বিবিধ
ভ্রমণ: যেখানে আপেল পায় অমরত্ব
Published
2 weeks agoon

একটা পোষা তোতাপাখি ছিল তাঁর। নাম—বিসাও। খানিকটা একাকী, নিঃসঙ্গ মানুষ তিনি। পাখিটিই তাঁর পরম বন্ধু, কথা কইবার সঙ্গী।
তিনি ছবি আঁকেন। বেশ সময় নিয়ে আঁকেন। অন্যদের মতো ঝটপট, এক দিনের মাঝেই একটি ইজেল তৈরি করে ফেলা তাঁর ধরন নয়। আঁকতে গেলে তাঁকে ছবির মাঝে ধ্যানে ডুবে যেতে হয়। কোন রংটির সাথে কোনটি মেশাবেন, সেই নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভাবতে হয়। লেখকরা যেমন অনেক সময়ে কেবলই কাগজ আর কলম নিয়ে অনির্দিষ্টের মতো বসে থাকেন, তিনিও তেমন। তুলি আর ইজেল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। স্থাণুবৎ। ডার্করুমে যেভাবে ধীরে ধীরে কাগজের মাঝে ছবি ভেসে ওঠে, তাঁর ইজেলেও ঠিক ওভাবে ধীরে ধীরে একটা ছবি দৃশ্যমান হয়।
এই যে ছবি, তা কী ছবি আঁকেন তিনি? সমসাময়িককালে বাকিরা যখন আঁকছে ধনাঢ্য লোকেদের আত্মপ্রতিকৃতি কিংবা পৌরাণিক কাহিনির চিত্রায়িত রূপ, তিনি তখন আঁকছেন দক্ষিণ ফ্রান্সের রৌদ্রালোকিত এক্স অঞ্চলের আলো শুষে খাওয়া পাইনের শাখা-প্রশাখা কিংবা বাড়ির কাছের নীলাভ পাহাড়চুড়োর ছবি। বিষয়বস্তু হিসেবে যেগুলো একেবারেই সাদামাটা।
এইসব আঁকাবুঁকি নিয়েই তিনি একবার গেলেন প্যারিসে। উদ্দেশ্য–প্রখ্যাত আকাদেমি দে বু আহ’তে তাঁর কটি ছবি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা।
ছবি প্রদর্শিত হলো। তবে সেগুলো দেখে লোকে একেবারে ছি ছি করতে লাগল। ‘এ তো দেখি একেবারে অন্ধকার ছবি’, ‘ছবি দেখে মনে হচ্ছে আঁকিয়ে আঁকার সময়ে লোটাঘরের ডাক পড়ায় হঠাৎ সবকিছু থামিয়ে ভেগে গেছেন’ কিংবা ‘একেবারেই রদ্দি-মার্কা ছবি’—এই ছিল দর্শকদের ছুড়ে দেওয়া মন্তব্য। যদিও কাছের বন্ধু ক্লদ মনে একটা পরামর্শ দিয়ে বলেছিলেন, ‘লোকের কথা গায়ে মেখো না হে। তুমি বরং এক্স-এ ফিরে যাও। ওখানে গিয়ে চোখের সামনে যা দেখতে পাও, তাই নিয়েই ছবি আঁক।’
তিনি আবারও দক্ষিণে ফিরে এলেন। সেই তোতা পাখিটিকে সাথে করে।
এক্স অঞ্চলটি সমতল নয়। এখানে ওখানে টিলা, ছোট-ছোট পাহাড়। মাঝের নিচু ভূমিতে বসন্তে ল্যাভেন্ডার ফুলের প্লাবন জাগে। সেই সাথে ভেসে আসে জলপাই বনের একটা মিষ্টি শিরশিরে বাতাস। পাইনগাছের লম্বাটে ডালগুলো জমিনের ওপর তৈরি করে ছায়ার প্রলেপ। জ্যামিতিক জঙ্ঘা। বহু দূরে ভেসে থাকা মেঘগুলো ক্ষণে ক্ষণে পাহাড়চুড়োয় চুমু খেয়ে দুম করে আবার কোথায় যেন হারিয়ে যায়।
দিনের পর দিন পাহাড়ের ঢালে একচিলতে সমতল জমিতে দাঁড়িয়ে এসব চিত্র তিনি ইজেলে ফুটিয়ে তোলেন। দিন যায়, সপ্তাহ যায়। তারপর হয়তো একটিমাত্র ছবি ভেসে ওঠে।
ওটিও হয়তো মনঃপূত হয় না। ইজেলের মাঝখানটা তখন তুলির ডাঁট দিয়ে খোঁচা মেরে ছিঁড়ে ফেলেন। কিংবা হয়তো ছুড়ে ফেলেন ফায়ারপ্লেসে গনগনে আগুনে। পুড়ে ছাই হয় সব। একবার এক প্রতিবেশী দেখল, জলপাই গাছের ডালে ঝুলছে একটি ইজেল। হয়তো নিজের আঁকা ভালো না লাগায় দোতলার জানালা দিয়ে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলেন।
