বাংলাদেশ
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আমেরিকার প্রভাব নিয়ে নানা আলোচনা
Published
5 months agoon
ডোনাল্ড লু ঢাকায় যাচ্ছেন
ফের ঢাকায় যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। এই সফরে তিনি সরকারি ও বেসরকারি নানা পর্যায়ে কয়েকটি বৈঠক ও মতবিনিময় সভায় অংশ নেবেন। ঢাকা ও ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সূত্রগুলো এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, ডোনাল্ড লু ১৪ মে দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ঢাকা সফরের সময় পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। এর পাশাপাশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন তিনি। দুই দিনের ঢাকা সফরের সময় ডোনাল্ড লুর নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও মতবিনিময়ের কথা রয়েছে।
পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন নিউইয়র্ক সময়কে বলেন, ডোনাল্ড লু এ মাসের মাঝামাঝি ঢাকায় আসার বিষয়ে আলোচনা চলছে।
গত ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের পক্ষ থেকে ডোনাল্ড লুর ঢাকা সফরটি হতে যাচ্ছে উচ্চপর্যায়ের প্রথম সফর। যদিও গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের (এনএসসি) দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল এইলিন লুবাখারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে এসেছিল। এইলিন লুবাখার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনেরও বিশেষ সহকারী। ওই সফরে ঢাকা-ওয়াশিংটনের মধ্যে সম্পর্ক জোরদারের পাশাপাশি আঞ্চলিক নিরাপত্তার নিরিখে ভূরাজনীতির বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছিল।
ঢাকার কর্মকর্তারা বলছেন, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের মতপার্থক্যটা কারও অজানা নয়। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে বিবেচনায় রেখে গত বছরের মে মাসে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। এরপর থেকে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার কথা বলে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পরও ভোট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র হতাশা প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ না করাটা হতাশাজনক।
এইলিন লুবাখারের সফরের প্রসঙ্গ টেনে এক জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের দপ্তর হোয়াইট হাউসের অধীন এনএসসি মূলত আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার পটভূমিকে বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে কাজ করে থাকে। আর ফেব্রুয়ারিতে এনএসসির পরিচালকের ঢাকা সফরের সময় মিয়ানমারের সংঘাত আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য কতটা হুমকি তৈরি করে, তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। ফলে ওই সফরের সময় দুই দেশই সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরুর বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে। নির্বাচন নিয়ে ভিন্নমত থাকলেও নিজেদের সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ওপর আলোচনায় জোর দেওয়া হয়।
ডোনাল্ড লুর সফরের বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পাঠানো চিঠিতে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবনা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্পষ্ট করেছেন। ওই চিঠির শুরুতে বাইডেন ‘যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অংশীদারত্বের পরবর্তী অধ্যায় শুরুর পর্ব’ শব্দগুলো ব্যবহার করেছেন; যা থেকে স্পষ্ট যে যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে মনোযোগ দিচ্ছে। আর অংশীদারত্বের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার হিসেবে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন ও জ্বালানি, বৈশ্বিক স্বাস্থ্য, মানবিক সহায়তা, বিশেষ করে রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যার মতো বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে। তাই ডোনাল্ড লু ঢাকায় এলে এ বিষয়গুলোর পাশাপাশি ভবিষ্যতে সম্পর্কের ক্ষেত্রে অন্য কোন বিষয়গুলোতে যুক্তরাষ্ট্র অগ্রাধিকার দেবে, সে ধারণা পাওয়া যাবে।
তবে সুশাসন, মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলোতে যুক্তরাষ্ট্র বিশেষ করে ডেমোক্রেটিক পার্টির অগ্রাধিকার কি আলোচনা থেকে হারিয়ে গেল? এমন প্রশ্নের জবাবে এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয়গুলো আলোচনা থেকে হারানোর সুযোগ নেই। সুশাসন, জবাবদিহি, মানবাধিকারসহ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়গুলোকে সামনে রাখবে না। তবে এ বিষয়গুলো নিয়ে তাদের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হবে না। কারণ, দেশটি বৈশ্বিক মানদণ্ডের দৃষ্টিকোণ থেকে এ বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নিয়ে থাকে। ফলে অন্য বিষয়গুলোকে সামনে রেখে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিষয়গুলোকে একটু পাশে সরিয়ে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে মনোযোগী যুক্তরাষ্ট্র।
আরেক কর্মকর্তা আভাস দিয়েছেন, দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার পর্বে সামনের দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র শ্রম অধিকার সুরক্ষার বিষয়টিতে জোর দিতে পারে। ফেব্রুয়ারিতে এইলিন লুবাখারের ঢাকার সফরসঙ্গী হিসেবে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) সহকারী প্রশাসক মাইকেল শিফার শ্রমিকনেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। গত মাসে বাংলাদেশ সফরে আসা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন টিকফা ফোরামের বৈঠকের পাশাপাশি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠকে শ্রম পরিস্থিতির উন্নয়নের তাগিদ দিয়েছেন।
পোশাকশিল্পের প্রতিযোগিতার সামর্থ্য নিয়ে তদন্তের অংশ হিসেবে সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সংস্থা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশন (ইউএসআইটিসি)।
গত বছরের জানুয়ারিতে ডোনাল্ড লু ঢাকা সফরে এসেছিলেন। পরের কয়েক মাসে ঢাকায় অংশীদারত্ব, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এ বছর দুই দেশের সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ তিন ফোরাম অংশীদারত্ব, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সংলাপ ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। আবার এ বছরের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এমন প্রেক্ষাপটে এই বৈঠকগুলোর ভবিষ্যৎ কী, তা নিয়ে ঢাকা সফরের সময় আলোচনা করতে পারেন ডোনাল্ড লু।
সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মো. তৌহিদ হোসেন নিউইয়র্ক সময়কে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রশান্ত মহাসাগরের পাশাপাশি এখন ভারত মহাসাগরকে ঘিরেও পরিকল্পনা করছে। এ জন্য বাংলাদেশের গুরুত্ব বাড়ছে। ভারত মহাসাগরের ঠিক ওপরের দিকে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সরকার বাংলাদেশে থাকলে এখানে তাদের একটা অবস্থান থাকল এমনটা মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। নির্বাচন নিয়ে মতপার্থক্য থাকার পরও এখন পর্যন্ত দুই দেশ সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জোরালো মনোভাব দেখাচ্ছে। সেদিক থেকে আসন্ন সফরটি তাৎপর্যপূর্ণ।
তবে বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরা বলছেন, ৭ই জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বহুল আলোচিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং নতুন সরকার গঠনের পরপরই বাইডেন প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বাংলাদেশ সফরের আলোচনা শুরু হয়। নির্বাচন প্রশ্নে ওয়াশিংটনের স্বতন্ত্র অবস্থান থাকলেও দুই দেশের মধ্য বিদ্যমান বহুমাত্রিক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা সফর করেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তার। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এটিই ছিলো যুক্তরাষ্ট্রের কোনো জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার প্রথম বাংলাদেশ সফর। কর্মকর্তারা জানান, সরকার এরইমধ্যে ১০০ দিন পার করেছে, বিধায় প্রস্তাবিত অন্য সফরগুলো বাস্তবায়নে মনোনিবেশ করছে ঢাকা।
কর্মকর্তাদের মতে, নানা কারণে সাউথ এশিয়ায় আলোচিত ডোনাল্ড লু’র ঢাকায় এটি হবে ৪র্থ সফর। একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিতে বাংলাদেশের জন্য স্বতন্ত্র মার্কিন ভিসা নীতি ঘোষণাসহ নানামুখি তৎপরতার পার্ট হিসেবে গত জুলাইতে তিনি সর্বশেষ বাংলাদেশ সফর করেন। সেই সময় যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার সঙ্গী হয়ে এসেছিলেন তিনি। ভোটপূর্ব রাজনৈতিক মাঠের বাড়তি উত্তাপের কারণে উজরা জেয়া ও ডোনাল্ড লু’র যুগল সফরটি দেশ ও দেশের বাইরে বেশ আলোচনায় ছিলো। উজরা জেয়া ও ডোনাল্ড লু সেদিন সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন।
নির্বাচন কোন ফর্মে হবে তা নিয়ে যে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো চাওয়া নেই, সেটি তাদের সফরে স্পষ্ট করা হয়েছিলো। মূলত বিষয়টি বাংলাদেশের নেতৃত্বের ওপর ছেড়েছিলো যুক্তরাষ্ট্র। তাই তো শিরোনাম হয়েছিলো- ‘বাংলাদেশের কোর্টে বল ঠেলে দিয়ে বিমানে উঠলেন উজরা’। সঙ্গে ডোনাল্ড লু।
আলোচিত সেই সফরে প্রভাবশালী ওই কর্মকর্তা খোলাসা করেই বলেছিলেন, ‘আসুন বাংলাদেশের মানুষকে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ দিই।’
