Connect with us

খোলামত

যেভাবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হতে পারে

Published

on

যেভাবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হতে পারে

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ সালে। রাশিয়ার দিক থেকে যুদ্ধের মূল কারণ ছিল ইউক্রেন যেন রাশিয়ার সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি না হয়। ইউক্রেনের যেসব অঞ্চলে রাশিয়ান ভাষাভাষী মানুষ বেশি, ওই সব অঞ্চলে যেন জাতিগত কোনো বিবাদ না হয়। এই অঞ্চলগুলোর মধ্যে আছে দানিয়েস্ক, লুহানস্ক, অর্থাৎ দোনবাস অঞ্চল, আরও আছে খেরসন ও জাপারোঝিয়া। রাশিয়ার অভিযোগ, ২০১৪ সাল থেকে যুদ্ধ শুরুর আগপর্যন্ত এই সব অঞ্চলে শুধু রাশিয়ান ভাষাভাষী ও রাশিয়ান বংশোদ্ভূত হওয়ার কারণে ইউক্রেনীয় রাষ্ট্রীয় সহযোগিতায় বিভিন্ন গোষ্ঠী ১৪ হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। রাশিয়া আরও যে কারণে ইউক্রেনের ওপর রুষ্ট তা হলো, ইউক্রেন ন্যাটো জোটে যুক্ত হতে চাইছিল। এটা স্বাভাবিক, রাশিয়াকে ন্যাটো চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলেছে। এ অবস্থায় যদি ইউক্রেন ন্যাটো জোটে যুক্ত হয়, তাহলে রাশিয়ার সার্বভৌমত্ব অবশ্যই ঝুঁকির মুখে পড়বে। তাই রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করেছে। ওপরে যে চারটি অঞ্চলের কথা বললাম, সেগুলো মোটামুটি এখন রাশিয়ান বাহিনীর দখলে আছে। রাশিয়া প্রতিদিন নতুন নতুন অঞ্চল দখল করে নিচ্ছে।
যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে আলোচনা চলছে। সুইজারল্যান্ডে আলোচনা হয়েছে, অথচ সেখানে রাশিয়াকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। রাশিয়াকে বাদ দিয়ে কোনো আলোচনাতেই ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ হবে না—এ কথা মোটামুটি সবাই বোঝে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত যে দেশটির সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক ভালো, তা হলো হাঙ্গেরি। হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট ভিক্টর অরবান রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে এই যুদ্ধ বন্ধের ব্যাপারে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। পুতিন স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, রাশিয়া চায় পুরোপুরি যুদ্ধ বন্ধ করতে। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধের অন্তরায় হলো ন্যাটো জোট ও আমেরিকা। গত ২৩ জুন ইউক্রেন আমেরিকান তৈরি অস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার অভ্যন্তরে সিভাস্তাপোল শহরে হামলা চালিয়েছে। এ হামলায় তিন শিশুসহ পাঁচজন সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে, ১২০ জন মানুষ আহত হয়েছে। ATACMS মিসাইল ব্যবহার করে ক্লাস্টার বোমা নিক্ষেপ করা হয়। এ রকম পাঁচটি মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়, যার চারটি রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছ, একটিমাত্র বার্স্ট হয়েছে। এখন পেন্টাগন অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে ইউক্রেনকে সাহায্য করছে, অর্থাৎ পেন্টাগন চাইছে রাশিয়াকে ধ্বংস করতে।
