ও ১৮ জুলাই সড়কে শুধু শিক্ষার্থী আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান ছিল। ১৮ জুলাই অন্তত ১০ জনের প্রাণহানির পরদিন পাশের তুরাগ, দক্ষিণখান, টঙ্গী থেকে আসা লোকজন আন্দোলনে যোগ দেয়। সেদিন শিক্ষার্থীরা সড়কে খুব একটা ছিলেন না।
নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শী এবং স্থানীয় সূত্রের ভাষ্যানুযায়ী, আন্দোলনকারীদের দমাতে ১৯ জুলাই সড়কে নামেন স্থানীয় দুই কাউন্সিলর এবং তাদের অনুসারীরা। একই কারণে অনুসারীসহ এসে সেদিন গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম আক্রান্ত হন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতেই সড়ক অবরোধকারীদের ওপর গুলি করেন এই তিন নেতা ও তাদের অনুসারীরা।
এতে ১৯ জুলাই সংঘর্ষ ও প্রাণহানি বাড়ে। আক্রান্ত হয় পুলিশের উত্তরা পূর্ব থানাসহ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দুই পাশের বিভিন্ন ভবন। হামলাকারীরা দোকান এবং সড়কের গাড়িতে লুটপাটও চালায়। ২০ জুলাই কারফিউ শুরুর দিনেও সহিংসতা চলে। ১৮ ও ১৯ জুলাই উত্তরা এলাকার নিহতের সংখ্যা নিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে রয়েছে ভিন্নমত। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সংখ্যা জানা যায়নি।
উত্তরার হাউস বিল্ডিং মোড়েই ইলেক্ট্রো মার্ট লিমিটেডের শোরুম। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোহেল মজুমদার বলেন, ১৬ ও ১৭ জুলাই সড়কে শুধু শিক্ষার্থীরা ছিলেন। সেদিন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পুলিশও ছিল দূরে দূরে। ১৮ জুলাই সহিংসতার শুরু। তবে ১৯ জুলাই থেকে আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা ছিলেন না। সেদিন সন্ধ্যায় নামে লুটপাটকারীরা। আমাদের শোরুম ভেঙে ফ্রিজ ও টিভি লুটের চেষ্টা করে। ৯৯৯ নম্বরে বারবার কল করেও পুলিশের সহায়তা পাইনি। ১৯ ও ২০ জুলাই রাস্তায় যারা ছিল, তারা উত্তরার সেক্টরের বাসিন্দা না। আশপাশের এলাকা থেকে আসা অচেনা মুখ।
উত্তরা এলাকার শান্তা মারিয়াম ইউনিভার্সিটি, বিজেএমইএ ইউনিভার্সিটি, আইইউবিটি, রবীন্দ্রকলা, আইইউবি, রাজউক মডেল কলেজ, মাইলস্টোন কলেজ, নর্দান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ১৭ জুলাই সড়কে নেমেছিলেন বলে আন্দোলনকারীদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ‘অল আই অন স্টুডেন্ট’ সূত্রে জানা গেছে। এ গ্রুপে বার্তা দেওয়া হতো, কখন কোথায় জমায়েত হতে হবে। কেউ আহত হলে বা পুলিশের ধাওয়ায় কোণঠাসা হয়ে পড়লে, তাদের সহায়তার জন্য বার্তাও দেওয়া হতো।
এ গ্রুপের তথ্যানুযায়ী, পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে চাইলে আবদুল্লাহপুরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রথম সংঘাত বাধে। পুলিশ টিয়ার সেল ছুড়লে শিক্ষার্থীরা ইটপাটকেল ছোড়ে। এ সময় গুলিতে এক শিক্ষার্থী নিহত হলে পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। আন্দোলনকারীরা উত্তরা পূর্ব থানা ঘেরাওয়ের চেষ্টা করেন। থানা লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন। পুলিশ ও র্যাব শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি চালায়।
ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, ১৮ জুলাই দুপুরে র্যাবের একটি গাড়ির ধাক্কায় আন্দোলনকারীদের একজন নিহত হয়েছেন। এতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। আন্দোলনকারীদের আক্রমণে গুরুতর হয়েছেন র্যাবের সেই গাড়িচালক।
স্থানীয় এক সাংবাদিক জানিয়েছেন, ১৮ জুলাই দিনভর এভাবেই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। বিভিন্ন হাসপাতালে ৯ জনের লাশ দেখেছি। পরদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তুরাগ, দক্ষিণখান ও টঙ্গী থেকে হাজার হাজার মানুষ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উত্তরা অংশে নামে।
রাজধানীর আট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বদলি করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। এর মধ্যে তুরাগ এবং দক্ষিণখানও রয়েছে। সূত্রে খবর, ওই এলাকার বাসিন্দারা আন্দোলনে যোগ দিলেও উৎসমুখে আটকাতে পারেনি পুলিশ। এ ব্যর্থতায় দুই থানার ওসিকে সরানো হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ১৯ জুলাই মহাড়কের দুই পাশের ভবনের ছাদে পুলিশের অবস্থান ছিল। সেখান থেকে গুলি করা হয়। স্কয়ার ও রাজউক কর্মচারী কল্যাণ ভবনে এ কারণে হামলা করেন আন্দোলনকারীরা। পূর্ব থানার কাছাকাছি আমির কমপ্লেক্সের সামনে তুরাগ এলাকার কাউন্সিলর ছিলেন অস্ত্র নিয়ে।
আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত স্থানীয় এক নেতার সঙ্গে সেই কাউন্সিলের ফোনালাপ শোনা য়ায়। এতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, অনুসারীদের নিয়ে আন্দোলন প্রতিহত করেছেন। গুলি করেছেন। জাহাঙ্গীর আলমকে উদ্ধারে গিয়ে গোলাগুলি বেশি করতে হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ১৯ জুলাই দুপুরের পর অনুসারীদের নিয়ে উত্তরা ৯ নম্বরে এসে গুলি করেন জাহাঙ্গীর আলম। এতে তিনি আক্রান্ত হন। তাঁর অনুসারী জুয়েল মোল্লাকে হত্যা করেন আন্দোলনকারীরা।
৫৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন যুবরাজ গুলির অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, সেদিন আন্দোলনকারীর বেশে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা রাজপথে ছিল। তাদের প্রতিহতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ছিলেন। তিনি দাবি করেন, মেসবাহ উদ্দিন খোকন নামে বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতাও ছিলেন।
যদিও এ নামে বিএনপির কোনো কেন্দ্রীয় নেতার খোঁজ পাওয়া যায়নি। স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির নেতারা ১৭ জুলাই আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছিলেন। ছবি তোলেন। পরের দিন ছাত্রদলের একজন স্থানীয় নেতা গুলিতে আহতও হন।