Connect with us

সুস্বাস্থ্য

আপনার দাঁতের এনামেল নষ্ট করছে যে খাবার

Published

on

আপনার দাঁতের এনামেল নষ্ট করছে যে খাবার

দাঁতে ক্যারিজ বা ক্ষয়রোগের জন্য বেশি দায়ী চিনি। তবে এই চিনি মানেই বাজার থেকে কেনা দানাদার চিনি নয়। বেকারির প্রায় সব পণ্যেই চিনি থাকে। পাউরুটি, আইসক্রিম, জুস, স্পোর্টস ড্রিঙ্কস, চকলেট, চিপস, কেকেও আছে চিনি। আর তা দাঁতে লেগে থাকলে সেটি মুখের ভেতরকার ব্যাকটেরিয়ার খাবার জোগায়। এতে দ্রুত ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ে ও অ্যাসিড তৈরি হয়। চিনি খেলেও মুখে অ্যাসিডিটি বাড়ে। যার কারণে ক্ষতি হয় এনামেলের।

প্রাকৃতিক উৎস থেকে আসা খাদ্যগুলোতে স্বল্পমাত্রার চিনি ও উচ্চমাত্রার ফাইবার থাকে। যেমন সবজি ও মিষ্টি ফল। এগুলোতে চিনি থাকে গ্লুকোজ, ফ্রুকটোজ, সুক্রোজ আকারে। উচ্চমাত্রার ফাইবার থাকে বলে এগুলো হজমও হয় দেরিতে। চিনিরই আরেকটি ধরন স্টার্চ, যা আসে উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে (যেমন শিম, কলা)। এগুলো পরিমিত পরিমাণে খেলে দাঁতের জন্য ভালো।
দাঁত যথাযথভাবে পরিষ্কার করলে ক্যারিজ থেকে বাঁচা যায়। দুই বেলা ভালো মানের টুথব্রাশ ও টুথপেস্ট দিয়ে ব্রাশ করতে হবে। দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা খাদ্যকণা পরিষ্কার করতে ফ্লস করতে হবে। দাঁতের ওপরের দিকে থাকা ছোট ফিসারগুলো ফিসার সিল্যান্ট দিয়ে ভরাট করে দিলে ভালো। ক্যারিজ প্রতিরোধে ফ্লোরাইডের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। এনামেলের উপাদানের সঙ্গে ফ্লোরাইড মিশে শক্ত একটি প্রতিরোধী আবরণী তৈরি করে। ফ্লোরাইড খাবারে পাওয়া যায়। পানিতেও থাকে। আর ফ্লোরাইড থাকে বিশেষ কিছু টুথপেস্টে।
তবে খাবার পর পরই দাঁত ব্রাশ করা যাবে না। খাওয়ার সময় মুখের ভেতর লালা এসে খাদ্যবস্তু নরম করে। তখন মুখের ভেতর অ্যাসিডিক পরিবেশ তৈরি হয়। এই এসিডের কারণে এনামেল নরম থাকে। ওই সময় ব্রাশ করলে এনামেল ক্ষয়ে যায়। কিছু সময় পর ব্রাশ করলে তা হয় না।
কিছু খাবারে ক্যারিজ কম হয়। যেমন চিজ বা পনির। পনির খেলে পাকস্থলীর অ্যাসিডিটির মাত্রা কমে যায়। গরুর দুধও উপকারী। এতে থাকা ল্যাকটোজ, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ক্যারিজ প্রতিরোধে কাজ করে। কিন্তু রাতের বেলা ফিডারে করে শিশুকে দুধ দিলে তা ক্ষতি করবে। আবার যে শিশুরা মায়ের দুধ পান করছে তাদেরও ক্যারিজ কম হয়। চিনি ও দুধ ছাড়া ব্ল্যাক চা এবং সবুজ চা দাঁতের জন্য উপকারী। ডার্ক চকোলেট বা চিনি কম আছে—এমন চকলেটেও ক্যারিজ কম হয়।

