খোলামত
ছিনতাইকারীর খপ্পরে যখন লেখকের লেখা ও তার নাম
লেখার শুরুতেই বলতে চাই আমি কোন প্রাবন্ধিক নই। দেশপ্রেমে উদ্ভুদ্ধ হয়ে মাঝে মধ্যে ছড়া, গান ইত্যাদি লিখি। মূলত: ছড়া এবং গান লেখাতেই আমার বেশি জোক। তবে প্রবন্ধ, গল্প ইত্যাদি যে লিখিনি তা নয়। উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধের মধ্যে “নামের বিরম্বনা” এবং ছোট গল্পের মধ্যে “গিট্টুর জনম গিট্ট” লেখা দুটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত আমার বেশ সাড়া জাগানো লেখাগুলোর মধ্যে দুটি। লেখার শুরুতে এতটুকু ভূমিকা যদি না লিখি তা হলে এ আত্মকথনমূলক নিবন্ধের কোন গুরুত্বই থাকবে না। এ নিবন্ধে লিখব একজন লেখক তার আসল নাম উহ্য রেখে ছদ্মনাম বা পেন নেম (PEN NAME) দিয়ে লিখলে কী কী সমস্যায় পড়তে হয় সে কথা। যেমনটি আমার বেলায় হয়েছে। আমি তার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সব লেখকের চোখ খুলে দিতেই আমার এ লেখা। তা হলে চলুন শুরু করি আমার লেখালেখির তিক্ত অভিজ্ঞতার করুণ ইতিহাস।
শুরুতেই আসা যাক আমি কোন “পেন নেম” দিয়ে আমার লেখালেখি শুরু সে বিষয়ে। আমার লেখালেখি শুরু হয় আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে। আমার পেন নেম ছিল “আজীজ আহমেদ”। এ নাম দিয়েই স্থানীয় পত্রপত্রিকায় শুরু করি। এটি হলো আমার প্রথম “পেন নেম”। নব্বই দশকের গোড়াতে “একুশ মানেই” শিরোনামের ছড়াটি প্রথম জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়। প্রশ্ন হলো-আমি কেন “পেন নেম” দিয়ে লেখা শুরু করলাম? দেখুন, প্রত্যেক লেখকই চান সাহিত্যাঙ্গনে তার নামটি দ্রুত পরিচিতি লাভ করুক। সে ক্ষেত্রে শ্রুতিমধুর, সংক্ষিপ্ত, সুন্দর একটি নাম বেছে নেন। যেমনটি নিয়েছিলেন সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথও। তিনি “ভানু সিংহ” ছদ্মনামে লিখেছিলেন। “ভানু সিংহের পদাবলী” শিরোনামে তাঁর একটি বিখ্যাত উপাখ্যানও আছে। লেখক হিসাবে ছদ্মনাম বা পেন নেম দিয়ে লিখা কোন অন্যায় নয়। একজন লেখকের একাধিক ছদ্মনাম থাকতে পারে। সেটি কোন রীতিবিরুদ্ধ নয়। আমার ক্ষেত্রেও সেটিই ঘটেছে। তবে এ যুগে ছদ্মনাম দিয়ে লেখা যে কতটুকু বিপদজনক আমার এ লেখাটি না পড়লে কেউ বুঝবেন না। যখন থেকে আমি পেন নেম “আজীজ আহমেদ” নামে পরিচিতি লাভ করতে শুরু করি, বলতে গেলে ঠিক তখন থেকেই “মোহাম্মদ আব্দুল আজিজ” আমার আসল নামটি ছিনতাই হয়ে যায়। শুরু হয়ে যায় আসল নামটির অপব্যবহার। স্বার্থান্বেষী ব্যক্তিরা বিভিন্ন স্বার্থ সিদ্ধির জন্য আমার