ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার পতন ও দেশত্যাগের পর দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে মনোনীত করা হয় শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে। দেশ সংস্কারে লক্ষ্যে তার নেতৃত্বেই গঠিত হয়েছে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। দেশ সংস্কারের এ সময়ে মামলা হয়েছে অনেক তারকার নামে। চিত্রনায়ক ও ঢাকা-১০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ফেরদৌস আহমেদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। গার্মেন্টকর্মী রুবেলের বাবা রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে আদাবর থানায় মামলাটি দায়ের করেন। ফেরদৌসকে মামলার ৫৫ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি করা হয়েছে। মামলার এজাহারে বাদীর অভিযোগ, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। ওই দিন রুবেল আদাবরের রিং রোডে মিছিলে অংশ নেয়। এ সময় আসামিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নির্দেশ, প্ররোচনা, সাহায্য, সহযোগিতা ও মদদে মিছিলে গুলি ছোড়া হয়। বুকে ও পেটে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রুবেলকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে ৭ আগস্ট মারা যায়।
এদিকে ২০১৫ সালের ২০ এপ্রিল বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা করে তাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে চিত্রনায়ক জায়েদ খান, অভিনেতা শাহরিয়ার নাজিম জয়, সাজু খাদেম ও তানভীন সুইটিসহ ৫০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকী আল ফারাবীর আদালতে ব্যান্ডশিল্পী আসিফ ইমাম বাদী হয়ে এ মামলা করেন। এই মামলার বিষয়ে এখনো কেউ মুখ না খুললেও কথা বলেছেন শুধু জায়েদ খান। তিনি বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে আমি নাকি ২০১৫ সালে হামলা করে তাকে হত্যার চেষ্টা করেছি। সেই মামলায় আমাকে আসামি করা হয়েছে। পুরোপুরি মিথ্যা তথ্য। মিথ্যা মামলা। যার কোনো ভিত্তিই নাই। আমি দেশের একজন শিল্পী। বাংলাদেশকে ভালোবাসি, দেশের মানুষকে ভালোবাসি। যে কেউ মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে হয়রানি করতে পারে না।’ তার ভাষ্য, আমার মত ও বিশ্বাস ভিন্ন হতেই পারে। কিন্তু আমি তো রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কাজে জড়িত নই। কোনো দুর্নীতি ও কারও ক্ষতি করিনি। একজন শিল্পী হিসেবে সব সময় মানুষকে বিনোদন দেওয়ার চেষ্টা করে গেছি। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রায় মাসখানেক আগে থেকেই আমি অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও সর্বশেষ আমেরিকার শো নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। শো করে মানুষকে বিনোদিত দিয়েছি। একজন বিনোদনকর্মী হিসেবে এটাই তো আমাদের কাজ। আমি সেটাই করেছি। এখন আমার নামে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান এখন ড. ইউনূস সাহেব। উনি ছাত্রদের নিয়ে দেশের সংস্কারকাজ করছেন। আমার বিশ্বাস, এসব ভিত্তিহীন মামলার বিষয়ও উনি দেখবেন।
মামলা নিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘দেশের শোবিজ অঙ্গনের শিল্পীরা এখন আতঙ্কিত। যেভাবে পারছে তাদের নিয়ে যা তা বলছে। আমার নামে তো রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রের কোনো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান মামলা করেনি। কে করেছে, তাকে আমি বা আমরা কেউ চিনি না। এমন অপরিচিত একজন মিথ্যা এক অভিযোগ দিয়ে মামলা করে দেবে আর অমনি তা সত্য হয়ে যাবেÑ এটা আশা করি না। আশা করি, এমন হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা বন্ধ হবে।’ গতকাল মিথ্যা তথ্য প্রচার করার অভিযোগে অভিনেত্রী ও প্রযোজক রোকেয়া প্রাচীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার আবেদন করেন মো. ছাব্বির হাসান ওরফে সজিব নামে এক ব্যক্তি। ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে এ মামলার আবেদন করেন তিনি। বিচারক এএম জুলফিকার হায়াত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে প্রথমে আদেশ অপেক্ষমাণ রাখেন। পরে মামলা গ্রহণ করার উপাদান না থাকায় খারিজ আদেশ দেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়, বর্তমানে দেশের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে অর্জিত সফলতাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার উদ্দেশে গত ১৬ আগস্ট সন্ধ্যায় ভারতের মিডিয়া ‘আজ টক বাংলায়’ আক্রমণাত্মক মিথ্যা, মানহানিকর, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে সাক্ষাৎকার ও বক্তব্য দেন। যা দিয়ে তিনি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাকে উসকে দিতে চেয়েছিলেন।