মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের মামলায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে গত ১২ জুন বুধবার অভিযোগ গঠন করেছেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪। পরে আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার সময় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আজকে আমরা অনেকক্ষণ খাঁচার (আসামির কাঠগড়া) মধ্যে ছিলাম। বলা হয়েছিল, আপনি থাকেন। কিন্তু আমরা সারাক্ষণ লোহার খাঁচার মধ্যে ছিলাম। আমি আগেও প্রশ্ন তুলেছি, এটা ন্যায্য হলো কি না? আমি যত দূর জানি, যত দিন আসামি অপরাধী হিসেবে দোষী সাব্যস্ত না হচ্ছে, তত দিন তিনি নিরপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবেন।’
ক্রমাগতভাবে হয়রানির মধ্যে আছেন বলে মন্তব্য করেন মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘মানি লন্ডারিং, অর্থ আত্মসাৎ, প্রতারণা—এসব শব্দের সঙ্গে পরিচিত নই। অথচ এসব শব্দ আমার ওপর আরোপ করা হচ্ছে। আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে।’
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমি রক্তচোষা, আমি সুদখোর, আমি দেশের শত্রু, আমি পদ্মা সেতুর অর্থ আটকে দিয়েছি, চারদিকে ষড়যন্ত্র করে বেড়াই—কথার কথা এভাবেই বলা হচ্ছে। এগুলোই হচ্ছে হয়রানি। আমাকে জোর করে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।’
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘একজন নিরপরাধ নাগরিককে লোহার খাঁচার (আসামির কাঠগড়া) মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে শুনানির সময়, এটা আমার কাছে অত্যন্ত অপমানজনক। এটা গর্হিত কাজ। এটা কারও ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য না হয়। একটা পর্যালোচনা হোক।’
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘একটা সভ্য দেশে কেন একজন নাগরিককে পশুর মতো দাঁড়িয়ে থাকতে হবে শুনানির সময়, যেখানে একজন নাগরিক দোষী সাব্যস্ত হননি। অনেক আইনজ্ঞ আছেন, বিচারপক্ষের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা পর্যালোচনা করে দেখবেন, এটা রাখার দরকার আছে কি নেই? সারা সভ্য দুনিয়ায় যেভাবে হচ্ছে, সেভাবে হবে। আমরা সভ্য দেশের তালিকায় থাকতে পারি।’
এদিকে, আদালত চিড়িয়াখানা নয় উল্লেখ করে আদালত থেকে লোহার খাঁচা দ্রুত অপসারণের দাবি জানিয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন। বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা বলেন, লোহার খাঁচা হিংস্রতার প্রতীক। এটা শুধুমাত্র হিংস্র পশুর বেলায় ব্যবহার করা হয়। কোনোক্রমেই এটা মানুষের মর্যাদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আদালত কোনো চিড়িয়াখানা নয়, আদালত হচ্ছে ন্যায় বিচারের প্রতিষ্ঠান। লোহার খাঁচার অমর্যাদার অগ্নি থেকে বাংলাদেশের গৌরব ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস পর্যন্ত রেহাই পাচ্ছেন না।
তারা বলেন, লোহার খাঁচার ব্যবহার মুক্তিসংগ্রামের বিনিময়ে অর্জিত রাষ্ট্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সাথে চরম সাংঘর্ষিক।
মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের এই মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ১৫ জুলাই তারিখ ঠিক করেছেন আদালত। অভিযোগ গঠনের সময় ইউনূসসহ অন্যরা নিজেদের নিরপরাধ দাবি করেন। তাঁরা আদালতের কাছে ন্যায়বিচার চান।