আসল নামটি ব্যবহার করতে থাকে। জনে জনে যে যেভাবে পারে আমার নাম দিয়ে আমার অজান্তে গড়ে তোলে নেটওয়ার্ক। কেহ ব্যবহার করে নির্বাচনে জিতার জন্য, কেহ রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য, কেহ চুপি চুপি প্রেম করতে, কেহ বিদেশে পারি দিতে, কেহ উপবৃত্তি পেতে, কেহ বিয়ে করতে, কেহ বিয়ে দিতে, কেহ উচ্চ শব্দে গান বাজাতে, কেহ মন্ত্রি-মিনিস্টার হতে, কেহ প্রধানমন্ত্রির এওয়ার্ড পেতে, আবার কেহ গুরুতর অপরাধ করে আত্মগোপন করতে। কেহ আমার নামটিকে বানাতো ইন্ডিয়ান, কেহ বানাতো ইউরোপিয়ান, কেহ বলতো মুসলিম, কেহ বলতো হিন্দু। কেহ জায়গা দখল করে। কেহ বাড়ি দখল করে। সুবিধাভোগের জন্য কেহ বানায় ভাই, কেহ সাজে বোন। কেউ করে আংটি বদল, কেউ করে মালা বদল। কেউ বানায় প্রেমিক, কেউ বানায় স্বামী। অথচ আমার কোন বোন নেই। আমরা সাত ভাই। তখনও আমি অবিবাহিত। তখন আশপাশে যে কি একটা অরাজকতা চলছিল তা ভাষায় প্রকাশ করার মত না। আমার নাম ও লেখাকে পুঁজি করে যে যেভাবে পেরেছে ফায়দা তোলেছে। আওয়ামীলিগ ঢালাওভাবে আমার আসল নামটিকে তাদের রাজনীতিতে ব্যবহার করেছে।
আরেকটি বিষয় না বললেই নয়। ছেলেবেলা থেকেই আমার গাছগাছরার প্রতি জোক ছিল। শখের বশে নিজের বাসায় ফুলের বাগান করি। নিজের কালেকশন দিন দিন বাড়তে থাকে। এক সময় পর্যাপ্ত হয়ে গেলে লেখাপড়ার পাশাপাশি “মৌসুমী প্লান্ট নার্সারী” নামে শখের ফুলবাগাটিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেই। ব্যবসা ভালই হচ্ছিল। এক পর্যায়ে সে প্রতিষ্ঠানের নামটিকেও দুষ্কৃতিকারীরা ছিনতাই করে ফেলে। আমার মূল নাম ব্যবহার করে তারা হয়ে যায় মালিক আর আমি হয়ে যাই শ্রমিক। তখন এ নার্সারীর ঠিকানা ব্যবহার করে আমি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় “আজীজ আহমেদ” পেন নেম দিয়ে লিখতাম। ফলে নার্সারীটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছিল।
অনেক দিন ধরে শুনতে পেতাম চারদিকে কারা যেন আমাকে নিয়ে বলাবলি করছে। কিন্তু কাউকে দেখা যেত না। এমতাবস্থায় আমি ভাবতাম এটি আমার রোগ। আমাকে হ্যালুসিনেশনে পেয়েছে।
এতকিছুর পরও তখন বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর সাথে যোগাযোগ করি। শিশু একাডেমী আমার একটি ছড়ার পাণ্ডুলিপি বই আকারে প্রকাশের জন্য রিভিউ করে অনুমোদন দেয়। পাণ্ডুলিপিটিতে কিছু ত্রুটি ছিল। বলা হয়েছিল ত্রুটিগুলো মুক্ত করে জমা দিতে। আমি সেটি আমার হবিগঞ্জে শহরের বাসায় এনে ত্রুটিমুক্ত করে ঢাকা যাবার জন্য তৈরি হচ্ছিলাম। বলা