Connect with us

কমিউনিটি সংবাদ

নিউইয়র্কে বাংলাদেশ ডে প্যারেডের অনুষ্ঠান নিয়ে হযবরল অবস্থা

Published

on

নিউইয়র্কে বাংলাদেশ ডে প্যারেডের অনুষ্ঠান নিয়ে হযবরল অবস্থা

প্যারেডে মানুষ কম, বাংলাদেশি পুলিশ উপস্থিতি বেশি

দীর্ঘ পঁচিশ বছর পর আবারো নিউইয়র্কে হয়ে গেল বাংলাদেশ ডে প্যারেড। তবে আয়োজকরা উদাসীন থাকায় প্যারেড পূর্ববর্তী শুভেচ্ছা-বক্তব্য পর্বটি শেষ হলো হযবরল অবস্থায়। অতি কৌতূহলী লোকজন মঞ্চ থেকে না সরায় আয়োজক সংগঠনের প্রধান শাহ শহিদুল হক সাঈদকে দফায় দফায় প্যারেড-কর্মসূচি স্থগিতের হুমকি দিতে হয়েছে। রোববার ওয়ার্ল্ড হিউম্যান রাইটস ডেভেলপমেন্ট’র উদ্যোগে নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে ৬৯ স্ট্রিট থেকে ৩৭ এভিনিউর ওপর দিয়ে ৮২ স্ট্রিট পর্যন্ত এ প্যারেডের মধ্যমণি ছিলেন সিটি মেয়র এরিক এডামস। যদি ও এ প্যারেডে কিছু সংখ্যক প্রবাসীর দেখা গেলে বাংলাদেশি পুলিশদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
প্রোগ্রামের আয়োজকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, জ্যাকসন হাইটসের ৬৯-৮৭ স্ট্রিটের নিউ ইয়র্কে বসবাস করেন তিন লক্ষাধিক বাংলাদেশি। আছে প্রায় তিন শতাধিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। যদি ও ছিল না তাদের একেবারেই উপস্থিতি। উলটো আয়োজকদের খামখেয়ালীপনার কারণে বাংলাদেশ ডে প্যারেড স্বল্প সংখ্যক প্রায় দেড় শতাধিক প্রবাসী আর প্রায় দুই শ’র মতো বাংলাদেশি পুলিশের উপস্থিতি দেখে হতাশ হয়েছেন প্রবাসীরা। জানান, দিনটি ছুটির হওয়ায় পোষাক পরে কোন পুলিশ ডিউটি করলে বেতন পান দেড় গুণ এবং ছুটির দিন কাজ করার বিপরীতে আরও একদিন ছুটি পাবেন। সেই হিসেবে বেতনের পরিমাণ দাঁড়ায় আড়াই গুণ। এ কারণেই পুলিশ, কারেকশন বিভাগসহ ও অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তারা এদিন ডে প্যারেডে ছুটে আসেন সদলবলে।
প্যারেডে প্রধান অতিথি ছিলেন নিউ ইয়র্কের মেয়র এরিক অ্যাডামস। ইসরায়েলের সমর্থনকারী নিউ ইয়র্কের সিটি মেয়রের বক্তব্য চলাকালীন সময় তাকে উদ্দেশ্য করে ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন দেশীয় নাগরিকরা তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন। এ সময় তিনি সাটআপ বলে তদেরকে থামতে বলেন। স্লোগান বাড়তে থাকলে তড়িঘড়ি করে বক্তব্য শেষ করেন তিনি। প্যারেড চলাকালীন সময়ে সামনে গিয়ে মেয়র এরিক অ্যাডামসের বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করলে সময় টিভির যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি হাসানুজ্জামান সাকীকে গোয়েন্দা পুলিশ ধাক্কা মেরে দূরে সরিয়ে দেন। উপস্থিতরা জানান, ওই সময়ে মেয়র কোন টিভির জন্য বক্তব্য দিতে গেলে প্যারেড থেমে যেত। ঐ সময়ে মেয়রের বক্তব্য নিতে চাওয়াটা অশোভনীয় বলে মন্তব্য করেন বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী।
