বাংলাদেশ
১৬ বছর ধরে ঢাকায় বসবাস, বাংলাদেশ নিয়ে কী বলছে ভারতীয় পরিবারটি
Published
1 month agoon
মিরা মেনন বাংলাদেশে বসবাসকারী একজন ভারতীয়। ১৬ বছর ধরে পরিবারের সঙ্গে এ দেশে আছেন তিনি। বললেন, নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কারণে তাঁর মা কেরালা থেকে অনবরত তাঁদের বাংলাদেশ ছাড়তে বলছেন। তবে ঢাকাকে নিজের বাড়ির মতো মনে করে তাঁর মেয়ে। তাই এ দেশ ছেড়ে যাওয়া তাঁদের জন্য সহজ নয়।
কোটা সংস্কার নিয়ে গত জুলাইয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হলে দেশে সহিংসতা দেখা দেয়। এতে ভারতীয়দের একটি বড় অংশ এখান থেকে নিজ দেশে চলে যায়। একপর্যায়ে ছাত্র–জনতার নজিরবিহীন প্রতিরোধের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা।
মিরা (৪৫) দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্যের ত্রিশূর জেলার স্থায়ী বাসিন্দা। স্বামী ও মেয়ে অবন্তিকাকে (১৪) নিয়ে ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে থাকেন তিনি। স্বামী এখানকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিকতম ওই আন্দোলন চলাকালে নিজের কিছু অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেন মিরা। বাসা থেকে ভারতের সর্ববৃহৎ সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে তিনি বলছিলেন, ‘এক ছুটিতে আমরা কেরালায় ছিলাম। ৪ আগস্ট ঢাকায় ফিরে আসি। সেদিন কারফিউ (বাংলাদেশে) চলছিল। কিন্তু এক দিনেই পরিস্থিতি যে এত নাটকীয় মোড় নেবে, সে বিষয়ে কোনো ধারণা ছিল না।’
মিরা বললেন, ‘ঢাকায় আমরা যেখানে থাকি, বিক্ষোভের সময় সেখানে অস্বস্তিকর কোনো কিছু ঘটেনি। তবে রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা টহল দিতেন, শোনা যেত বাঁশি বাজানোর শব্দ। তাতে আমার ঘুমের ওপর প্রভাব পড়ে।’
ঢাকায় এক প্রাণবন্ত ভারতীয় কমিউনিটির বসবাস। এ কমিউনিটির লোকজন এসেছেন ভারতের বিভিন্ন এলাকা থেকে। তাঁদের একজন মিরা মেনন। গৃহিণী মিরা ঢাকা মালয়েলি অ্যাসোসিয়েশনের (ডিএমএ) সভাপতিও।
মিরা বলেন, ‘প্রতিবছর আমরা আমাদের বিভিন্ন উৎসব এখানেই উদ্যাপন করি। এই সেপ্টেম্বরেও এমন একটি উৎসব উদ্যাপন করার কথা ছিল। সেটি ২৭ সেপ্টেম্বর ওনাম উৎসব। কিন্তু ঠিক এই মুহূর্তে প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে আমরা বোট ক্লাবে আমাদের আসন সংরক্ষণ বাতিল করেছি।’
‘এ ক্লাবের আরও অনেক সদস্য কেরালা বা ভারতের অন্যান্য স্থানে চলে গেছেন। তাঁদের কেউ কেউ সংক্ষিপ্ত ছুটি কাটাচ্ছেন। কেউ আবার ঢাকায় ফিরবেন কি না, তা নিয়ে আছেন দোটানায়। পরিবারের সদস্যদের ভারতে রেখে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অল্পসংখ্যক মানুষ’, বলেন ত্রিশূরের স্থায়ী বাসিন্দা মিরা। বিয়ের পর ২০০৮ সালে প্রথম বাংলাদেশে আসেন তিনি।
ভারতীয় এই নারী বলেন, ‘ভারতীয়দের মধ্যে যাঁরা এখনো ঢাকায় রয়েছেন বা ভারতে গেছেন; তাঁরা ঢাকায় থাকা বা ঢাকায় ফেরত আসা, অন্য কোথাও যাওয়া—এসব নিয়ে ভীষণ রকমের সংশয়ে বা দোটানায় আছেন। তাঁদের মধ্যে আছে একধরনের অনিশ্চয়তার অনুভূতি।’
মিরা বলেন, ‘আমার মা কেরালা থেকে প্রতিদিন ফোন করেন, খোঁজখবর নেন। ভারতে আমাদের চলে আসতে বলেন। এমনকি যখন দীর্ঘ ছুটি কাটিয়ে আমরা ঢাকা ফিরছিলাম, তখনো ভারতে ফেরত আসতে অনুরোধ করছিলেন তিনি।’
মিরা স্বীকার করেন, তিনি তাঁর পরিবার ও নিজের নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ এবং ঢাকাকে নিয়ে তাঁদের, বিশেষ করে মেয়ের বন্ধনের যে অনুভূতি—এ দুইয়ের মাঝে থেকে অস্বস্তিতে ভুগছেন।
