কমিউনিটি সংবাদ
লাখ লাখ ডলার নিয়ে লাপাত্তা স্মল ওয়ার্ল্ড মানি ট্রান্সফার
Published
5 months agoon
রেমিট্যান্স পাঠানোর নামে প্রতারণা
অর্থ দেশে পাঠানোর নামে লাখ লাখ ডলার হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ এসেছে স্মল ওয়ার্ল্ড মানি ট্রান্সফারের বিরুদ্ধে। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ঈদ উপলক্ষে দেশে টাকা পাঠিয়ে এখন রীতিমত বিপাকে পড়েছেন হাজার প্রবাসী বাংলাদেশী গ্রাহকরা।
তারা বলছেন, কোরবানির ঈদে জাকাত, পরিবার পরিজনের জন্য পশু, নতুন পোশাক, খাদ্য খাবার কেনাকাটার জন্য টাকা পাঠিয়েছেন তারা কিন্তু তা পৌঁছেনি স্বজনদের কাছে । আর এতেই টনক নড়ে শত শত গ্রাহকদের । খবর নিয়ে দেখে মানী ট্রান্সফার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন সে প্রতিষ্ঠান লাপাত্তা । প্রতিষ্ঠানটির নাম স্মল ওয়ার্ল্ড মানি ট্রান্সফার। স্মল ওয়ার্ল্ড মানি ট্রান্সফার অফিসে ফোন দিলে তা বন্ধ পাওয়া পাওয়া গেছে। জ্যাকসন হাইটসের এজেন্ট যাদেরও বা পাওয়া গেলো তারা নিউইয়র্ক সময়কে জানালেন, গেল ৮ জুনের পর তাদের মাধ্যমে যত টাকা দেশে পাঠানো হয়েছে তার একটি টাকাও প্রবাসী পরিবারের কেউ পায়নি। এমনকি স্মল ওয়ার্ল্ড এর সাথে যোগাযোগ করেও কোন সাড়া মিলছে না, আশ্বাস তো দূরের কথা। স্মল ওয়ার্ল্ডের প্রতিনিধি মিন্টূ সাহা নিউইয়র্ক সময়কে বলেন, এ প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধারে লোকসানে ছিল। যতটুকু শোনা যাচ্ছে, তারা ব্যাংক করাপ্সি ঘোষণা করবে। আমি এই মুহূর্তে অফিস যাচ্ছি না , চাকুরি আছে কিনা তা জানা নেই। এ সময় আমরা জানতে চেয়েছিলাম তাহলে লাখ লাখ ডলার, আর এইসব ভুক্তভোগী গ্রাহকদের কি হবে?এ ব্যাপারে কোন পরিষ্কার উত্তর মেলেনি। জ্যাকসন হাইটসের আরেকজন ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান জানান , তার দোকান থেকে শ খানেক গ্রাহক স্মল ওয়ার্ল্ড থেকে টাকা পাঠিয়েছেন উৎসবকে কেন্দ্র করে । কিন্তু এসব গ্রাহকদের গেল ৮ জুনের পর একটি টাকাও পায় নি স্বজনরা । গ্রাহকরা এখন প্রতিদিন কল দিচ্ছেন , টাকা ফেরত পেতে ধরনা দিচ্ছেন। এদিকে জ্যাকসন হাইটসের আরেক ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান টুকু , তার দোকান থেকে প্রচুর ব্যবসায়ীরা টাকা পাঠিয়েছিলেন । এ টাকা না পৌঁছায় প্রতিদিন হাজারো গ্রাহক ফোন দিচ্ছেন , কিন্তু দোকান বন্ধ , ফোন বন্ধ ।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের ১৯টি দেশে গেল ১৩ বছর ধারে রেমিট্যান্স সেবা দিয়ে আসছিল স্মল ওয়ার্ল্ড মানি ট্রান্সফার নামে এ প্রতিষ্ঠান । কিন্তু এক যুগেরও বেশি সময় ধারে সেবা দিয়ে আসা প্রতিষ্ঠানটি হঠাৎ করে তাদের কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় গত ১১ জুন। লন্ডনে প্রতিষ্ঠানটির সদর দপ্তর । কেবল যুক্তরাষ্ট্র নয় , যুক্তরাজ্য থেকে ও হুট করে ব্যবসা গুটিয়ে গ্রাহকদের অর্থ লোপাট করেছে এ প্রতিষ্ঠান। একজন গ্রাহক এরই মধ্যে ২ মিলিয়ন ডলার অর্থ রেমিট্যান্সের উদ্দেশ্যে দিয়ে সে অর্থ এখন ফেরত পাচ্ছেন না। এ ঘটনায় হতবাক পুরো বাংলাদেশী কমিউনিটি।
জ্যাকসন হাইটসে গ্রাহকরা বলছেন , মুসলিম অধ্যুষিত যে দেশগুলো আছে তারা বড় অঙ্কের টাকা পাঠায় এই কোরবানি ঈদকে কেন্দ্র করে । এই প্রতিষ্ঠানের টাকা হাতিয়ে লাপাত্তা হওয়ায় টাকার হদিসে ঘুরছেন তারা পথে পথে । কোন সমাধান মিলছে না। এদিকে, অনলাইন , মোবাইল অ্যাপস , নিজস্ব শাখা ও এজেন্টদের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি থেকে গ্রাহকরা তাদের কষ্টার্জিত অর্থ দেশে পাঠাত । বিশ্বের সাড়ে তিন লাখের বেশি জায়গা থেকে সে অর্থ উত্তোলন ও করা যেত। প্রতিষ্ঠানটি এমন অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় আস্থার সংকটে ভুগছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। তারা বলছেন , প্রবাসীদের অর্থ সময় মতো দেশে না পাঠিয়ে সেটি নিয়ে লাপাত্তা হওয়ার ঘটনাটি অবশ্যই আতঙ্কের । এবং এমন একসময় হলো উৎসবের সময় এটি বেশ দুঃখজনক।
