Connect with us

বাংলাদেশ

ঘরে বাইরে অস্থিরতা চাপে ইউনূস সরকার

Published

on

কী হতে পারে ১৫ জানুয়ারির পর

নরমে-গরমে দাবি-দাওয়া ও বিভিন্ন দলের নানামুখী আন্দোলন সামাল দিয়ে এতোদিন সব কিছু নিজেদের আয়ত্তেই রেখেছিলো অন্তবর্তীকালীন সরকার। আন্দোলন-অভ্যুত্থানের বছর ২০২৪ পার হতে না হতেই যেন রাজনৈতিক চাপের শুরু। সরকারের ৫ মাস পূর্তির মুহুর্তে আক্রমণাত্মক ভাব প্রকাশ করেছে ক্ষমতার

সিঁড়িতে অপেক্ষমাণ জাতীয়তাবাদি শক্তির প্রতিনিধিত্বকারী প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি। খোদ দলটির মহাসচিব আপৎকালীন সরকারের ‘ক্ষমতার লোভ’ নিয়ে ক্ষোভ ঝেড়েছেন। কোনো রকম প্রভোকেশন ছাড়া নিজে থেকেই এই সন্দেহের অবতারণা করেছেন পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার ভাষ্যটি ছিল এমন—‘ক্ষমতায় টিকে থাকার একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।’
কে কীভাবে এই অসুস্থ প্রতিযোগিতায় মত্ত, তা তিনি খোলাসা না করায় রাজনীতি সচেতনরা যে যার মতো করে ভাবতে শুরু করেছেন। তার সেই বিস্ফোরক মন্তব্য মুহুর্তেই ভাইরাল হয়ে গেছে নেট দুনিয়ায়। এ নিয়ে তির্যক মন্তব্য করছেন অনেকে।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঘোষণা করেছেন বিদায়ী বছরেই। কিন্তু বিএনপি এতে আশ্বস্ত হতে পারেনি। যা দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের ভাষ্যে স্পষ্ট। জাতীয়তাবাদী দলটি নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চেয়ে আসছে। সমমনারাও তাই। ব্যতিক্রম জামায়াত। তারা প্রয়োজনীয় এবং অতিব গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো ধীরস্থির ভাবে সম্পন্ন করে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে (অর্থাৎ এতে ভোট খানিকটা দেরিতে হলেও আপত্তি নেই) নির্বাচন চায়। জামায়াতে ইসলামী নিয়ে বিএনপির সন্দেহ শুরু থেকেই। অন্তর্বর্তী সরকারে বিভিন্ন নিয়োগে ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দল দু’টি প্রায় মুখোমুখি। যদিও প্রশাসন, বিচার বিভাগ এবং শিক্ষা-স্বাস্থ্যের নিয়োগগুলোতে এখনো ঘুরেফিরে স্বৈরশাসনের সুবিধাভোগীরাই সুবিধা পাচ্ছে! মেধা-যোগ্যতা বা রাজনৈতিক বঞ্চনা বিবেচনায় নেয়ার বদলে মোটা অংকের অনৈতিক লেনদেন, স্বজনপ্রীতি এবং আঞ্চলিকতাই প্রাধান্য পাচ্ছে। যা নিয়ে সরকার ও আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ছাত্র নেতাদের পরস্পরের মধ্যে সন্দেহ-সংশয় বাড়ছে। যার বিস্ফোরণ হতে পারে যেকোন সময়। সরকারের ভেতরে ছোট-বড় নানা গ্রুপ তথা ‘উপ-সরকার’র অস্তিত্ব বিদ্যমান। কে যে সরকার চালাচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন শুরু থেকেই।
৫ই আগস্টের রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের কৃতিত্ব নিয়ে কাড়াকাড়ি চলছে। জামায়াত-শিবিরের প্রতি সন্দেহ ছিল হাসিনা সরকারের। তার ক্ষমতার খুঁটি ভারতও তা মনে করেছিলো। আন্দোলনের নেপথ্যে জামায়াত রয়েছে এমন দাবি করে ১৪ দলের সভায় দলটি একেবারে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হয়। ক্র্যাকডাউনের সুপারিশ আসে। কিন্তু শেখ হাসিনার পতন ঠেকানো সম্ভব হয়নি।