এভাবে বেশ কিছুদিন যাওয়ার পর নিজের সেরা কাজগুলো নিয়ে আবারও ফিরে এলেন প্যারিসে। ওখানে তখন ইম্প্রেশনিস্ট বলে এক নতুন ঘরানার চিত্রকরদের নিয়ে খানিকটা কৌতূহল তৈরি হয়েছে। এরা পূর্বতন শিল্পীদের অনুসরণ করে আঁকে না। বরং নিজেদের মতো করে নতুন ধারা বানায়। সে ধারায় একটি ছবিকে নিখুঁত হওয়ার প্রয়োজন নেই। নেই ক্যামেরার মতো করে একটি দৃশ্যকে ইজেলে ফুটিয়ে তোলার আবশ্যকতা। নেই বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গকে ফ্রেমে টেনে আনার আদিখ্যেতা। আকাদেমিতে এই নতুন ধারার শিল্পীদের প্রদর্শনী হবে।
আশায় বুক বাঁধলেন তিনি। এই নবজাগরণের ভিড়ে হয়তো মিলে যাবে ঠাঁই। এবারে লোকে তাঁর কদর বুঝতে শিখবে। কিন্তু এবারও হতাশ হতে হলো। কারণ, তাঁর ছবি যেন ওই ইম্প্রেশনিস্ট ঘরানার চেয়েও আলাদা কিছু। যেখানে রঙের ঔজ্জ্বল্য নেই, বস্তুকে তার বাহ্যিক কাঠামো দিয়ে ফুটিয়ে তুলবার আকুলতা নেই। সে সময়কার শিল্পবোদ্ধাদের অতটুকু গভীরতা হৃদয়ে আপ্তি করবার সামর্থ্য নেই।
এবারও সান্ত্বনার বাণী নিয়ে এলেন দুই বন্ধু—কামিল পিসারো আর রেনোয়া। ‘আরেকটু উজ্জ্বল রং ব্যবহার করা যায়, ভায়া? ভেবে দেখতে পারো!’—তারা বললেন। যদিও বন্ধুদের এই উপদেশ তার কাছে প্রতিভাত হলো বক্রোক্তি কিংবা উপহাস হিসেবে। মন ভার করে আবারও ফিরে এলেন এক্স-এ।
এবারে ভাবলেন, আর প্রকৃতি নয়, আঁকবেন স্টুডিওর ভেতরে থাকা বস্তুর ছবি। এই যেমন ফুলদানিতে রাখা ফুল কিংবা সাদা রুমালের ওপর রাখা আপেল। মুশকিল হলো, আপেল তো আর দু-চার দিনের বেশি ভালো থাকে না। পচে যায়। ওদিকে তিনি যে আবার তাড়াহুড়ো করে ছবি শেষ করতে পারেন না! অগত্যা তিনি নিয়ে এলেন মোমের আপেল। ঠিক করলেন, সেই দেখেই ছবিটা শেষ করবেন।
এই আপেলের ছবি আঁকার সময়ে তিনি পোষা তোতাটিকে মাঝে মাঝে আঙুর খাওয়াতেন। এক ধরনের ঘুষ ওটা। খাইয়েই বলতেন, ‘বল তো পাখি, তুমি এক মস্ত চিত্রকর!’
পাখি চুপ করে থাকে। নিথর দৃষ্টিতে। ‘ওরে বোকা পাখি, তুইও কি আমার মূল্য বুঝবি না?’—রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে তিনি বলতেন।
পাখির মুখে কিন্তু শেষ পর্যন্ত বোল ফুটেছিল। সেদিন পাখিটিকে কাঁধে চড়িয়ে তিনি আপেলের ছবিটি শেষ করে ইজেলের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। হঠাৎ তোতা বলে উঠল, ‘সেজান এক মস্ত চিত্রকর!’ এ যেন সেই গণকের কাছে থাকা ভাগ্যলিপি লিখে রাখা চিঠির খাম টুকে আনা পাখি। সত্যিই কিন্তু এরপর সেজানের কপাল খুলে গেল।
প্যারিস থেকে নামি ডিলাররা ছুটে এলো এক্স-ও-প্রভসে। যে ছবি দেখে সবাই হয়তো এককালে নাক সিটকাতো, সেই ‘মামুলি’ ছবিগুলোই তারা বহু দামে কিনে নিল। এরপর থেকে তার সেই স্টুডিওটি হয়ে উঠল যেন এক তীর্থস্থান। লোকে এখানে আসে শুধু ছবি দেখার লোভে-ই নয়, সেই পোষা তোতাকে কাঁধে চড়িয়ে সেজান যে দোতলা বাড়িতে একাগ্রমনে ছবি আঁকতেন, সেটি দেখতেও।
আমরাও অনেকটা তেমনই তীর্থযাত্রী। ‘আমরা’ বলতে আমি, মার্সেই-নিবাসী যুবক জীবন আর প্যারিস থেকে আমার সহযাত্রী হয়ে আসা সাগর।
মার্সেই থেকে এক্স-ও-প্রভস ঘণ্টা দেড়েকের পথ। অবশ্য এ পথটা নির্ভর করে আপনি মার্সেই শহরের ঠিক কোন প্রান্তে আছেন তার ওপর। কেউ যদি মার্সেইয়ের পূর্বপ্রান্তে থাকে, তবে এক্স-এ পৌঁছতে আরও হয়তো কিছুটা বেশি সময় প্রয়োজন হবে। আমাদের ক্ষেত্রেও সেটিই ঘটবে। কারণ, আমাদের যেতে হবে সেই পূর্বপ্রান্ত থেকেই। পূর্বে, অর্থাৎ শহরের প্রাণকেন্দ্রে জীবনের রেস্তোরাঁ। সকালে ফোন করে ও জানাল, রেস্তোরাঁ থেকে ওকে তুলে নিয়ে যাওয়া সম্ভব কি?
কথা ছিল, জীবন বাসে করে চলে যাবে এক্স-এ। আমরা সেখান থেকে ওকে তুলে নেব। কিন্তু এখন এই সকালের অফিসগামী লোকের ভিড় ঠেলে জীবনকে তুলতে গেলে বেশ খানিকটা সময় বেশি লেগে যাবে। তবে এ অনুরোধের পেছনে নিশ্চয়ই জুতসই কোনো কারণ আছে, সেটা জীবনকে তুলে নেওয়ার পর জানতে পারব।
জীবনের রেস্তোরাঁটা কেন্দ্রীয় রেলস্টেশন থেকে খুব বেশি দূরে নয়। চারদিকে হৈ-হট্টগোল। অসংখ্য গাড়ি তো আছেই, সেইসঙ্গে আছে গাড়ি ঘেঁষে হুঁস করে চলে যাওয়া স্কুটার কিংবা ট্রাফিক লাইটকে তোয়াক্কা না করে রাস্তা পার হওয়া মানুষ। সাগরের ভাষায় ‘এরা ফরাসি নয়, খাজুর’। খাজুর আসলে একটি অপনাম। মূলত আফ্রিকান অভিবাসীদের বোঝানো হয় এটি দিয়ে। যদিও এ অঞ্চলে যাদের দেখছি, তারা মূলত তিউনিসিয়া, মরক্কো কিংবা আলজেরিয়া থেকে আসা অভিবাসী। ‘খুব সাবধানে গাড়ি চালান দাদা। কোনোভাবে নিজের দোষে ব্যথা পেলেও এরা আপনার ওপর চড়াও হয়ে হয়তো গাড়ির গ্লাস ভেঙে দেবে’—খানিকটা শঙ্কিত স্বরে সাগরের কথা। ওর নিজের গাড়ি না থাকায় প্যারিসে মাঝে-মাঝে বাদবাকি দু-একজন বাংলাদেশির গাড়িতে এখানে-ওখানে ঘুরতে যায়। তারা অনেকেই নাকি গাড়ির ট্রাঙ্কে রড কিংবা হকিস্টিক জাতীয় কিছু একটা রাখে। পথে যদি কোনো তথাকথিত ‘খাজুর’-এর সাথে গাড়ি পার্কিং কিংবা ওই জাতীয় কিছু নিয়ে বচসা বাধে, তবে যেন নিজের কিছুটা পেশিশক্তি দেখানো যায়, সে জন্য। ‘কী বলো? পুলিশকে না ডেকে এভাবে নিজেরাই মারামারির উদ্যোগ নেওয়া? এ কেমন কথা ভাই’—অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করি। ‘উপায় নেই দাদা। পুলিশ যতক্ষণে আসবে, ততক্ষণে খাজুরের দল আপনার গাড়ির বারোটা বাজিয়ে দিয়ে পালিয়ে যাবে। পুলিশ এসে তখন কেবলই হয়তো দুঃখ প্রকাশ করবে।’—যেটা বুঝলাম ফরাসি দেশটির আর সেই ষাট-সত্তরের দশকে সুনীলের দেখা ‘ছবির দেশ, কবিতার দেশ’ নেই। এখন সেই ছবি আর কবিতার সাথে এসে যুক্ত হয়েছে ড্রাগ, অভিবাসীকেন্দ্রিক সমস্যা, অনিয়ম, গুণ্ডামি, বেকারত্ব ইত্যাদি নানা কিছু।
জীবনের রেস্তোরাঁটির সামনে গাড়ি দাঁড় করাবার অবস্থা নেই। এমনিতেই একটু সরু গলি। দুটো গাড়ি আসা-যাওয়ার পথ। তার ওপর আবার একটু দূরে পথ আটকে মেরামতের কাজ চলছে। জীবনকে তাই বলি, আপনি বরং হেঁটে বড় রাস্তায় আসুন। আমরা সেখানে অপেক্ষা করি।
কপাল ভালো যে ওই সময়ে বড় রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছে দমকলের গাড়ি। সাইরেন বাজিয়ে স্থির হয়ে আছে। ফলে ওটির পেছনে গাড়ি দাঁড় করাতে সমস্যা নেই। এমনি সময় হলে হয়তো পুলিশ এসে বকুনি দিয়ে যেত।
‘দুঃখিত! আপনাদের এই এতটা পথ টেনে এনে ঝামেলায় ফেললাম। আসলে সাতসকালেই এক বাঙালি ছেলে এসে এমনভাবে একটা কাজে সাহায্য চাইল, না করতে পারলাম না। ভেবে দেখলাম, তারপর যদি আমি বাস ধরে এক্স-এ পৌঁছতে চাই, মেলা দেরি হয়ে যাবে’—হাঁপাতে হাঁপাতে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকেই জীবন বলে।
কী সেই সাহায্য, সেটা পরে শুনলাম জীবনের মুখেই। নিজের ব্যবসা সামলাবার পাশাপাশি ও দোভাষীর কাজ করে। সরকারি দপ্তরে। হাসপাতালে। ফরাসি না-জানা বাঙালিদের জন্য। বিনিময়ে সেসব দপ্তর থেকে পারিশ্রমিক পায়। ঘণ্টায় চল্লিশ ইউরো করে। ভালো বাড়তি আয়। তবে ওর এই ভালো ফরাসি জানা এবং লিখতে পারার ব্যাপারটি জানতে পেরে মাঝে মাঝে নতুন আসা অনেক বাংলাদেশি নানা অনুরোধ নিয়ে আসে। কখনো তাদের হয়ে কোথাও ফোন করে দেওয়ার জন্য, আবার কখনো কোনো ফরম পূরণে সাহায্য করার জন্য। আজ সকালেই যেমন একজন এসেছিল তার এসাইলামের আবেদনপত্র পূরণে জরুরি সাহায্যের জন্য। বলাবাহুল্য, এসব পরোপকার করে জীবনের কোনো অর্থলাভ হয় না। এমনকি কাজ হাসিলের পর অনেকেই নাকি আর না-চেনার ভান করে।
