Connect with us

বাংলাদেশ

ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’: নজিরবিহীন দীর্ঘ অবস্থান ভবিষ্যতের জন্য অশনিসংকেত

Published

on

ঘূর্ণিঝড় রিমাল খুব ভয়ংকর রূপ ধারণ না করলেও দীর্ঘ সময় ধরে উপকূলে অবস্থান করেছে। দীর্ঘ সময় ছিল সাগরের বুকেও। অগ্রভাগ উপকূলে স্পর্শ থেকে শুরু করে নিম্নচাপ পর্যন্ত প্রায় ৪৮ ঘণ্টা স্থলভাগে ঘুরপাক খাচ্ছিল। এর প্রভাবে সারাদেশে বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া বয়ে গেছে। মঙ্গলবারও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, গত ২২ মে পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়, যা ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় করে সুস্পষ্ট লঘুচাপ, নিম্নচাপ, গভীর নিম্নচাপ অবস্থা পেরিয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয় শনিবার সন্ধ্যায়। তখন এর নাম দেওয়া হয় রিমাল। রোববার সকালে ঘূর্ণিঝড়টি পরিণত হয় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে। ওই দিন বিকেলে ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগ স্থলভাগ স্পর্শ করে। আজ সোমবার রাত ১১টা পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়টি নিম্নচাপ আকারে উপকূল অতিক্রম করছিল। নিম্নচাপটি পুরোপুরি বিদায় নেবে আগামীকাল মঙ্গলবার।

এর আগে বাংলাদেশে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়গুলো দুই থেকে ছয় ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশ ভূখণ্ড অতিক্রম করে গেছে। সর্বোচ্চ ১২ ঘণ্টা এর প্রভাবে দমকা হাওয়া ও বৃষ্টি ঝরেছে। এ হিসেবে ঘূর্ণিঝড় রিমাল বেশ ব্যতিক্রমী আচরণ করেছে। টানা আড়াই দিন বৃষ্টি ঝরবে দেশে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, রিমাল উপকূলে স্পর্শ থেকে শুরু করে নিম্নচাপ পর্যন্ত প্রায় ৪৮ ঘণ্টা উপকূলে ছিল। এর প্রভাবে ভারী বৃষ্টি ও ঝোড়ো বাতাস বয়ে গেছে। ২০০০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ উপকূলে যে ঘূর্ণিঝড়গুলো আঘাত হানে, সাধারণত দুই থেকে ছয় ঘণ্টার মধ্যে তা স্থল নিম্নচাপ থেকে দুর্বল হয়ে বাংলাদেশ ভূখণ্ড অতিক্রম করে যায়। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় রিমাল আঘাত হানার পর যে স্থল নিম্নচাপটি তৈরি হয়েছে, তা আজ রাত পর্যন্ত দেশের উপকূলে বেশি সক্রিয় ছিল। মঙ্গলবার পর্যন্ত বাংলাদেশ ভূখণ্ডে তা অবস্থান করে দুর্বল হতে পারে।

তিনি বলেন, সাগরে প্রচুর তাপ তৈরি হচ্ছে। বাড়তি তাপ অনেক বেশি শক্তি সঞ্চয় করে। সাগরে ১ ডিগ্রি তাপ বাড়লে বায়ুপ্রবাহ ৭ শতাংশ বেড়ে যায়। তাপ ধারণ করতে করতে ভেতরে শক্তি বেড়ে যায়, যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে বৃষ্টির মাধ্যমে।

আজিজুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমাল সৃষ্টির সময় বঙ্গোপসাগরে ছিল অতিরিক্ত উষ্ণতা। এ সময়ে স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকার কথা ২৬ থেকে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, কিন্তু দুই মাস ধরে সেখানে তাপমাত্রা ছিল ২৯ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ‌ সমকালকে বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে ঘূর্ণিঝড়গুলোর চলার গতি (আবহাওয়া বিজ্ঞানের ভাষায় ট্রান্স স্পিড) খুবই ধীর হবে। আমেরিকার জাতীয় আবহাওয়া সংস্থার বিজ্ঞানী জেমস খিন ১৯৪৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রমাণ পেয়েছেন, বিশ্বব্যাপী ঘূর্ণিঝড়ের চলার গতিবেগ গড়ে প্রায় ১০ শতাংশ কমে গেছে। আবার স্থলভাগে প্রবেশের পরে গতি কমেছে ২০ শতাংশ। চলার গতি কমে যাওয়ায় সমুদ্রের ওপরে অবস্থান করার সময় অনেক বেশি পরিমাণে মেঘের সৃষ্টি করছে। স্থলভাগে পৌঁছানোর পরে সেই অতিরিক্ত মেঘ থেকে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ঘটাচ্ছে।

বিশ্বের অন্যতম খ্যাতনামা ঘূর্ণিঝড় গবেষক আমেরিকার এমআইটির ক্যারি ইমানুয়েলের এক গবেষণায় দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঘূর্ণিঝড়ের চলার গতিবেগ কমে গেছে। এর ফলে সাম্প্রতিক কালের ঘূর্ণিঝড়গুলোর প্রভাবে অনেক বেশি বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

সমুদ্রবিষয়ক গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল ওশানোগ্রাফিক অ্যান্ড মেরিটাইম ইনস্টিটিউটের (নোয়ামি) নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার দাশ বলেছেন, ঝড় নিয়ে অবশ্যই আরও গবেষণা করা উচিত। দেশের ভবিষ্যৎ ঘূর্ণিঝড়গুলোর পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে এই ঝড়ের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হবে।

আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, আবহাওয়া ও জলবায়ুতে পরিবর্তন আসছে। এসব বদল আমাদের এ অঞ্চলে দুর্যোগের চরিত্রে পরিবর্তন নিয়ে আসছে। এই ঝড় থেকে আমরা সেই শিক্ষাই পেলাম।

 

Advertisement
Comments
Advertisement

Trending