তবে, জামায়াত এখনো অভ্যুত্থানের একক কৃতিত্ব দাবি করেনি। বরং তারা কৌশলী বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছে। যা বিএনপিকে রীতিমতো দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলটির নেতাকর্মীদের ধারণা সরকারের মদদে ছাত্রদের নতুন দল গঠনের যে তৎপরতা—তার নেপথ্যে আর কেউ না থাকলেও জামায়াত-শিবির রয়েছে। আন্দোলনটি তারা যেভাবে ডিজাইন করেছে হয়তো ভবিষ্যতে ছাত্রদের দিয়ে দল গঠন করে তাদের সঙ্গেই জোটবদ্ধ হবে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থানকারী জামায়াত। আর অন্তবর্তী সরকার সেই শক্তির সমর্থক হলে বিএনপি কার্যত ক্ষমতার সিঁড়ি থেকে উল্টে পড়ে যেতে পারে!
বোদ্ধারা বলছেন, এজন্যই হয়তো সরকারের ওপর আগাম চাপ তৈরির কৌশল নিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।
ঘরে-বাইরে অস্থিরতা: রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, পাঁচ মাসেও ফ্যাসিবাদী শাসনের রেখে যাওয়া ভূত তাড়াতে পারেনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বরং তারা নতুন নতুন সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে হাসিনা সরকারের মন্ত্রীদের মতোই বেফাস কথা বলতে শুরু করেছেন উপদেষ্টারাও। বিশেষ করে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন মুর্শিদ। ভরা মৌসুমেও চালের মূল্য নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতা ঢাকতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমার হাতে কোনো আলাদিনের চেরাগ নেই যে তাতে সুইচ দিলেই আগামীকাল বাজার ঠিক হয়ে যাবে।’ তিনি দাবি করেছেন, তার কাছে নাকি তথ্য রয়েছে চালের মজুতে কোনো ঘাটতি না থাকার। এনজিও ব্যক্তিত্ব শারমীন মুর্শিদ নানা সময় অহেতুক প্রলাপ বকছেন। তার ম্যান্ডেটের বাইরে গিয়ে তিনি প্রায়শই কথা বলে সরকারকে বিতর্কের মুখে ফেলছেন! অন্য উপদেষ্টাদের দু’একজনের এমন বাতিক ছিল। কিন্তু এক্টিভিস্টদের কারণে এখন তারা নিজেরাই নিজেদের লাগাম টেনেছেন।
কী হতে পারে ১৫ জানুয়ারির পর: ৩১শে ডিসেম্বর ঘিরে ছিলো রাজনৈতিক অঙ্গনে সবচেয়ে বড় অস্থিরতা। যা ছাইচাপা দেয়া সম্ভব হয়েছে। কিন্তু এ আগুনের স্ফূলিঙ্গ যে কোনো মুহুর্তে আগ্নেয়গিরিতে রূপ নিতে পারে। ১৫ই জানুয়ারির মধ্যে ‘জুলাই প্রোক্লেমেশন’ বা জুলাই ঘোষণা দিবে সরকার। তখন রাজনৈতিক দলগুলো এবং আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া ছাত্র নেতাদের (সমন্বয়ক) প্রতিক্রিয়া কী হয় তা দেখার বিষয়।
৩১শে ডিসেম্বর শহীদ মিনারের সমাবেশ থেকে ছাত্রনেতারা বিদ্যমান সংবিধানকে ‘মুজিববাদী’ আখ্যা দিয়ে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচন দাবির বিষয়ে তারা নতুন এক তত্ত্ব হাজির করেছেন। জাতীয় নির্বাচনের আগে গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি তুলেছেন। গণপরিষদের মাধ্যমে রাজনৈতিক ব্যবস্থার ফয়সালা করার কথা বলেছেন তারা। সরকার ঘোষিত সংস্কারের আগে জাতীয় নির্বাচন হবে না, এমন বক্তব্যও এসেছে। যার প্রায় সব দাবির বিরুদ্ধে বিএনপির অবস্থান। অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ১৫ই জানুয়ারির মধ্যে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে জুলাই প্রক্লেমেশন বা ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হবে। পর্দার আড়ালে আলাপ-আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে। দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত এটি নতুন অস্থিরতার জন্ম দেয় নাকি স্বস্তি ফিরিয়ে আনে?

Advertisement
Comments
Advertisement

Trending