তেমনই আরেকটি ঘটনার কথা বলছিল। গত বছর এক চল্লিশোর্ধ বাংলাদেশি ভদ্রলোক ওর রেস্তোরাঁয় এসে হাজির হন। ভদ্রলোক প্রথমে ছিলেন লিবিয়ায়। সেখানে থেকে স্পেন হয়ে পালিয়ে আসেন ফ্রান্সে। এখানে তিনি ফেরারি। কাজ নেই। অর্থ নেই। কাগজপত্র নেই। থাকার জায়গাটি পর্যন্ত নেই। জীবন তার দুরবস্থার কথা শুনে ওর রেস্তোরাঁর ওপরে থাকা চিলেকোঠায় থাকতে দেয়। ঠিক হয়, লোকটি টুকটাক কাজ করবে আর রেস্তোরাঁয় যা রান্না হয় সেখান থেকেই খেয়ে নেবে। এর মাঝে লোকটির হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক! হাসপাতালে নেওয়ার পর ডাক্তাররা জানান কয়েকটি ম্যাসিভ ব্লক। হার্টে রিং পরাতে হবে। এদিকে তার তো কোনো স্বাস্থ্যবীমাই নেই। জীবন নিজের ব্যবসার কাজ ফেলে দৌড়াদৌড়ি করে লোকটির সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করে। সুস্থ হয়ে ফিরে লোকটি কিছুদিন সেই চিলেকোঠার ঘরে বিশ্রাম নেয়। এর মাঝে ফ্রান্সে অস্থায়ীভাবে থেকে যাওয়ার কাগজপত্রের একটা হিল্লে হয়। তারপর একদিন লোকটি হাওয়া। জীবন পরে জানতে পারে, লোকটি প্যারিসে চলে গেছে। ওকে কিছু না জানিয়েই।
তবে এই মন্দ ঘটনাগুলো জীবনকে থামিয়ে দেয়নি। পরোপকার থেকে। ওর কথা হলো, ‘সাহায্যের বদলে কোনো প্রতিদান আশা করি না। তবে মাঝে মাঝে একটু বিরক্ত লাগে, যখন কেউ কেউ এমনভাবে এসে বলে, যেন তাদের সাহায্য করে দেওয়াটা আমার দায়িত্ব।’
এক্স-ও-প্রভস শহরটি সেই সেজানের সময়কার শহর নেই। এখন এখানে পাহাড়গুলো ভরে উঠেছে বনেদি বাড়ির দেয়াল আর গাড়ি পার্কিংয়ের বহুতল ভবনে। আমরাও তেমনই একটি ভবনে গাড়ি রেখে সেজানের সেই স্টুডিওটি খুঁজতে থাকি।
শুরুতেই যে ব্যাপারটি আমাদের ভড়কে দিল, সেটা হলো ভাগাড়ের কনটেইনারের পাশে পাহাড়ের মতো স্তূপ করে রাখা ময়লা। ঠিক যেন ঢাকা শহরের প্রতিচ্ছবি। ঠিকরে বেরিয়ে আসছে দুর্গন্ধ। নাকে রুমাল চাপলে ভালো হতো। তবে সাথে যেহেতু রুমাল নেই, অগত্যা শার্টের বোতাম খুলে ওটাকেই নাকের কাছে টেনে আনি। ‘ঘটনা কী জীবন, বলুন তো? এ অঞ্চলের এমন করুণ দশা কেন?’—কিঞ্চিৎ বিরক্ত হয়ে প্রশ্ন করি।
‘স্ট্রাইক দাদা, স্ট্রাইক। পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা দাবি করছে ওদের বেতন বাড়াতে হবে। নতুবা ওরা ময়লা সরাবে না। আমাদের মার্সেইয়ের লোকাল পত্রিকায় এ নিয়ে প্রতিদিনই সংবাদ বেরুচ্ছে’—জীবন বলে। এখানে যে শ্রীহীন অবস্থা দেখছি, তাতে করে মনে হলো শেষ পর্যন্ত হয়তো পৌরকর্মীদেরই বিজয় হবে। সবাই কালো প্লাস্টিকের ব্যাগে করে ময়লা এনে ফেলে যাচ্ছে বটে, কিন্তু তাদের দু-চারটির মুখ ছুটে অনেক সময়ই পরিণত হচ্ছে ক্ষুধার্ত পাখির হামলার লক্ষ্যবস্তুতে।
‘আতেলিয়ে দ্য সেজান’ লেখা একটি বাদামি বর্ণের বোর্ড যেদিকটায় নির্দেশ করছে, ওখানে একটা উঁচু টিলা। দুপাশে বাড়ি। মাঝ দিয়ে পিচের পথ। ঢালু সেই পথ বেয়ে হাঁটতে গিয়ে উপলব্ধি করি, রোদের তেজ বেশ বেড়েছে। জীবন এরই মধ্যে তাপ সইতে না পেরে জামা খুলে কোমরে বেঁধে নিয়েছে। আমিও ফুল স্লিভ শার্টের হাত গুটিয়ে কনুইয়ের কাছটায় আনি। আর ভাবতে থাকি, এত জায়গা রইতে সেজান এই পাহাড়ের ওপর কেন বাড়ি কিনে স্টুডিও বানালেন?
