Connect with us

বাংলাদেশ

নড়েচড়ে বসছে নিউইয়র্কের ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা

Published

on

newyork-somoy

৮ হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা-সনদ বাতিল, ভাতা সুদে-আসলে ফেরত নেবে সরকার

বাংলাদেশের মাহান মুক্তিযুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের রয়েছে অপরিসীম অবদান। সেই বীরত্বব্যঞ্জক পরিচয়কে কলঙ্কিত করে জালিয়াতি, প্রতারণা ও অসত্য তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে যাঁরা সরকারি ভাতা নিয়েছেন, তাঁদের সেই ভাতা সুদে-আসলে ফেরত নেবে সরকার। একই সঙ্গে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, প্রতারণার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা যাঁরা নিয়েছেন বা নিচ্ছেন, তাঁদের সংখ্যা এখন পর্যন্ত আট হাজার বলে শনাক্ত করা হয়েছে।
এদিকে দেশের মত বহির্বিশ্বেও ছড়িয়ে আছে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা। নিউইয়র্কেও কম নেই এই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের আনাগোনা। মুক্তিযুদ্ধ না করেও ভুয়া সনদ সংগ্রহ করে তারা ভাতা পাচ্ছেন এবং সবার চোখের সামনে বীর মুক্তিযোদ্ধা সেজে অবলীলায় ঘুরেবেরাচ্ছেন। সহসাই চোখে পরে তাদের তোরজোর। সাম্প্রতিক এই সরকারি সিদ্ধান্তে তারাও নড়েচড়ে বসছেন।
এদিকে সারা দেশে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আগামী সপ্তাহ থেকে সব জেলা প্রশাসকদের চিঠি দেওয়া হবে। এসব ব্যক্তির কাছ থেকে রাষ্ট্রীয় সম্মানী ভাতা ফেরত নিয়ে সরকারি কোষাগারে জমা রাখা হবে। এ বিষয়ে ‘সরকারি পাওনা আদায় আইন, ১৯১৩’ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, সরকারি ভাতা সুদে-আসলে ফেরত নেওয়ার পরামর্শ, সুপারিশ ও সিদ্ধান্ত এসেছে ১২ জুন সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক থেকে। আগামী রোববার ২৩ জুন থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রতারণার মাধ্যমে সংগ্রহ করা আট হাজার “মুক্তিযোদ্ধা সনদ” আমরা বাতিল করেছি। আমরা জানি, ভাতা আদায়ের বিষয়টি অত্যন্ত কঠিন। আমরা প্রত্যেকের জন্য একটি করে ফাইল খুলব। একেকজন একেক সময়ে ভাতা নিয়েছেন, কে কত টাকা নিয়েছেন সেটি যেমন খুঁজে বের করতে হবে, একইভাবে কার সুপারিশে তাঁরা মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়েছিলেন, সেটাও আমরা অনুসন্ধান করব। এ বিষয়ে মামলা হতে পারে, রিট হতে পারে; কিন্তু আমরা সরকারি টাকা আদায় করে ছাড়ব।’
জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য এবং সরকার অনুমোদিত বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকা যাচাই করে ভাতাপ্রাপ্ত সব বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম ২০২০ সালের অক্টোবরে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) নামের একটি সফটওয়্যারে যুক্ত করা হয়। নাম অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া হয় ‘লাল মুক্তিবার্তা’, ‘ভারতীয় তালিকা’ ও ‘গেজেট’। বর্তমানে এই সমন্বিত তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা প্রায় দুই লাখ পাঁচ হাজার। শুরুতে এমআইএসে তাঁদের নামসহ অন্যান্য তথ্য অন্তর্ভুক্ত করার পর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৭১ হাজার।
এদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত যাঁদের নাম এমআইএস এবং সমন্বিত তালিকায় রয়েছে, তাঁদের মন্ত্রণালয় থেকে ডিজিটাল সনদ প্রস্তুত করে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ওয়ারিশদের মাঝে বিতরণের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ডিজিটাল সনদ বিতরণের ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ১৩টি নির্দেশনা রয়েছে। ওই নির্দেশনায় উল্লেখ রয়েছে, ‘ইতিমধ্যে কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধার গেজেট বা সনদ বাতিল হয়ে থাকলে তাঁদের ডিজিটাল সনদ ও স্মার্ট আইডি কার্ড বিতরণ বন্ধ রাখতে হবে।’
এর আগে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমানের স্ত্রী ছালেহা খাতুনের মৃত্যুর পর তাঁর নামে ভুয়া হিসাব খুলে মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতার প্রায় আট লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক দুই নেতা এনামুল হক বিশ্বাস ও মোহাম্মদ আলী। বিষয়টি তদন্তে প্রমাণিত হওয়ার পর তাঁরা নিজেরাই ভাতার টাকা ফেরত দিয়েছেন। অনিয়মের মাধ্যমে নেওয়া ভাতা ফেরত দেওয়া ব্যক্তিদের একজন সিরাজগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে দুই উপজেলা থেকে (কাজীপুর ও ধুনট) ভাতা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি ধুনট থেকে পাওয়া ভাতা বাতিলের অনুরোধ জানিয়েছেন এবং ভাতা ফেরত দেবেন বলে উল্লেখ করেছেন।
বর্তমানে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতা পাচ্ছেন। তা ছাড়া দুই ঈদে ১০ হাজার টাকা করে ২০ হাজার টাকা, বিজয় দিবসে পাঁচ হাজার টাকা এবং বাংলা নববর্ষে দুই হাজার টাকা ভাতা পান। একজন বছরে সব মিলিয়ে পান প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির মনে করেন, জাল-জালিয়াতি, প্রতারণা ও অসত্য তথ্য দিয়ে যাঁরা সনদ নিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ফৌজদারি মামলা করা উচিত। শুধু সনদ বাতিল বা ভাতা আদায় কোনো শাস্তি নয়।

Advertisement
Comments
Advertisement

Trending