কমিউনিটি সংবাদ
কোটা আন্দোলনে উত্তাল নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন স্টেট
Published
2 months agoon
গণহত্যার বিচার ও সরকারের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত
বাংলাদেশে মধ্য জুলাই থেকে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও হত্যা-নির্যাতনের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন স্টেটে বিক্ষোভ সমাবেশ অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে আয়োজিত এসব প্রতিবাদ সমাবেশে সরকারের ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে পদত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠছে প্রতিনিয়ত। কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা ও আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করে মোনাজাত করা হয়েছে বিভিন্ন র্যালি ও সমাবেশ থেকে।
গত ২৬ জুলাই জ্যাকসন হাইটসে ডাইভারসিটি প্লাজায় রাষ্ট্র সংস্কার চেয়ে নিউইয়র্কে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে বিএনপি। সংগঠনের সভাপতি অলিউল্লাহ আতিকুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সাঈদুর রহমান সাঈদের পরিচালনায় এ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘পদত্যাগ’ দাবি করে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদিন ফারুক বলেন, ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় বেগম জিয়াকে কারাগারে রেখে শেখ হাসিনা বাকশালি স্টাইলে সারা জীবন ক্ষমতায় থাকতে চান। কিন্তু জনতা জেগেছে। শেখ হাসিনা আর এই গণতন্ত্রের নামে অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশের ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য গিয়াস আহমেদ বলেন, এই প্রবাস থেকে নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন করে এরশাদকে হটানোর পথ সুগম করেছিলাম। ১/১১-তে গঠিত সেনাসমর্থিত কেয়ারটেকার সরকার হটাতেও প্রবাসীরা দুর্বার আন্দোলনে শরিক হয়েছিলাম। সেই চেতনায় বর্তমানের আন্দোলনকে শেখ হাসিনার পতন না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত রাখতে হবে। বিএনপির চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির অন্যতম সদস্য গোলাম ফারুক শাহীন বলেন, শেখ হাসিনা সরকার পতনের আন্দোলন ত্বরান্বিত করতে অদ্ভুত একমাস রেমিটেন্স পাঠানো বন্ধ রাখতে হবে। আর এটি হচ্ছে সময়ের দাবি।
সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন নিউইয়র্ক মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিবুর রহমান সেলিম রেজা, সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম, সৈয়দা মাহমুদা শিরিন, স্টেট বিএনপির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জসিমউদ্দিন, যুগ্ম-সম্পাদক আরিফুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক রইচউদ্দিন, নিউইয়র্ক মহানগর উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবাদ চৌধুরি, বরিশাল বিভাগ জাতীয়তাবাদী ফোরামের সভাপতি জাফর তালুকদার, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক আনিসুর রহমান, হুমায়ূন কবীর, দেওয়ান কাউসার, আমিনুল ইসলাম চৌধুরি, আশরাফ হোসেন, বদরুল হক আজাদ, এআর মাহবুবুর রহমান, বাচ্চু মিয়া, হাফিজুর রহমান পিন্টু, জিনাত রেহানা নীরা, মুক্তিযোদ্ধা মশিউর রহমান ও ওয়াহেদ আলী মণ্ডল প্রমুখ ।
এদিকে, কোটা সংস্কার আন্দোলনে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের দাবির সমর্থনে এবং নিহতের প্রতিবাদে নিউইয়র্কে ব্যাপক বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন নিউইয়র্কের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গত ২৭ জুলাই শনিবার বিকেলে জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা মোমবাতি প্রজ্বলন ছাড়াও নিহতদের প্রতি সমবেদনা ও দায়ীদের বিচার ছাড়াও কোটা সংস্কার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে সংহতি কর্মসূচি পালন করেন।
