Connect with us

খোলামত

আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী

আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তার প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছরে পদার্পণ করেছে। দীর্ঘ এই পথ চলা কখনও কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না, ছিল কন্টকাকীর্ণ বিপদসংকুল আঁকাবাকা এক ঝুকিপূর্ণ পিচ্ছিল পথ। তবু এই পথে এক দিনের জন্য এ বিশাল রাজনৈতিক দলটি কক্ষচ্যুত হয়নি। ইতিহাস, ঐতিহ্য আর সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাসের সাক্ষী থেকে এই দলটি এদেশের সাধারণ মুক্তিকামী গণমানুষের একমাত্র ভরসায় পরিনত হয়েছে। আস্থার সর্বশেষ ঠিকানা হিসেবে বিশ্বস্ততা আর দৃঢ়তা অর্জন করে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে, অর্থনেতিক মুক্তি অর্জনে তার আদর্শে অবিচল থেকে কাজ করে যাচ্ছে।
প্লাটিনাম জুবিলির এই মাহেন্দ্রক্ষণে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আজ রাষ্ট্র ক্ষমতায়, বঙ্গবন্ধু কন্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নির্বাহী পদে অধিষ্ঠিত আছেন এবং তাও দীর্ঘ একনাগাড়ে ১৬টি বছর তিনি রাষ্ট্র ক্ষমতায়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এই দিবসটিকে যথাযোগ্য মর্যাদা ও আনন্দ উৎসবের মধ্যে দিয়ে উৎযাপন করেছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা ঢাকায় বিশাল জনসমাবেশে বক্তব্য দিয়েছেন—আওয়ামী লীগের দীর্ঘ পথচলা আর সাফল্যের ইতিহাস জাতির সামনে তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা উপজেলা শহরে আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দিবসটি উৎযাপন করেছে। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় বিশাল এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর দিনে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ডঃ সিদ্দিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আবদুস সামাদ আজাদের নেতৃত্বে বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সহযোগিতায় একটি সফল অনুষ্ঠান করেন। সারাদিনব্যাপী নেতাকর্মীরা ব্যানার, ফেস্টুন, প্লেকার্ড, বঙ্গবন্ধুর ছবি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ছবি বহন করে মিছিলে মিছিলে প্রকম্পিত করে ডাইভারসিটি প্লাজা চত্বর। পায়রা উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। এরপর কেক কেটে দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী বা জন্মদিন উৎযাপন করা হয। এরপর জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় পরবর্তী অনুষ্ঠান।
ডঃ সিদ্দিকুর রহমান সূচনা বক্তব্য দেন। এরপর নেতাকর্মীরা বক্তব্য রাখেন। বক্তব্য শেষে আবার শোভাযাত্রা করা হয়। এরপর ছিল শিল্পকলা একাডেমীর পরিচালনায় বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সব আয়োজন সম্পন্ন করে নেতাকর্মীদের জন্য করা হয় খাবারেরও আয়োজন। সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক পথ পরিক্রমায় এই আয়োজন ছিল ব্যতিক্রম ও বর্ণাঢ্য। নেতাকর্মীদের হৃদয়ে ছিল প্রাণ চাঞ্চল্য আর উচ্ছ্বাস।
এবার দলটির প্রতিষ্ঠাকালীন সময় বা দলের ইতিহাস নিয়ে কিছু লিখতে চাই, যা এ প্রজন্মের নেতাকর্মী, সাধারণ মানুষ যারা এ দলটিকে ভালবেসে হৃদয়ে লালন করে, তাদের জন্য।
১৭৫৭ সালের ২৩ শে জুন বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ক্ষমতাচ্যুত করে বৃটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী। ব্যবসার নামে এসে বাংলা তথা ভারতীয় উপমহাদেশে নিজেদের আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠা করে দীর্ঘ ২০০ বছর। সর্বশেষ বৃটিশ ভাইস রয় লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট পাকিস্তান ও ১৫ই আগস্ট ভারত দু’টি আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম দিয়ে এই উপমহাদেশ থেকে বৃটিশ শাসনের ইতি টানেন। বৃটিশদের বিদায়ের দুই বছর পর ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার কে এম দাস লেনে অবস্থিত রোজ গার্ডেনে প্রথম বৈঠক করে আমাদের এ দলটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করা হয়। এই সময় ঢাকা পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চল পূর্ব পাকিস্তানের অংশ। মুসলিম লীগের একটি অংশকে নিয়ে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, সামসুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান, শওকত আলী মিলে সর্ব প্রথম দলটি প্রতিষ্ঠা করেন। নামকরণ করা হয় আওয়ামী মুসলিম লীগ। আর এই আওয়ামী মুসলিম লীগ পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের বিকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে সংগ্রামে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের পক্ষে একটি স্বক্রিয় সংগঠন হিসেবে নেতৃত্ব দিতে থাকে আওয়ামী মুসলিম লীগ। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে বিজয়ের পর ১৯৫৫ সালের ২১-২৩ অক্টোবরের তৃতীয় কাউন্সিল সভায় ধর্ম নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গীর দল হিসেবে চেতনা ধারণ করার মধ্য দিয়ে অমুসলিমরাও এই দলে যোগ দেওয়ার সুযোগ পায় এবং তাদের ধর্মীয় অনুভূতিকে সমান মর্যাদা দিতে দলের নাম পরিবর্তন করে মুসলিম লীগ শব্দটি বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ নামকরণ করা হয়। আর সেই থেকে ধর্ম নিরপেক্ষ চেতনার রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের যাত্রা শুরু হয়। প্রথম কমিটিতে যার সভাপতি ছিলেন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাষানী। আর সহসভাপতি ছিলেন আতাউর রহমান খান, সাখাওয়াৎ হোসেন, আবদুস সালাম খান, আলী আহাম্মদ খান এমএলএ ও আলী আমজাদ খান। যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ করা হয় ইয়ার মোহাম্মদ খানকে। সাধারণ সম্পাদক ছিলেন টাঙ্গাইলের সামসুল হক। এরপর ১৯৫২ সালে শেখ মুজিবুর রহমান ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। পরের বছর ১৯৫৩ সালে ঢাকার মুকুল সিনেমা হলে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয় এবং সেই সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। একনাগারে ১৩ বছর ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
আওয়ামী লীগ ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করেছে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসনে জয় লাভ করে। কিন্তু আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসার সুযোগ দেয়নি পাকিস্তানী স্বৈরাচারি সরকার ইয়াহিয়া। এরপর দেশ এক অনিবার্য যুদ্ধের পরিণতির দিকে ধাবিত হয় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে। মার্চের শুরু থেকেই সংসদ অধিবেশনে বসার কথা বলে পূর্ব পাকিস্তানে এসে আলোচনার নামে কালক্ষেপন করছিল তারা। একদিকে আলোচনা অন্যদিকে গোলাবারুদ ভর্তি করে জাহাজ এনে ২৫শে মার্চ রাতের অন্ধকারে ঘুমন্ত বাঙ্গালীর উপর আক্রমণ চালায় বর্বর পাকিস্তানী সেনাবাহিনী। বঙ্গবন্ধুকে ঐ রাতেই পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এদেশের মুক্তিযোদ্ধা, আপামর সাধারণ মানুষ ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে শত্রুমুক্ত করে। পৃথিবীর বুকে মাথা উচু করে দাঁড়ায় একটি দেশ, বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগের জাতীয়তাবাদী চেতনার ফসল আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ।

Advertisement
Comments
Advertisement

Trending