বাংলাদেশ
মিন্টুই কি এমপি আনার হত্যার নির্দেশদাতা!
Published
3 months agoon
বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা প্রকাশের পর থেকেই সবার মনে প্রশ্ন, কার হাত রয়েছে এর পেছনে? কে নির্দেশদাতা, কে কিলারদের অর্থের জোগান দিয়েছে? মামলার তদন্ত কর্মকর্তাও গভীরভাবে বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধান করতে থাকেন। তিনবারের এই এমপিকে কলকাতা নিয়ে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করতে তদন্ত কর্মকর্তাদের কিছুটা সময় লাগলেও এখন অনেকটাই খোলাসা হচ্ছে জাল। আনারের কিলার শিমুল ভূঁইয়ার জবানবন্দি এই হত্যাকাণ্ডের জট খুলে দিয়েছে। তার দেয়া তথ্য নিয়ে কাজ করে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা দু’জন রাজনৈতিক ব্যক্তির নাম পান। প্রথমে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ ওরফে গ্যাস বাবুকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করলে তদন্ত কার্যক্রম বেগবান হয়। বাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ডিবি শিমুল ভূঁইয়ার তথ্যের সত্যতা পায়। তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে ডিবি নিশ্চিত হয় আনার হত্যার পেছনে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর বড় ধরনের ভূমিকা রয়েছে। এ সংক্রান্ত একাধিক তথ্যও পায় ডিবি। পরে ঢাকার ধানমণ্ডি এলাকা থেকে আটক করা হয় মিন্টুকে।
ডিবি আগেই বলেছিল আটক মিন্টুর কাছে কিছু বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে। যদি তিনি এসব বিষয়ে যুক্তিসঙ্গত উত্তর ও প্রমাণ দিতে পারেন তবে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে। কিন্তু তিনি সেটা পারেননি। তার বিরুদ্ধে ওঠা কোনো অভিযোগের সদুত্তর দিতে পারেননি। বরং তিনি তদন্ত কর্মকর্তাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এড়িয়ে গিয়েছেন। ডিবি’র হাতে থাকা তথ্য প্রমাণের বিরুদ্ধে কোনো অবস্থানই নিতে পারেননি। পরে ডিবি অনেকটা নিশ্চিত হয় আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মিন্টুই নির্দেশদাতা ও অর্থের যোগানদাতা। তার নির্দেশেই পলাতক শাহীন কিলার শিমুল ভূঁইয়াকে দিয়ে একটি টিম গঠন করে হত্যা মিশন বাস্তবায়ন করেছেন। ডিবি মিন্টুকে ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় করা অপহরণ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। শুনানি শেষে আদালত ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অনেকগুলো বিষয় এখন স্পষ্ট। এ ছাড়া তথ্যপ্রমাণের ঘাটতিও এখন নাই। তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে নির্দেশ ও অর্থের যোগানদাতা হিসেবে এখন পর্যন্ত মিন্টুর অবস্থান স্পষ্ট। শিমুল, বাবু ও মিন্টুকে মুখোমুখিও করা হতে পারে। তাহলেই এ ঘটনার রহস্য বেরিয়ে আসবে।
গ্যাস বাবু রিমান্ডে জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডের পরে কিলার শিমুল ভূঁইয়াকে যে টাকা দেয়ার কথা ছিল সেই টাকা লেনদেনের বিষয়ে ডিজিটালি এবং ফিজিক্যালি তিনি মিন্টুর সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডের প্রমাণস্বরূপ ছবি আদান-প্রদান করেছেন। ২৩শে মে মিন্টুর কাছ থেকে দুই কোটি টাকার অর্ধেক টাকা নিয়ে শিমুল ভূঁইয়াকে দেয়ার কথা ছিল তার। ডিবি জানিয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মিন্টুকে এমপি আনার হত্যাকাণ্ড পরিকল্পনায় আরও কেউ জড়িত আছে কিনা সে ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান করেন। ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা নিয়ে প্রশ্ন করলেও একেক সময় একেক রকম তথ্য প্রদান করছেন। ঘটনার অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর তিনি কৌশলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। ডিবি’র অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, মিন্টু আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অর্থদাতা ও নির্দেশদাতা ছিলেন কিনা তা তদন্তে বের করা হবে। কিলার শিমুল ভূঁইয়া ও গ্যাস বাবুর জবানবন্দিতে কিছু তথ্য-উপাত্ত পেয়েছি। এ কারণে মিন্টুকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তাকে ব্যাপক আকারে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।