বাংলাদেশ
বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের অবনতি, ভারতের অর্থনীতিতে ধসের শঙ্কা
Published
1 month agoon
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ই আগস্ট দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। রক্তক্ষয়ি আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে সম্প্রতি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে ঘটে গেল, ভারতের ওপর তার যেমন রাজনৈতিক প্রভাব আছে, তেমনি অর্থনৈতিক প্রভাবও আছে। গত এক দশকে বাংলাদেশের যে উচ্চ হারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তার বদৌলতে বাংলাদেশ এখন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারতের অন্যতম বৃহত্তম অংশীদার এবং দক্ষিণ এশিয়ায় বৃহত্তম। পরিবর্তিত বাস্তবতায় বাংলাদেশের কারণে ভারতের অর্থনৈতিক ক্ষতি হওয়ার যে আশঙ্কা করা হচ্ছিল, তার বেশিকিছু লক্ষণ ইতিমধ্যেই প্রকাশ পেতে শুরু করেছে।
ইকোনমিক টাইমসের সংবাদে বলা হয়েছিল, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারত বাংলাদেশে যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করেছে, বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি—যেমন জাপান, জার্মানি বা ফ্রান্সে সে পরিমাণ রপ্তানি করেনি। বাংলাদেশি পর্যটকদের পদচারণায় প্রাণচঞ্চল ও মুখর থাকতো ভারতের পশ্চিমবঙ্গের
রাজধানী কলকাতার প্রাণকেন্দ্র। মূলত বাংলাদেশ থেকে যাওয়া পর্যটক ও গ্রাহকদের ওপরেই নির্ভরশীল ছিল কলকাতার ১০০টিরও বেশি হোটেল ও ৩ হাজারেরও বেশি দোকানপাট। যেগুলোতে এখন বেচাকেনা ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে।
গত আগস্টের পর থেকে কলকাতায় বাংলাদেশিদের গমন কমে যাওয়ার ফলে সেখানকার ব্যবসায়ীরা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। দুই দেশের পারস্পরিক টানাপোড়েন বেড়ে যাওয়ায় তার প্রভাবে অর্থনৈতিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে ভারতের অন্যান্য রাজ্যের অর্থনীতিতেও। তাছাড়া ৫ আগস্টের পরে পরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দূতাবাস থেকে বেশকিছু কর্মী দেশে ফিরিয়ে নেয় ভারত। পাশাপাশি ভিসা কার্যক্রমও বন্ধ ঘোষণা করে দেশটি। পরে স্বল্প পরিসরে মেডিকেল ও স্টুডেন্টসহ জরুরি ভিত্তিতে ভিসা দেয়া শুরু করে ভারতীয় হাইকমিশন। তবে ভ্রমণসহ বেশকিছু ভিসা কার্যক্রম বন্ধই থেকে গেছে।
এদিকে সম্প্রতি ইসকন নেতা চিন্ময় দাশের গ্রেপ্তার ইস্যুতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বিভিন্ন ভুয়া খবর প্রচার করে দাবি করা হয় বাংলাদেশে সনাতনীদের নির্যাতন করা হচ্ছে। একই বিষয়ে ভারতের শাসক দল বিজেপি’র নেতারা বাংলাদেশিদের কটাক্ষ বিভিন্ন বক্তব্য দিতে থাকে। এ ছাড়া গত ৩রা ডিসেম্বর ত্রিপুরায় বাংলাদেশি উপ-দূতাবাসে হামলা চালায় উগ্রবাদী হিন্দুরা। এর ফলে মিশনটির কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সরকার। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাদেশ বিরোধী এমন অবস্থানের পর যাদের বৈধ ভারতীয় ভিসা আছে তারাও দেশটিতে যেতে ভয় পাচ্ছেন।
এসব কারণে দেশের খোলাবাজারে ডলারের বিক্রি স্বাভাবিক থাকলেও ভারতীয় রুপির কোনো ক্রেতাই খুঁজে পাচ্ছে না রাজধানীর এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো। সপ্তাহের ব্যবধানে টাকার বিপরীতে ৪-৫ পয়সা কমেছে রুপির মান। পাশাপাশি বিক্রিও তলানিতে নেমেছে।
সাধারণত বাংলাদেশিরা ভারতীয় রুপি নিয়ে যান মেডিকেল ও ভ্রমণ বাবদ খরচের জন্য। কিন্তু গত এক মাসে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজমান থাকায় রুপির বিক্রি অনেকটা কমে গেছে। এ ছাড়া স্বাভাবিক ভিসা কার্যক্রম বন্ধ ও ভারতমুখী যাত্রী কমে যাওয়ায় ঢাকায় কমেছে রুপির মান। ভারতীয় রুপি বিক্রির জন্য এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো দাম চাচ্ছে প্রতি রুপি ১ টাকা ৪০ পয়সা থেকে ১ টাকা ৪৪ পয়সা পর্যন্ত, যা আগের সপ্তাহে দাম ছিল ১ টাকা ৪৮ পয়সা থেকে ১ টাকা ৫০ পয়সা।
