মাত্রই শেষ হলো ঈদ-উল-আযহা। দেশ এবং দেশের বাইরে সকল স্তরের বাঙালি মুসলমান নিজেদের মত করে ঈদ পালন করেছেন। কোরবানি ঈদকে ঘিরে দেশে এবার যে খবরটি বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করছে, সেটি হলো পশুর বাজারে এবার অবিক্রিত থেকে গেছে প্রায় ২৬ লাখ পশু। অনেকে ভাবছেন চলমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আর মূল্যস্ফিতির এই সময়ে নিশ্চই মানুষের পশু ক্রয়ের ক্ষমতা আগের তুলনায় কমেছে। কিন্তু বাস্তব পরিসংখ্যান হলো, এবার কোরবানি হয়েছে গতবারের চেয়েও বেশি। অর্থাৎ পশু কোরবানিতে কোনো বাধাই প্রভাব ফেলতে পারেনি। কিন্তু আমাদের সমাজের দিকে তাকালে তো তেমনটা মনে হয় না। সেখানে মোট জনসংখ্যার তুলনায় সামর্থবানদের সংখ্যার পার্থক্য এই বাস্তবতার সাথে বেমানান। বহু বড় অর্থনীতিবিদই একে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্যারাডক্স হিসেবে বর্ণনা করে গেছেন। কোনো সূত্রই খাটে না এই সব সম্ভবের দেশে।
অপরদিকে ঈদের রেশ কাটতে না কাটতেই যেন বাংলাদেশের পুরোনে সংক্রমণগুলো আবারও চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। বড় রোগের নাম দুর্নীতি—ইদানিং সামরিক বিভিন্ন বাহিনীকে ঘিরে তাকে বারবার আলোচনায় উঠে আসতে দেখা গেলেও এ এক সর্বময় পরিব্যপ্ত অস্তিত্ব। বাংলাদেশে আজ কোথায় নেই দুর্নীতি! গত কিছুদিন আবার তাকে ছাপিয়ে গেছে টুকরো টুকরো করে হত্যা করার ঘটনাবলী। প্রথমে কলকাতায় বাংলাদেশি সংসদ সদস্যকে খুন করে আশি টুকরো করার লোমহর্ষক ঘটনা। যার তদন্তে মাসব্যাপী দেখা গেছে নতুন নতুন চমক। তার মধ্যেই ময়মনসিংহে নদীতে পাওয়া গেল এক যুবকের তৃখণ্ডীত লাশ। এমন ঘটনা অহরহই শোনা যাচ্ছে। যেন বা চলমান এক দোজখের মধ্যেই আমাদের বসবাস। এই খুনখারাবি থেকে বাঁচতে মানুষ কার কাছে যাবে? আইনের রক্ষক পুলিশের কাছে? সেই পুলিশেই ভেসে উঠছে বড় বড় রাক্ষসের মুখ। আলোচিত তারকা পুলিশের শির্ষ পদধারী বেনজীর আহমেদ এমনই নজীর রেখে গেলেন, যার সুতা ধরে ধরে এখন বহু উদাহরণের উন্মেষ ঘটছে।
মানুষকি কোনো ব্যতিক্রমই দেখবে না! নাকি ‘যে যায় লঙ্কায় সে-ই হয় রাবণ’ এই আপ্তবাক্যের ঘেরাটোপে জর্জরিত হয়েই আমরা ধীরে ধীরে আরও রসাতলে যেতে থাকবো!
আমাদের সার্বভৌমের প্রতীক সশস্ত্র বাহিনী প্রধানও পিছিয়ে ছিলেন না দৃষ্টান্ত তৈরিতে। কে নেই এই সারিতে? এলাকার পাতি রাজনৈতিক নেতা থেকে ১৫ লক্ষ টাকা দিয়ে ছাগল কোরবানি দেয়া সন্তানের দুর্নীতিবাজ রাজস্ব কর্মকর্তা পিতা। এ সারি যেন শেষ হবার নয়, আমাদের দুঃখও তাই শেষ হবার কথা ভাবতে ভুলে গেছে।