Connect with us

তথ্য ও প্রযুক্তি

প্রযুক্তির ছায়াতলে বিশ্ব

Published

on

প্রযুক্তির ছায়াতলে বিশ্ব

বিশ্বের পস্নাটফর্মে উদয় হলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির। যা প্রয়োগের ফলে নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আজকের আধুনিক সভ্যতায় পৌঁছেছে মানুষ। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বলতে আমরা যা বুঝি তা হচ্ছে, কৃত্রিম গণকব্যবস্থা বা আর্টিফিশিয়াল কম্পিউটিংকে কাজে লাগিয়ে তথ্য সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ, ব্যবস্থাপনা ও বিতরণের মাধ্যমে সমাজ তথা দেশের নানাক্ষেত্রকে নিয়ন্ত্রণের আধুনিক ব্যবস্থা। বর্তমানে প্রতিটি মানুষের জীবন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির স্পর্শে আলোড়িত এবং এর ব্যবহারের অনেক ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। লিখেছেন শেখ একেএম জাকারিয়া

মানুষজাতি সবসময় তাদের ধীশক্তিকে কাজে লাগিয়ে নিত্যনৈমিত্তিক জীবনকে সহজবোধ্য করে তোলার প্রয়াস চালিয়েছে সৃষ্টির শুরু থেকেই। তাদের সেই বিরামহীন সাধনার ফল হিসেবে উদগত হয়েছে প্রযুক্তি। প্রযুক্তি, বিশেষ জ্ঞান থেকে পাওয়া মানুষের সেই আশীর্বাদী ফুল যা আরব্য উপন্যাসে বর্ণিত আলাদিনের চেরাগের জিনের মতো প্রতিদিনের জীবনকে ক্রমান্বয়ে সহজ করে তুলছে। পুরো পৃথিবীতে সেই অনাধুনিক কাল থেকেই রূপান্তরের মাধ্যমে প্রযুক্তির প্রসার ঘটেছে ব্যাপক পরিসরে। মুখ্যত, অতিক্রান্ত ২০০ বছরের মধ্যে বিশ্বে প্রযুক্তির আপন গুণাবলি অতি তাড়াতাড়ি রূপান্তরিত হয়েছে। এসময়ে মানুষ জীবনের সব ক্ষেত্রে, সব কাজ নিষ্পাদনের নিমিত্ত কোনো না কোনোভাবে প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল। প্রযুক্তি ব্যতিরেকে আধুনিক সভ্যতার বিদ্যমানতা কল্পনারও বাইরে। সে কারণেই আধুনিক কালে সুদূরপ্রসারী ও একাধিক উদ্দেশ্য সাধিত হয় এমন অভিপ্রায়ের জন্য পৃথিবীময় আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানালোচনার মধ্যবিন্দুতে উপনীত হয়েছে।
এ বিশ্বে প্রযুক্তির ইতিহাস বহুকাল আগের। তাই প্রযুক্তি কী, কবে থেকে এর শুরু? এ সম্পর্কে জানা আমাদের খুবই জরুরি। প্রযুক্তি হলো কোনো পদ্ধতি বা যন্ত্র বা হাতিয়ার যা আমাদের জীবনকে সহজ করে। অথবা নিজের প্রজ্ঞাকে কাজে লাগিয়ে জগতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন উপকরণ প্রয়োগ করে নিজের কাজকে সহজ করে তোলার জন্য দরকারি ছোট-বড় নানা ধরনের যন্ত্র নির্মাণের কৌশল হচ্ছে প্রযুক্তি। যেমন- লেখার সময় আমরা কলম, পেনসিল ও খাতা, স্স্নেট ব্যবহার করি। আবার বাই-সাইকেল, রিকশা, কার, বাস ব্যবহার করে যাতায়াত করি।
সেই আদিমকালে মানুষ যেদিন গাছ কেটে চাকা বানাতে শিখল, সম্ভবত সেদিন থেকেই পৃথিবীতে প্রযুক্তির পথচলা শুরু। এরপর থেকে মানুষের জীবন একটু একটু করে আবর্তিত হয়েছে প্রযুক্তির চক্রবু্যহে। সময়ের সঙ্গে বিশ্বময় প্রযুক্তির প্রয়োগ যেমন বেড়েছে, তেমনি এ প্রয়োগের একাধিক উদ্দেশ্যও সাধিত হয়েছে। কৃষি, বাণিজ্য, শিক্ষা, শিল্প, যুদ্ধ প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে তৈরি করা নানা যন্ত্রপাতি মানুষের প্রাত্যহিক কাজে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছে। সবাই কমবেশি বিদিত, আধুনিক প্রযুক্তির শুরু শিল্প বিপস্নবের পরের সময় থেকে। আঠারো শতকের পরিণতিতে বা ঊনিশ শতকের গোড়া থেকেই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন আধুনিক উদ্ভাবন পৃথিবীর চিত্রপট অতি শিগগির বদলে দিতে শুরু করেছিল। বিশেষ করে উৎপাদনের ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যাপক প্রভাব পড়েছিল পুরো পৃথিবীতে। যুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র নির্মাণে প্রযুক্তির অচিন্তনীয় প্রভাব সেকেলে রণকৌশলকে গোড়া থেকে পরিবর্তন করেছে। তা ছাড়া যোগাযোগ ক্ষেত্রে প্রযুক্তির প্রয়োগ মানুষের জীবন ও সমাজকে পুরোটাই পাল্টে ফেলেছে। বিশ শতকের শুরুতেই প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটিয়ে আধুনিক পৃথিবীর এই ক্রমবিকাশ প্রায় পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। তারপর বিশ্বের পস্নাটফর্মে উদয় হলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির। যা প্রয়োগের ফলে নানা পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে আজকের আধুনিক সভ্যতায় পৌঁছেছে মানুষ। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বলতে আমরা যা বুঝি তা হচ্ছে, কৃত্রিম গণকব্যবস্থা বা আর্টিফিশিয়াল কম্পিউটিংকে কাজে লাগিয়ে তথ্য সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ, ব্যবস্থাপনা ও বিতরণের মাধ্যমে সমাজ তথা দেশের নানাক্ষেত্রকে নিয়ন্ত্রণের আধুনিক ব্যবস্থা। বর্তমানে প্রতিটি মানুষের জীবন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির স্পর্শে আলোড়িত এবং এর ব্যবহারের অনেক ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। মানবজীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োগ নিচে উলেস্নখ করা হলো। যেমন বিশ্বের যে কোনো দেশে থাকা মানুষের সঙ্গে অন্য দেশ থেকে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব শুধু তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির আনুকূল্যে। তা ছাড়া এর সহায়তায় যে কোনো জরুরি ও তাৎপর্যবহ তথ্য অতি অল্প সময়ের মধ্যে ডিজিটালাইজড ভার্সনে পৃথিবীর যে কোনো দেশে পাঠিয়ে দেওয়া সম্ভব। এ সময়ে মানুষের প্রায় সব ধরনের বিনোদনও তথ্য-প্রযুক্তির মুখাপেক্ষী। বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী ভীষণ লোকপ্রিয়তা অর্জনকারী ওটিটি পস্নাটফর্মগুলোও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করেই কাজ করে যাচ্ছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রয়োগ করে দরকারি তথ্য খুব সহজে সুবিন্যস্তভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে। এ প্রযুক্তি প্রয়োগের ফলে ব্যক্তিগত বাণিজ্য এবং অর্থ সম্পর্কিত লেনদেনের জন্য এমন অনেক ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে যা খুবই সুরক্ষিত ও কল্যাণকর। তা ছাড়া এই সময়ে কোনো কিছু জানার জন্য আমরা যে কম্পিউটারের সাহায্যে বিশ্বব্যাপী উপাত্ত বিনিময়ের সংযোগ ব্যবস্থা অর্থাৎ ইন্টারনেটের ব্যবহার করে থাকি তার আসল ভিত হলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি। মোটকথা, ব্যক্তিগত জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের গুরুত্ব সীমাহীন। তথ্যপ্রযুক্তি প্রয়োগের ফলে মানুষের ব্যক্তিগত জীবন তথা সামাজিক জীবন অনেকাংশে বদলে গেছে। যোগাযোগ ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে খুব অল্প সময়ে একজন মানুষ পৃথিবীর যে কোনো দেশে সশরীরে উপস্থিত হয়ে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা খুব সহজ হওয়ায় পৃথিবীময় চিঠি লেখার প্রয়োগ নেই বললেই চলে। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য কর্মমুখী শিক্ষা ক্ষেত্রে বিস্তার ঘটানো সহজ হয়েছে। অনেক মানুষ আছে যারা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ওপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্ভর করে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করে যাচ্ছে। এভাবে দিন দিন তথ্যপ্রযুক্তি কর্মসংস্থানের সুযোগকে আরও প্রসারিত করছে। সর্বোপরি তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে পুরো পৃথিবী চলে এসেছে মানবজাতির হাতের মুঠোয়।
আধুনিক প্রযুক্তি বস্তুত তথ্যপ্রযুক্তি মানবজাতির জন্য আশীর্বাদ তুল্য। একজন মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে আধুনিক প্রযুক্তির যেমন সুন্দর দিক রয়েছে, তেমনি কিছু কুৎসিত দিকও রয়েছে। তাই সেসব কুৎসিত দিকগুলোকে দূর করে আধুনিক প্রযুক্তিকে কীভাবে মানবকল্যাণে প্রয়োগ করা যায় সেদিকে সবাইকে নজর দিতে হবে। যাবতীয় কদাকার দিক দূর করে, যাবতীয় ভেদাভেদ ভুলে সভ্যতার সার্বিক উন্নয়নে ব্যবহৃত হলে তবেই বিজ্ঞানের এ আশীর্বাদ যথার্থ সফলতা লাভ করবে।

Advertisement
Comments
Advertisement

Trending