ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপত্তাকর্মীর সঙ্গে মারামারিতে জড়িয়ে জরিমানা দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন বিদেশফেরত এক প্রবাসী। উনত্রিশ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির নাম সাঈদ উদ্দিন মোহাম্মদ। তার বাড়ি ফেনীর সোনাগাজীতে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে নরওয়েতে থাকেন। বুধবার রাতে বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক আগমনী ক্যানোপি-২ এর সামনে এ ঘটনা ঘটে। একটি সিসিটিভি ভিডিওতে দেখা গেছে, বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে সাঈদ উদ্দিন বিমানবন্দরের নিরাপত্তা দায়িত্বে থাকা একজন
বিমানবাহিনীর সদস্যকে ধাক্কা দিলে হাতাহাতি শুরু হয়। পরে তাকে নিবৃত্ত করেন এভসেক সদস্যরা। এ ঘটনায় বিমানবন্দর ম্যাজিস্ট্রেট ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে তাকে ছেড়ে দেন। প্রবাসী যাত্রী ও বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকর্মীর মধ্যে হাতাহাতির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ওই ভিডিওতে প্রবাসী সাঈদ উদ্দিনকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখা যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, হাতাহাতির পর ওই প্রবাসীর চোখে জখম হয়েছে, তার ঠোঁট ফেটে গেছে এবং গালেও আঘাত পেয়েছেন তিনি। বিমানবাহিনীর যে সদস্যকে তিনি ধাক্কা দিয়েছেন, তার নাম কোহিনূর। তিনিও আহত হয়েছেন। তার চোখ ফুলে গেছে। ওই ভিডিওতে প্রবাসীকে লক্ষ্য করে কোহিনূরকে বলতে শোনা যায়, কাজটা ভালো করেন নাই। আপনি আমাকে কেন ধাক্কা দিলেন? আমি সিভিল লোক? প্রতিউত্তরে সাঈদ তার সঙ্গে আসা এক স্বজনকে দেখিয়ে বলতে থাকেন, আপনি উনাকে ধরেন নাই? ধরেন নাই? আপনারা পাঁচ-ছয়জন মিলে মারছেন ওরে। সে সময় বিমানবাহিনীর ওই সদস্য বলেন, সিসিটিভি আছে, দাঁড়ান। বিমানবন্দর সূত্রে জানা যায়, বিমানবন্দরের ক্যানোপি-২ এর সামনে দুজন যাত্রী একজন নিরাপত্তা সদস্যকে শারীরিকভাবে আঘাত করেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা এবং প্রাথমিক তদন্ত মোতাবেক জানা যায়, পাঁচজন আগমনী যাত্রীর একটি দল বিমানবন্দরের কার্যক্রম শেষ করে ক্যানোপি-২ এলাকা দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার সময় তাদের মধ্যে একজন ট্রলিসহ ক্যানোপি-২ এর গেটের ঠিক সম্মুখভাগে অবস্থান করেন। এতে গেটে সব আগমনী যাত্রীর জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। ওই সময় ওই এলাকায় আগমনী যাত্রীদের চাপ বেশি থাকায় কর্তব্যরত নিরাপত্তাকর্মী বিনীতভাবে ওই যাত্রীকে কিছুটা সরে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেন। তবে ওই যাত্রী তাতে কর্ণপাত না করে দাঁড়িয়ে থাকেন। কিছুক্ষণ পরে ওই নিরাপত্তাকর্মী পুনরায় যাত্রীকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করতে গেলে তিনি প্রচণ্ড রাগান্বিত হয়ে পড়েন এবং অকথ্য ভাষায় নিরাপত্তাকর্মীকে গালিগালাজ করতে থাকেন।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, দু’পক্ষের বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে একজন নিরাপত্তাকর্মী ওই যাত্রীকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে ওই যাত্রীর ছেলে ঘটনাস্থলে এসে বিমানবাহিনীর ওই নিরাপত্তাকর্মীকে শারীরিকভাবে আঘাত ও লাঞ্ছিত করেন। যাত্রীরা ওই নিরাপত্তাকর্মীকে কিল ঘুষি মারা শুরু করলে তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয় এবং ওই নিরাপত্তাকর্মী মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। একপর্যায়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঘটনাস্থলে নিয়োজিত আনসার ও অ্যাভিয়েশন সিকিউরিটির সদস্যরা এগিয়ে গিয়ে নিরাপত্তাকর্মীদের উদ্ধার করেন। বিমানবন্দরের নির্বাহী হাকিম মো. ফারুক সুফিয়ান ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে দণ্ডবিধির ১৮৯ ধায়ায় সাঈদ উদ্দিনকে জরিমানার আদেশ দেন। এই ধারায় সরকারি কর্মচারীকে হুমকি কিংবা তার কর্তব্য পালনে বাধা দেয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ দুই বছরের জেল বা জরিমানা কিংবা উভয়দণ্ডের বিধানও রয়েছে।