Connect with us

বাংলাদেশ

যে কারণে ড. ইউনূসকে ৫ বছরের জন্য চাচ্ছেন সাধারণ মানুষ

Published

on

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে পাঁচ বছরের জন্য সরকার প্রধান হিসেবে পাওয়ার আকাঙ্খার কথা প্রথম প্রকাশ্যে আনেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। গত ২৯ মার্চ নিজ ফেসবুক পোস্টে সারজিস লেখেন, ‘প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো একজন স্টেটসম্যানকে পাঁচ বছরের জন্য বাংলাদেশের একটি নির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা আমার আজীবন থাকবে।’
উক্ত আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে অনেক সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা মিলিগেলেও এতে রাজনৈতিক দুরভিসন্ধির গন্ধও পেয়েছেন

অনেকে। কারণ সারজিস ড. ইউনূসকে একটি নির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পাওয়ার কথা বলেছেন। সেক্ষেত্রে সারজিসদের নবগঠিত দল এনসিপি নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে এবং তারা ড. ইউনূসকে সরকার প্রধান হিসাবে রাখবে এমন ইংগিতই দিয়েছেন সারজিস।
সবশেষ ২ এপ্রিল একই দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস মানুষকে সততা ও নিষ্ঠার স্বাদ দিয়েছেন। সামাজিক মাধ্যমে হেলথ টিপস দিয়ে পরিচিতি পাওয়া এনসিপির এ নেতা তার পোস্টে লিখেছেন, ‘ইউনূস স্যার সততা আর নিষ্ঠার স্বাদ দিয়েছেন মানুষকে। তারা আর ফিরবে না চাঁদাবাজদের কাছে। তিনি আরও লিখেছেন, ‘এখন নতুনদের সময়। এখন নতুন বাংলাদেশের সময়।’
সারজসি আলম ও তাসনিম জারাদের বক্তব্যে দলীয় রাজনীতির মারপ্যাঁচ থাকলেও ঈদুল ফিতরের দিন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঘটছে এক অভূতপূর্ব ঘটনা। ঈদের জামাত শেষে হাত মিলিয়ে জনতাকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ঈদগাহ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময়ে তার সঙ্গে হাত মেলান জামাতে অংশ নেওয়া নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ।
বিষয়টি নিয়ে সাদিকুর রহমান খান নামের একজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লেখেন, নামাজের পর হাজারো মানুষ ড. ইউনূসকে ঘিরে ধরেন। ইউনূস যখন মানুষের বাড়িয়ে দেওয়া হাত স্পর্শ করতে ব্যস্ত, মানুষ তখন ‘স্যার পাঁচ বছর, স্যার পাঁচ বছর’; ‘ইউনূস সরকার, বারবার দরকার’— বলে চিৎকার করতে থাকে। ঈদের দিন মানুষের এই বাঁধভাঙা ভালোবাসার চেয়ে সুন্দর ঈদ উপহার ড. ইউনূসের জন্য আর কী হতে পারতো?
এনসিপি ড. ইউনূসের মতো আকাশচুম্বি ব্যক্তিত্বের নামের ওপর ভর করে সরকার গঠনের স্বপ্ন দেখলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে যারা পূরো এক মেয়াদের জন্য তাকে সরকার প্রধান হিসেবে চান তাদের চাওয়ার পেছনে এক ধরণের স্বস্তিবোধ কাজ করছে। যে স্বস্তি গত প্রায় ৫৪ বছরে রাজনৈতিক সরকারগুলো দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
চাল-তেল আর মাংস ছাড়া সব নিত্যপণ্যের দামই গত কয়েক মাস ধরে বেশ স্বস্তিদায়ক অবস্থায় রয়েছে। আলু-পেয়াজ-বেগুন-টমেটোসহ কিছু পণ্যের দাম স্বরণকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। এক্ষেত্রে কৃষকের ক্ষেত থেকে খুচড়া বাজার পর্যন্ত ৫/৬ স্তরের চাঁদাবাজি বহুলাংশে বন্ধ থাকাকে কারণ মানছেন অনেকে।
