Connect with us

বাংলাদেশ

ইউনূসের এক সিদ্ধান্তে নির্বাচন বর্জন করতে পারে বিএনপি

Published

on

• স্থানীয় নির্বাচন আগে করতে চায় সরকার
• আসতে পারে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা
• নতুন করে অস্থিরতা বাড়তে পারে

দিন যত যাচ্ছে ততোই নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে বিএনপির। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হতে পারে। তারপরও আশ্বস্ত হতে পারছে না দীর্ঘ দিন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসা বিএনপি। দলটির হাইকমান্ড মনে করছে-নির্বাচন বিলম্বিত করতে দীর্ঘ ষড়যন্ত্র চলছে। এরই মধ্যে নির্বাচন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূসের অবস্থান নিয়ে অসন্তোষ বাড়ছে বিএনপির। পাল্টাপাল্টি বাগযুদ্ধ পর্যন্ত হয়েছে ছাত্র প্রতিনিধি এবং বিএনপির নেতাদের মধ্যে।
অন্তর্বর্তী সরকার ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজনের কথা বললেও সেটা স্থানীয় নির্বাচন নাকি জাতীয় নির্বাচন তা খোলাসা করছে না। সেই সাথে আসিফ মাহমুদসহ তরুণ উপদেষ্টারা বলছেন, আগে হবে স্থানীয় নির্বচান। তারপর হবে জাতীয় নির্বাচন। এ নিয়ে গভীর শঙ্কায় পড়ে গেছে দলটি। দলীয় সূত্র বলছে পরিস্থিতি এমন হলে নির্বাচন বর্জনের মতো কঠিন

সিন্ধান্ত নিতে পারে বিএনপি।
সম্প্রতি উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ স্বীকার করেছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন আয়োজনে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে সরকারের এমন অবস্থানের পক্ষে নয় বিএনপি। এরই মধ্যে নীতিনির্ধারণী ফোরামে এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেছে দলটি। সিদ্ধান্ত হয়েছে- শেষ পর্যন্ত সরকার স্থানীয় নির্বাচন করলে সমর্থন দেবে না বিএনপি। এমনকি আসতে পারে ভোট বর্জনের মতো ঘোষণাও।
এ জন্য বারবার বিএনপি নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। কিন্তু কোন ভাবেই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে চায় না সরকার। নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে উপদেষ্টারা পর্যন্ত বলছেন- ডিসেম্বরকে টার্গেট করে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলছেন, স্থানীয় নির্বাচন আয়োজনে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের পেছনে জাতীয় নির্বাচন পেছানোর কুটকৌশল রয়েছে। এতে, সুবিধা পাবে ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল। এক্ষেত্রে, অন্তর্বর্তী সরকার চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিলে ভোট বর্জনের মতো সিদ্ধান্তও নিতে পারে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো।
এ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের নামে অহেতুক সময়ক্ষেপণ করা হবে। এর পেছনে রয়েছে সমন্বয়কদের নতুন রাজনৈতিক দলকে শক্তিশালী করার কূটকৌশলও। যা কোন ভাবেই মেনে নেবে না বিএনপি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ছাত্রদের সমন্বয়ে যে দল হচ্ছে তাদের সময় দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সরকার। যাতে তারা তাদের দল সুন্দর ভাবে গুছিয়ে নিতে পর্যাপ্ত সময় পায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা ভাবছে, একবার স্থানীয় সরকার নির্বাচন করে দিলে চেয়ারম্যান, মেম্বার এরাই তাদের ক্যাডার হবে। এরাই তাদের দলকে ধরে রাখবে। এই উদ্দেশ্যেই তারা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কথা বলে। এর বাইরে কোনো মহৎ উদ্দেশ্য নেই। ক্ষমতা যতদিন পারা যায় বিলম্বিত রাখা যায়, সেই উদ্দেশ্যেই এমন কথা বলছে।
দর্শক জনপ্রিয় আইবিটিভি ইউএসএ-এর রাজনীতির এপিঠ-ওপিঠ টকশোতে সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামালও এ নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হয়ে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের পরামর্শ এবং তাদের সমর্থনের কথা বলতে পারেন না ড. মোহাম্মাদ ইউনূস। তার অভিযোগ, আগামী নির্বাচন আয়োজনের নৈতিক সক্ষমতা হারিয়েছেন ড. ইউনূস। কারণ কোন সরকার এক পক্ষকে সমর্থন জানিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করতে পারে না। কারণ সরকার যার দিকে সুনজরে তাকাবে মাঠ প্রশাসন তাকেই সুবিধা দেবে। এমনটা হলে অবশ্যই নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন হতে পারে। বিএনপি মহাসচিবের এমন দাবির যৌক্তিকতা আছে বলেও মনে করেন তিনি।
বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। একটি নির্বাচন করতে তিন চার মাস সময় লাগে। উপজেলা, পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনে আরও সময় লাগে। এক্ষেত্রে এই নির্বাচনের জন্য এত দীর্ঘ সময় নেই। তার মানে সরকার ইচ্ছা করে নির্বাচন বিলম্বের ফাঁদ তৈরি করছে। ইউনূস সরকার যদি জোর করেই এমন সিদ্ধান্ত নিতে চায় তাহলে জোটরে শরিকদের নিয়ে বিএনপি ভোট বর্জন করবে। এমনকি জোরালো আন্দোলনে মাঠেও নামবে।
এরই মধ্যে সারাদেশে সমাবেশ শুরু করেছে বিএনপি। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ডিসেম্বরই নির্বাচনের ডেডলাইন। এরপর আর নির্বাচন পেছানোর সুযোগ নেই। কেউ সেটার চেষ্টা করলে প্রতিহত করা হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সংসদের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পক্ষে মন্তব্যের বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। এমনিতে রাজনৈতিক দলগুলো এবং জনগণের একাংশের মধ্যে আগে থেকেই সন্দেহ-সংশয় রয়েছে অন্তবর্তী সরকার দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকতে চায়। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আসায় সেই সন্দেহ-সংশয় আরও পরিপুষ্ট হয়েছে। কেননা এ সরকারের উদ্যোগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে হলে তা জাতীয় নির্বাচনের আগেই করতে হবে। জাতীয় নির্বাচন হয়ে গেলে তখন আর তাদের হাতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের সময় থাকবে না। তখন বিজয়ী দলের কাছে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সন্দেহের আরেকটি বড় কারণ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা। জনমনে এমন একটা ধারণা আছে, প্রকাশ্যে না হলেও ছাত্র-তরুণরা দল গঠনের ক্ষেত্রে অন্তবর্তীকালীন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে। ফলে দেশে নতুন করে অস্থিরতা বাড়তে পারে বলেও শঙ্কা রয়েছে।

Advertisement
Comments
Advertisement

Trending