বাহুল্য দেশের প্রায় সব জাতীয় পত্রিকার পাশাপাশি মাসিক শিশু, মাসিক টইটম্বুর, মাসিক ফুলকুঁড়ির মত বেশ কয়েকটি ম্যাগাজিনে নিয়মিত আমার লেখা ছাপা হতো। আমার অনুপ্রেরণায় আরও দুজন সম্ভাবনাময় উদীয়মান ছড়াকার তখন ওই সমস্ত দৈনিক ও মাসিক ম্যাগাজিনগুলোতে লিখত। তারা হলো আমার ভ্রাতুষ্পুত্র তারিফ আহমেদ(মাহবুবুর রহমান) ও ভ্রাতুষ্পুত্রী শারমিন আক্তার তানিয়া(শামিমা রহমান)। এক পযার্য়ে আমার পেন নেম আজীজ আহমেদকেও অদৃশ্য দস্যুরা ছিনতাই করে মৌলভিবাজারে আয়নাঘরের মতো আরেকটি অদৃশ্য আয়নাঘরে আটকে রাখে। একইসাথে সেখানে তারা অসদুদ্দেশ্য সাধনে প্রচেষ্টা চালিয়ে আমার জনপ্রিয়তা ও সুনামকে ক্ষুন্ন করতে থাকে। তখন আমার ভ্রাতুষ্পুত্র ও ভ্রাতুষ্পুত্রীর নামগুলোও একইভাবে ছিনতাই হয়। এদিকে আমার আত্মীয়-স্বজন আমার অবস্থান কেউ খোঁজে পায় না। আমার অবস্থান হবিগঞ্জের গানিং পার্কে নিজের বাসায়। অথচ সবাই বলছে মৌরভীবাজারে। আমি তাদের কাছে থেকেও দূরে। বেঁচে থেকেও মৃত। আমার ভাইয়েরা যেন ভাই না। আমার মা যেন আমার মা নয়। তারা যেন ছিনতাইকারীদের মা-ভাই। আমি যেন ভূয়া, নকল লেখক। আর ছিনতাইকারীরা হলো আসল লেখক। ভাবি আমি লিখতে গিয়ে যেন নিজেই নিজের বিপদ ডেকে আনলাম। একজন লেখক স্বাধীনভাবে কাগজে লিখতে পারবে না। এ কেমন অরাজকতা? এজন্য আমার পরিবারের সবাই আমাকে ভুল বোঝে। এরই প্রেক্ষিতে আমার ভাইয়েরা সবাই মিলে আমার উক্ত ছড়ার পাণ্ডুলিপিটিসহ পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত লেখার জমানো পেপার কাটিংস ও বেশ কয়েকটি ডায়রি আগুনে পোড়িয়ে ফেলে। আরো বেশ কিছু লেখা পথিমধ্যে হরিয়ে যায়। এ বিষয়ে পত্রিকায় হারানো বিজ্ঞাপনও দিয়েছি। কিছু লেখা সুরক্ষার জন্য পাড়ার বড়ভাইতুল্য একজন সম্মানি ব্যক্তির নিকট জমা রাখি। বেশ কিছু গান হবিগঞ্জ উদীচীকে দেই। কিন্তু পরে সেগুলোও আর চেয়ে ফেরৎ পাইনি। দীর্ঘ দিনের এতো কষ্ট, শ্রম সবই আমার বিফলে গেল।
আমি কোন রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত ছিলাম না। ছিলাম নির্দলীয়, নিরপেক্ষ। তখন ২০০০সাল। সিলেটে আইন কলেজের ছাত্র। চারদিকে তখন জাতীয় নিবার্চনের ডামাঢোল বাজছিল। সাহিত্যাঙ্গনে আমার জনপ্রিয়তাও তখন তুঙ্গে ছিল। ইচ্ছে করলে আমি অনায়াসে পালার্মেন্ট সদস্য হতে পারতাম। কিন্তু তার পরিবর্তে ছিনতাইকারী চক্র আমাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে অনেকেই পর্লামেন্ট সদস্য পর্যন্ত হয়েছে। এরই মধ্যে ইসমাইল হোসেন দুলাল নামে আমার প্রতিবেশী সদ্য বিবাহিত এক বাল্যবন্ধুকে হত্যা করা হয়। যেটিকে আত্মহনন বলে রটানো হয়।
চারদিকে তখন চলছে আওয়ামীভূমিদস্যু ও দুষ্কৃতকারীদের নৈরাজ্য। তাদের ভয়ে সবাই কম্পমান। তাদের ভয়েই ভিটেহারা হয় আমার সে অসহায় বাল্যবন্ধুর পরিবারটি। জানিনা আদৌ তার পরিবারটি এ হত্যাকান্ডের সুবিচার পেয়েছে কি না এবং তার ভিটেবাড়িটি ফেরৎ পেয়েছে কি না।
এ তো গেল আমার আসল নাম ও পেন নেমের করুণ দশা। এসব কিছুই হয়েছে আমার অগোচরে, আমারই অজান্তে সদ্য পতিত আওয়ামীলিগ সরকারের আমলে। আর এজন্য আমি আমার আপনজনদের কাছে হয়েছি লাঞ্ছিত, হয়েছি বঞ্ছিত। আত্মীয়-স্বজন হয়েছে অপমানিত।
অবশেষে ২০০৭ সালে ভাগ্য আমাকে টেনে নিয়ে এল আমেরিকার নিউ ইয়র্কে। দেশের দুএকটি লেখা ছাড়া তেমন কোন লেখাই তখন আমার হাতে ছিল না। একেবারে শূন্য থেকে আবার নতুন করে নতুন পেন নেম “আব্দুল আজিজ” নামে নিউ ইয়র্কের সাপ্তাহিকগুলোতে লিখতে শুরু করি। তারপরেও মুক্তি মিলেনি। আমার মূল নাম ও আগের পেন নেমটি তখনও ছিনতাইকারীদের হাতেই। তারা ইচ্ছে মতো আমার নামগুলোকে দিয়ে আওয়ামীলিগ করিয়েছে এবং তাদের নিয়ন্ত্রনাধীন রেখেছে। নিরবে সয়ে গেলাম। কতবার নিজেকে ধিক্কার দিয়েছি, বলেছি আর লিখবো না। তারপর ঠিক করলাম আমার হারানো বল পুনরুদ্ধার করতে হবে। একসঙ্গে ঢাকা থেকে ২০১৪সালে বের করলাম দুটি বই। তাদের মধ্যে ১টি “আমার মায়ের হাসি” (ছড়াগ্রন্থ) ও অন্যটি “সুরের তরী” গীতিকাব্য গ্রন্থ। কিন্তু প্রকাশক ভালো মানুষ না হওয়াতে বইগুলো মানসম্মত হয়নি। যে কারণে বিশেষ কয়েকজন ছাড়া সবার কাছে আমার উক্ত বই দুটি দেওয়া থেকে বিরত থাকি। আমার সমস্যা রয়েই গেলো। পরে ২০১৫সালে সিলেট থেকে আরেকটি ছড়াগ্রন্থ বের করি। “ছড়ার ঘড়া উপুড় করা” শিরোনামের ছড়াগ্রন্থটি আশানুরুপ না হলেও আগেরগুলো থেকে অনেক ভালো ছিল। তাই নিউ ইয়র্কের প্রায় সব সম্মানিত কবি সাহিত্যিকদের নিয়ে এর মোড়ক উন্মোচন উৎসব করি। পত্রপত্রিকায় ফলাও করে সংবাদ ছাপা হয়। তারপরেও আমার সমস্যার যেন সমাধান হয়নি। আমার মূল নামটি হয়ে গেলো ইউরোপিয়ান আর আমার পেন নেমটি হলো আমেরিকায় কাগজপত্রহীন অবৈধ অভিবাসী। দুষ্টচক্রের নেটওয়ার্কের কারণে আমি হয়ে গেলাম এখানেও নকল লেখক এবং অবৈধ। অথচ আমেরিকাতে আমার বৈধতা ১০০%। দুষ্টচক্রের কারণে আমি একজন বৈধ বাঙ্গালি আমেরিকান হয়েও যেন একজন অবৈধ অভিবাসী। ছিনতাইকারীরা হয়ে গেল আসল লেখক। হাত চুলবুল করে লিখার জন্য, মন বলে না। যতই লিখছি ততই যেন বিলীন হচ্ছি। পত্রপত্রিকায় লেখা পাঠালে আগের মত লেখা ছাপা হয় না। কোথায় জানি একটি গাপলা আছে। দেশে সবকিছু জলাঞ্জলি দিয়ে এখানে এসে নতুন করে শুরু করেও মুক্তি পেলাম না সেই দুষ্টচক্র থেকে। কোন কিছুতেই তারা আমার পিছু ছাড়ছিল না। এখানেও সেই হ্যালুসিনেশন। কেউ কেউ আমাকে পাগল বলতেও দ্বিধাবোধ করেনি। হৃদয়টা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল। সয়েই যাচ্ছি, পথ খুঁজে পাচ্ছি না।
মাঝে মাঝে দেখতাম অখ্যাত কুখ্যাতরা এসে গণসম্বর্ধিত হচ্ছে। অথচ আমি একজন জাতীয় লেখক সে দুষ্টচক্রের খপ্পরে পড়ে অচেনা অজানা মানুষ হয়েই রইলাম। আবার কোন কোন নব্য তেলবাজ লেখকের হাতে সে দুষ্টচক্রকে তাদের ক্ষমতার বলে দেশের সবোর্চ্চ পদক তোলে দিতেও দেখা গেছে। এছাড়া আওয়ামীপন্থী পত্রিকাগুলো শুধু তাদের গুনকীর্তন করে এমন তেলবাজদের লেখা বেশি বেশি ছাপতো। আর এভাবেই অন্যান্য লেখকদের দমিয়ে রাখা হচ্ছিল।
শেষমেষ ফেইসবুকের টাইমলাইনকে চাঙ্গা করতে থাকি। ঘাটাঘাটি করে কিছু প্রমাণাদি খোঁজে পাই। সেগুলো ফেইসবুকে শেয়ার করতে শুরু করি। উল্লেখ্য, আমার আগের বইগুলো সব আমার পেন নেম “আব্দুল আজিজ”দিয়ে প্রকাশিত হয়। ওরা ভাবছিল আমার মূল নামটি আমি আর ব্যবহার করব না। শেষে এ বছর ২০২৪ এর ফেব্রুয়ারিতে দীর্ঘ বিরতির পর আমার মূল নাম ব্যবহার করে “শ্রেষ্ঠ ছড়ার বই” শিরোনামে নতুন ছড়াগ্রন্থ বের করি। এতে যেন সেই দুষ্টচক্রের আঁতে ঘা পড়ে। ফলে হ্যালুসিনেশন থেকে নিজেকে শতভাগ মুক্ত করতে সক্ষম হই। কিন্তু ছিনতাইকারী দুষ্টচক্রের অপতৎপরতা বন্ধ হয়নি। তারা বহাল তবিয়তেই রয়ে গেল। তাদের কিছুই হলো না। রক্ষক যেখানে ভক্ষক সেখানে কার বিচার কে করে। সয়েই যাচ্ছিলাম। কোন ভাবেই এ দুষ্টচক্রকে দমন করা যাচ্ছিল না।
অবশেষে কোটা বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। এটি ছিল একটি যৌক্তিক আন্দোলন। তাই এর সমর্থন করে পক্ষাবলম্বন করি। কোটা বিরোধী আন্দোলনে সে দুষ্টচক্রের পতন আমার কষ্টকে লাগব করে। এখন এ দুষ্টচক্রের সদস্যদের একে একে ধরে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে দেখে আমার মন:প্রাণ খুশিতে নেচে ওঠে। ভাবি তার থেকে আনন্দের আর কী আছে। কোটা বিরোধী আন্দোলনের বিজয় যেন আমাকে শতভাগ মুক্তি এনে দিল। আমার পেন নেম ও মূলনামটি যেন মৌলভীবাজারের অন্য আরেকটি আয়নাঘর থেকে সদ্য মুক্তি পেল।
আমার লেখনী সবসময় সত্যন্যায়ের কথা বলে। মিথ্যার সাথে কখনো আপোস করে না। দেশের কথা বলে। গণমানুষের কথা বলে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমার লেখনী সবসময় দশ পা এগিয়ে। মূলত: এটাই কি আমার অপরাধ?
