বাংলাদেশ
যুক্তরাষ্ট্রসহ বড় বাজারে পোশাক রপ্তানি কমছেই
Published
3 months agoon
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি কমা শুরু করেছে অনেকদিন ধরেই। সেইসঙ্গে কানাডা, জার্মানিসহ তৈরি পোশাকের বড় বাজারগুলোতেও কমছে রপ্তানি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) তৈরি পোশাকের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইতালি ও জার্মানির মতো দেশে রপ্তানি কমেছে। যদিও এ সময় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাজ্যসহ নতুন কিছু বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানি বেড়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো প্রকাশিত প্রতিবেদন (ইপিবি) বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানা গেছে।
এতে দেখা যায়, অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত ১১ মাসে জার্মানির বাজারে ৫৪২ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ১২ শতাংশ কম। একই সময় ইতালির বাজারে পণ্য রপ্তানি করেছে ১৯৩ কোটি ডলার; যা এর আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ দশমিক ১০ শতাংশ কম।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানির নেতিবাচক ধারা থেকে এখনো বের হতে পারেনি বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের জুলাই-মে পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ৭৪৭ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। রপ্তানির এ অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ কম। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে ৭৭৩ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। আলোচিত সময় কানাডার বাজারেও রপ্তানি করেছে দশমিক ৩১ শতাংশ। এ সময় ১৩৮ কোটি ডলারের পোশাক পণ্য রপ্তানি করেছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময় ছিল ১৩৯ কোটি ডলার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথমত বিশ্বব্যাপী মন্দার কারণে তৈরি পোশাকের চাহিদা কমে গেছে। তবে ভিয়েতনাম এবং চীনের রপ্তানি খুব বেশি না কমলেও বাংলাদেশের রপ্তানি কমছে অস্বাভাবিক হারে। এর জন্য চারটি কারণকে দায়ী করে তারা বলছেন, ব্যাংক খাতের অসহযোগিতা, কাস্টমসের প্রতিবন্ধকতা, গ্যাস-বিদ্যুতের অপর্যাপ্ততা এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে রপ্তানি প্রণোদনা বন্ধ করে দেওয়ার কারণেই কমছে তৈরি পোশাক রপ্তানি।
বাংলাদেশের নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, ‘ব্যাংক সময়মতো ব্যাক টু ব্যাক এলসি করছে না, পদে পদে কাস্টমসের হয়রানির স্বীকার হতে হচ্ছে আমাদের। আর বর্তমান সময়ের মতো গ্যাস-বিদ্যুতের অপর্যাপ্ততা আগে কখনো দেখিনি। এসব সমস্যার কারণে আমাদের লিড টাইম বেশি লাগে। ফলে ক্রেতারা আমাদের অর্ডার না দিয়ে চীন বা ভিয়েতনামকে দিয়ে দিচ্ছে। এতে তাদের রপ্তানি না কমলেও আমাদের ক্রয়াদেশ কমে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘গুদামে পণ্যের মজুত ফুরিয়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান আগের চেয়ে দ্রুত বা কম লিড টাইমে পণ্য নিচ্ছে। আমাদের লিড টাইম (ক্রয়াদেশ থেকে পণ্য জাহাজীকরণের সময়) বেশি হওয়ায় এসব ক্রয়াদেশ নিতে পারছি না আমরা। কারণ, আমাদের গভীর সমুদ্রবন্দর নেই। তা ছাড়া গ্যাস সংকটের কারণে আমাদের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। আগে আমরা ৪০ থেকে ৬০ দিনে যেসব পণ্য দিতে পারতাম, সেগুলো দিতে এখন লাগছে ৫০ থেকে ৮০ দিন। ফলে চীন ও ভিয়েতনামের রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় ফিরলেও আমরা পারছি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার আইএমএফের পরামর্শে রপ্তানিতে প্রণোদনা বন্ধ করে দিয়েছে, যা কোনোভাবেই ঠিক হয়নি। কারণ আইএমএফ কখনো বাংলাদেশের উন্নতি চায় না। তারা অন্য দেশের উন্নতি করতে গিয়ে বাংলাদেশকে ভুল পরামর্শ দেয়, যা বাংলাদেশের উন্নতিতে কখনোই কাজে আসে না।’
প্রধান বাজারগুলোতে কমলেও যুক্তরাজ্যের বাজারে পোশাক রপ্তানি ইতিবাচক ধারা অব্যাহত আছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের বাজারে ৫১৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়; যার প্রবৃদ্ধির হার ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ। বিজিএমইএ জানায়, নতুন বাজারে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে ৮১৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রপ্তানি বেড়েছে ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ। নতুন বাজারের মধ্যে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়ায় তৈরি পোশাক রপ্তানি বাড়লেও ভারতে কমেছে। ভারতে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে ৭২ কোটি ৮৮ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে; যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৩ শতাংশ কম। গত বছর এ সময় প্রতিবেশী দেশটিতে রপ্তানি হয়েছিল প্রায় ৯৫ কোটি ডলার। জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে তৈরি পোশাক খাত থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ৪ হাজার ৩৮৫ কোটি ডলার। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এর আগে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪ হাজার ৬৯০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছিল। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ।