Connect with us

কমিউনিটি সংবাদ

ভেঙে গেলো মুক্তধারা ফাউন্ডেশন ড. নুরুন্নবীর পদত্যাগ

Published

on

বিশ্বজিৎ সাহা একটি বিতর্কিত চরিত্র : হাসান ফেরদৌস

বাংলাদেশের রাজনৈতিক দোলাচলে ভেতরে নিউইয়র্কে আসন্ন বইমেলা আয়োজন ঘিরে ভেঙে গেলো মুক্তধারা ফাউন্ডেশন। পদত্যাগ করেছেন বইমেলা আয়োজনের প্ল্যাটফর্ম মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. নুরুন্নবী সহ বেশ কয়েকজন।
ঘটনার বিবরণে জানা যায় বেশ কিছুদিন ধরেই নিউইয়র্কে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম ‘একাত্তরের প্রহরী’ সংগঠনের সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী এবং মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের কটাক্ষকারী ব্যাক্তিবর্গকে এবারের বইমেলায় কোনো কর্মকান্ডে যেনো সম্পৃক্ত না করা হয়—এই বিষয়টিতে জোড়ালো আওয়াজ তুলতে শুরু করে। একই সাথে তারা লিখিত আকারেও কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে। বইমেলা আয়োজক কর্তৃপক্ষ তাদের কার্যনির্বাহী পরিষদের মিটিংয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু করলে, একপক্ষ বিষয়টি আমলে না নিয়ে উল্টো স্বৈরাচারের দোসর বলে ড. নুরুন্নবীকে কটাক্ষ করলে বাকবিতণ্ডা শুরু হয় এবং এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরুন্নবীসহ বেশ কয়েকজন মিটিং ছেড়ে বেড়িয়ে যান। পরবর্তীতে মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের সকল কর্মকান্ড থেকে নিজেদের সম্পৃক্ত না রাখার সিদ্ধান্ত

জানিয়ে দেন। বিষয়টি নিয়ে ড. নুরুন্নবীকে ফোনে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। কিন্তু বিশ্বজিৎ সাহাকে ফোন করলে তিনি বিষয়টি একপ্রকার এড়িয়ে গিয়ে বলেন শীঘ্রই মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করবেন ডাঃ জিয়াউদ্দিন আহমেদ।
নিউইয়র্ক বইমেলা দীর্ঘদিন ধরে আয়োজিত হয়ে আসলেও শুরু থেকেই নানান বিতর্ক আছে এর অন্যতম আয়োজক বিশ্বজিৎ সাহাকে নিয়ে। শুরুতে বিশ্বজিৎ সাহা নিউইয়র্কে একাই বইমেলা আয়োজন শুরু করেন এবং কথিত আছে বরাবরই তিনি বইমেলা আয়োজনের আড়ালে মূলত মানব পাচার করতেন, এই নিয়ে মিডিয়া সহ নানান জায়গায় আলোচনা শুরু হলে তিনি কৌশলে কমিউনিটির সুধীজনদের একাংশকে পদ-পদবী এবং বুদ্ধিজীবীর তকমা লাগিয়ে তাদের সম্পৃক্ত করতে শুরু করেন। সেই টোপও গিলে ফেলেন তারা, ধীরে ধীরে তাদের নামমাত্র সামনে রেখেই বইমেলা আয়োজন চালিয়ে যান বিশ্বজিৎ সাহা। এবং খুব সহজেই সকলের চোখে ধুলো দিয়ে একপ্রকার নিশ্চিন্তেই তিনি তাঁর মানব পাচার কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে থাকেন।
বিশ্বজিৎ সাহার এই ধরনের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের বিষয়ে বইমেলার আয়োজনে তার অন্যতম সহযোগি কলামিস্ট হাসান ফেরদৌসকে ফোনে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, বিশ্বজিৎ সাহাকে নিয়ে নানান বিতর্ক আছে, আমি নিজেও স্বীকার করছি তিনি অত্যন্ত বিতর্কিত চরিত্র, তিনি এক সময় সিডি পাইরেসি করে বিক্রি করতেন, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাও একসময় আমাদের কাছে অভিযোগ করেছেন, এছাড়াও নানান কর্মকাণ্ডের জন্যতিনি বিতর্কিত। তার ব্যক্তিগত ব্যবসায় তিনি কী করছেন, সেটা তার ব্যক্তিগত বিষয়, কিন্তু আমরা সকলে মিলে যে বইমেলাটি করি সেখানে এই বিষয়গুলো সম্পৃক্ত নয় বলে তিনি বলেন।
বিশ্বজিৎ সাহা নিজেকে প্রতিটি সরকারের আমলেই সুযোগ নেয়া একজন সুবিধাভোগী হিসেবেই প্রমান করেছেন বারবার। আওয়ামীলীগের শাসনামলে নিউইয়র্কে একমাত্র সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী হিসেবেই সকলে জানেন তাকে। পতিত সরকারের উচ্চপর্যায়ের সাথে সুসম্পর্ক রেখে তিনি বেশ কয়েকবছর ধরেই রেমিট্যান্স ফেয়ার নামে নামমাত্র ইভেন্ট করে বিভিন্ন ব্যাংকের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা স্পন্সর হাতিয়ে নিয়েছেন বিগত বছরগুলোতে। এযাবৎ তার আয়োজন করা কোনো রেমিট্যান্স ফেয়ারেই সর্বোচ্চ একশত দর্শকও হয়নি, স্পন্সর প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিবারই নিউইয়র্কে এসে আয়োজনের এই বেহাল অবস্থা দেখে হতাশা প্রকাশ করেছে। আয়োজনের এই বেহাল অবস্থায় বিশ্বজিতের এই আয়োজনে কেনো স্পন্সর করেন সেই প্রশ্ন করা হলে তারা বলেন সরকারের উচ্চপর্যায়ে লবিং করে বিশ্বজিৎ সাহা তাদের স্পন্সর করতে বাধ্য করতেন। সেই আওয়ামীলীগ আমলে সর্বোচ্চ সুযোগ নেয়া বিশ্বজিৎ সাহা এবার ভোল পাল্টিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাথে সখ্য গড়ে তুলেছেন এবং এবারও রেমিটেন্স ফেয়ারের নামে কোটি টাকা স্পন্সর পাবার মিশনে নেমেছেন।
মুক্তিযুদ্ধ কিংবা মুক্তিযোদ্ধাদের পুঁজি করে যে বিশ্বজিৎ সাহা এতবছর ধরে গলা ফাটিয়েছেন, ব্যবসা করেছেন, সেই বিশ্বজিৎ সাহাই শুধুমাত্র ঢাকার ব্যাংকগুলোর স্পন্সর হারানোর ভয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননাকারীদের নিয়ে বইমেলা করতেও কোন দ্বিধা করছেন না।
মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে যে ডাঃ জিয়াউদ্দিনের নাম তিনি ঘোষণা করেছেন, সেই ডাঃ জিয়াউদ্দিনকে নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। তিনি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান দাবী করলেও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের সংগঠন মুসলিম উম্মাহকে বিরাট অংকের টাকা স্পন্সর করেন বলে কথিত আছে। একই সাথে তিনি পেশায় ডাক্তার হলেও তার বুদ্ধিজীবীর তকমাটি ঠিক রাখতে তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয়ের গবেষক হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন এবং বিপুল অংকের অর্থ স্পন্সর দিয়ে বিভিন্ন উৎসব আয়োজনের আহবায়ক পদটিও বাগিয়ে নেয়ার অভিযোগ আছে তার সম্পর্কে।
বিশ্বজিৎ সাহা তার অনুগত ডাঃ জিয়াউদ্দিনকে এবছরও রেমিট্যান্স ফেয়ারের প্রেসিডেন্ট করে আগামী এপ্রিলে রেমিট্যান্স ফেয়ার করবার ঘোষণা দিয়েছেন। এবারের নামমাত্র রেমিট্যান্স ফেয়ারের জন্য জ্যাকসন হাইটসের একটি পার্টি হলের বেসমেন্টের ঠিকানা উল্লেখ করে বাংলাদেশের বড় বড় ব্যাংক গুলোর কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন বিশ্বজিৎ সাহা, যেখানে টাইটেল স্পন্সরের জন্য পঞ্চাশ লক্ষ টাকা, পাওয়ার্ড বাই স্পন্সরের জন্য পয়ত্রিশ লক্ষ টাকা করে চেয়েছেন এবং একেকটি ছয় বাই ছয় স্টলের জন্য ছয় লক্ষ বিশ হাজার করে টাকা চেয়েছেন। চিঠিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডাঃ জিয়াউদ্দিন এবং সিইও হিসেবে বিশ্বজিৎ সাহার স্বাক্ষর রয়েছে। কথিত আছে এর আগেও ডাঃ জিয়াউদ্দিনের স্বাক্ষর জাল করে বিশ্বজিৎ সাহা স্পন্সরের চিঠিতে নিজেই সাইন করে স্পন্সরদের চিঠি পাঠিয়েছিলেন।
বিশ্বজিৎ সাহার প্রতিনিয়ত রঙ বদলানোর কারনে এবারের আসন্ন বইমেলাকে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বয়কট করবেন বলে আশঙ্কা রয়েছে।

Advertisement
Comments
Advertisement

Trending