Connect with us

সম্পাদকীয়

কোটা সংস্কার আন্দোলন ও জামায়াত-শিবিরের নিষিদ্ধকরণ

Published

on

কোটা সংস্কার আন্দোলন ও জামায়াত-শিবিরের নিষিদ্ধকরণ

জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করেছে সরকার। আইনি প্রক্রিয়া শেষে গতকাল প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ হলো। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের জন্য এ এক ঔতিহাসিক পদক্ষেপ।
সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮ (১) ধারার ক্ষমতা বলে সরকার নির্বাহী আদেশে জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রশিবির ও তাদের অন্যান্য অঙ্গসংগঠনকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করেছে।
সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮ (১) ধারায় বলা হয়েছে, সরকার, কোনো ব্যক্তি বা সত্তা সন্ত্রাসী কার্যের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে যুক্তিসংগত কারণের ভিত্তিতে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দিয়ে এই ব্যক্তিকে তফসিলে তালিকাভুক্ত করতে পারবে বা সত্তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা ও তফসিলে তালিকাভুক্ত করতে পারবে।
সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদীর নেতৃত্বে ১৯৪১ সালে জামায়াত প্রতিষ্ঠার পর থেকে এবার নিয়ে দলটি চারবার নিষিদ্ধ হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৫৯ ও ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পাকিস্তানে এবং ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে অন্য তিনটি ধর্মভিত্তিক দলের সঙ্গে জামায়াতও নিষিদ্ধ হয়েছিল। পরে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ১৯৭৯ সালের ২৫ মে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রকাশ্য রাজনীতির সুযোগ পায় জামায়াত। দলটির ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘও নাম পরিবর্তন করে ইসলামী ছাত্রশিবির নামে আত্মপ্রকাশ করে।
জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের বিষয়ে আইনি মতামত দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ওই মতামত পাঠানোর পর দুপুরে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, এগুলো নিষিদ্ধ হওয়ার পর তারা আর এই দলের অধীনে ও এসব নামে রাজনীতি করতে পারবে না।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় জামায়াত ও এর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের জড়িত থাকার অভিযোগ করে আসছিলেন সরকারের মন্ত্রীরা। এমন পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় সভায় জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে একমত হন ওই জোটের শীর্ষ নেতারা। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সেই বৈঠক হয়। জোটের বৈঠকে সিদ্ধান্তের পর এখন সরকারের নির্বাহী আদেশে জামায়াত ও ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করা হলো।
জামায়াত–শিবিরকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া কয়েকটি মামলার রায়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী (পূর্বনাম জামায়াত-ই-ইসলামী/জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ) এবং এর অঙ্গসংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে (পূর্বনাম ইসলামী ছাত্রসংঘ) ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে দায়ী হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এ ছাড়া এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের রায়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। আপিল বিভাগ ওই রায়কে বহাল রেখেছেন।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির সাম্প্রতিককালে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ, ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সরাসরি এবং উসকানির মাধ্যমে জড়িত ছিল বলে সরকারের কাছে যথেষ্ট তথ্য–প্রমাণ রয়েছে। সরকার বিশ্বাস করে যে জামায়াতে ইসলামী, শিবিরসহ এর সব অঙ্গসংগঠন সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত রয়েছে।
তাই জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ এর সব অঙ্গসংগঠনকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে এসব দল ও সংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
আদালতের রায়ে নির্বাচন কমিশন ২০১৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে। জামায়াতের পক্ষ থেকে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছিল। তবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর জামায়াতের পক্ষের আপিল খারিজ করে দেন। ফলে দলটির নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির রায়ও কার্যকর করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধের দায়ে দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচার করার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করেছে আইন মন্ত্রণালয়। কিন্তু কয়েক বছর আগে সংশোধনী প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করা হলেও পরে সে বিষয়ে অগ্রগতি হয়নি। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনেও সংশোধন করার ব্যবস্থা করেছেন।
জামায়াতে ইসলামী ও শিবির নিষিদ্ধ হওয়ার পর এসব সংগঠনের সদস্যদের এখন কি বিচারের আওতায় আনা হবে? আইনমন্ত্রী মনে করেন, বাংলাদেশে আইন আছে। তাঁরা যদি বাংলাদেশের আইনের অধীনে কোনো অপরাধ করেন, তাহলে অবশ্যই বিচার হবে। তবে জামায়াতে ইসলামীর নতুন কর্মী, যাঁরা ১৯৭১ সালের পরে জন্ম নিয়েছেন, তাঁদের গণহারে বিচার করা হবে না।
নিষিদ্ধ হওয়ার পর জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা ‘আন্ডারগ্রাউন্ডে’ চলে যেতে পারে—এমন শঙ্কাও রয়েছে জনমনে। আইনমন্ত্রী বলেছেন, আন্ডারগ্রাউন্ডে অনেক দল গেছে, অনেক দলের কী হয়েছে, সেই ইতিহাস তো আমাদের হাতে আছে। তারা আন্ডারগ্রাউন্ডে যেতে পারে। সেটাকে মোকাবিলা করার মতো প্রস্তুতি আছে।

Advertisement
Comments
Advertisement

Trending