Connect with us

বাংলাদেশ

বঙ্গবন্ধুর খুনির নাম বদলে সন্তানদের পাসপোর্ট

Published

on

বঙ্গবন্ধুর খুনির নাম বদলে সন্তানদের পাসপোর্ট

বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি রিসালদার মোসলেহ উদ্দিনের ছয় সন্তান তাঁদের বাবার নাম মো. রফিকুল ইসলাম খাঁন হিসেবে উল্লেখ করে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিয়েছেন আজ বহুবছর। এরপর একই জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে তাঁদের তিনজন পাসপোর্ট ও একজন ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়েছেন। নির্বিঘ্নেই তাঁরা তাঁদের জীবনযাত্রা অতিবাহিত করে যাচ্ছেন। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসে ২০২১ সালে। অথচ ৩ বছর পেরিয়ে গেলেও এর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থার কথা শোনা যায়নি।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানো দলটির সামনের সারিতে ছিলেন মোসলেহ উদ্দিন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার শুরু করলে মোসলেহ উদ্দিন আত্মগোপন করেন। এখনও তাঁর অবস্থান নিয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য নেই। মোসলেহ উদ্দিনের ছয় সন্তান হলেন মো. সাজিদুল ইসলাম খাঁন, সানাজ খাঁন, মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম খান, মাহমুদুল ইসলাম খান, মজিদুল ইসলাম খান ও মো. মহিদুল ইসলাম খান।
তবে গত ২৩ মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে। সেই নথি এসেছে নিউইয়র্ক সময়ের হাতে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারী এবং ১৯৭৫ এর জেল হত্যার আসামী রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন তার নাম পরিবর্তন করে রফিকুল ইসলাম খাঁন নামে পরিচিত হয়েছেন এবং পলাতক রয়েছেন। তার ছয় ছেলে মেয়ে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রে পিতার নাম সোমলেহ উদ্দিন পরিবর্তন করে রফিকুল ইসলাম খাঁন লিখেছেন। তবে কে কবে পাসপোর্ট বানিয়েছেন তা এই নথীতে উল্লেখ না থাকলেও জানা যায়, সানাজ খাঁন পাসপোর্ট পান ২০১৭ সালের ১১ ডিসেম্বর। মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম খান পাসপোর্ট নেন ২০১৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি। আর ২০১৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর পাসপোর্ট পান মো. মহিদুল ইসলাম খাঁন।
গোপনীয় সেই নথিতে বলা হয়, রিসালদার সোমলেম উদ্দিনের ছেলে-মেয়ে কর্তৃক জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট এবং অন্যান্য জাতীয় ডাটাবেজে পিতার নাম পরিবর্তনের বিষয়টি রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরুপ। বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। এটি পাঠানো হয় নির্বাচন কমিশন সচিব বরাবর। অর্থাৎ সোমলেম উদ্দিনের নাম পরিবর্তন করে যে তার সন্তানরা জাতীয় পরিচয় পত্র, পাসপোর্ট এবং লাইসেন্স করেছেন সেগুলো বাতিল বা পরিবর্তন হবে কিনা তার ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
নিউইয়র্ক সময়ের হাতে আসা নথিতে দেখা যায় সোমলেহ উদ্দিনের ৬ সন্তানের মধ্যে ৫ জনের স্থায়ী ঠিকানা নরসিংদীতে। তবে এক সন্তান মাহমুদুল ইসলাম খান তাঁর স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে লিখেছেন মৌলভীবাজার। তাঁরা এই জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে সব ধরণের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
তবে কত বছর ধরে তাঁরা মোসলেম উদ্দিনের নাম পরিবর্তন করে রফিকুল ইসলাম খাঁন ব্যবহার করছেন তা সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি। কিন্তু বিভিন্ন সময় মোসলেম উদ্দিনের সন্তানরা দাবি করে আসছেন—তাঁদের জন্মের পর থেকেই বাবার নামের জায়গায় রফিকুল ইসলাম খাঁন ব্যবহার করা হয়েছে। কেন এমনটা হয়েছে তাঁরা এর কোন উত্তর দেননি।
কিন্তু ঠিকই ২০১৮ সালে মোসলেহ উদ্দিনের নামে পাসপোর্ট বাতিল করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অর্থাৎ, ওই সময় পর্যন্ত মোসলেহ উদ্দিনের নামে পাসপোর্ট ছিল এবং একই সাথে তার সন্তানরা রফিকুল ইসলাম খাঁন ব্যবহার করে পাসপোর্ট বানিয়েছেন। কেন এমনটা হলো? কীভাবে সন্তানরা পাসপোর্ট পেল এ নিয়ে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় কিংবা পাসপোর্ট অধিদপ্তর।
যদিও জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন অনুযায়ী, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নিজের নাম-পরিচয় বা যে কোন ব্যক্তিগত তথ্য গোপন করা দণ্ডনীয় অপরাধ। এতে উল্লেখ রয়েছে কেউ যদি সজ্ঞানে মিথ্যা বা বিকৃত তথ্য দেয় অথবা তথ্য গোপন করে তাহলে তার অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে। কোনো ব্যক্তি জাতীয় পরিচয়পত্র জাল করলে তিনি সাত বছর কারাদণ্ড এবং অনধিক এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। একই ভাবে পাসপোর্ট অধ্যাদেশেও এ ধরনের অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি ছয় মাসের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
মোসলেহ উদ্দিনসহ বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পাঁচ আসামি এখনও পলাতক রয়েছেন। ছয়জনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। সর্বশেষ ফাঁসি কার্যকর হয় আবদুল মাজেদের, যিনি ২০২০ সালে গাবতলী থেকে গ্রেপ্তার হন।
২০১৬ সালে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। তবে সবার সম্পদ এখনো বাজেয়াপ্ত করা সম্ভব হয়নি, কাজ চলছে।

Advertisement
Comments
Advertisement

Trending