Connect with us

বাংলাদেশ

কোন পথে বাংলাদেশ?

Published

on

কোন পথে ছুটছে বাংলাদেশ? বিশেষতঃ বাংলাদেশের রাজনীতি। এই প্রশ্ন এখন সর্বত্র। সরকারের ভেতরে সামরিক, বেসামরিক, তাত্ত্বিক, সুশীল তথা নাগরিক একাধিক শক্তির অস্তিত্ব বর্তমান। ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুত্থানে সাড়ে ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটেছে। নতুন বাস্তবতায় ফ্যাসিবাদ বিরোধী শক্তিগুলোর সমর্থনে দায়িত্ব নিয়েছেন নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি একটি টিম নিয়ে দেশ পুনর্গঠনের কঠিন এক কাজে হাত দিয়েছেন। তাদের প্রাথমিক টার্গেট অপরিহার্য রাজনৈতিক সংস্কার। চূড়ান্ত লক্ষ্য বহু বছর ধরে বাংলাদেশ যার জন্য অপেক্ষমাণ, সেই কাঙ্ক্ষিত গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন জাতিকে উপহার দেয়া।
কিন্তু বিপ্লবোত্তর ৫ মাসেই যেন সব হযবরল লেগে গেছে!
সরকারি টিমে এমন সব খেলোয়াড় স্থান পেয়েছেন—তাদের অবস্থান নিয়ে সন্দিহান খোদ সমর্থকরা। বিশেষতঃ কে যে কার পক্ষে, কে কার বিপক্ষে খেলছে তা ধরতে পারছেন না গ্যালারিতে থাকা সমর্থক দর্শকরা। ওই টিমে থাকা কিছু প্লেয়ারের মাঠের তৎপরতা আত্মঘাতী গোলের ঝুঁকি তৈরি করেছে। তাদের অতীত মোটেও স্বচ্ছ নয়। ব্যক্তিজীবন ঝামেলাপূর্ণ। তবে হ্যাঁ, অভ্যুত্থান পূর্ববর্তী মারমুখি আন্দোলনে তারা ছিলেন ফ্রন্টলাইনে। সঙ্গত কারণেই সরকারে ‘অপরিহার্য’ অনুষঙ্গ তারা। তাদের বিদ্যা-বুদ্ধি নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ নেই। তবে তাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অভাব নিদারুন। সরকারি টিমে আরেকটি বড় শক্তি আছে তাত্ত্বিক। শুরুর দিকে তারা ছিলেন সাইড লাইনে। এখন প্রকাশ্যে। তাদের কিছু স্টেপ সাড়া জাগানো কিন্তু সর্বক্ষেত্রে

