তারকা ভুবন
সাইফ আলি খানের ১৫ হাজার কোটি রুপির সম্পদকে ভারত কি ‘শত্রু সম্পত্তি’ ঘোষণা করবে?
Published
1 month agoon

ভোপালের নবাবের ১৫ হাজার কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তির উত্তরাধিকার সাইফ আলি খান ও তার পরিবারের সদস্যরা পাবেন? না কি এই বিপুল সম্পত্তি সরকারের কাছে চলে যাবে? গত কয়েকদিন ধরে এই প্রশ্নগুলোই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।
এই মুহূর্তে ভোপালের আহমেদাবাদ প্যালেস, ফ্ল্যাগ স্টাফ হাউজ, হাজার হাজার একর জমি এবং তার চারপাশের ঐতিহাসিক ভবনগুলো একটা বড়সড় বিতর্কের অংশ হয়ে উঠেছে। সাইফ আলি খানের শৈশব কেটেছে এই ফ্ল্যাগ স্টাফ হাউজে।
ভোপালের নবাবের এই বিপুল সম্পত্তিকে ঘিরে বিতর্কের কারণ হলো, এগুলোকে ‘এনিমি প্রপার্টি’ বা ‘শত্রু সম্পত্তি’ বলে ঘোষণা করার প্রক্রিয়া কেন্দ্র সরকার ইতিমধ্যে শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো কেন?
‘কাস্টডিয়ান অফ এনিমি প্রপার্টি ফর ইন্ডিয়া’-এর ২০১৫ সালের এক নথি অনুযায়ী, ভোপালের নবাব হামিদুল্লাহ খানের বড় মেয়ে আবিদা সুলতান ভারত ছেড়ে পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলেন।
কেন্দ্র সরকারের দাবি, আবিদা সুলতান পাকিস্তানে চলে যাওয়ায় ভোপালের নবাবের সম্পত্তি ‘এনিমি প্রপার্টি অ্যাক্ট’ বা ‘শত্রু সম্পত্তি আইন’ আওতায় চলে এসেছে। আবিদা সুলতান ছিলেন সাইফ আলী খানের দাদি সাজিদা সুলতানের বড় বোন।
এদিকে, কেন্দ্র সরকারের এই দাবিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন সাইফ আলি খান ও তার পরিবার। মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টে একটা পিটিশন দায়ের করেছিলেন তারা।
গত বছর, ১৩ ডিসেম্বর হাইকোর্ট জানিয়েছিল ‘শত্রু সম্পত্তি’ সংক্রান্ত বিরোধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য অ্যাপিলেট অথরিটি গঠন করা হয়েছে। এই অ্যাপিলেট অথরিটির কাছে কেন্দ্র সরকারের দাবির বিরুদ্ধে আবেদন জানাতে পারেন সাইফ আলি খান ও তার পরিবার।
জেলা কালেক্টর কী বলছেন: এই বিষয়ে ভোপালের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কৌশলেন্দ্র বিক্রম সিং বলেন, “আমি এইমাত্র হাইকোর্টের নির্দেশের বিষয়ে জানতে পেরেছি। সেটা (আদালতের নির্দেশ) পর্যবেক্ষণ করার পর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ভোপালে যে সমস্ত সম্পত্তি ‘শত্রু সম্পত্তি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, তার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বিবিসি হিন্দিকে বলেছেন, “এর আগেও একটা সমীক্ষা করা হয়েছিল, সেখানে শত্রু সম্পত্তি সম্পর্কে বিবরণ দেওয়া হয়েছিল। যদি বিশেষভাবে এই মামলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন, তাহলে বলব এখনও এই নিয়ে কোনো তথ্য নেই।”
“এই বিষয়ে দফতর থেকে একবার খোঁজ নিতে হবে, তারপরই আমরা বিস্তারিত জানাতে পারব।”
ভোপালবাসীর ‘গৌরব’: মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভোপালের কোহে ফিজা এলাকার বাসিন্দা আব্দুল্লাহ খান। তার কাছে কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে ভোপালের নবাবের সম্পত্তিকে ‘শত্রু সম্পত্তি’ হিসাবে ঘোষণা করার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে, তিনি হেসে ফেলেন।
আব্দুল্লাহ খান বলেছেন, “মিয়া, যখন বিষয়টা ভোপালীদের আন, বান এবং শানের (সম্মান ও গৌরবের) ওপর চলে আসে, তখন ভোপালীরা পিছু হটে না।”
বর্তমানে আব্দুল্লাহ খান ও তার পরিবার যে এলাকায় বাস করছেন সেটা একসময় ভোপালের নবাবের রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
তিনি বিবিসিকে বলছেন, “স্বাধীনতার পর সার্বভৌম ভোপাল রাজ্য ভারতের সঙ্গে এক হয়ে যায়। তারপর নবাব হামিদুল্লাহ খানের দ্বিতীয় কন্যাকে ভোপালের নবাব হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল।”