জুলাইয়ের ঢাকা সফরের পরও উজরা জেয়া ও ডোনাল্ড লু’র সঙ্গে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশ নিয়েই আলোচনা হয়েছে। সর্বশেষ গত মার্চে ডোনাল্ড লু ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের একটি অনুষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতা করেছেন। সেই বক্তৃতায় যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি-আমেরিকানদের কথা উল্লেখ করে লু বলেন, তাদের শক্তি ও অসাধারণ কঠোর পরিশ্রম দুটি মহান জাতির মধ্যে সম্পর্কের ভিত্তি তৈরি করেছে। বাংলাদেশি-আমেরিকানরা দুই দেশের সম্পর্ক জোরদারে যেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, তা গর্বের বিষয়। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপনে বাংলাদেশি আমেরিকানদের অবদানের ভূয়সী প্রশংসাও করেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাম্বাসেডর ডোনাল্ড লু।
বাংলাদেশের ৫৪তম ‘স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০২৪’ উদযাপন উপলক্ষ্যে ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করছিলেন তিনি। সেই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত (অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ ও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত) এম. জিয়াউদ্দিন, বিশ্বব্যাংকের সাবেক বিকল্প নির্বাহী পরিচালক এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া থেকে নির্বাচিত স্টেট সিনেটর বাংলাদেশি আমেরিকান সাদ্দাম সেলিম এবং আওয়ামী লীগ যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ নিয়ে ডোনাল্ড লু’র সর্বশেষ আলোচিত ঘটনা ছিল জাতীয় নির্বাচনের আগে কোনো ধরনের পূর্বশর্ত ছাড়াই সব রাজনৈতিক দলকে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে গত ১৩ নভেম্বর লেখা চিঠি। চিঠিতে বলা হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র চায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সুষ্ঠু ও অবাধে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। এজন্য সব পক্ষকে সহিংসতা থেকে বিরত থেকে সংযম পালনের আহ্বান জানানো হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষাবলম্বন করে না। কোনো ধরনের পূর্বশর্ত ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্র সব পক্ষকে সংলাপ বসার আহ্বান জানাচ্ছে। গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এমন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সমভাবে ভিসানীতির প্রয়োগ অব্যাহত রাখবে।
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস বিএনপি ও জাতীয় পার্টির কাছে ডোনাল্ড লু’র চিঠিটি পৌঁছে দেয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের হাতে পৌঁছাতে তা আরো দুই দিন লেগে যায়। মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ১৫ নভেম্বর চিঠিটি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের হাতে পৌঁছে দেন। চিঠি হাতে পাওয়ার পর ওবায়দুল কাদের বলেন, আজই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে। এখন সংলাপের সময় নেই। রাতে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আওয়াল নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপির সাথে সমমনা দলগুলো ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন বর্জন করে। জাতীয় পার্টিসহ সরকার ঘনিষ্ঠ দলগুলোর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন করে। ভারত, চীন ও রাশিয়া সর্বপ্রথম এই সরকারকে স্বাগত জানায়। পরবর্তী সময়ে অন্যান্য দেশও স্বাগত জানিয়ে সরকার প্রধানকে চিঠি দেয়।
পরবর্তী সময়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে ওয়াশিংটন জানায়, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। তবে বাংলাদেশের নতুন সরকারের সাথে কাজ করতে যুক্তরাষ্ট্র আগ্রহী। ফেব্রুয়ারির শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানান, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে একসাথে কাজ করতে আগ্রহী তার সরকার। একই মাসের শেষে ঢাকা সফর করেন বাইডেনের বিশেষ সহকারী ও দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক এইলিন লাউবাখেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল।
ওই প্রতিনিধিদলে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা ইউএসএআইডির সহকারী প্রশাসক মাইকেল শিফার এবং দেশটির উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আখতারও ছিলেন। নতুন মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর এটি যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রথম সফর ছিল। সর্বশেষ, চলতি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের (ইউএসটিআর) দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী ব্রেন্ডান লিঞ্চের নেতৃত্ব একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে ঢাকা সফর করে গেছেন।