একেবারে জীবন সায়াহ্নে এসে এ বাড়িটি কেনেন সেজান। খ্যাতি-যশ-অর্থ কিছুই ছিল না তখনো। নেহাতই উত্তরাধিকার সূত্রে মায়ের কাছ থেকে কিছু সম্পত্তি পেয়েছিলেন, সে বিক্রি করে হাতে কিছু টাকা এলো। তখনো লে লুভ অঞ্চলের এই এলাকাটি নিরালা পাহাড়। আশপাশে জলপাই আর ডুমুরের বন। পাহাড়ের শীর্ষদেশে উঠলে দূরের সেইন ভিক্তর পর্বতের ধূসর রূপটি পরিষ্কার দেখা যায়। এমন একটি জায়গাই তো সেজান খুঁজছিলেন এতদিন ধরে, যেখানে ইজেলের স্ট্যান্ড দাঁড় করিয়ে তিনি প্রকৃতির রংকে নিজের তুলিতে ধারণ করবেন।
‘সেজান সরণি’তে ঢোকার মুখে চার রাস্তার মিলনস্থল। সেখানে গোলাকার সড়কদ্বীপটিতে বহু পুরোনো একটি সদর দরজার অংশবিশেষ। দুপাশে বেলেপাথরের খিলান। মাঝে লোহার দরজা। প্রত্নতাত্ত্বিক ভূমিতে অসহায় দাঁড়িয়ে থাকা নিরালম্ব প্রবেশদ্বারের মতোই এটিও এই সড়কদ্বীপে খানিকটা বেমানান। কৌতূহলী হয়ে আমরা রাস্তা পেরিয়ে সেই দ্বীপে উঠে আবিষ্কার করি, এটি মূলত ছিল সেজান-বাড়ির মূল প্রবেশদ্বার। সেখান থেকে উৎপাটন করে এই দ্বীপে রেখে বোঝানো হয়েছে—গোটা পাড়াটিই মূলত সেজানকেন্দ্রিক।
ন নম্বর পল সেজান সরণির বাড়িটিকে চারদিক থেকে জাপটে ধরে আছে শতায়ুপ্রাপ্ত জলপাই আর ডুমুরগাছ। তাদের ঝরা পাতায় উঠোনটি আর্দ্র। ডান ধারে দোতলা বাড়িটি আর উল্টোদিকে ঢালু জমি পথ দেখিয়ে নিয়ে গেছে পাহাড়ের নিচের দিকে থাকা দুর্ভেদ্য অরণ্যে। সে-পথে কিছুদূর গেলেই দুধারের ঝোপঝাড় অক্টোপাসের শুঁড়ের মতো গলা পেঁচিয়ে গিলে ফেলতে চায়। মনে তখন অনিশ্চয়তা দানা বাঁধে। কিন্তু সে দানা পূর্ণমাত্রায় কেলাসিত হওয়ার আগেই আমরা পথ বদলাই। ঢালু পথ আবারও ডিঙিয়ে ফিরে আসি মূল বাড়ির আঙিনায়। সেখানে একপাশে একটি ছোট্ট টেবিল পেতে দুই মহিলা গপ্পো করছেন। একজনের হাতে সিগারেট। পাশে লেমনেডের গ্লাস। আমাদের দেখে সিগারেটের আগুন নিভিয়ে তিনি এগিয়ে এলেন।
‘মসিউ, একটু যে দেরি করে ফেললেন!’—আমরা একে অপরের দিকে তাকাই। সর্বনাশ। স্মৃতিশালা বন্ধ নয় তো! আমাদের উৎকণ্ঠা আঁচ করে মহিলা খানিকটা আশ্বস্ত করে বললেন, ‘আমরা আর মাত্র আধঘণ্টা খোলা আছি। এরপর লাঞ্চে যাব। পাক্কা দেড় ঘণ্টার জন্য। কাজেই ঢুকতে হলে ওই আধঘণ্টার জন্য ঢুকুন। নতুবা ঘণ্টা দুয়েক বাদে ফিরে আসুন।’ এতদূর পাড়ি দিয়ে এসে ভেতরে মাত্র আধঘণ্টা? আমরা খানিকটা দমে যাই। কী করা ঠিক হবে, সেই নিয়ে নিজেদের মাঝে খানিক আলোচনা চলে। শেষ অবধি এখনই টিকিট কেটে সংগ্রহশালা দেখার সিদ্ধান্ত স্থির হয়।
সিঁড়ি ভেঙে ওপরতলের স্টুডিও ঘরটিতে গিয়ে অবশ্য বুঝলাম, এখানে চাইলেও আধঘণ্টার বেশি সময় কাটানো সম্ভব নয়!