“বাবা (নবাব হামিদুল্লাহ খান) জীবিত থাকা কালীনই বড় মেয়ে আবিদা সুলতান পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলেন। এখানে আবিদা সুলতানের নামে কোনো সম্পত্তি নেই।”
‘শত্রু সম্পত্তি’ নিয়ে বিতর্ক: ভারতে ‘এনিমি প্রপার্টি অ্যাক্ট’ চালু হয় ১৯৬৮ সালে। এর আওতায় যে সমস্ত ব্যক্তিরা পাকিস্তান বা চীনের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছিলেন, তাদের ভারতে থাকা সম্পত্তিকে ‘এনিমি প্রপার্টি’ বা ‘শত্রু সম্পত্তি’ হিসাবে ঘোষণা করা হয়।
‘শত্রু সম্পত্তি’ চিহ্নিত করা নিয়ে বিতর্ক কিন্তু নতুন নয়। উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের মাহমুদাবাদের রাজার যে সম্পত্তি ছিল, সেগুলো ‘শত্রু সম্পত্তি’ বলে ঘোষণা করা হয়েছিল।
সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল, বিস্তর আলোচনাও হয়েছিল এই মামলা নিয়ে।
রাজা মোহাম্মদ আমির আহমেদ খান ১৯৭৫ সালে পাকিস্তানের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে তাদের সম্পত্তিগুলোও ‘শত্রু সম্পত্তি’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
সরকারের এই দাবিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয় তার পরিবার। ২০০৫ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয় যে ‘শত্রু সম্পত্তির’ মালিকানা সংশ্লিষ্ট পরিবারের কাছেই থাকবে। পরে সরকার একটা অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত বদলের চেষ্টা চালায়।
এদিকে, ভারত সরকারের ‘দ্য কাস্টডিয়ান অফ এনিমি প্রপার্টি ফর ইন্ডিয়া’ দফতর ২০১৫ সালে দাবি করে যে ভোপালের নবাবের সমস্ত সম্পত্তি আবিদা সুলতানের। যেহেতু তিনি পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলেন তাই এই সম্পত্তিগুলো এখন ‘শত্রু সম্পত্তির’ আওতায় চলে আসবে।
এরপরই এই দাবিকে চ্যালেঞ্জ জানান সাইফ আলি খান ও তার পরিবার।
আপাতত মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট ‘শত্রু সম্পত্তির’ সংক্রান্ত মামলার নিষ্পত্তির জন্য তৈরি অ্যাপিলেট অথরিটি গঠন করা হয়েছে।
এখন প্রশ্ন হলো ভোপালের নবাবের সম্পত্তিকে ‘শত্রু সম্পত্তি’ বলে ঘোষণা করা হলে সেখানকার বাসিন্দাদের জীবনেও কী এর প্রভাব পড়বে?
এর উত্তর হলো, হ্যাঁ। ভোপালের নবাবের সম্পত্তি ‘শত্রু সম্পত্তি’ হলে এই সিদ্ধান্ত শুধু সাইফ আলি খান ও তার পরিবারকেই নয়, ভোপালের লক্ষ লক্ষ বাসিন্দাদেরও প্রভাবিত করবে।
নবাবের সম্পত্তির মধ্যে এমন অনেক সম্পত্তি রয়েছে যেখানে এখন স্থানীয় মানুষ বসবাস করেন। ভোপালের বাসিন্দা সুমের খান বলেছেন, “এই সম্পত্তিগুলো বাজেয়াপ্ত করা হলে ১০ থেকে ১৫ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।”
ভোপালের খানুগাঁও এলাকার বাসিন্দা মহম্মদ নাসিমের সম্পত্তিও এক সময় নবাবের ছিল।
তিনি বলেছেন, “আমাদের দাদা-বাবা ভোপালের নবাবদের কাছে কাজ করতেন। আজ আমরা যেখানে বাস করি সেটা আমাদের পূর্বপুরুষদের বসবাস ও চাষের জন্য দিয়েছিলেন নবাব হামিদুল্লাহ খান।”
ভোপালের রাজকীয় সম্পত্তিগুলোর অন্তর্ভুক্ত সম্পত্তিতে এখন লাখ লাখ মানুষ বসবাস করেন। শুধু তাই নয়, বর্তমানের অনেক বাজারও নবাবের রাজত্বের অংশ।
কোহে ফিজা প্রপার্টির, মোটরস গ্যারেজ, নিউ কলোনি কোয়ার্টার, কটেজ নাইন, ডেইরি ফার্ম কোয়ার্টার, ফরেস্ট স্টোর, পুলিশ গার্ড রুম-সহ অনেক কিছুই নবাবের সম্পত্তির তালিকায় রয়েছে।

ফ্যাসিবাদের উত্থান-পতন

আন্তর্জাতিক আইন: যেন শুধু ক্ষমতাবানদের স্বার্থরক্ষার হাতিয়ার

মিশিগানে আল-আকসা সুপারমার্কেটের গ্র্যান্ড ওপেনিং সহস্রাধিক ক্রেতার ঢল

যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসী গ্রেপ্তার ৬২৭ ভাগ বেড়েছে
