বাংলাদেশ
নিষিদ্ধের খেলায় মেতেছে ড. ইউনূস সরকারও!
Published
2 weeks agoon
বিরোধী মতের যে কাউকে কথায় কথায় জামায়াত-শিবির ট্যাগ বসিয়ে দিতো ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার। এক পর্যায়ে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে রেখে জামায়াতের পেছনে লাগে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতা ছেড়ে যাওয়ার মাত্র কয়েক দিন আগে জামায়াতকে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করে তারা। ক্ষমতার পালা বদল হওয়ার সাথে সাথে এবার সেই নিষিদ্ধের গ্যাড়াকলে পড়েছে আওয়ামী লীগের ভ্রাত্রিপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগও। সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ছাত্রলীগকে। এমনকি খোদ আওয়ামী লীগকেও নিষিদ্ধ ঘোষণার আওয়াজ তুলছেন কেউ কেউ।
অন্তর্বতীকালীন সরকারের এমন কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়ে গেছে। সুযোগ তৈরি হয়েছে আঙুল তোলার। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকেই বলছেন, আওয়ামী লীগ যেসব কর্মকাণ্ডের কারণে আজ বিতর্কিত ঠিক সেই কাজগুলো একে একে করছে অন্তর্বর্তী এই সরকারও।
দ্রব্যের অস্বাভাবিক দাম, দিনে দুপুরে ছিনতাই, লুটপাট, ডাকাতি, ট্রাফিক অব্যবস্থাপনার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রেখে নাম পরিবর্তন, দল নিষিদ্ধ, বদলি, নিয়োগ বাতিল, এসব নিয়ে এই সরকার ব্যস্ত আছে বলে অভিযোগ করছে কেউ কেউ।
নতুন করে আলোচনা তৈরি হয়েছে, এএসপিদের কুচকাওয়াজ বন্ধ ও প্রশিক্ষণরত ২৫২ এসআইকে অব্যাহতি দেওয়া নিয়ে। বইছে সমালোচনার ঝড়। রাজনৈতিক
বিশ্লেষকরা বলছেন, এভাবে নিষিদ্ধের খেলা খেললে ভবিষ্যেতে আরও ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোকে। কারণ ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয় বিষয়টি মাথায় রাখার ওপর গুরুত্ব দেন তারা।
এদিকে, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ জানিয়েছেন, নিষিদ্ধ সংগঠনের কেউ প্রজাতন্ত্রের কর্মে যুক্ত হতে পারবে না। অর্থাৎ ছাত্রলীগের কেউ সরকারি চাকরি করতে পারবে না বলেই স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন তিনি। এসব রাজনৈতিক আক্রশের কথা উল্লেখ করে সতর্ক করছেন অনেকে।
অথচ বাংলাদেশ জন্ম হওয়ার আগে ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ছাত্রলীগের রয়েছে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০ এর নির্বাচন, ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের সাথে অংশগ্রহণের অবদান। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এই সংগঠনের নেতাকর্মীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে বলে অভিযোগ রয়েছে। ক্ষমতা, দখল, চাঁদাবাজি, হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধে নাম জড়িয়ে পড়ে ছাত্রলীগের পদধারী নেতাদের।
বিশেষ করে ঢাকায় বিশ্বজিৎ আর বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার হত্যাকাণ্ডে সবচেয়ে বেশি সমালোচনার মুখে পড়ে ছাত্র সংগঠনটি। এসব কর্মকান্ডের কারণেই ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের দাবি জোরালো হয়।
ছাত্রলীগের ইতিহাস: ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের অ্যাসেম্বলি হলে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা করেন শেখ মুজিবুর রহমান। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে সংগঠনটির নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ এবং এই সংগঠনের প্রথম অফিস ছিল ১৫০ মোগলটুলীতে। এই ১৫০ মোগলটুলীই ছিল মুসলিম লীগেরও অফিস। অবিভক্ত পাকিস্তানের সর্বপ্রথম ছাত্র সংগঠন এটি। সাম্প্রদায়িক অভিযোগ থেকে রক্ষা পেতে একই সঙ্গে ছাত্রলীগের নামেও পরিবর্তন আসে, ছাত্রলীগের নাম হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ।
সংগঠনটির প্রথম আহ্বায়ক ছিলেন নাঈমউদ্দিন আহমেদ। সাংগঠনিকভাবে এর কার্যক্রম শুরু করলে সভাপতি মনোনীত হন দবিরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক হন খালেক নেওয়াজ খান। স্বাধীনতার পর দলের নামেও পরিবর্তন আসে। ছাত্র লীগের নাম হয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২ এর শিক্ষা কমিশন আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং ১১ দফা আন্দোলন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় স্বাধিকার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে।
মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তি সময়ে ছাত্রলীগের অবদান: ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধের উদ্দেশ্যে ছাত্রলীগ মুজিব বাহিনী গঠন করে এবং যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। এটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন হিসেবে স্বীকৃত। ১৯৭২ সাল থাকে ১৯৭৫ কালপূর্বে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনের সংগ্রামে ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল। সামরিক শাসনের মধ্যেও ১৯৮৩ সালে শিক্ষা আন্দোলন ও সর্বদলীয় ছাত্র-ঐক্যের ১০ দফা তৈরিতে নেতৃত্ব দেয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
সমালোচনায় ছাত্রলীগ: বিভিন্ন সময় নিজেদের মধ্যে দলাদলি, অন্তর্কোন্দল, প্রতিপক্ষের ওপর হামলাসহ নানা কারণে সমালোচনার মুখে পড়ে ছাত্রলীগ। সংগঠনটির বিরুদ্ধে নির্যাতন, চাঁদাবাজি, সহিংসতা, জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তি ও হত্যার অভিযোগ রয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে ছাত্রলীগের হামলায় কমপক্ষে ৩৩ জন নিহত এবং ১ হাজার ৫০০ জন গুরুতর আহত হয়। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১২৯ জনে। শুধু ২০১৮ সালেই ৩১ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৬ সালের জুলাইয়ে ঢাকা হামলার পর জঙ্গি তল্লাশিতে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাত-উল-মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে এক ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
২০২১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সঙ্গেও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ছাত্রলীগের অনেক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ইডেন মহিলা কলেজ শাখার ছাত্রীদের ব্ল্যাকমেইল করে জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তি চক্র চালানোর অভিযোগ রয়েছে।
সর্বশেষ ২০২৪ সালে কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কার্মকাণ্ডের কারণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ছাত্র সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করল।