‘আমরা প্রথম যখন বাংলাদেশে আসি, তখন আমার মেয়ের বয়স ছিল ১০ মাসের মতো। আক্ষরিক অর্থেই সে এখানে বেড়ে উঠেছে এবং ঢাকার সঙ্গে তার একটা বন্ধন তৈরি হয়েছে। ১৬ বছর ধরে ঢাকায় সুন্দরভাবে থাকছি আমরা। ঢাকা আমাদের বাড়ির মতো। তাই ঢাকার সঙ্গে আমাদেরও একই রকম বন্ধন তৈরি হয়েছে’, বলেন মিরা।
এ দেড় দশকে মিরা এবং তাঁর পরিবার ঢাকার জনজীবন ও সংস্কৃতির সঙ্গে ভালোভাবেই খাপ খাইয়ে নিয়েছে। সঙ্গে আঁকড়ে রেখেছে নিজস্ব ধর্মীয় রীতি ও সংস্কৃতিও। তাদের বাড়িতে ঢুকতেই চোখে পড়ে সেই রীতিনীতি–সংস্কৃতির ছাপ।
মিরার স্বামী সুরেশও একজন মালয়েলি। মুম্বাইয়ে বেড়ে উঠেছেন তিনি। আর তাঁর মেয়ে ভারতনাট্যমের একজন প্রশিক্ষিত নৃত্যশিল্পী, কথা বলে অনর্গল বাংলায়।
মিরা জানান, তাঁর স্বামী নিজেকে শান্ত রাখতে সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের খবর থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করেন। ভারতে ফিরে যাওয়া বা অন্য কোথাও স্থানান্তরিত হওয়ার বিষয় কখনো কখনো তাঁদের ঘরোয়া আলোচনায় উঠে আসে।
নবম শ্রেণির ছাত্রী অবন্তিকা বলে, সম্প্রতি সে যখন কেরালায় ছিল, তখন তার নানি তাকে ভারতে ফিরে আসার অনুরোধ জানান।
অবন্তিকার বেড়ে ওঠা যেখানে, সেই ঢাকা সম্পর্কে নিজের অনুভূতি কেমন, জানতে চাইলে ১৪ বছর বয়সী এই শিক্ষার্থী বলে, ‘ঢাকা আমার বাড়ির মতো। কেরালায় গেলে মনে হয়, কোথাও ঘুরতে এসেছি।’
মিরা বলেন, ডিএমএ ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। সংগঠনটির সদস্য ৬০ জন। তিনি এর সভাপতি। ২০২৩ সালে প্রথম নারী হিসেবে সংগঠনটির এ দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। তাঁর হিসাবে, বাংলাদেশে প্রায় ২০০ মালয়েলি বসবাস করেন।
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে মিরা বলেন, এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক মনে হচ্ছে। তবে সামনের কয়েক সপ্তাহ বা মাস ঠিক কী ঘটতে চলেছে, সে বিষয়ে কেউ জানেন না। অবশ্য, দৃশ্যত পরিস্থিতি স্বাভাবিক মনে হচ্ছে, স্কুল খুলেছে, অফিসে কাজকর্ম হচ্ছে এবং রাস্তাঘাটও স্বাভাবিক রয়েছে।
এর আগের পরিস্থিতি সম্পর্কে মিরা বলেন, ‘আমরা ঢাকায় ফেরার ঠিক পরদিন (৫ আগস্ট) বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী (ক্ষমতাচ্যুত) দেশত্যাগ করেছেন। আমরা এখানেই ছিলাম, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অনুপস্থিতি দেখেছি, আমরা সবকিছুই প্রত্যক্ষ করেছি।’
শেখ হাসিনা কি ভারত ছেড়েছেন?
বিশ্বের প্রভাবশালী মুসলিমের তালিকায় ড. ইউনূস
জেলে না গিয়ে বঙ্গভবনে শপথ নিলাম: ড. ইউনূস
সংলাপ : সংস্কার ও নির্বাচনী রোডম্যাপে গুরুত্ব
সিরাত মাহফিলে ইসলামী দলগুলোর ঐক্যের ডাক
সরকারী অনুদানে বাসা বাড়িতে অনেকটা ফ্রি-তে পাচ্ছেন হিটিং কুলিং সিস্টেম
আবু জাফর মাহমুদ ও বাংলাসিডিপ্যাপের বিরুদ্ধে আমিনুল ইসলামের মামলা
এক্সক্লুসিভ : অবশেষে ওয়াশিংটন দূতাবাসে চুরির ঘটনা তদন্তের নির্দেশ
আওয়ামী লীগ সরকারের এমন অবস্থা হবে ১৫ বছর আগেই আঁচ করেছিলাম
আমি কাছাকাছিই আছি যাতে চট করে দেশে ঢুকে পড়তে পারি
Trending
-
কমিউনিটি সংবাদ3 days ago
সরকারী অনুদানে বাসা বাড়িতে অনেকটা ফ্রি-তে পাচ্ছেন হিটিং কুলিং সিস্টেম
-
নিউইয়র্ক3 days ago
এক্সক্লুসিভ : অবশেষে ওয়াশিংটন দূতাবাসে চুরির ঘটনা তদন্তের নির্দেশ
-
সারা বিশ্ব6 days ago
কলকাতা যাওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ গোবিন্দ, আরও যা জানা গেল
-
বাংলাদেশ3 days ago
নির্বাচন নিয়ে সেনাপ্রধান ও সরকারের বক্তব্যে অমিল