সমাবেশের শুরুতে গীতা পাঠ ও মোনাজাতের মধ্য দিয়ে নিহত ছাত্রছাত্রীদের জন্য দোয়া করা হয়। পরে কোটা আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থীদের নাম বলে নাম উল্লেখ এবং তাদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বলন করা হয়। সমাবেশকারীরা পুলিশের গুলি আর সহি সংস তায় নিহতদের ছবিও প্রদর্শন করে এবং শ্রদ্ধা জানায়। এছাড়াও সমাবেশকারীরা সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে, কবিতায় আর পানে গানে তাদের প্রতিবাদ জানায়। বক্তারা বলেন, দেশে শিক্ষার্থীরা আজ নিরাপদ নয়, তারা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত। অধিকার আদায় করতে গিয়ে তারা মারা যাচ্ছে। আজ কেনো আমাদেরকে প্রতিবাদ করতে হচ্ছে। এসব সময়ের দাবি। সমাবেশে যোগদানকারী অনেকেই আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়েন এবং কান্না করেন। সমাবেশে থেকে বর্তমানে বাংলাদেশের চলমান সহিংসতা বন্ধ করার জন্য শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান এবং অবিলম্বে সকল হত্যাকাণ্ডের বিচারও দাবি করেন। আহ্বায়ক নওশীন খানের নেতৃত্বে সমাবেশে বিপুল সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীর সাথে অভিভাবকগণ যোগ দেন। এসময় তারা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা হাতে তাদের দাবির সমর্থনে ‘লাখো শহিদের রক্তে কেনা দেশটা কারো বাপের না, সলিডারিটি উইথ বাংলাদেশি স্টুডেন্টস, শেখ হাসিনা কিলার, দেশ বিকানো স্বৈরাচার এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়, তুমি কে আমি কে বিকল্প বিকল্প প্রভৃতি লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে। ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’—গগন বিদারী এই শ্লোগানে জ্যাকসন হাইটস এলাকা প্রকম্পিত করে তোলে।
বাংলাদেশ স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বিএপিপি, নিউইয়র্ক সিটি ফর স্টুডেন্টস অব বাংলাদেশ, এনওয়াইইউ বিএসএ, বিএমএ সিসিএনওয়াই, আরবিএমসি, চীন্ডরে অব ১৯৭১ সহ ১৭টি সংগঠনের ব্যানারে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় বলে জানা গেছে। জেএসডি যুক্তরাষ্ট্র : জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, ছাত্র হত্যার দায়ে সরকারের পদত্যাগ করতে হবে। শান্তিপূর্ণ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে দমন করার জন্য পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ছাত্র আন্দোলনের তীর্থভূমিতে প্রতিদিন ছাত্র হত্যা করায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন আজ জাতীয় রাজনীতির প্রধান অ্যাজেন্ডায় পরিণত হয়ে পড়েছে। শক্তি প্রয়োগ এবং ছাত্র হত্যা করে জাগরণকে স্তব্ধ করা যাবে না। বিরাজমান বৈরী পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সরকারের পদত্যাগের কোনো বিকল্প নেই।
ছাত্র জাগরণে আন্দোলনে যারা শহিদ হচ্ছেন, তাদের জাতীয় বীর ঘোষণা করে তিনি বলেন, নতুন প্রজা এবং বৈষম্যহীন জাতি বিনির্মাণের কারিগরদের ‘রাজাকার’ আখ্যা দেয়া বক্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে এবং প্রকাশ্যে জাতির কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে হবে।
তিনি নিরস্ত্র ছাত্রদের হত্যার দায় নির্ধারণে জাতিসংঘের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাসমূহের প্রতিনিধি সমন্বয়ে ‘তদন্ত কমিটি’ গঠন করার দাবি জানান। গত ২০ জুলাই নিউইয়র্কের জেএসডি আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। সন্ধ্যা ৭টায় জ্যাকসন হাইটসে ডাইভারসিটি প্লাজার সামনে অনুষ্ঠিত হয় সামনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, ফ্লোরিডা গেইসভিলে প্রবাসীদের প্রতিবাদ সমাবেশ।