কারণটা একটু পর বলছি।
সেজান চাইতেন তাঁর স্টুডিওতে সূর্যের আলো ঢুকুক নদীর স্থিতধী জলের মতো করে। সে আলোয় কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকবে না। যতটুকু আলো ঢুকবে, তারা ঢুকবে হুড়মুড়িয়ে; কোনো কৃত্রিম বাধার মুখোমুখি হয়ে নয়। তাই উত্তরের দিকে তিনি বসালেন বিশাল জানালা। একেবারে ছাদ অবধি যার বিস্তার। চৌকোনা স্বচ্ছ কাচ জানালাটির সম্বল। পর্দা সরিয়ে নিলে ওপাশের আলো একেবারে সগৌরবে এ ঘরে এসে লুটিয়ে পড়ে। আর দক্ষিণ দিকটির জানালায় দেওয়া হলো কিছু শাটার। ওদিকে মেঝেতে আগে ছিল টাইলস। ওতে আবার আলোক বিচ্ছুরণের সম্ভাবনা থাকে। তাই টাইলস সরিয়ে বসালেন কাঠের পাটাতন। একইভাবে দেয়ালের রঙের ক্ষেত্রেও বাছাই করলেন নীল আর ধূসরের মাঝামাঝি একটা রং, যাতে ওটা তীব্র আলোকচ্ছটাকে শুষে নিতে পারে। ভিন্ন রং লাগালে হয়তো এক দেয়াল আলোকে লুফে নিয়ে পাঠিয়ে দিত ভিন্ন দেয়ালের কোলে। এখানে সে সম্ভাবনা নেই।
সেই ময়লাটে দেয়ালেরই এককোণে কাঠের শেলফে কিছু চিনে মাটির তৈজস। ভিন্ন কোণে ঝুলিয়ে রাখা বহু পুরোনো কিছু কোট, মাথার হ্যাট। মেঝেতে পড়ে থাকা বেতের ঝুড়িতে ভাঁজ করে রাখা ক্যানভাস। একটি টুলের ওপর তিনটি খুলি। মানুষের। সামনে পেতলের বাতিদানে একটি মোমবাতি। বিন্যাস দেখলে মনে হয়, তিনটি খুলিই জুলজুল চোখে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মোমবাতিটির দিকে।
‘ছবি আঁকার পাশাপাশি তন্ত্র সাধনায় লিপ্ত ছিলেন নাকি উনি?’—সাগর কৌতুকচ্ছলে বলে।
‘আপেলের পাশাপাশি তিনি এ খুলির ছবিও এঁকেছেন। ছবিটার নাম অবশ্য মনে করতে পারছি না এখন।’—আমি বলি। কাঠের মেঝেটির নানাখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা পুরোনো রঙের বোতল। বেখেয়ালে হাঁটলে হোঁচট খাবার সম্ভাবনা প্রবল। সন্তর্পণে জানালার কাছটায় হেঁটে গিয়ে সাগরকে বলি, ‘ওই আপেল রাখা ঝুড়িটার দিকে একটু খেয়াল করো। ওটার দিকে তাকিয়ে তোমার কী মনে হয় বলো তো?’
সাগর আমার কাছে হেঁটে এসে আমার স্থানটি থেকে ঝুড়িকে বেশ কিছুক্ষণ খুঁটিয়ে নিরীক্ষা করে। তারপর রায় জানিয়ে বলে, ‘ঝুড়িটায় সব হলদে আপেল; শুধু একটা সবুজ আপেল। এটাই কি বলতে চাইছেন?’
‘ঠিক তা না।’—মাথা নেড়ে আমি বলি।
‘ঝুড়িটার দিকে ভালো করে তাকালে বুঝবে ওটা বেতের টুলটার ওপর একটু কাত করে রাখা।’—সাগরের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝি আমার কথা ওর কাছে হেঁয়ালি মনে হচ্ছে। তাই আরেকটু ব্যাখ্যা করে বলি, ‘সেজানের টেবিল-আপেল-গ্লাস-পিরিচ এ সমন্বয়ের ছবিগুলো দেখলে খেয়াল করবে, ওখানে আপেলগুলো এমনভাবে আঁকা হয়েছে, যেন মনে হয় আপেলগুলো একধার থেকে ধীরে ধীরে গড়িয়ে অন্যধারে যাচ্ছে। মানে, এক ধরনের শ্লথ গতিময়তা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে ওই আপাত সাধারণ আপেলের ছবির মাঝে।’
‘এই ব্যাপারটা খেয়াল করিনি দাদা। এর আগে প্যারিসে কয়েকটা গ্যালারিতে সেজানের ছবি দেখেছি। কিন্তু এভাবে চোখে পড়েনি ব্যাপারটা’—সাগর বলে।
‘পরের বার যখন দেখবে, ভালো করে খেয়াল করো।’—সাগরের সাথে কথা বলার মুহূর্তে মনের ভুলে আমি মুখের মাস্ক খুলে ফেলেছিলাম। সেটা খেয়াল করে দূরে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকা সেই কিউরেটর মহিলা আমাকে হাতের ইশারায় মাস্কটি পরে ফেলতে অনুরোধ করেন।
এই যে বিশাল স্টুডিও-ঘর, এটি ছাড়া আর কোথাও ঘুরে দেখার সুযোগ নেই। এমনকি নিচতলার ঘরগুলোও না। সে জন্যই একটু আগে বলেছিলাম, চাইলেও এখানে ত্রিশ মিনিটের বেশি সময় কাটাবার মতো তেমন কিছু নেই।
আমরা এবারে তাই সংগ্রহশালাটি থেকে বেরিয়ে এসে সেজানের প্রিয় পাহাড়টির সন্ধানে হাঁটতে থাকি।
