উপসম্পাদকীয়
ইউরোপীয় পার্লামেন্টে ডানপন্থিদের প্রভাব যে বার্তা দিচ্ছে
Published
5 months agoon
ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে ডানপন্থিদের জয়জয়কারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের পায়ের নিচের মাটি সরে গেছে। এতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সরকার নড়বড়ে পরিস্থিতিতে পড়েছে এবং মূলধারার গোষ্ঠীগুলোকে তারা কঠিন সময়ে ফেলে দিয়েছে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেয়েন তাঁর ডানকেন্দ্রিক ইউরোপিয়ান পিপলস পার্টি (ইপিপি) যে কোনো একক গোষ্ঠীর চেয়ে সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে বলে বিজয় দাবি করেছেন। তবে অতি ডানপন্থি, ইউরোপ-সন্দেহবাদী, পপুলিস্ট দলগুলো একই কাজ করেছে। মেরিন লে পেনের ন্যাশনাল র্যালিও ভিন্ন ছিল না, যার বিজয় দেখে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ আশ্চর্যজনক হলেও শিগগির নির্বাচনের ডাক দিয়েছেন।
ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের (ইসিএফআর) সিনিয়র পলিসি ফেলো সুসি ডেনিসন আলজাজিরাকে বলেছেন, ‘এই সংসদের অধীনে নিরাপত্তা ও অর্থনীতি নিয়ে কিছু মূলনীতি ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো কৌশলগত এজেন্ডা তুলে ধরা কঠিন হবে।’ ইউরোপের সিদ্ধান্তে আধিপত্য ধরে রাখতে অতি ডানপন্থিরা ‘কঠিনভাবে খেলবে’। এ ক্ষেত্রে ‘আমরা যা দেখতে পাব তা হলো চুক্তি দ্বারা নীতিনির্ধারণ।’
সমস্যা অতি কট্টরপন্থি হওয়া নিয়ে। ইপিপি দল নির্বাচনে ৭২০টি আসনের মধ্যে ১৮৫টি আসন পেয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে নিজেদের প্রভাব ও সুস্পষ্ট বিজয় অর্জন করেছে। রোববার ভোট গণনাকালীন ভন ডের লেয়েন সমর্থকদের এ কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেছেন, ইপিপি অন্যান্য গোষ্ঠীর সঙ্গে জোট বেঁধে ‘বাম ও ডান মতাবলম্বী চরমপন্থিদের বিরুদ্ধে একটি ঘাঁটি তৈরি করবে। নিশ্চিতভাবেই তাদের থামিয়ে দেওয়া হবে।’
তবে কোন দলগুলোকে ‘চরম’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে, সেটা স্পষ্ট নয়। এখানে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির নেতৃত্বে কট্টর ইউরোপীয় রক্ষণশীল ডানপন্থি ও সংস্কারবাদী (ইসিআর) গোষ্ঠীর প্রতি আঙুল তোলা হচ্ছে কিনা, স্পষ্ট নয়। মেলোনির ভাইদের রাজনীতির মূল হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী নব্য ফ্যাসিবাদী ইতালির সামাজিক আন্দোলনগুলো।
ইপিপি প্রায় এক-চতুর্থাংশ আসনে জয়ী হলেও রিনিউ গ্রুপ এবং গ্রিনসের উদারপন্থি দলগুলোর সঙ্গে পূর্ববর্তী ‘সুপার গ্র্যান্ড কোয়ালিশন’ পার্লামেন্টের সদস্যদের মধ্যে একটি কার্যকরী সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। এ কারণে কেন্দ্র-ডান ব্লককে মিত্রদের সঙ্গে জোট বাঁধতে হবে। এদিকে মেলোনি ইইউ নির্বাচনের ফলাফলকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘ইউরোপের চিত্র পরিবর্তন করার সুযোগ রয়েছে, যা আগে কখনও ছিল না।’
ইউরোপীয় মাটিতে অভিবাসীদের নাগরিক অধিকার ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করতে এবং ইউরোপকে সবুজায়নে রূপান্তরে ইসিআরের সঙ্গে ইপিপির মত মিলবে, এমন সম্ভাবনা নেই। ডেনিসনের মতে, এবারের নির্বাচনে ডানপন্থি কট্টরদের আসন কমে আসার সমীকরণটি রিনিউ এবং গ্রিনসের নিয়ন্ত্রণকারী ভূমিকায় ক্ষতির কারণ হতে পারে। এ বিশ্লেষক বলেন, ‘এই কৌশলের ঝুঁকি হলো কেন্দ্রটি গণতন্ত্রবিরোধী এবং জনগণের ইচ্ছাকে সম্মান না করার বিষয়ে অতি ডানপন্থিদের যুক্তিতে ভূমিকা রাখে।’
কেলেঙ্কারির ঘটনা থাকা সত্ত্বেও অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি পার্টি (এএফডি) ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতিতে ১৬ শতাংশ ভোট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে এসেছে, যা চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজের দল সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটসকেও এগিয়ে গেছে। ২০১৯ থেকে ৫ শতাংশ পয়েন্ট বেশি। বার্লিনভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর ইউরোপিয়ান পলিটিক্সের গবেষক ইয়র্ক আলব্রেখট বলেছেন, ‘দলগুলো একসঙ্গে করার ব্যাপারে বিতর্ক আনা প্রাসঙ্গিক নয়’। তাঁর মতে, অভিবাসন ও ইউরোপকে পরিবেশবিষয়ক নিয়ম থেকে মুক্ত করে এমন কমন বিষয়ে অতি ডান, কট্টর ডানপন্থি গোষ্ঠী ও ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্যদের (এমইপি) সঙ্গে সহযোগিতা ও সমন্বয় দেখতে পাব।
অতিডান এবং কট্টর ডানপন্থি দলগুলো একক দলে জোট বাঁধলে তারা ইপিপির অধীনে বৃহত্তম শক্তি হয়ে উঠবে। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলেছেন, পশ্চিমা ও মার্কিনপন্থি তথা আটলান্টিসিস্ট ইসিআর ও রাশিয়াপন্থিদের মধ্যে ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়ে বিভক্তি থাকার কারণে এর আশঙ্কা নেই।