সম্পাদকীয়
টাকার অবমূল্যায়ন, ডলারের দাম বৃদ্ধি
Published
5 months agoon
ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই পদ্ধতি চালু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের বিপরীতে টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন করেছে। ক্রলিং পেগ পদ্ধতির আওতায় ডলারের মধ্যবর্তী একটি দাম নির্ধারণ করে ব্যাংকগুলোকে এই দরের আশপাশে স্বাধীনভাবে লেনদেন করতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মধ্যবর্তী এই দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১১৭ টাকা। বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের শর্ত হিসেবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নমনীয় করার পরামর্শ দিয়ে আসছিল। আইএমএফের চাওয়া, বাংলাদেশ ব্যাংক যেন বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার পথে এগোয়। একসময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার দাম নির্ধারণ করে দিলেও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ব্যাংকভিত্তিক দুটো সংগঠন ডলারের দাম ঠিক করে আসছিল। সর্বশেষ তারা ডলারের আনুষ্ঠানিক দর ১১০ টাকায় নির্ধারণ করেছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন অনুসারে, ডলারের ক্রয় ও বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রলিং পেগ বিনিময় পদ্ধতি চালু হয়েছে। এ পদ্ধতিতে ডলারের জন্য ‘ক্রলিং পেগ মিড-রেট’ (সিপিএমআর) নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন থেকে আন্তব্যাংক ও গ্রাহকের সঙ্গে লেনদেনে তফসিলি ব্যাংকগুলো সিপিএমআরের আশপাশে মার্কিন ডলার ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে ডলারের দাম নির্দিষ্ট একটি সীমার মধ্যে ওঠানামা করে। নতুন পদ্ধতিতে অর্থনীতির বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে ডলারের দাম একটা সীমার মধ্যে বাড়বে বা কমবে। ফলে ডলারের দাম একবারে খুব বেশি বাড়তে পারবে না, আবার কমতেও পারবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক উচ্চসীমা ও নিম্নসীমা নির্ধারণ না করে মধ্যবর্তী সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। ব্যাংকগুলোকে ডলারের লেনদেনের ক্ষেত্রে এই দরের আশপাশে থাকতে বলা হয়েছে।
টাকার অবমূল্যায়নের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আমদানিকারকরা। আমদানিকৃত পণ্যের দামও বেড়ে যাচ্ছে। এতে মূল্যস্ফীতির ওপর পড়ছে বাড়তি চাপ। অব্যাহত ডলারের দামবৃদ্ধির কারণে বেসরকারি উদ্যোক্তারা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছেন। আমদানি ব্যয় বাড়লেও সে তুলনায় রপ্তানি আয় বাড়েনি। এ অবস্থায় দেশে আমদানি ব্যয় কমানোর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। ভোগ্যপণ্যের ক্ষেত্রে দ্রুততম সময়ে আমদানি ব্যয় কমানোর কাজটি কঠিন হলেও বিলাসি পণ্যে আমদানি ব্যয় কমানো সম্ভব। এ সময়ে আমদানিনির্ভর নতুন বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করার বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে। রপ্তানি আয় এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর জন্য স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে। আমাদের প্রবাসী শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়িয়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানো সম্ভব। দীর্ঘমেয়াদে প্রবাসী বাংলাদেশিদের শ্রমনির্ভর কাজের পরিবর্তে মেধানির্ভর কাজে অংশগ্রহণে গুরুত্ব দিতে হবে।
মূলত রেমিট্যান্স হ্রাস এবং আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে। কাজেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দুর্নীতির মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ বিদেশে পাচার করে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডারে পড়ে নেতিবাচক প্রভাব। দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশে যায়। এ প্রবণতা রোধেও পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। আমদানিকৃত পণ্যের দাম বাড়লে অনেকেই ভোগ্যপণ্য কম ক্রয়ে বাধ্য হন। তাই আমদানিনির্ভরতা কমাতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। ডলারের দামবৃদ্ধির পেছনে কোনো সিন্ডিকেট কাজ করছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।