প্রখ্যাত শিল্প সমালোচক অশোক মিত্র তাঁর ‘পূর্ব ইউরোপের চিত্রকলা’ গ্রন্থে সেজানকে নিয়ে লিখতে গিয়ে লিখেছেন, ‘সেজানের যে কোনো ল্যান্ডস্কেপ দেখলে মনে হবে যেন ছবির গাছপালা, ঘাসের তলায় তিনি পৃথিবীর বুকের নিচের পাথরও এঁকেছেন, ছবির রঙের ওপরের পর্দাটা তুললেই যা দেখা যাবে।’ এ কথাটি তিনি বোধকরি সেজানের ‘লা মন্তাহ সেইন ভিক্তরি’ ছবিটি দেখে বিশেষভাবে বলেছেন। এই যে সেইন ভিক্তরি পাহাড়, এটাকে নিয়ে সেজান কিন্তু একটিমাত্র ছবি আঁকেননি, বেশ কিছু ছবি এঁকেছেন। ক্লদ মনে যেমন একই পদ্ম পুকুরের ছবি বারবার এঁকেছেন, সেজানও তেমনিভাবে একই সেইন ভিক্তরির ছবি এঁকেছেন বারবার।
এই সেইন ভিক্তরি দূরের পাহাড়। সেজানের এই বাড়িটি যে পাহাড়ে সেখান থেকে দূরত্বের হিসেবে বহু দূরে। মাঝের জায়গাটিতে জলপাই আর পাইনগাছের অরণ্য। এবড়ো-খেবড়ো অসমতল ভূমি। নুড়ি-পাথরে ঢাকা। সেজান এদিককার পাহাড়ের একটি খাঁজে দাঁড়িয়ে দূরের ওই সেইন ভিক্তরির ছবি আঁকতেন। তাঁর ছবি আঁকার মূল স্পটটির সন্ধানে আমরা পিচঢাকা পথটি ছেড়ে পাহাড়ের ট্রেইল ধরে জুনিপার গাছের ছায়া মাড়িয়ে ওপরে হাঁটতে থাকি। এখানে পাথরে ঢাকা একচিলতে পথ আছে। বোঝা যায়, লোকে এ পথে যাতায়াত করে। বহুকাল ধরেই হয়তো করে। আরেকটু এগোতে দেখি, এক ফরাসি মেয়ে দুপুরের খাবার নিয়ে বসেছে। দুই টুকরো পাউরুটি আর একটি কলা। ওর দৃষ্টি বহু দূরে আবদ্ধ। সেদিকে খেয়াল করতেই বোবা বনে যাই।
নীলাভ এক পাহাড় চূড়া সোনারোদ মেখে হাসছে। ঠিক যেন সেজানের ছবির সেই পাহাড়। যদিও বলে দিলাম ‘ঠিক সেজানের ছবির সেই পাহাড়’, তবে ছবি আর বাস্তবের দৃশ্যের মাঝে বেশ ফারাক আছে। সেই ফারাক আছে বলেই সেজান ‘পোস্ট ইম্প্রেশনিজম’ ঘরানার শিল্পী। যদিও তিনি প্রকৃতির সামনে দাঁড়িয়েই ছবিগুলো এঁকেছেন, তথাপি ছবিতে তিনি এনেছেন রঙের ভিন্ন মাত্রার গড়ন আর ঘনত্ব। কমলাভ আর নীল রঙের প্রাধিক্যে ভরা সেই ছবিতে পাইনগাছ, দূরের ঘরবাড়ি—ভিন্ন এক জ্যামিতিক ফর্ম নিয়ে বোদ্ধার কাছে হাজির হয়। পূর্বের সব অঙ্কনরীতিকে যে ফর্ম অস্বীকার করতে বদ্ধপরিকর।
আরও একটি ব্যাপার আছে। এখনকার সেইন ভিক্তরির সেই পাহাড়চুড়োয় একটি ধবধবে সাদা ক্রুশ আছে।
‘কার এত সাধ্য আছে বলো দেখি, ওই খাড়া পাহাড়ের ওপর ওঠার? ওখানে গিয়ে এমন এক ভারী ক্রুশ গেঁড়ে আসা তো চাট্টিখানি কথা নয়!’
‘অসাধ্য কিছু নয় দাদা। আমি নিজেই তো গত বছর বন্ধুদের সাথে ওই পাহাড়ে উঠেছিলাম। হাইকিং করতে। প্রায় সারা দিন লেগে যায় চুড়োয় উঠতে। রাতে তাঁবুতে থেকে পরের দিন নেমে এসেছি’—জীবন বলে। ওর দিকে সমীহের দৃষ্টিতে তাকাই। আমি কিন্তু এতটা অভিযাত্রিক মানসিকতার অধিকারী আজও হতে পারিনি।
সেই ফরাসি মেয়েটিকে খেতে দেখে আমাদেরও খিদে চাগিয়ে উঠেছে। তবে আমাদের সাথে ওর মতো কলা-রুটি কিছুই নেই। বাংলাদেশ হলে হয়তো আশপাশের মুদি দোকানে সেসব মিলত। এখানে সে সুযোগ নেই। আমরা তাই পাহাড় থেকে দ্রুত নেমে মূল শহরের দিকে হাঁটতে থাকি। উদ্দেশ্য—পেট ভরে খাওয়া যায়, এমন একটি রেস্তোরাঁ খুঁজে বার করা।
শহরের যেখানটায় দোকানপাট, বাজার—সেখানকার অবস্থা আরও খানিকটা শোচনীয়। এখানকার রেস্তোরাঁগুলো তাদের উচ্ছিষ্ট এনে ফেলে রাখছে ভাগাড়ের পাশে। লোকে নাকে রুমাল দিয়ে পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। তবে শুধু এই ভাগাড়-ই নয়, আরও একটি স্থানে আমাদের নাকে রুমাল দেওয়ার দশা হয়।
রেস্তোরাঁর সন্ধানে আমরা ভুল পথে এসে ঢুকেছিলাম এক কানাগলিতে। দুপাশে বারোক স্থাপত্যরীতিতে তৈরি হলদেটে দালান। মাঝ দিয়ে সরু পথ। এর মাঝে একটি বাড়ির কোণে নাইট্রিক অ্যাসিডের তীব্র গন্ধ। বাড়িটির দুটো দরজায় সাদা কাগজে বিরাট করে কিছু কথা লেখা। ফরাসিতে। ‘আপনার বাড়ির আঙিনায় আমি মূত্রবিয়োগ করব না’—সাগর তর্জমা করে বলে।
অর্থাৎ, আমাদের দেশে যেমন ‘এখানে মুতিবেন না’ জাতীয় আদেশবার্তা লেখা থাকে বিভিন্ন দেয়ালে, সে কথাটাকেই এখানে খানিকটা বিনয় আর নম্রতার মোড়কে ভিন্নভাবে লেখা। যিনি জল বিয়োগ করবেন বলে ভাবছিলেন, তাকে আদেশ না করে বরং তাকে দিয়ে শপথবাক্য পাঠ করিয়ে নেওয়া। গন্ধের প্রাধিক্য দেখে বোঝা যায়, বাড়িওয়ালা নিতান্ত উপায়ান্তর না দেখে এ বার্তাটি ঝুলিয়েছেন। তাতে কাজ হচ্ছে কি না কে জানে!
