প্রায় সারাদিন থেমে থেমে বৃষ্টি। বিকেলের দিকে আকাশ ভেঙে শুরু হলো মুষলধারে বৃষ্টি। কিন্তু কোন কিছুই যেন বাঁধা হতে পারেনি। বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী এবং আলোচিত অভিনেতা তাহসান খানকে এক নজর দেখবেন বলে বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাজারো মানুষ ছুটেছেন জ্যামাইকায়। গেল ৩০ জুন স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশি হিউম্যান আমেরিকান হিউম্যানিটেরিয়ান এইড লিডারশিপ আউটরিচ-‘ভালো’র আয়োজিত মেলায় ছিলেন তাহসান।
রোববার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলা এই মেলায় বৃষ্টি উপেক্ষা করে জ্যামাইকার বাসিন্দা ছাড়াও দূরদূরান্ত থেকে নানান শ্রেণিপেশার মানুষ যোগ দেন। মঞ্চে ছিল একর পর এক সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। মেলায় গান গেয়ে দর্শক মাতিয়ে রাখেন জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী ও অভিনেতা তাহসান খান, ক্লোজআপ ওয়ান তারকা শিল্পী রন্টি দাশ, হালের ক্রেইজ সঙ্গীত শিল্পীর মুজা, মাশা ইসলামসহ অনেকে। এদিন ১৬৯ স্ট্রিট থেকে ১৬৫ স্ট্রিট পর্যন্ত হাইল্যান্ড অ্যাভিনিউ জুড়ে অনুষ্ঠিত এই মেলায় শতাধিক স্টল ছিল। এর মধ্যে বেশিরভাগ ফুচকা ও চটপটিসহ নানান মুখরোচক খাবারের স্টলের পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন উদ্যোক্তারা। নিউইয়র্কে বাংলাদেশি মালিকানাধীন হালাল চাইনিজ মি. চ্যাং এবং হালাল মেক্সিকান বিরিয়ানী’র খাবারের স্টলে সারাক্ষণ ছিল উপচে পড়া ভিড়। এই দুটি প্রতিষ্ঠানের অন্যতম কর্ণধার সাজ্জাদ হোসেন জানান, মেলাকে কেন্দ্র করে তাদের প্রচুর খাবার বিক্রি হয়েছে। খাবারের এত চাহিদা যে ফুরসত মেলেনি অবসরের। এছাড়া বিভিন্ন স্টলে ছিল পোশাক আর প্রসাধনী সামগ্রীর সমাহার। মেলায় আসা দর্শনার্থীরা এসব স্টল ঘুরে পছন্দের জামাকাপড় কেনাকাটা করেন।
মেলায় অন্যতম আকর্ষণ ছিল শিশুদের জন্য কিডস জোন। বাউন্সি হাউজে শিশুরা মেতেছিল আনন্দে। নিউইয়র্ক পুলিশের কমিউনিটি অ্যাফেয়ার্স ব্যুরো মেলায় কৃত্রিম পাহাড় এনেছিল। শিশুরা যাতে ট্র্যাকিং বা ক্লিম্বের স্বাদ পেতে পারে, এজন্যই এ ব্যবস্থাগ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান কমিউনিটি অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোর সার্জেন্ট আব্দুল লতিফ।
এদিকে নতুন প্রজন্মকে উৎসাহ দিতে মেলায় ছিল সুপার কার গ্যালারি, যেখানে প্রদর্শিত হয় ফেরারি, পোরশে, বিএমডব্লিউ, মার্সিডিস নামিদামি ব্র্যান্ডের গাড়ি।
মেলা মঞ্চে উপস্থিত হয়ে ভালোর ভালো সব উদ্যোগ এবং বাংলাদেশি কমিউটার প্রশংসা করেন মূলধারার রাজনীতিকরা। এদের মধ্যে ছিলেন নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক অ্যাডভোকেট জুমানি উইলিয়ামস, নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলি মেম্বার জোহরান মামদানি ও বাংলাদেশি কমিউনিটির পক্ষে জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান সভাপতি মো. ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার।
বাংলাদেশি আমেরিকান বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন অব হিলসাইড অ্যাভিনিউ-ব্যবসা এবং হোমকেয়ার সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ডিএইচ কেয়ার মেলার সহ-আয়োজক ছিল। মেলার সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন ভালোর প্রতিষ্ঠাতা ও ডিএইচ কেয়ারের প্রেসিডেন্ট শাহরিয়ার রহমান। নিরলস পরিশ্রম করে মেলাকে সার্থক ও সফল করেছেন ভালোর স্বেচ্ছাসেবীরা।
আয়োজকরা জানান, যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের স্বপ্ন থাকে দামি গাড়ি চালানোর। তারা পড়াশোনায় ভালো করলে ভালো চাকরি পাবে। সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে। তখন তারা এসব গাড়ির মালিক হবে। তাদের স্বপ্ন পূরণ হবে। এ কারণেই বেশকিছু দামি ব্র্যান্ডের গাড়ির সমাহার ঘটেছিল গ্যালারিতে।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিককালে নিউইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে সেবামূলক কার্যক্রম চালিয়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে ‘ভালো’। ভয়াবহ করোনা মহামারিকালে গোটা নিউইয়র্ক সিটি যখন নিস্তব্ধ, মুহ্যমান শোকে, তখন ভালোর একদল নির্ভীক তরুণ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নেমে আসেন রাস্তায়। সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন করোনা আক্রান্ত মানুষের প্রতি। বিশেষ করে খাবার, চিকিৎসা ও করোনা প্রতিরোধী সামগ্রী নিয়ে। ভালোর প্রতিষ্ঠাতা শাহারিয়ার রহমানের নেতৃত্বে সেই থেকে তারা দরিদ্র ও দুর্গত মানুষের পাশে থেকে কুড়িয়ে আসছেন প্রশংসা। মূলধারার জনপ্রতিনিধিদের সাথেও রয়েছে তাদের নিবিড় সর্ম্পক। রোজা, ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে তারা আয়োজন করে থাকে সামাজিক সাংস্কৃতিক সমাবেশ। স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটিতে এই প্রথমবারের মতো মেলার আয়োজন করেছিল ভালো।