Connect with us

বাংলাদেশ

হাসিনা পরিবারের নামে জমি বরাদ্দ টপ সিক্রেট কেন?

Published

on

শেখ হাসিনা

১০ কাঠা করে পাশাপাশি ৬টি প্লট। একপাশে নদী। তিন পাশে রাস্তা। পুরো জমির পরিমাণ ৬০ কাঠা। মালিক শেখ হাসিনা পরিবারের ৬ জন। একই সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা এই জমি নিয়ে নানা প্রশ্ন। হস্তান্তর প্রক্রিয়া ছিল অতি গোপনীয়। এতই গোপন, যে স্বয়ং বরাদ্দ দেয়া কর্তৃপক্ষ রাজউকের অনেকেই জানতেন না। কারও জানার সুযোগও ছিল না। তবুও প্লট বরাদ্দ হয়েছে।

বরাদ্দের পর ইটের বাউন্ডারি দিয়ে ঘিরেও দেয়া হয়। ২০২১ সালে রাজউকের আলোচিত পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে নিজের নামে প্লট বরাদ্দ নিয়েছিলেন গণআন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুধু তিনি একা নন, প্লট নিয়েছেন তার ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ (জয়) ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। এ ছাড়া প্লট বরাদ্দ প্রাপ্তদের তালিকায় আছেন হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা ও তার দুই ছেলেমেয়ে। জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, কেন গোপনে ক্ষমতা খাটিয়ে সরকারি জমি বরাদ্দ নিলেন শেখ হাসিনা। জমি বরাদ্দের তথ্য না প্রকাশে কঠোর নির্দেশ কেন দিলেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। ঢাকায় একাধিক বাড়ি থাকার পরেও কীভাবে তিনি রাজউকের প্লট পেলেন তা নিয়েও চলছে আলোচনা-সমালোচনা। নিজেকে অসহায়, দরিদ্র, লোভ লালসাহীন ও নিঃস্ব বলে রাজনৈতিক সভা সমাবেশে নানা বক্তব্য দিলেও শেখ হাসিনা নিজের নামে সরকারের দেয়া ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেন। পূর্বাচলে প্রস্তাবিত কূটনৈতিক জোন ২৭ নম্বর সেক্টরে ২০৩ নম্বর রোডে তার প্লট নম্বর ০০৯। ২০২২ সালের ৩রা আগস্ট তার নামে বরাদ্দপত্র ইস্যু করে রাজউক। শেখ হাসিনার বাসভবন ধানমণ্ডির ৫৪ সুধা সদনের ঠিকানায় বরাদ্দপত্র পাঠানো হয়।
শেখ পরিবারের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র নিশ্চিত করেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের কোনো প্লট নেয়ার পক্ষে ছিলেন না। কিন্তু ছোট বোন রেহেনার অনুরোধ ও পরামর্শে নিয়ম ভেঙে অনৈতিকভাবে রাজউকের এই প্লট বরাদ্দ নেয়ার বিষয়ে রাজি হন। প্লট বরাদ্দ নেয়ার পুরো প্রক্রিয়াটি নিজে দেখভাল করেন শেখ হাসিনার সাবেক মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউস। শেখ হাসিনার অভিপ্রায়ে তিনি সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদকে ডেকে শেখ হাসিনা পরিবারের ৬ সদস্যের অনুকূলে ৬০ কাঠার এই প্লট বরাদ্দ দেয়ার সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বলেন। ওই পরামর্শ মতে মন্ত্রী দ্রুত সময়ে অতি গোপনীয়ভাবেই প্লট বরাদ্দ দেয়ার কাজ শেষ করেন। ২০২১ সালের শেষের দিকে আবেদন করলে ২০২২ সালের প্রথম দিকে প্লট বুঝিয়ে দেয়া হয়। এবং রাজউক নিজেদের টাকায় ওই জমিতে একটি ইটের বাউন্ডারিও করে দেয়।