দাঁতের ক্ষতি প্রতিরোধ:
n আঁশযুক্ত খাবার বেশি খেতে হবে। মিষ্টি খেলে পরে খেতে হবে—পরিমিত মাত্রায়।
n প্রতিদিন দুবার ১২ ঘণ্টা অন্তর ব্রাশ করতে হবে। সম্ভব হলে প্রতিবার খাবার পর।
n প্রতি রাতে ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করতে হবে।
n মিষ্টি ও আঠালো খাবার গ্রহণের পর ব্রাশ করতে হবে।
n ফল বা ফলের রস পান করার পর কুলকুচি করতে হবে।
n ক্ষতি ধরা পড়লে দ্রুত ডেন্টিস্টের কাছে যেতে হবে।

খাবার:
মাড়ি ও দাঁতের এনামেল মজবুত রাখতে দরকার ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস। ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারগুলো হলো দুধ, দই, তিলবীজ, ফুলকপি, ছানা, পনির, কাঠবাদাম, ব্রকলি, পালংশাক, ছোট মাছ ইত্যাদি। ফসফরাসের উৎস হলো ডাল, মাছ-মাংস, ডিম, দুধ, শিমের বিচি ইত্যাদি। ক্যালসিয়াম দেহে শোষিত হওয়ার জন্য চাই ভিটামিন ডি’র দৈনিক চাহিদা ৬০০ আইইউ। সূর্যালোকে থাকলে এটি শরীরে তৈরি হয়। সেইসঙ্গে খেতে হবে ডিমের কুসুম, মাশরুম, কলিজা ও তৈলাক্ত মাছ।

ভিটামিন সি:
মুখ, দাঁত ও মাড়ির প্রদাহ কমায় ভিটামিন সি। নিয়মিত আমলকী, পেয়ারা, কাঁচা মরিচ, আনারস, লেবু, কমলা, মাল্টা এসব খান।

ম্যাগনেশিয়াম:
রক্ত অতিমাত্রায় অ্যাসিডিক হলে দাঁত ভঙ্গুর হয়। ম্যাগনেশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার এসিডের সমতা বজায় রাখে। এ তালিকায় আছে পালংশাক, কলা, দানাশস্য, চিনাবাদাম, কাঠবাদাম, মিষ্টি কুমড়ার বিচি, তিসির বীজ, দুধ, দই, ছোলা, গুড় ইত্যাদি।

ভিটামিন কে:
দাঁতের ক্যাভিটি বা গর্ত হওয়া ঠেকায় ভিটামিন কে। শীতকালীন ধনেপাতা, পুদিনাপাতা, শসা, পালংশাক, ফুলকপি, বাঁধাকপি ও ব্রকোলিতে পাবেন ভিটামিন কে।

আঁশযুক্ত খাবার:
শীতের সবজিতে প্রচুর আঁশ ও জলীয় অংশ থাকে। খাবারগুলো যখন খুব ভালোভাবে চিবিয়ে খাওয়া হয়, তখন তা দাঁতের ক্যাভিটি প্রতিরোধে সহায়তা করে। এজন্য খাওয়া যেতে পারে শসা, আপেল, তরমুজ, বিট, গাজর, পেয়ারা ইত্যাদি।

অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট:
মুখকে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া থেকে সুরক্ষা দিতে প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্টযুক্ত খাবার রাখুন। যেমন আঙুর, পেয়ারা, লেবু, কমলা, গ্রিনটি ইত্যাদি রাখা যেতে পারে। এসব খাবারে থাকা পলিফেনোল দাঁতের ক্যাভিটি প্রতিরোধে সহায়তা করে।

ফ্লোরাইড:
দাঁতের সুরক্ষায় ফ্লোরাইডযুক্ত খাদ্য, যেমন পালংশাক, টমেটো, মাছ ইত্যাদি নিয়মিত গ্রহণ করুন।

Advertisement
Comments
Advertisement

Trending