টেকসই নয়। বুঝে হোক বা অসাবধানতাবশত তাদের কিছু কর্ম দেশের স্বার্বভৌমত্বকে হুমকিতে ফেলেছে!
অন্তবর্তী বা আপৎকালীন এই সরকারে সামরিক শক্তির প্রভাব শুরু থেকেই। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রির ঢাকায় ঝটিকা সফরে তা আরও খোলাসা হয়েছে। জাতি দেখেছে পররাষ্ট্র সচিব থেকে প্রধান উপদেষ্টা পর্যন্ত বৈঠক করেও দিল্লির প্রতিনিধি আশ্বস্ত হতে না পেরে সন্ধ্যার পর ছুঁটে গেছেন ক্যান্টনমেন্টে। সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। জানা গেছে সেই বৈঠকের পর নাকি তিনি অনেকটা নির্ভার হয়ে দিল্লি ফিরেছেন। সরকারে নাগরিক শক্তির প্রভাব সঙ্গত। কারণ তারাই পরিবর্তনটা এনেছে। তাদের অনেকে এখনো সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপারেই রয়ে গেছেন। কেউ কেউ দেশে ফিরেছেন। তাদের একজনকে নিয়ে বেশ শোরগোল চারদিকে। তিনি রাষ্ট্র চিন্তক, এতে কারও দ্বিমত নেই। তবে তার সংবিধান নিয়ে ঘাটাঘাটি করার এক্সপার্টিজ যে ছিলো বা আছে তা দায়িত্ব পাওয়ার আগ পর্যন্ত জাতি জানতো না।
যাক, বহুমুখী শক্তির সংমিশ্রণে গঠিত ‘শক্তিশালী’ অন্তবর্তীকালীন সরকারের গত ৫ মাসের কর্মকাণ্ড কতটা সবলতার পরিচয় দিতে পেরেছে সেটা বিশ্লেষণের দাবি রাখে। তবে সমালোচকরা এখন হরহামেশাই এটা বলার চেষ্টা করেন, সমর্থকদের ক্ষমতার খায়েশ সরকারের সব উদ্যোগ ধ্বংস করে দিচ্ছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় তাদের রাজনীতিতে নামার চেষ্টা!
৩১শে ডিসেম্বর শহীদ মিনারে ‘শিশু’ রাজনীতিবিদদের মাঠে নামার মহড়া হয়েছে। রাজনীতির প্রতিষ্ঠিত শক্তিগুলো এটাকে মোটেও ভালভাবে নেয়নি। রাজনীতিতে কেউ কারও জায়গা ছাড়ে না, এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য। সেই বিবেচনায় ক্ষমতার সম্ভাব্য প্রধান স্টেকহোল্ডার বিএনপি তৃতীয় শক্তির উত্থান চেষ্টা নিয়ে খুবই চিন্তিত। তারা মুখে যাই বলুক, নতুন কাউকেই জায়গা ছেড়ে দিতে মানসিকভাবে এখনো প্রস্তুত নয়। এমনকি তাদের আন্দোলনের সাথী জামায়াতকেও তারা এখন সহ্য করতে পারছে না। যদিও তাদের অনৈক্য বা বিরোধের জেরে বিদায়ী স্বৈরাচারের সমর্থকদের ফেরার পথ প্রশস্ত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা তৈরি করছে। এ রিপোর্ট লেখার মুহুর্তের খবর—বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে আচমকা সাক্ষাৎ করেছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। কোনো রকম প্রটোকলের তোয়াক্কা না করেই তিনি বাংলাদেশের রাজনীতির ওই জীবন্ত কিংবদন্তীর বাসভবনে যান। খালেদা জিয়া অসুস্থ। তিনি চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাচ্ছেন। সেনা সদর ওই সাক্ষাৎ বিষয়ে কোনো বিবৃতি দেয়নি। গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসভবন ফিরোজায় (বৃহস্পতিবার) সেনাপ্রধানের সস্ত্রীক সাক্ষাৎ বিষয়ে বিএনপি বলেছে, ৪০ মিনিটের সাক্ষাৎটি কেবলই বেগম জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজ খবর এবং একান্তভাবে কুশলাদি বিনিময়ের জন্য। মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহি আকবরের বরাত দিয়ে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান মিডিয়াকে ব্রিফ করেন।
আনুষ্ঠানিক বক্তব্য যাই আসুক না কেন, রাজনীতিতে এই সাক্ষাতের প্রভাব বিস্তর। এ নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ চলতেই থাকবে। কারণ বাস্তব কারণেই সেনা প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের এই সময়ের প্রতিটি পদক্ষেপ তাৎপর্যপূর্ণ। সম্প্রতি প্রকাশিত তার একটি সাক্ষাৎকার আগামীর রাজনীতির হিসাব-নিকাশ জটিল করে দিয়েছে। সেই সাক্ষাৎকারে সেনাবাহিনীকে রাজনীতি থেকে দূরের রাখার স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন তিনি। খোলাসা করেই বলেছেন, ক্ষমতার কোনো লোভ নেই তার। গত ১৫ বছরের জঞ্জাল সাফ করতে তিনি দ্রুত নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের ইঙ্গিত দিয়েছেন। ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে কেমন সম্পর্ক হওয়া উচিত তা-ও বাতলে দিয়েছেন সেনাবাহিনী প্রধান। বলটা তিনি সরকারের কোর্টেই ঠেলেছেন। সব মিলে নিঃশব্দে খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার বৈঠকটির তাৎপর্য অনেক বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের আগামীর চলার পথটি এখনও অনিশ্চয়তায় ঘেরা।

Advertisement
Comments
Advertisement

Trending