Connect with us

বাংলাদেশ

রবিবার থেকে বাংলাদেশে ‘বাংলা ব্লকেড’র ডাক কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের

Published

on

রবিবার থেকে বাংলাদেশে ‘বাংলা ব্লকেড’র ডাক কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের

সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের লাগাতার আন্দোলন চলছে। তবে কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানীর শাহবাগ থেকে এক ধরনের কর্মসূচির ঘোষণা এলেও দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের মতো করে কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। সে কারণে এবার সব বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা সমন্বিত আন্দোলন শুরু করতে যাচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে আজ রোববার বিকেল ৩টা থেকে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন আন্দোলনকারীরা। সমন্বিত আন্দোলনকে বেগবান করতে তাই তারা একটি কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করার কথাও ভাবছেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের দাবিতে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ নামে একটি অরাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠেছিল। ওই প্ল্যাটফর্ম থেকে আন্দোলন বিষয়ে যে ঘোষণাই এসেছে, শিক্ষার্থীরা তা বাস্তবায়ন করেছেন। তবে ২০২৪ সালে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলনে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি হলেও সেটি শুধু রাজধানীতে তাদের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
তারা বলছেন, গত শুক্রবার রাজধানীতে মাঠের কোনো কর্মসূচি ছিল না। আন্দোলনকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে জনসংযোগ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগগুলোতে সমন্বয় সভা করেছেন। তবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা এদিন সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। সমন্বয়ের অভাবে এমনটি হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রথম সারির এক নেতা কালবেলাকে বলেন, আমরা ২০১৮ সালে যেভাবে একটি অরাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সারা দেশে নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে পেরেছি, এখন সেভাবে হচ্ছে না। যে কারণে সারা দেশের আন্দোলনে সমন্বয় নেই। সমন্বিত কর্মসূচি না থাকলে আন্দোলন বেগবান করা যাবে না।
গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক ও ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন বলেন, সারা দেশে যাতে সমন্বিত আন্দোলন পরিচালনা করা যায়, সেজন্য আমরা একটি কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক কমিটি গঠন করার কথা ভাবছি। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি সাত কলেজ এবং অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা থাকবেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেই কমিটি হবে।
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম কালবেলাকে বলেন, সমন্বিত আন্দোলনের জন্য আমরা রাজধানীর ও বাইরের বিশ্ববিদ্যালয় ও বড় সরকারি কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। সে অনুযায়ী ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। সমন্বিত আন্দোলনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমরা একটি কমিটি গঠন করব। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা থাকবেন।
‘বাংলা ব্লকেড’ ঘোষণা: গতকাল বিকেল ৪টায় লাগাতার কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। এক ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নেন কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা। তবে অবরোধ প্রত্যাহারের আগে রোববার বিকেল ৩টা থেকে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা। এর আগে বিকেল ৩টায় পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হন। সেখান থেকে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করেন। পরে মিছিল নিয়ে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন।
অবরোধ তুলে নেওয়ার আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক বলেন, রোববার বিকেল ৩টা থেকে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করা হলো। শুধু শাহবাগ মোড় নয়, শাহবাগ ও ঢাকা শহরের সায়েন্স ল্যাব, চানখাঁরপুল, নীলক্ষেত, মতিঝিলসহ প্রতিটি পয়েন্টে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা নেমে এসে কর্মসূচি সফল করবেন। ঢাকার বাইরের জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করবেন।
ছাত্র ধর্মঘট ও ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচিতে এরই মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরে গেলেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরে যাব না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার অবিলম্বে খুলে দিতে হবে, নয়তো আমরা নিজ দায়িত্বে সেটি খুলে নিতে বাধ্য হবো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে আন্দোলনকারীদের বাধা দিচ্ছেন ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীরা। আমরা কিন্তু হলের তালা ভাঙতে জানি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এ ব্যাপারে তৎপর হওয়ার আহ্বান জানাই।
এদিকে গতকাল শাহবাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন। পুরান ঢাকার তাঁতিবাজার মোড়ে সড়ক অবরোধ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ মিছিল ও গণসংযোগ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা রোববার ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধের ঘোষণাও দিয়েছেন। ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরপর প্যারিস রোডে অবস্থান করে কোটার প্রতিবাদে একটি পথ নাটক উপস্থাপন করেন তারা।
একই দাবিতে চট্টগ্রামে শিক্ষার্থী সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখান থেকে রোববার কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অনুযায়ী সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা ২ নম্বর গেটে সড়কে অবস্থান করেছেন। বৃষ্টি উপেক্ষা করে আন্দোলন করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা। তারা আধা ঘণ্টার মতো কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধও করেন। তৃতীয় দিনের মতো আন্দোলন করেছেন তারা।
ময়মনসিংহে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন ময়মনসিংহ সরকারি কলেজ, নাসিরাবাদ কলেজ, সরকারি আনন্দ মোহন কলেজসহ বেশ কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রায় দুই ঘণ্টা ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ঢাকা-টাঙ্গাইল ও বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে দেড় ঘণ্টাব্যাপী অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সারা দেশের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বিক্ষোভ মিছিল ও পাবনা-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন পাবিপ্রবি সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

Advertisement
Comments
Advertisement

Trending