Connect with us

বাংলাদেশ

বাংলাদেশে ৩৫ শিশু নিখোঁজের গুজব

Published

on

বাংলাদেশে ৩৫ শিশু নিখোঁজের গুজব

‘৪৮ ঘণ্টায় ৩৫ শিশু নিখোঁজ বা হারানো গেছে’ এমন খবরে সয়লাব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এগুলো শুধুই গুজব। যারা হারিয়েছে তারা ঘণ্টা চারেক বাসায় ছিলো না। আবার কোন শিশু দূরে তাদের বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে গিয়েছিল।
পুলিশ বলছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজবে বিশ্বাস করার কোন কারণ নেই। যে বা যারা এইসব তথ্য সত্য বলে পোস্ট করছে তাদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শনিবার সকাল থেকে ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে বা কোন ব্যক্তিগত আইডি থেকে শিশু-কিশোর হারানোর তথ্য ফেসবুকে ভাসতে থাকে। এর বেশিরভাগই চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা কেন্দ্রিক ফেসবুক আইডি থেকে ছড়ানো হয়।
ফেসবুক’র তথ্যানুযায়ী রাজধানীতে বসবাসকারী ক্যালিগ্রাফার সাইফুল্লাহ সাফা নামে একজন শুক্রবার সন্ধ্যায় তার পোস্টে লিখেন, ‘গত ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ঢাকাসহ চট্টগ্রামে ৩৫ শিশু নিখোঁজ! সারাদেশে এগুলো কি শুরু হলো হঠাৎ!! একটানা এত ছেলে মেয়ে নিখোঁজের সংবাদে জনমনে আতংক সৃষ্টি হয়েছে। ছেলে ধরার মতো,কোন একটা সক্রিয় চক্র মাঠে নেমেছে। সবাই সাবধান হোন। এ ব্যাপারে প্রশাসন অর্ধমৃত। আপনার সন্তানের নিরাপত্তায় আপনি সচেতন হোন। নিউজটি দ্রুত শেয়ার করে সবাইকে এলার্ট করে দিন।’
রাজিব হোসেন নামের আরেক ব্যবহারকরী লিখেন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা, ফরিদপুর ও চট্টগ্রামের ৩৫ শিশু নিখোঁজ। বিষয়টি সত্যিই ভয়ংকর। এড়িয়ে গেলে চলবে না।
এছাড়াও ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপে শিশু হারানোর বিষয়টি ভাইরাল হয়। অনেকে বুঝে না বুঝে এসব তথ্য শেয়ার করা শুরু করেন। এমন তথ্য দেখতে পেয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের অভিভাবকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। অনেকে চ্যানেল আই অনলাইন ও চ্যানেল আইয়ের হট লাইন নাম্বারে ফোন করে বিষয়টির সত্যতা জানতে চান।
সারাদিন ব্যাপী এসব পোস্টগুলোর স্ক্রিনশর্ট থেকে দেখা যায়, কিছু পোস্টে কেবল মাদ্রাসা ছাত্র নিখোঁজ হচ্ছে, আবার কিছু পোস্টে মুসলিম ছাত্র, কোথাও মেয়েদের কথা বলা হয়েছে। কোথাও স্থান বদলে ঢাকা, চট্টগ্রামের সঙ্গে অন্যান্য জেলার নামও জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
স্ক্রিনশট থেকে প্রাপ্ত পোস্ট দাতা বেশ কয়েকজনের সঙ্গে ম্যাসেঞ্জার ও মোবাইল ফোনে কথা বলেছেন চ্যানেল আই অনলাইনের প্রতিবেদক। মীর সাজিদ হোসেন তার পোস্টে ফোন নাম্বার উল্লেখ করে দাবি করেন তিন জন মাদ্রাসা শিক্ষার্থী নিখোঁজ হয়েছে। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন: দু’দিন আগে ঘণ্টা তিনেকের জন্য তারা একটু দূরে খেলতে গিয়েছিল। পরে আবার ফিরে এসেছে।
এ জে আবদুল্লাহ লিখেছেন আমার বন্ধুর ছোটবোনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। স্কুল ড্রেসে ছিল আর বাসায় ফিরে নি। তার পোস্টের কমেন্টেই ব্যবহারকীরা জানিয়ে দিয়েছিল এই মেয়েকে কিছুক্ষণের মধ্যেই পাওয়া গেছে। মো. শাহজালাল পিংকু লেখেন বাহ্মণবাড়িয়ার পলিটেকনিকের এক শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষা দিতে গিয়ে নিখোঁজ। তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোন এক ফেসবুক বন্ধুর পোস্ট তিনি শেয়ার দিয়েছেন।
এছাড়াও বেশ কয়েকজন পোস্ট দাতারা পোস্ট মুছে ফেললেও স্ক্রিনশটগুলো বিভিন্ন গ্রুপে গ্রুপে ঘুরছে। তারা আসলে কিছুই জানেন না কে নিখোঁজ হল, কখন ফিরে আসলো কিছুই বলতে পারেন না তারা। যারা নিজেদের আত্মীয় স্বজন বা বোন কিংবা বন্ধুর বোন বলে পোস্ট দিয়েছে তাদের কোন নিকট আত্মীয় নিখোঁজ হয়নি। আসলে কেউ কেউ বেশ কয়েক ঘণ্টা নিখোঁজ থাকলেও তারা ফিরে এসেছে। ফিরে পাওয়ার বিষয়টি সত্যিকারের আত্মীয় স্বজনরা জানালেও যারা না বুঝে শেয়ার করেছেন তারা আর সেটা করেন নি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার ক্রাইম সেল বলছে বিষয়টি তারা গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছেন। যারা এসব গুজব ছড়াচ্ছে তাদের ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপারেশনস) বিপ্লব কুমার সরকার চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর পোস্টগুলো নিশ্চিত না হয়ে বিশ্বাস করবেন না। প্রয়োজনে জাতীয় জরুরী সেবা নম্বর ৯৯৯ এ কল করবেন।
জেনে, না জেনে যারা এসব গুজব শেয়ার করছেন তারা জানেনই না অন্যদের ওপর কী প্রভাব পড়ছে। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ।

Advertisement
Comments
Advertisement

Trending