যে দেশে একজন সাধারণ লেখক ও তার পরিবারের জানমালের নিরাপত্তা নেই, যার নাম ও লেখা ছিনতাই করে নিয়ে নিয়ন্ত্রনাধীন রেখে রাজনৈতিকভাবে বিভিন্ন স্বার্থ হাসিলের কাজে ব্যবহার করা হয়, যে দেশে একজন লেখকের স্বাধীনতা নেই, পরাধীন হয়ে থাকতে হয়, সে দেশের মানুষ এতদিন কতটুকু স্বস্তিতে বসবাস করছিল আমার এ লেখা পাঠেই তা আঁচ করা যাবে। আমার লেখার আরও অনেক কিছু বাকী ছিল। কিন্তু পাঠকের ধৈর্যচ্যুতি ঘটতে পারে বিধায় আর বেশি কিছু লিখলাম না। হয়তো অন্য কোন লেখায় তা বলা যাবে।
আমি আমার এ লেখনীর মাধ্যমে ১) এ দুষ্টচক্রকে কঠোরহস্তে দমন ও দেশ থেকে তাদের সমস্ত রাজনীতি চিরতরে বন্ধ ঘোষণার দাবি জনাচ্ছি। ২) সদ্য পতিত আওয়ামীলিগ সরকারের ভূমিদস্যু ও কুখ্যাত এহেন অপরাধীসহ এতোদিন ধরে নানা হত্যাকাণ্ড ও অপরাধের সাথে জড়িত এবং কোটা বিরোধী আন্দোলনে গণহত্যাকারী খুনিদের প্রত্যেককে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর দাবি জানাচ্ছি। ৩) সদ্য পতিত স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট মানুষরূপী জল্লাদ শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি। ৪) তার সাথে যুক্ত করে বলতে চাই, আর যেন কোন লেখক বা কলম সৈনিক আমার মত এমন নিপীড়নের শিকার না হয় সে বিষয়েও বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের কাছে এর নিশ্চয়তা বিধান কামনা করছি। ৫) এছাড়া জানি আমার এ লেখা প্রকাশের পর এ সমস্ত কুচক্রীমহল আমাকে এবং আমার পরিবারকে হেয়পতিপন্ন করতে চাইবে। সে বিষয়েও বাংলাদেশ সরকারের আশু দৃষ্টিপাত কামনা করছি।
আর যারা পেন নেম বা ছদ্মনাম দিয়ে লিখে আসছেন বা লিখতে চান তাদের জন্য পরামর্শ: তাদের আসল নামটি যাতে আমার মতো ছিনতাই হয়ে না যায় সেদিকে সতর্ক থাকুন। ছদ্মনামে না লিখে আসল নাম দিয়েই লিখার চেষ্টা করুন। আর যদি ছদ্মনাম দিয়ে লেখালেখি করে থাকেন, তাহলে আপনার আসল নামটি কোন খুনি, জেল পলাতক আসামী, ডাকাত, ভূমিদস্যু আত্মগোপন করার অভিপ্রায় বা গুণ্ডা, বদমাইশ, গোয়ার প্রকৃতির কোন মানুষরূপী জন্তু-জানোয়ার নিজেকে আত্মরক্ষার জন্য গোপনে ব্যবহার করছে কি না সেদিকে সদা সতর্ক থাকুন। আশা করি আমার এ লেখা পাঠে বাংলাদেশ সরকারের যথাযথ কতৃপক্ষের পাশাপাশি লেখকসমাজের অন্তরদৃষ্টির উন্মীলন ঘটবে।
ওয়াজ–বয়ানের আদবকায়দা ও শিষ্টাচার
টিউলিপ যেভাবে নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনলেন
কেন এই বিএনপি-জামায়াত বিরোধ, শেষ কোথায়
সব দরজা বন্ধ হলেও ফিলিস্তিনিরা পথ খুঁজে নেয়
সংস্কারের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে?
নিউইয়র্কের মিলন ও সস্ত্রীক কল্লোল পেলেন বাংলাদেশ সরকারের সিআইপি অ্যাওয়ার্ড
শেখ পরিবারের সীমাহীন দুর্নীতি: অনুসন্ধানে ৫ কর্মকর্তা নিয়োগ করেছে দুদক
আ.লীগের মন্ত্রী-সাংসদদের বিরুদ্ধে এক ডজন মামলার প্রস্তুতি দুদকের
স্মরণ | বাংলা সাহিত্যাকাশে অত্যুজ্জ্বল নক্ষত্র আবদুল মান্নান সৈয়দ
ভিসা নীতি শিথিল করলো যুক্তরাষ্ট্র
Trending
-
বাংলাদেশ10 hours ago
শেখ হাসিনা কি ভারতের নাগরিকত্ব নিয়েছেন?
-
বাংলাদেশ10 hours ago
বাংলাদেশের সাংবিধানিক নাম বদলের প্রস্তাব: বাদ যাবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা
-
নিউইয়র্ক10 hours ago
বারবার ঘড়ির সময় পরিবর্তনের বিপক্ষে ডোনাল্ড ট্রাম্প
-
নিউইয়র্ক10 hours ago
নিউইয়র্ক সিটিতে নথিপত্রবিহীন অভিবাসী ধরপাকড় শুরু