Connect with us

বাংলাদেশ

আ.লীগ নেতা-কর্মীরা দালাল ধরে ভারত যাচ্ছেন, চক্রের সন্ধানে নেমেছে বিএসএফ

Published

on

newyork-somoy

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর প্রভাবশালী অনেক বাংলাদেশি প্রাণ বাঁচাতে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করছেন। এসব মানুষকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সীমান্ত পাড়ি দিতে সহায়তা করছে বেশ কিছু বাংলাদেশি ও ভারতীয় চক্র। গত বুধবার পশ্চিমবঙ্গের সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার জানিয়েছে, অবৈধ অনুপ্রবেশে সহায়তা করা চক্রগুলোকে খুঁজে বের করার মিশনে নেমেছে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মেহেরপুর উপজেলার কাশারীবাজার থেকে এক সংসদ সদস্য ফোন করেছিলেন সীমান্তবর্তী কাথুলিবাজার এলাকার একটি বাড়িতে। দেশের পরিস্থিতি অশান্ত হওয়ায় তিনি স্ত্রী এবং চার সন্তানকে নিয়ে কিছুদিন ভারতে নিরাপদে বসবাসের জন্য আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দিতে বলেন তিনি। পরে যার কাছে ওই সংসদ সদস্য ফোন করেছিলেন, তিনি ফোন করেন ভারতের নদীয়ায় অবস্থিত করিমপুর-২ ব্লকের রাউতবাটি গ্রামে। মিনিট পাঁচেকের ওই ফোনালাপে যিনি আশ্রয় চাইছেন, তাঁর প্রোফাইল, রাজনৈতিক ঝুঁকি, আর্থিক সংগতি ইত্যাদি সংক্ষেপে বর্ণনা করার পর আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে চূড়ান্ত রফা হয়।
জানিয়ে দেওয়া হয়—ভারতে যেতে সংসদ সদস্যের পরিবারের সদস্যদের মাথাপিছু খরচ পড়বে ভারতীয় মুদ্রায় এক লাখ করে। শুধু তা–ই নয়, যত দিন নিরাপদ আশ্রয়ে থাকবেন, তত দিন বিএসএফ এবং পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের নজর এড়িয়ে রাখার জন্য দিতে হবে মাসে ১০ লাখ করে ভারতীয় মুদ্রা। তবে দর-কষাকষির মাধ্যমে সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার জন্য শেষ পর্যন্ত জনপ্রতি ৭০ হাজার টাকা করে রাজি হন সংসদ সদস্য। আর আশ্রয়ের জন্য মাসে ৫ লাখ।
চুক্তির পর গত সোমবার রাতে মেহেরপুর সদর থেকে পরিবারকে নিয়ে রওনা হন ওই সংসদ সদস্য। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী একটি গ্রামে এক দিন অপেক্ষার পর প্রতিশ্রুত অর্থ পরিশোধ করে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতের একটি গ্রামে পৌঁছে যান সংসদ সদস্য ও তাঁর পরিবার।
আনন্দবাজার জানায়, সংসদ সদস্য ও তাঁর পরিবারকে সীমান্ত পার করে দেওয়ার পুরো প্রক্রিয়াটি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সম্পন্ন করেন বাংলাদেশের মইনুদ্দিন (ছদ্মনাম) এবং পশ্চিমবঙ্গের দেবাংশু (ছদ্মনাম) নামে দুজন।
শুধু ওই সংসদ সদস্যই নন, বাংলাদেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তাঁর মতো আরও অসংখ্য প্রভাবশালী ব্যক্তি একই পদ্ধতি অনুসরণ করে ভারতে প্রবেশ করছেন বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি। তাঁদের সীমান্ত পার করার জন্য কাজ করছে একাধিক চক্র। কেউ নিচ্ছে মাথাপিছু লাখ টাকা, কেউ ৫০ হাজার। তবে এসব চক্রের বিষয়ে অবহিত আছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীও। ইতিমধ্যেই এই বাহিনী বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেছে। অন্যদেরও আটক করতে পরিচালনা করা হচ্ছে একের পর এক অভিযান।
জানা গেছে, শুধু প্রভাবশালী নয়, বর্তমান প্রেক্ষাপটে সাধারণ অনেক রাজনৈতিক কর্মীও ভারতে প্রবেশ করছেন। আর্থিক সংগতি বিবেচনায় কেউ কেউ মাত্র দুই হাজার টাকায়ও সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছেন।