এ প্রসঙ্গে মানি ট্রান্সফার প্রতিষ্ঠান বি.এ এক্সপ্রেস ইউএসএ ইনকের প্রধান নিবার্হী আতাউর রহমান নিউইয়র্ক সময় প্রতিবেদককে বলেন, হুট করে এ প্রতিষ্ঠান নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করায় কমিউনিটিতে আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে। কেননা দীর্ঘদিন যাবৎ প্রতিষ্ঠানটি মার্কেটে কাজ করছে, সবচেয়ে বড় কোম্পানি ,এজেন্ট সংখ্যাও তাদের অনেক বেশি। আমি বলবো , এই যে এতো গ্রাহকের টাকা আটকে গেল সেখানে প্রতিষ্ঠানের যতো না দায় তারচেয়ে বেশি দায় আছে এজেন্টদের। কেননা তারা কিন্তু জানতো যে স্মল ওয়ার্ল্ড মানি ট্রান্সফার ব্যাংক করাপসি ফাইল করবে , কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাবে। গত তিন চারদিন আগে আমার এখানে একজন গ্রাহক এসেছিলেন । তিন ওই কোম্পানি থেকে ঈদের আগে টাকা পাঠিয়েছেন সেটি এখনও স্বজনদের কাছে যায় নি । এখন গ্রাহক ভীত আতংক নিয়ে এসে জানতে চাইছে , এখন যদি আমাদের মাধ্যমে টাকা পাঠায় তাহলে আদৌও সে টাকা পৌছাঁবে কি না ? তার মানে বোঝা যাচ্ছে যে আস্থার দিক থেকে এ খাত এখনো মানুষের কাছে পৌছাঁতে পারেনি। এখানে গ্রাহকদেরও বুঝতে হবে কোথায় টাকা দিচ্ছে , কার কাছে দিচ্ছে । নিউইয়র্কে বাংলাদেশের তিনটি ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান আছে । এদের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে কোন কারনে সে টাকা স্বজনদের কাছে না গেলে তার জন্য ব্যাংক জবাব দেবে । এখানে আর্থিক ঝুকিঁ বা নিরাপত্তাহীনতা নেই। কিন্তু গ্রাহকরা কি করে ? ব্যাংক রেটের চেয়ে যেসব প্রতিষ্ঠান ১০, ২০ বা ৫০ পয়সা বাড়তি প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপণ দিচ্ছে সেখানে দৌঁড়াচ্ছে গ্রাহকরা। নিউইয়র্কে তো ব্যাংক সুবিধা আছে । নিউইয়র্কের বাইরে থেকে টাকা পাঠাতে গেলে এজেন্সির সহযোগিতা লাগে বুঝলাম । কাজেই চারিদিকে ফাদঁ, গ্রাহকদের সচেতন হতে হবে। তিনি বলেন, আটকে যাওয়া এসব অর্খ ও সহজে ফেরত পাওয়া সম্ভব নয় কেননা এদেশে অর্থ জালিয়াতি সংক্রান্ত কেইসগুলো নিষ্পত্তি বেশ সময় সাপেক্ষ। একই সাথে খরচও বেশি কেইস পরিচালনার।
অন্যদিকে, স্মল ওয়ার্ল্ড মানি ট্রান্সফারের এমন প্রতারণা প্রসঙ্গে স্ট্যার্ন্ডাড এক্সেপ্রস নিউইয়র্ক এক্সপ্রেসের সিইও মোহাম্মদ মালেক নিউইয়র্ক সময়কে বলেন, এখানে দুটি বিষয় দেখতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসায় লোকসান করলে বিজনেস থেকে আউট হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু ব্যবসার প্রতি যে প্রতিশ্রুতি সেটির কি হবে ? এতো দিন তারা বিজনেস করলো তারা গ্রাহকদের জানান দিতে পারতো না ? নৈতিক ভাবে এটি চরম অন্যায় । টাকা ফেরত না দেয়াটাও অন্যায় হবে। মানি ট্রান্সফার ব্যবসার মূল বিষয় হলো আস্থা । যখন একটা কোম্পানি হুট করে ভ্যানিশ হয়ে যায় তখন পুরো কমিউনিটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান আস্থার সংকটে পড়ে। তবে এখানে গ্রাহকরা চাইলে আইনগত আশ্রয় নিতে পারে। কেননা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ নিয়ন্ত্রক সংস্থা সবসময় গ্রাহকদের স্বার্থ দেখে । তবে টাকা যে দেশে পাঠানো হয়েছে তার লিগ্যাল ডকুমেন্টস লাগবে।