এই সরকারের শুরুর কয়েক মাস মানুষের সবচেয়ে বড় অসন্তোষের জায়গা ছিলো আইন-শৃঙ্খলা। পুলিশের নিস্কৃয়তা, প্রশাসনের অসহযোগিতা, কথিত মব জাস্টিস-মানুষের মধ্যে তীব্র নিরাপত্তাহীনতাবোধ তৈরি করেছিলো। কিন্তু গত কিছু দিনে পরিস্থিতির লক্ষণীয় উন্নতি হয়েছে।
আর শেখ হাসিনার সরকারের লুটপাট আর বিপুল অর্থপাচারের ফলে ভেঙ্গেপরা অর্থনীতিকে নতুন জীবন দেওয়ার দায়িত্ব যেন সাধারণ মানুষই নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। যার প্রমাণ গত মার্চ মাসে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চসংখ্যক রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যার ফলে শেখ হাসিনার রেখে যাওয়া মাত্র ১৩ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ছাড়িয়েছে।
গত ২৭ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান জানিয়েছেন, প্রবাসী আয় বাড়ায় দেশের রিজার্ভের পরিমাণও বাড়ছে। এতে দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি মাসের ২৭ তারিখ পর্যন্ত দেশের গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ ২৫৪৪০ দশমিক ৮৮ মিলিয়ন বা ২ হাজার ৫৪৪ কোটি ৮ লাখ ৮০ হাজার ডলার। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ এখন ২০২৯৬ দশমিক ৯৩ মিলিয়ন বা ২ হাজার ২৯ কোটি ৬৯ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার।
এদিকে, চলতি মার্চের ২৬ দিনে দেশে এসেছে ২৯৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে) যার পরিমাণ ৩৫ হাজার ৯২৯ কোটি টাকা। যা দেশের ইতিহাসে কোনো এক মাসে সর্বোচ্চ।
আর বিশ্বে ড. ইউনূসের গ্রহণযোগ্যতা বলাবাহুল্য, সেকারণেই ডোলান্ড ট্রাম্প বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর বাড়তি ৩৭ শতাংশ করারোপের পর প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘আমরা বিষয়টি পর্যালোচনা করছি। যেহেতু এটি আলোচনাযোগ্য, তাই আমরা আলোচনা করব এবং আমি নিশ্চিত যে আমরা সর্বোত্তম সমাধানে পৌঁছাতে পারব।’
ড. ইউনূসের এই আত্মবিশ্বাস যে বাগারম্বর নয় তার প্রমাণ তিনি বহুবার দিয়েছেন। সবশেষ চীন সফরে গিয়ে ২০২৮ সাল পযর্ন্ত সেদেশে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার আদায় করে এনেছেন। হাসিনার পতনের পর ভারতীয় সরকারের তদ্ভির এবং তাদের গুজব নির্ভর মিডিয়াগুলোর সর্বব্যপি অপপ্রচার সত্বেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ড. ইউনূসকে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়ে বলেন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে অংশিদারিত্ব আরো বাড়াতে আগ্রহী।
বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সর্বভৌম দেশ হওয়া সত্বেও গত কয়কে দশক সরকারগুলোর আচরণ ছিল অনেকটা ভারতের প্রদেশিক সরকারগুলোর মতো। কিন্তু ৫ আগষ্টের বিপ্লবের পর ইউনূসের সরকার মর্যাদা আর অধিকারের ভিত্তিতে ভারতসহ প্রতিটি দেশের সঙ্গে ডিল করছে। কুটনৈতিক ক্ষেত্রে ইউনূস সরকারে এই অভূতপূর্ব অর্জন জাতীয় মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে অনেকগুন।
এসব কারণেই অনেক সাধারণ মানুষ রাজনীতির মারপ্যাঁচে না গিয়ে অন্তত ৫ বছরের জন্য ড. মোহাম্মদ ইউনূসকে সরকার প্রধানের আসনে দেখতে চান।

Advertisement
Comments
Advertisement

Trending