Connect with us

সম্পাদকীয়

আজিজ, বেনজির ও আনারে বাংলাদেশ উন্মোচিত

Published

on

newyork-somoy

বাংলাদেশের সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর সাবেক দুই প্রধান আজিজ আহমেদ ও বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগ, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমের নৃশংস হত্যাকাণ্ড– পরপর তিনটি ঘটনা অপরাধপ্রবণ রাজনীতির ভয়ংকর রূপ হাজির করে।
জেনারেল আজিজ আহমেদ ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তা বাংলাদেশের নির্বাচনের আগে ঘোষিত ভিসা নীতির আওতায় হয়নি। কারণ, ভিসা নীতির আওতায় আরোপিত নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত প্রকাশ করে না। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার জন্য গত বছর সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র যখন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে ভিসা নীতি প্রয়োগ করেছিল, তখন কারও নাম জানা যায়নি। এবার যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে জানিয়ে দিয়েছে। যে ধারার, অর্থাৎ ৭০৩১(সি)-এর আওতায় জেনারেল আজিজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তার উপশিরোনাম– অ্যান্টি ক্লিপ্টোক্র্যাসি অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস। সাধারণভাবে দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেই এই আইন প্রয়োগ করা হবে, তা নয়; বরং দুর্নীতির সঙ্গে ক্ষমতার ঘনিষ্ঠ যোগসূত্রের ওপর জোর দিতেই ‘ক্লিপ্টোক্র্যাসি’ ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ, যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যে অভিযোগ উত্থাপন করেছে জেনারেল আজিজের বিরুদ্ধে, তা এ দেশের রাজনীতি ও অপরাধের পারস্পরিক অদ্বৈত সম্পর্কের কথা আরও এক দফা পরিষ্কার করে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের তৎকালীন ও সাবেক সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, যার মধ্যে বেনজীর আহমেদের নামও ছিল। যুক্তরাষ্ট্র যখন নিষেধাজ্ঞা দেয়, তখন তিনি আইজিপি। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি অবসরে যান।
বেনজীর আহমেদ ও তাঁর স্ত্রী-মেয়ের নামে থাকা স্থাবর সম্পদ জব্দ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে কক্সবাজার ও গোপালগঞ্জে তাঁর সম্পদ কেনার মোট ৮৩টি দলিল ও ৩৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দের আদেশ দেওয়া হয়েছে। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের আদেশে বেনজীর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে ৩৪৫ বিঘা জমির হিসাব পাওয়া গেছে। আদালতে পাবলিক প্রসিকিউটর উল্লেখ করেন, বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে নিজ নামে ও স্ত্রী-সন্তানের নামে দেশে-বিদেশে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করা হয়েছে।
এছাড়া তিনবার ঝিনাইদহ-৪ আসনে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের হত্যাকাণ্ড। প্রতিবেশী ভারতে চাঞ্চল্যকর ও রোমহর্ষক খুনের শিকার আজীম এ দেশের রাজনীতি ও অপরাধের পারস্পরিক সম্পর্কের অব্যর্থ উদাহরণ। রাজনীতিতে আজীমের উত্থান–এবং অপরাধের পর অপরাধে জড়িয়ে অর্থবিত্ত গড়া। ২০০৭ সালে ইন্টারপোল আজীমের নামে রেড অ্যালার্ট জারি করে। এর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে আজীম ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে এমপি নির্বাচিত হন। এমপি আজীমের নৃশংস ও আন্তঃদেশীয় হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত, সবাই ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কমবেশি সম্পর্কিত।
রাজনীতি ও রাষ্ট্রযন্ত্রের গভীর অন্তঃসারশূন্যতা ও ভয়াবহ কিছু দুর্বলতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় সাম্প্রতিক এই তিন ঘটনা। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দুই প্রতিষ্ঠানের সাবেক দুই প্রধান ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে গুরুতরভাবে অভিযুক্ত। একজন সংসদ সদস্যের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড রাজনীতির অন্ধকার গলিপথ উন্মোচিত করে।

Advertisement
Comments
Advertisement

Trending