দেশজুড়ে একের পর এক হামলা, সংঘর্ষ, অরাজকতায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)-এর দায়িত্বে অবহেলা ও ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। কেউ কেউ বলছেন তিনি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে ৯৯ শতাংশই ব্যর্থ।
রাজধানী ঢাকায় চলছে চরম নৈরাজ্য। চট্টগ্রামে আদালতে সংঘর্ষে একজন আইনজীবী নিহত হয়েছেন। যখন তখন সংঘর্ষ বিক্ষোভ, ইচ্ছে হলেই রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। হুটহাট সংঘর্ষে প্রায়শই কোনও না কোনও রাস্তা বন্ধের ঘটনা ঘটছে। সব মিলিয়ে এসব ঘটনায় অচল হয়ে পড়েছে রাজধানী ঢাকার যান চলাচল। বিভিন্ন এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় আটকে পড়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে বহু মানুষকে। ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক পরিচয়ে শ্রমিক লীগের শত শত নেতাকর্মী রাস্তা অবরোধ করেছে; নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পুরান ঢাকার সোহরাওয়ার্দী, কবি নজরুল কলেজ ও যাত্রাবাড়ির ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের ছাত্রদের মধ্যে ঢুকে ঘোষণা দিয়ে যাত্রাবাড়ি-মৃধাবাড়িতে সংঘাত-ত্রিমুখি সংঘর্ষের মাধ্যমে গোটা এলাকাকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করে। ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে সংঘর্ষের ঘটনার পর আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী-ডেমরা এলাকায় ছয় প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। যাত্রাবাড়ির ওই রণক্ষেত্রের যারা ভুক্তভোগী তাদের অভিযোগ সাধারণ ছাত্রদের ভিতরে মিশে গিয়ে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ঘোষণা দিয়ে সংঘর্ষ বাঁধানোর সুযোগ পেলো কিভাবে? সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা, ডিবি, এসবি, এনএসআইসহ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে। তারা ‘ঘোষণা দিয়ে সংঘর্ষ’ সম্পর্কে কোনও তথ্য জানতে পারল না? নাকি তারা শেখ হাসিনার অনুগত হওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ঝামেলা জিইয়ে রাখতে সঠিক তথ্য দিচ্ছেন না? বিগত ফ্যাসিস্ট হাসিনা রেজিমে বিএনপি ও জামায়াতের কয়েকজন নেতা হোটেলে খেতে গেলে, রাস্তার মোড়ে দাঁড়ালে এবং বিয়ে বাড়িতে একত্রিত হলে তাদের গ্রেফতার করা হতো। দাবি করা হতো, ষড়যন্ত্রের আগাম খবর পেয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। এতো করিৎকর্মা গোয়েন্দা সংস্থার ওই কর্মকর্তা কর্মচারীরা থাকার পরও ঘোষণা দিয়ে সংঘর্ষ করে ঢাকাকে অচল করে দেওয়া হয়।
ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের সঙ্গে কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও পুলিশ প্রধানের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় শিক্ষার্থী ও সাধারণ প্রত্যক্ষদর্শীরা।
ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার কার্যত হাসিনার আমলা, পুলিশ, গোয়েন্দাদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। হাসিনাপন্থী কর্মকর্তাদের কয়েকজনকে বাদ দিলেও এখনও বেশির ভাগ কর্মকর্তা আওয়ামী অনুসারী। পরিণতিতে একের পর এক বিশৃংখল পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটছে। এমনকি ঘোষণা দিয়ে সংঘর্ষ তথা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটছে। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে মিশে গিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর, অস্থিরতা সৃষ্টি করছে; অথচ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কিছুই জানতে পারছে না? এই সবকিছু নিয়েই জনমনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।