Connect with us

বাংলাদেশ

প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর : প্রত্যাশার পারদ ছিলো তুঙ্গে, অর্জন সামান্য

Published

on

প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর : প্রত্যাশার পারদ ছিলো তুঙ্গে, অর্জন সামান্য

প্রধানমন্ত্রীর আলোচিত চীন সফর একদিন আগেই শেষ হয়েছে। সফরটিকে ঘিরে বাংলাদেশের রাজনীতি ও কূটনীতিতে চলছে বিস্তর আলোচনা। বেইজিং সফরের অর্জন নিয়ে হতাশ খোদ ক্ষমতাসীনরা। বিরোধীরা বরাবরই সমালোচনায় মুখর।
যুক্তরাষ্ট্র তথা পশ্চিমা বিশ্বের সতর্ক পযবেক্ষণের মধ্যে অনুষ্ঠিত ৭ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে একটি প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তা হলো- অর্থনৈতিক সংকটসহ বিদ্যমান নানামুখি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পশ্চিমাদের বিপরীতে ভারত না চীন? কার প্রতি ঝুঁকছে ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামীলীগ। সরকার গঠনের শুরু থেকেই ভারত ও চীন দ্বৈরথে বাংলাদেশ। ভোটে সমর্থনের প্রতিদানে উভয় দেশই চেয়েছিলো পুননির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর তাদের দেশে হোক। এ নিয়ে গত ৬ মাস ধরে পর্দার অন্তরালে নানা খেলা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ১০দিনের ব্যবধানে দু’দফা ভারত সফর করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গত ৮-১০ই জুলাই চীন সেরেছেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর বেইজিং সফর ‘গেমচেঞ্জার’ হবে বলে আগাম মন্তব্য করে ঢাকাস্থ চীনের রাষ্ট্রদূত বিষয়টিতে ফোকাস বাড়ান। তাছাড়া চীনের তরফে ৫০০ কোটি ডলার সমপরিমাণ চীনা মুদ্রা ইউয়ান প্রদানের প্রস্তাবও ঢাকার প্রত্যাশা বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু সফর শেষ দেখা গেছে কাঙ্খিত অনেক কিছুই ঘটেনি। তবে হ্যাঁ, সফরটিতে দুই দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছানোর টার্গেটে এ সংক্রান্ত ২৭ দফা যৌথঘোষণা সই হয়েছে। যেখানে অর্থনৈতিক বিষয়ের চেয়ে রাজনৈতিক সম্পর্ককে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সফরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি আস্থা পূনর্ব্যক্ত করেছে চীন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তৃতীয় কারও হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধের বেইজিং শক্ত অবস্থান প্রকাশ করা হয়েছে। এই সফরে তাইওয়ানকে চীনের অংশ বলে প্রকাশ্য অবস্থান ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে বেইজিংয়ের নতুন সংযোজন ‘একচীন আদর্শ’ এর প্রতি সমর্থন দিয়েছে ঢাকা। চীনের সম্প্রচারমাধ্যম সিজিটিএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই দেশ তাদের সম্পর্ককে একটি ‘বিস্তৃত কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বে’ উন্নীত করেছে। চীনের প্রেসিডেন্টের বক্তব্যকে প্রাধান্য দিয়েই তৈরি করা রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশের সরকার প্রধানের সঙ্গে বৈঠকে প্রেসিডেন্ট শি বলেন, ১৯৭৫ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে দুই দেশ সব সময় পারস্পরিক শ্রদ্ধা বজায় রেখেছে ও পরস্পরকে সমর্থন দিয়েছে। একে অপরের সঙ্গে সমতাপূর্ণ আচরণ করেছে ও সমলাভের ভিত্তিতে সহযোগিতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে। চীন-বাংলাদেশের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ ও পারস্পরিক উপকারী অংশীদারিত্বের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ বলে উল্লেখ করেন শি। বিভিন্ন বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর এবারের চীন সফরে দুই দেশের রাজনৈতিক অবস্থানটা স্পষ্ট করা হয়েছে। তিস্তা নদীর বাংলাদেশ অংশের পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে একটি বহুমুখী প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহী চীন। বেশ ক’বছর ধরে এ নিয়ে আলোচনা চলচে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ওই প্রকল্পে আগ্রহ দেখিয়েছে ঐতবহাসিক বন্ধু ভারত। এ নিয়ে বাংলাদেশ বেশ অস্বস্তিতে। ফলে এবারের সফরে চীনের সঙ্গে এ নিয়ে একটি কথাও বলেনি ঢাকার প্রতিনিধিরা। চীনও বিষয়টি তুলেনি। ধারণা করা হচ্ছে, চীন হয়তো কৌশল পরিবর্তন করেছে। তারা বৃহত্তর অর্থে বাংলাদেশকে কাছে পেতে হয়তো তিস্তা প্রকল্প থেকে আপাতত দৃষ্টি সরিয়ে রাখবে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, পশ্চিমাদের সঙ্গে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টানাপড়েনের বিষয়টি বিবেচনায় থাকায় সাউথ চায়না সি নিয়ে বাংলাদেশ এবার খানিকটা কৌশলী অবস্থান নিয়েছে। তাছাড়া চীনের কিছু উদ্যোগেও বাংলাদেশ তাৎক্ষণিক সম্মতি না দিয়ে ব্যালেন্স করার চেষ্টা করেছে। চীনের কাছ থেকে বরাবরই প্রতিরক্ষা সহযোগিতা পায় বাংলাদেশ। এবারও তা নিয়র আলোচনা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সব পর্যায়ে এবং বিভিন্ন সশস্ত্র বাহিনী ও বিভাগের মধ্যে বিনিময় আরও জোরদার করতে এবং বাস্তবিক সহযোগিতা বাড়াতে রাজি হয়েছে দুই দেশ। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম প্রশ্নে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সম্পৃক্ততা ধরে রাখতে ঐকমত্যে পৌঁছেছে চীন ও বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় পায়রা বন্দরকে ঘিরে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সমন্বিত পরিকল্পনা দক্ষিণাঞ্চলীয় উন্নয়ন উদ্যোগে (সিডি) চীনের সম্পৃক্ততার অঙ্গীকার মিলেছে। তবে এতে তারা কিভাবে কতটা সম্পৃক্ত হবে তা এখনো অস্পষ্ট। অবশ্য চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন চিন পিংয়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর আলাপের রেফারেন্স টেনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেছেন, বাংলাদেশকে অনুদান, সুদমুক্ত ঋণ, রেয়াতি ঋণ ও বাণিজ্যিক ঋণসহায়তা দেবে চীন। এ নিয়ে আলোচনার জন্য চীনের একটি কারিগরি প্রতিনিধিদল খুব শিগগির বাংলাদেশে আসবে। কারিগরি পর্যায়ে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা যে সময়সাপেক্ষ তার ইঙ্গিত মিলেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অন্যদের কথায়। তবে তারা এটা নিশ্চিত করেছেন যে, প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে যে ১০০ কোটি ইউয়ান আর্থিক সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীন, তা হবে মঞ্জুরি।
প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর কেমন হয়েছে? সেই প্রশ্নে চীনের শিংহুয়া ইউনিভার্সিটির ন্যাশনাল ষ্ট্র্যাটেজি ইনস্টিটিউটের গবেষণা বিভাগের পরিচালক কিয়ান ফ্যাং গ্লোবাল টাইমসকে বলেন, অর্থনীতি ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার সফর দুই দেশের উচ্চতর সম্পর্কের বিকাশে অতীত ও বর্তমানের সেতুবন্ধন।
সামগ্রিকভাবে এবারের সফরের দিকে তাকালে দেখা যাবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেইজিং সফর শেষ পর্যন্ত শুধু দুই দেশের সম্পর্কের স্বার্থের পরিসরে সীমিত থাকেনি। এর সঙ্গে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিসরের নানা উপাদান জড়িয়েছে। যুক্ত হয়েছে ভূ-রাজনীতি ও ভূ–অর্থনীতি। বেইজিংয়ে দায়িত্বপালনকারী বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমেদ মনে করেন চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কে ভূ-রাজনীতি আর ভূ-অর্থনীতির আলোচনা নতুন কিছু নয়। এটি আগেও ছিল। চীন নিরেট বন্ধুত্ব চায়, তবে অন্য দেশের মত পক্ষ-বিপক্ষ বেছে নিতে জোর দেয় না। এখানেই চীনের স্বাতন্ত্রতা। চীনকে নিয়ে দুনিয়ার দেশে দেশে আলোচনা হলেও তারা (বেইজিং) পারতো পক্ষে তৃতীয় কোন দেশ নিয়ে আলোচনা করে না।

Advertisement
Comments
Advertisement

Trending