যেদিন এই হামলা করা হয়েছিল, সেদিন ছিল খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের একটি পবিত্র দিন, এই পবিত্র দিনে রাশিয়ার অভ্যন্তরে সাধারণ মানুষের ওপর এ রকম জঘন্য হামলা চালিয়েছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। হোয়াইট হাউস এই সব আক্রমণের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে—কীভাবে রাশিয়াকে কাবু করা যায়, এই যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী করা যায়, হোয়াইট হাউস সেই চিন্তাভাবনাই করছে বলে রাশিয়া মনে করে। রাশিয়া ধরেই নিয়েছে এই যুদ্ধ ইউক্রেনের সঙ্গে নয়, এই যুদ্ধ ন্যাটো ও পেন্টাগনের সঙ্গে।
এখন শোনা যাচ্ছে, ন্যাটো ও পেন্টাগন ইউক্রেনীয় এয়ারফোর্সকে এফ-১৬ জঙ্গিবিমান সরবরাহ করবে। এটা জানার পরে এফ-১৬ প্রতিহত করার জন্য অবশ্যই রাশিয়া সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেবে। ইতিমধ্যে ইউক্রেনের বিভিন্ন বিমানবন্দরে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। গত সপ্তাহে একটি মিগ-২৯ ও চারটি এসইউ ২৭ ধ্বংস করেছে। রাশিয়া তার এয়ারফোর্সকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখছে। ন্যাটো জোট ও পেন্টাগন যতই চেষ্টা করুক না কেন, এফ-১৬ দিয়ে রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলা চালিয়ে দেশটিকে কাবু করা সহজ হবে না। রাশিয়া বুঝেশুনে বিশ্বের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে, সবকিছু মাথায় নিয়ে যুদ্ধ পরিচালনা করছে। দিন দিন যুদ্ধে রাশিয়ার অবস্থা ভালো হচ্ছে, ইউক্রেনীয় বাহিনী কোণঠাসা হচ্ছে।
এ অবস্থায় উচিত হবে, হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট ভিক্টর অরবানের মধ্যস্থতা দুপক্ষই যেন মেনে নেয়। সব দিক বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্তে আসা যায়, যেভাবে যুদ্ধের অগ্রগতি হচ্ছে, এভাবে চলতে থাকলে আগামী ডিসেম্বর নাগাদ ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তর শহর খারকভ দখল করে নেবে রাশিয়া। যখন রাশিয়া আরও শক্ত অবস্থানে যাবে, তখন কিন্তু যুদ্ধ বন্ধ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
সব দিক বিবেচনা করে বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করছেন, এই যুদ্ধে রাশিয়াকে পরাজিত করা যাবে না। এই মহা সত্যটি অনুধাবন করেছিলেন হেনরি কিসিঞ্জার। তিনি বলেছিলেন, ইউক্রেনকে তার কিছু জায়গা অবশ্যই রাশিয়াকে ছেড়ে দিতে হবে; অর্থাৎ যেসব অঞ্চলে রাশিয়ান ভাষাভাষীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, যেসব অঞ্চল রাশিয়ান জনসংখ্যা-অধ্যুষিত, এই সব অঞ্চলে একটি গণভোট হয়েছিল, যার ফলে তারা রাশিয়ার পক্ষে চলে গেছে। সেই সব অঞ্চলের দাবি ইউক্রেনকে ছাড়তে হবে। ন্যাটো জোট ও পেন্টাগনকে এই সত্যটা উপলব্ধি করতে হবে। ইউক্রেনকে এমন অস্ত্র সরবরাহ করা ঠিক হবে না যে অস্ত্র দিয়ে দেশটি রাশিয়ার অভ্যন্তরে যত্রতত্র হামলা করতে পারে। এ রকম হামলা করলে রাশিয়া অবশ্যই তার প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আরও জোরদার করবে, ইউক্রেনের নতুন নতুন অঞ্চল দখল করে নেবে। যুদ্ধ আরও দীর্ঘায়িত হবে। পরিশেষে ইউক্রেন নামের রাষ্ট্রটির অস্তিত্বের সংকট দেখা দেবে।
বিশ্বের সাধারণ শান্তিপ্রিয় মানুষ অবশ্যই চাইবে, ভিক্টর অরবানের মধ্যস্থতায়, পুতিনের ভাষ্য অনুসারে পুরোপুরি যুদ্ধ বন্ধ করার প্রয়াসের দিকে এগিয়ে যেতে।

Advertisement
Comments
Advertisement

Trending