খোলামত
ঘুরে দাঁড়াতে হলে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে যা করতে হবে
Published
3 months agoon
এবার টি২০ বিশ্বকাপে মঙ্গলবারের সুপার এইটের সমাপনী ম্যাচে বাংলাদেশের পরাজয় সমর্থকদের হৃদয় ভেঙেছে। অবশ্য পুরো বিশ্বকাপ যাত্রায়ই দলের খেলার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও ‘সুপার এইট’ তথা শীর্ষ আট দলের লড়াইয়ে অংশগ্রহণে যোগ্যতা বাংলাদেশ দল অর্জন করে, কিন্তু সুপার এইট পর্বের তিনটি খেলার একটিতেও জিতেনি আমাদের ‘টাইগাররা’। আফগানিস্তানের সঙ্গে হেরে অবশ্য দলটিকে সেমফাইনালে পৌঁছিয়েছে, অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়াকেও ডুবিয়েছে বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার সকালে অঘোষিত ‘কোয়ার্টার ফাইনালে’ আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দল যখন ব্যাটিংয়ে নামে, তখন তাদের লক্ষ্য ছিল দুটি– সেমিফাইনাল খেলা এবং নিঃসন্দেহে জয়লাভ করা। আফগানিস্তানকে ১১৫ রানে আটকানোর পর উভয় লক্ষ্যই সম্ভব মনে হচ্ছিল। সেমিফাইনালে যেতে বাংলাদেশকে ১২.১ ওভারে করতে হতো ১১৬ রান। প্রথম ওভার যেমন তেমন, দ্বিতীয় ওভারেই বোঝা গিয়েছিল তা সম্ভব নয়। কিন্তু জয়টাও যে হাতছাড়া হবে, সেটা ভাবা কঠিন ছিল। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে সেটাই হয়েছে। অবশ্য বাংলাদেশ টিমের যে দশা, আফগানিস্তানের মতো শক্তিশালী বোলিংয়ের বিপরীতে জয়ের প্রত্যাশা অনেকের কাছে একটু বেশিই মনে হচ্ছিল।
বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের যে অভিজ্ঞতা, সে তুলনায় আফগানিস্তান নতুন দল হলেও তাদের বিরুদ্ধে জয়লাভ করতে না পারার কারণ কেবল ‘পারফরম্যান্স’ দিয়ে ব্যাখ্যা করা কঠিন। বস্তুত সংকটটা আমাদের গোড়ায়; দেশের ক্রিকেটের ব্যবস্থাপনার সমস্যা অনেক বেশি। যে কারণে খোদ খেলোয়াড় নির্বাচন নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। টি২০ ফরম্যাটে বাংলাদেশের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল কেন খেলছেন না, কেন মেহেদী হাসান মিরাজকে এবার দলে নেওয়া হলো না ইত্যাদি প্রশ্ন যেমন উঠছে, তেমনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালনা পর্ষদ নিয়েও কথা উঠছে। দীর্ঘদিন ধরে একই ব্যক্তি দায়িত্বে থাকার ফলে ক্রিকেট দলের জরুরি পুনর্গঠন হচ্ছে না।
ক্রিকেটারদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, খেলার ধারাবাহিকতা নেই। এখনও অনেকে ভরসার জায়গা হিসেবে সাকিবকে দেখেন। কিন্তু সাবেক বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডারের সাম্প্রতিক খেলা অনেককেই হতাশ করেছে। তিনি বর্তমানে জাতীয় সংসদ সদস্য, তাঁর ব্যবসা-বাণিজ্য, বিজ্ঞাপনসহ অন্যান্য কাজে সংশ্লিষ্টতার কারণে তিনি খেলায় কতটা মনোনিবেশ করতে পারছেন, সেটাও বিবেচ্য।
ক্রিকেটে বাংলাদেশের অর্জন একেবারে কম নয়; ক্রিকেটারদের পেছনে বিসিবির খরচও অনেক বেশি। সেই তুলনায় এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের প্রতি যে প্রত্যাশা অনেকের ছিল, তার প্রতিফলন ঘটেছে সামান্যই। বিশ্বকাপের প্রথম পর্বের চারটি খেলার মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে হেরেছে বাংলাদেশ দল। আর যে তিনটি দলের সঙ্গে জিতেছে, এর মধ্যে শ্রীলংকার অবস্থান গড়পড়তা; আর নেদারল্যান্ডস কিংবা নেপালের অবস্থান বলার অপেক্ষা রাখে না। এরপর সুপার এইট পর্বে উঠে অস্ট্রেলিয়া ও ভারতকে হারাতে পারেনি। আফগানিস্তানকে হারানোর সুযোগ থাকলেও ব্যর্থ হয়েছে। সেদিক থেকে অনেকে সুপার এইটের অর্জনের কথা বললেও তার সার্বিক মান অশ্বডিম্বই।
বিশ্বের অন্যান্য দল তাদের ব্যর্থতা পর্যালোচনা করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। কিন্তু বাংলাদেশ দল সেটা কতটা করে, প্রশ্নসাপেক্ষ। আমাদের খেলোয়াড়দের প্রতিভা নেই, এমনটি বলা যাবে না। প্রতিভা কতটা বিকাশের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, প্রতিভা চর্চার পরিবেশ কতটা আছে, প্রতিভাবানরা সঠিক মূল্যায়ন পাচ্ছেন কিনা– সেসবের উত্তর খোঁজা জরুরি। আরও জরুরি ক্রিকেটের ব্যবস্থাপনায় নজর দেওয়া। তা না হলে এভাবে দেশের অর্থ অপচয়ের হেতু কী?
বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছে বাংলাদেশ। তবে এখনও সেমিফাইনালে ওঠার তরিকা বলেছেন একজন। আমাদের শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম বদলে ‘সেমিফাইনাল’ দিলেই বাংলাদেশ দল সেমিফাইনালে পৌঁছতে পারবে। সেটা নিশ্চয়ই কথার কথা। কিন্তু যোগ্যতা দিয়ে বাংলাদেশ কবে সেমিফাইনালে পৌঁছবে, সেটাই দেখার বিষয়।