রাজউক সূত্র জানায়, রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকারের ১৩/এ ধারার ক্ষমতাবলে তাদের প্লট দেয়া হয়। বিষয়টি রাষ্ট্রীয় অতি গোপনীয় বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এদিকে হাসিনার পতনের পর এ সংক্রান্ত প্লট বরাদ্দের ফাইল রাজউকের রেকর্ড শাখা থেকে সরিয়ে অন্যত্র লুকিয়ে ফেলা হয়। পরে ফাইলটি রাজউক চেয়ারম্যানের জিম্মায় রয়েছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ-অসন্তোষ দেখা দেয়। সম্প্রতি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবির মুখে এ সংক্রান্ত ৬টি ফাইল পুনরায় রেকর্ডরুমে ফেরত পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে চুরি বা নথি হারানোর শঙ্কায় সবক’টি ফাইল বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. ছিদ্দিকুর রহমান সরকার বলেন, এই বিষয়ে আমার কাছে তেমন তথ্য নেই। শেখ হাসিনা পরিবারকে দেয়া প্লট রাজউকের আইন কানুন ও নিয়ম মেনে দেয়া হয়েছে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে রাজউকের (এস্টেট ও ভূমি-২) পরিচালক মোহাম্মদ মনির হোসেন হাওলাদার বলেন, আমি যতটুকু জেনেছি, বিষয়টি সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ডিল করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় রফাদফা করেছে। এখানে রাজউককে শুধুমাত্র লিখিতভাবে অনুমোদন ও বরাদ্দ দিতে বলা হয়েছে। রাজউকের দেয়া-নেয়ার ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা ছিল না। রাজউক শুধু মন্ত্রণালয়ের আদেশ পালন করেছে। আর গোপনীয়তার বিষয়টি হলো এটা প্রতিষ্ঠানিকভাবে গোপনীয় থাকে। এটা বাহিরের মানুষ জানতে পারে না। প্লট বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে অনেক বিধিবিধান আছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে যদি কোনো আদেশ আসে এবং সরকার প্রধান যিনি থাকেন তার নির্বাহী আদেশে প্লট নিতে পারেন। এ বিষয়টিও সেভাবেই হয়েছে হয়তো।

সম্প্রতি রাজউকে গিয়ে দেখা যায়, রেকর্ডরুমে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের ফাইলগুলো বিশেষ চিহ্ন দিয়ে রাখা হয়েছে। হাসিনার প্লট বরাদ্দের ফাইলের ওপর বড় ইংরেজি হরফে লেখা রয়েছে ভি-৩, পাতা ১৪১। ফাইলে শেখ হাসিনার স্বাক্ষরযুক্ত আবেদনপত্রের কপি, বরাদ্দপত্র ও জাতীয় পরিচয়পত্রের কপিসহ অন্যান্য কাগজপত্র রয়েছে।

রাজউকের উপ-পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) নায়েব আলী শরীফ স্বাক্ষরিত চূড়ান্ত বরাদ্দপত্রে লেখা হয় ‘কাঠা প্রতি ৩ লাখ টাকা হিসাবে ১০ কাঠার প্লটের মোট মূল্য ৩০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হলো।’ হাসিনা ছাড়াও ১০ কাঠা করে প্লট নেন তার ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ (জয়) ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ (পুতুল)। তাদের প্লট নম্বর যথাক্রমে ০১৫ এবং ০১৭। এরমধ্যে জয়ের নামে প্লটের বরাদ্দপত্র জারি করা হয় ২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর। পরে ১০ই নভেম্বর প্লটের মালিকানা সংক্রান্ত রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়। এর আগে ২রা নভেম্বর পুতুলের নামেও ১০ কাঠা প্লটের বরাদ্দপত্র ইস্যু করা হয়। এতে এস্টেট ও ভূমি-৩ শাখার তৎকালীন উপ-পরিচালক হাবিবুর রহমানের স্বাক্ষর রয়েছে। তবে শুধু হাসিনা ও তার ছেলেমেয়ে নন, পূর্বাচল প্রকল্পে ১০ কাঠা করে প্লট নেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা ও তার ছেলেমেয়ে। তাদের নামেও যথারীতি প্লট বরাদ্দ করা হয় ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর রোডের একই জায়গায়। সেখানে শেখ রেহানার প্লট নম্বর ০১৩, তার ছেলে রাদোয়ান মুজিব সিদ্দিকের প্লট নম্বর ০১১ ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকের প্লট নম্বর ০১৯।

Advertisement
Comments
Advertisement

Trending