আনন্দবাজারকে বাংলাদেশের কাথুলিবাজার এলাকার এক দালাল বলেন, ‘আমরা এসব এলাকা হাতের তালুর মতো চিনি। কোথায় কাঁটাতার আছে, কোথায় নেই, সব মুখস্থ। কোথায় পাচারকারী কাঁটাতার কেটে রেখেছে, সেটাও জানি। এই বর্ষায় ভৈরব নদ টইটম্বুর। নদ পুরো খোলা। এ দেশ থেকে যারা ও দেশে (ভারতে) যেতে চাইছে, পরিচিত আর আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে শুধু সীমান্ত পার করিয়ে দিচ্ছি আমরা। বাকি দায়িত্ব ওদের।’
সীমান্ত পার করে দিয়ে যে অর্থ আয় হয়, সেই অর্থ দুই দেশের দুই পক্ষ সমানভাবে ভাগাভাগি করে নেয় বলেও জানান বাংলাদেশি ওই দালাল। অন্যদিকে ভারতের এক দালাল পত্রিকাটিকে বলেন, ‘কাঁটাতার পার হয়ে আমাদের চাষের জমি আছে। রোজ যাতায়াত করি। ও দিক থেকে বেশ কয়েকজন পরিচিত ও আত্মীয়স্বজন ভারতে আসার জন্য মোটা টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। আমরা শুধু পার করে এখানে নিয়ে এসেছি। রাখার দায়িত্ব আমাদের নয়। সেটা দেখে অন্য লোক।’
বিএসএফের নজরদারির বিষয়ে ভারতীয় দালাল বলেন, ‘বিএসএফ এখন খুব সজাগ। তবে গ্রামে আমাদের সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক। তাই কাউকে আশ্রয় দিয়েছি জানলে কেউ মুখ খুলবে না।’
এ ধরনের কাজে নৈতিকতা ও অনৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন করলে দালাল বলেন, ‘ওই দেশ (বাংলাদেশ) থেকে যারা আসছে, তারা তো সত্যিই বিপদে পড়েছে। বিপদে মানুষকে আশ্রয় দেওয়া তো মানুষেরই কর্তব্য।’
উল্লেখ্য, সম্প্রতি বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের পতনের পর তাঁর দল আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতা–কর্মী গা ঢাকা দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে মন্ত্রী–এমপি থেকে শুরু করে স্থানীয় নেতা–কর্মীরাও রয়েছেন। একের পর এক মামলা হওয়ার কারণে তাঁদের অনেকেই এখন ফেরারি। তাই সীমান্ত পাড়ি দিয়ে যেকোনোভাবে ভারতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন পালিয়ে থাকা নেতা–কর্মীদের বড় একটা অংশ।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন গ্রামে এখন বাংলাদেশি অতিথিদের নিয়ে শঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে বিএসএফ নজরদারি বাড়ালেও ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চাইছেন না। পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে বিএসএফ দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি এ কে আর্য বলেন, ‘পড়শি দেশের অশান্ত পরিস্থিতিতে সীমান্ত এলাকায় টহল কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের সঙ্গে জনসংযোগ বৃদ্ধি করেছি আমরা। অনুপ্রবেশের সব রকম খবর রাখার চেষ্টা করছি। বেশ কয়েকটি অবৈধ অনুপ্রবেশ আটকেও দিয়েছেন সেনারা। গ্রেপ্তার হয়েছেন বেশ কয়েকজন। তবে সীমান্ত এলাকায় এই মুহূর্তে কোনো উত্তেজনাকর পরিস্থিতির খবর নেই।’
আনন্দবাজার জানিয়েছে, অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবিও সক্রিয়। ঢাকা থেকে বিজিবির মহা-উপপরিচালক (যোগাযোগ) কর্নেল শফিউল আলম পারভেজ আনন্দবাজারকে বলেন, ‘যাঁরা রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে বেআইনি এবং অন্যায় কাজ করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ তিনি দাবি করেন, যাঁরা এভাবে সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছেন, তাঁদের বেশির ভাগই অভিযুক্ত। এ ধরনের মানুষকে ভারতে যেন আশ্রয় দেওয়া না হয়, সেই কথাও উল্লেখ করে বিজিবি কর্মকর্তা।

Advertisement
Comments
Advertisement

Trending