মেক্সিকো এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তা রুবেল জানান, আগে দিনপ্রতি ১-২ লাখ রুপি বিক্রি হতো। কিন্তু এখন ১৫ দিনেও তা বিক্রি হচ্ছে না। বাজারে রুপির ক্রেতা নেই বললেই চলে, যা কিছু মানুষ আসছেন তারা নিজেদের কাছে থাকা রুপি বিক্রির জন্য।
খোলাবাজারের ডলার বিক্রেতা খলিল বলেন, ভারতীয় রুপির বিক্রি মোটেই নেই। দুই দেশের রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে বিক্রি কমে গেছে। দেশি টাকায় রুপিপ্রতি দাম কমেছে ৪-৫ পয়সা। তিনি বলেন, আগে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকার ভারতীয় রুপি বিক্রি হতো। এখন এক রুপিও বিক্রি হয়নি। এছাড়া রুপির দামও কমে যাচ্ছে।
আরেক ডলার বিক্রেতা হোসেন মিয়া জানান, ভারত সরকার বাংলাদেশিদের মেডিকেল ভিসা বন্ধের পর রুপির বিক্রি অনেকটা কমে গেছে। আগে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৬ লাখ টাকার রুপি বিক্রি হতো। গত এক সপ্তাহে ৫০ হাজার টাকারও বিক্রি হয়নি।
তিনি আরও বলেন, মূলত ট্যুরিস্টরা ভারত থেকে আসার সময় রুপি নিয়ে আসতেন, সেগুলো আমরা কিনে রাখতাম। আবার বাংলাদেশ থেকে যারা ভারতে যাবেন, তাদের কাছে বিক্রি করতাম। এখন ভারত থেকে ট্যুরিস্ট আসা যেমন কমে গেছে, তেমন দেশ থেকেও কোনো ট্যুরিস্টই যাচ্ছেন না। ফলে আমাদের কাছে রুপির মজুত কমেছে, পাশাপাশি বিক্রিও ঠেকেছে তলানিতে। বাজারে রুপির ক্রেতা খুব কম হওয়ায় রুপির দামও কমে যাচ্ছে।
বাংলাদেশি পর্যটকদের অভাবে কলকাতার ব্যবসায়ীদের জন্য ভবিষ্যত এখন অনিশ্চিত। তারা আশঙ্কা করছেন, যদি বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতি আরও কয়েক বছর ধরে চলতে থাকে, দুই দেশের সম্পর্কের যদি উন্নতি না হয় এবং ভিসা নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকে, তাহলে কলকাতার এই বাংলাদেশি-অধ্যুষিত কেন্দ্রস্থলের স্থানীয় অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাবে। একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভারতের অর্থনীতিও। কারণ বিগত বছরগুলোতে ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য যে হারে বেড়েছে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য সেই হারে বাড়েনি। ২০০৯ সালের তুলনায় ২০১৩ সালে এসে ভারতের বৈশ্বিক পণ্য বাণিজ্য আড়াই গুণ বেড়েছে। কিন্তু একই সময়ে বাংলাদেশের সঙ্গে তার দ্বিপক্ষীয় পণ্য বাণিজ্য বেড়েছে সাড়ে পাঁচ গুণ। ২০০৯ সালে বাংলাদেশে ভারতের দ্বিপক্ষীয় পণ্য বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২৪০ কোটি ডলার; ২০২৩ সালে যা ১ হাজার ৩১০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়।
এই সময় বিশ্বের অন্যান্য দেশে ভারতের রপ্তানি যে হারে বেড়েছে, বাংলাদেশে তার চেয়ে বেশি হারে বেড়েছে। ২০০৯ সালে ভারতের পণ্য বাণিজ্যের ১ দশমিক ২ শতাংশের গন্তব্য ছিল বাংলাদেশ; ২০২৩ সালে যা ২ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০২৩ সালে ভারতের মোট রপ্তানির ১ দশমিক ২ শতাংশ গেছে জাপানে, দক্ষিণ কোরিয়ায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ, ফ্রান্সে ১ দশমিক ৭ শতাংশ ও জার্মানিতে গেছে ২ দশমিক ২ শতাংশ।
গল্প: একা
প্রবন্ধ: মাইজভান্ডারি গান: একটি মনগড়া ভূমিকা
এ সপ্তাহের কবিতা (১৭ জানুয়ারি ২০২৫)
স্মৃতিগদ্য: বাংলার শীত কুয়াশার চাদর
রহস্য গল্প: জিনাত মহল
নিউইয়র্কের মিলন ও সস্ত্রীক কল্লোল পেলেন বাংলাদেশ সরকারের সিআইপি অ্যাওয়ার্ড
ভেঙে গেলো মুক্তধারা ফাউন্ডেশন ড. নুরুন্নবীর পদত্যাগ
শেখ পরিবারের সীমাহীন দুর্নীতি: অনুসন্ধানে ৫ কর্মকর্তা নিয়োগ করেছে দুদক
ভিসা নীতি শিথিল করলো যুক্তরাষ্ট্র
স্মরণ | বাংলা সাহিত্যাকাশে অত্যুজ্জ্বল নক্ষত্র আবদুল মান্নান সৈয়দ
Trending
-
কমিউনিটি সংবাদ18 hours ago
ভেঙে গেলো মুক্তধারা ফাউন্ডেশন ড. নুরুন্নবীর পদত্যাগ
-
সুস্বাস্থ্য18 hours ago
সিজোফ্রেনিয়া কী এবং এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের আচরণ কেমন হয়?
-
বাংলাদেশ1 day ago
শেখ হাসিনা কি ভারতের নাগরিকত্ব নিয়েছেন?
-
কমিউনিটি সংবাদ18 hours ago
উত্তরবঙ্গে শীত বস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি সেলিম ফাউন্ডেশন ইনকের