এদিকে, নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে যাদের অবদান রয়েছে তাদেরকে সেভাবে কোন আমন্ত্রণ জানানো হয়নি এবার। ছিল না নতুন প্রজন্মের কোন সম্পৃক্ততা। জানা গেছে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটির ট্রাস্টি বোর্ড ও চেয়ারম্যানকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় এ প্যারেডে অংশ নেননি বাংলাদেশ সোসাইটি। অংশ নেননি বড় বড় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। চরম অব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশি মূলধারার রাজনীতিবিদরাও কেউ প্যারেডে আসেননি। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রস্থ বিশ্ব মানবাধিকার উন্নয়ন সংস্থার আয়োজনে বাংলাদেশ ডে প্যারেডের ১ সপ্তাহ আগে থেকে কে হবেন ‘গ্র্যান্ড মার্শাল’ এ নিয়ে বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতাদের মধ্যে শুরু হয় টানা হেঁচড়া। ২২ মে স্মার্ট টেক-এ অনুষ্ঠিত সভায় আহ্বায়ক শাহ নেওয়াজ কর্তৃক বাংলাদেশ সোসাইটির ট্রাস্টি বোর্ড ও চেয়ারম্যান এম এ আজিজকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন। শাহ নেওয়াজ বলেন, বাংলাদেশ সোসাইটির ট্রাস্টি বোর্ড হলো ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা। তার এ মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানান উপস্থিত বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রব ও সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকী। তারা তাৎক্ষণিক এ ধরনের মন্তব্য প্রত্যাহারেরও দাবি করেন। এর আগে আয়োজকরা বাংলাদেশ সোসাইটির কাছ থেকে অর্থ সাহায্য চাইলে কমিটির সিদ্ধান্তের পর তা জানানো হবে বলে উল্লেখ করেন সোসাইটির নেতারা। এ ঘটনায় বাংলাদেশ সোসাইটি উক্ত প্যারেডে অংশ নেননি বলে জানান ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম এ আজিজ। শুধু তাই নয় গ্র্যান্ড মার্শাল নির্ধারণের বিষয়ে আপত্তি করায় যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দ আকিকুর রহমান ফারুকের গায়ে হাত তোলেন আহ্বায়ক শাহ নেওয়াজের স্ত্রী রানো নেওয়াজ।
ফারুক বলেন, উপস্থিত সবার সামনেই একজন মহিলা তার গায়ে হাত তুলেছে। কিন্তু কেউই তেমনভাবে কোন প্রতিবাদ করেনি। তাকে অপমানিত করার জন্য তিনি বিচার চেয়েছেন।
এ সময় তাকে থামিয়ে দেন গিয়াস আহমেদ ও ফাহাদ সোলায়মান। এ নিয়ে মঞ্চেই গিয়াস আহমেদের সাথে আহ্বায়ক শাহ নেওয়াজের স্ত্রী রানো নেওয়াজের বাক-বিতণ্ডা হয়।
প্যারেডের দিন কেবল নয়, পুরো প্যারেড সম্মেলন নিয়ে ও শুরু হয়েছে বির্তক। বিভিন্ন প্রচারণায় আয়োজকদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ডে প্যারেডকে নিউ ইয়র্কে এই প্রথমবার উল্লেখ করে নানা প্রতারণা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রকৃত পক্ষে নিউ ইয়র্কে এটা দ্বিতীয় বাংলাদেশ প্যারেড। আশির দশকের প্রথমার্ধে সম্ভবত ১৯৮৪ সালে নিউ ইয়র্কে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ডে প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়। প্রবাসী আনিসুজ্জামান খোকনের রূপসি বাংলার আয়োজনে প্রথমবারের উক্ত প্যারেডে গ্র্যান্ড মার্শাল ছিলেন যথাক্রমে-নাসির খান পল, তহুর আহমেদ ও ডা. বিল্লাহ। উক্ত প্যারেডে গান গেয়েছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতারের প্রবাসী কণ্ঠযোদ্ধা শহিদ হাসান। এরপর ডা. হামিদ্দুজ্জামান ও ফখরুল আলমের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সোসাইটির আয়োজনে ১৯৯৯ সালে দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এবারের বাংলাদেশ ডে প্যারেডের আয়োজকরা অত্যন্ত চতুরতার সাথে প্রবাসীদের সাথে প্রতারণা করেছেন অভিযোগ ওঠে।

Advertisement
Comments
Advertisement

Trending