Connect with us

বাংলাদেশ

সিইসি হলেন সাবেক সচিব নাসির উদ্দীন

Published

on

সিইসি হলেন সাবেক সচিব নাসির উদ্দীন

অবসরপ্রাপ্ত সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। নতুন এই কমিশনে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমানেল মাসুদ, সাবেক যুগ্ম সচিব বেগম তহমিদা আহমদ এবং অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব থাকবে এই কমিশনের উপর। সার্চ কমিটির প্রস্তাব করা নামের তালিকা থেকে রাষ্ট্রপতি এই পাঁচজনকে বেছে নিয়েছেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গতকাল আলাদা প্রজ্ঞাপনে তাদের নাম প্রকাশ করে।
সিইসি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া এ এম এম নাসির উদ্দীনের বাড়ি কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর করার পর ১৯৭৭ সালে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন শিক্ষক হিসেবে। দুই বছর পর তিনি সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। দীর্ঘ কর্মজীবনে তথ্য সচিব, জ্বালানি সচিব, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি অবসরে যান ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে।
নতুন কমিশনারদের মধ্যে সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. আনোয়ারুল ইসলাম অবসরে যাওয়ার আগে দায়িত্ব পালন করেছেন সরকারের টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবে। ২০১৬ সালে ভারপ্রাপ্ত সচিব পদমর্যাদায় তাকে বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান করা হয়। তার আগে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের পরিচালক হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। সাবেক যুগ্ম সচিব বেগম তহমিদা আহমেদ ২০১৮ সালের ৩রা জানুয়ারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (আইন) হিসেবে দায়িত্ব পান। ওই বছরই তিনি প্রথমে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এবং পরে পাট অধিদপ্তরের পরিচালক হন। অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ পাকিস্তানের ইসলামাবাদে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা ছিলেন। বিগত সরকার ২০২০ সালে তাকে মিনিস্টার পদের কূটনৈতিক পদমর্যাদায় এ পদে নিয়োগ দেন। ১৮তম বিএমএ লংকোর্সের এই সেনা কর্মকর্তা ৩৫ বছর মিলিটারি সার্ভিসে ছিলেন।
আমার ব্যর্থতার ইতিহাস নেই
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব এএমএম নাসির উদ্দীন। বৃহস্পতিবার তাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। নিয়োগ পাওয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় নতুন সিইসি গণমাধ্যমকে বলেছেন, আমার জীবনে ব্যর্থতার কোনো ইতিহাস নেই। আমি সফল হবো ইনশাআল্লাহ্। আমার প্রধান লক্ষ্য হবে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা। সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা নিয়ে আমার দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করবো।
তিনি বলেন, গত তিনটি নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের প্রহসন আমরা দেখেছি। এই সময়ে নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে। মানুষের ভোটের অধিকার অনুপস্থিত ছিল। তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টে দেড় হাজার মানুষ শহীদ হয়েছেন। শুধু শিশুই নিহত হয়েছে ১৩০ জন। আর ২৫ থেকে ২৬ হাজার লোক আহত হয়েছেন। এদের রক্তের সঙ্গে ও ত্যাগের সঙ্গে বেইমানি করা যাবে না। আমি আমার সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করবো একটা ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল ইলেকশন জাতিকে উপহার দেয়ার।
এএমএম নাসির উদ্দীন বলেন, এই ধরনের কাজে চ্যালেঞ্জ থাকবেই এবং আছে। অনেক চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে আসতে থাকবে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতেই আমরা অভ্যস্ত। আমি তথ্য, জ্বালানি ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চালিয়েছি, সেখানেও চ্যালেঞ্জ ছিল। কিন্তু আমি সেই চ্যালেঞ্জ সফলভাবে মোকাবিলা করে মন্ত্রণালয়গুলো চালিয়েছি। চ্যালেঞ্জ মোবাকিলা করার সাহস এবং অভিজ্ঞতা আমার আছে। নির্বাচন সংক্রান্ত যত চ্যালেঞ্জ সামনে আসবে, সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিয়ে সেই চ্যালেঞ্জ ইনশাআল্লাহ্মোকাবিলা করবো। এছাড়া আমাদের জাতি এখন ঐক্যবদ্ধ। তারা সবাই সুষ্ঠু নির্বাচন চায়।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালে যেই ছেলেটার ১৮ বছর ছিল তার বয়স এখন ২৮ বছর হয়ে গিয়েছে। কিন্তু একটা ভোট দিতে পারেনি। মানুষের ভোটাধিকারের জন্য সবাই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সুতরাং এখানে তেমন কোনো অসুবিধা হবে না। আগে চ্যালেঞ্জ ছিল না জানিয়ে নতুন সিইসি বলেন, আগে হুকুম ছিল, কাজ হয়ে গেছে। এখন ইনশাআল্লাহ্সেভাবে হবে না। মানুষের ভোটের অধিকার বলতে যা বোঝায় আমরা সেটা করার চেষ্টা করবো। আমরা সফল হবো। সেই আত্মবিশ্বাস আমার আছে।
তিনি বলেন, আমি নিজেও ভোট দিতে পারিনি। ২০১৪ সালে ভোটকেন্দ্রে যাইনি। ২০২৪ সালে তো যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। ২০১৮ সালে গিয়েছিলাম। ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখি ফাঁকা, কোনো লোকজন নাই। ধানমণ্ডিতে আমার সেন্টার ছিল। তবে এখন তো মানুষ ভোট চাচ্ছে। এজন্যই তো রক্ত দিয়েছে। এজন্যই তো গত ১৫ বছর আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে।
তিনি আরও বলেন, বিগত নির্বাচন কমিশনের উপর মানুষের আস্থা ছিল না। তারা জানতো যে, এটা দলীয় নির্বাচন কমিশন। এ রকম একটি অনুভূতি তখন ছিল, এজন্য ডাকা হলেও অনেক দল তাদের মিটিংয়ে যেতো না। তিনি বলেন, আমাদের চেষ্টা থাকবে সব রাজনৈতিক দলকে একসঙ্গে করে, তাদের মতামত নিয়ে, নির্বাচনটা অংশগ্রহণমূলক করা। আমার বিশ্বাস আমি কামিয়াব হবো। নিজের ওপরে আমার আস্থা আছে। আমি জীবনে ইনশাআল্লাহ্ফেল করিনি কোথাও। আমার ব্যর্থতার ইতিহাস নাই।
কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার সন্তান নাসির উদ্দিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর করেন। এরপর ১৯৭৭ সালে কর্মজীবন শুরু করেন শিক্ষক হিসেবে। দুই বছর পর তিনি সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। প্রশাসন ক্যাডারের এ ব্যাচটি বিসিএস ৭৯ ব্যাচ হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘ কর্মজীবনে তথ্য সচিব, জ্বালানি সচিব, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন।

Advertisement
Comments
Advertisement

Trending