আমরা খুঁজে-পেতে একটি ভিয়েতনামিজ রেস্তোরাঁয় ঢুকি। ক্যাশিয়ারের পেছনে কচুপাতা রঙের বিশাল বুদ্ধ ভাস্কর্য। আধশোয়া ভঙ্গিতে তিনি ভেতরে আসা সবাইকে দেখছেন। দোকানে খদ্দের নেই। আমরাই সবেধন নীলমণি। মালিক ভেতরে ছিলেন। রান্নাঘরে। আমাদের দেখে দৌড়ে এলেন। আমরা খাবার অর্ডার করামাত্র জীবনের ফোন বাজতে থাকে। কলস্ক্রিনে চোখ বুলিয়ে ও বলে, ‘আপনারা খেতে থাকুন। আমার মিনিট বিশেক লাগবে এই কলটি সারতে।’
জীবন ব্যবসায়ী মানুষ। নানা কাজে ওর হঠাৎ করেই ব্যস্ত হয়ে পড়াটা বিচিত্র কিছু নয়। কে জানে ওর হোটেলে কোনো ঝামেলা হয়েছে কি না। যদিও আধঘণ্টা বাদে ও ফিরে এলে শুনতে পাই ভিন্ন কারণ।
ফোনটি এসেছিল মার্সেইয়ের এক হাসপাতাল থেকে। জীবন ওদের দোভাষী হিসেবে কাজ করে। যেসব ফরাসি না-জানা বাংলাদেশি রোগী হিসেবে আসে, তাদের কথা জীবন তর্জমা করে দেয়। এ কাজে কখনো ওকে সশরীরে যেতে হয়, আবার কখনো ফোনেই কাজ সেরে দেয়।
‘আজ যেহেতু ঘুরতে এসেছি, এ ধরনের ফোন হয়তো না ধরলেও পারতাম। কিন্তু এটা ধরলাম বিশেষ এক কারণে।’—রেস্তোরাঁর লোকটি এসে এর মাঝে জীবনের অর্ডার করা স্যুপের বোলটি রেখে যায়। সেটি খাবার জন্য ন্যাপকিন পেপারে পেঁচিয়ে রাখা চামচ বের করার মুহূর্তে ও যোগ করে, ‘একটা আট বছর বয়সের বাংলাদেশি মেয়ে। অটিস্টিক। ওর বাবা মেয়ের এই দশার জন্য মা-কে সর্বদা দোষারোপ করে। যেন এমন মেয়ে জন্ম দিয়ে মা-ই বিরাট অপরাধ করে ফেলেছে। এমনকি চিকিৎসার প্রতিও তার কোনো আস্থা নেই। কেমন আহাম্মক চিন্তা করুন।’—স্যুপের সাথে জীবন অর্ডার করেছিল হোয়াইট ওয়াইন। সেটিতে চুমুক দিয়ে ও যোগ করে, ‘বলতে পারেন, মেয়ের মা-ই জোর করে অটিজমের চিকিৎসা করিয়ে যাচ্ছে। আমি এ কেসটাতে যেহেতু শুরু থেকেই দোভাষীর কাজ করে যাচ্ছি, তাই ডাক এলে যত কাজই থাকুক, ফেলে রেখে চেষ্টা করি সাহায্য করতে।’
আমাদের চারজনের খাবারের বিল আসে চল্লিশ ইউরোর মতো। টাকা বের করার মুহূর্তে আমাদের থামিয়ে জীবন ওর মানিব্যাগ থেকে কয়েকটি কুপন জাতীয় কাগজ বার করে। সেগুলো সেই ম্যানেজার লোকটিকে দিলে তিনি দুটো কুপন রেখে বাকিগুলো ফেরত দেন। ‘এগুলোকে বলে টিকে রেস্ত। একেকটির ভ্যালু দশ ইউরোর মতো। আমরা হাসপাতালে প্রতিবার দোভাষীর কাজ শেষে পারিশ্রমিকের সাথে এমন কিছু কুপন পাই। ভেবেছিলাম সবগুলো দিয়ে পুরো বিলটা দিয়ে দেব। কিন্তু এই ভদ্রলোক বলছে তিনি দুটোর বেশি নেবেন না’—জীবন আমাদের দিকে তাকিয়ে হতাশ ভঙ্গিতে বলে।
‘হয়তো এই কুপনগুলোর মূল্য দশ ইউরো হলেও রেস্তোরাঁ মালিকরা ভাঙিয়ে পায় আরও কম। সে জন্য ওরা পুরো বিলটাই কুপনে নিতে চান না। এর আগেও কয়েক জায়গায় এমন দেখেছি’—ম্যানেজার বিল বুঝে নিয়ে প্রস্থানের কালে জীবন যোগ করে।
প্রতিটি মফস্বল শহরেই একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক থাকে, যার আশপাশে দিয়ে গড়ে ওঠে হোটেল-রেস্তোরাঁ, মনিহারি দোকান। সেখানে যানের ভেঁপু থাকে, রেস্তোরাঁ থেকে ভেসে আসা ভুরভুরে ঘ্রাণ থাকে। শহরের লোকেরা দরকারি কিছু কিনতে হলে সে সড়কে এসে ভিড় জমায়। কেনার ফাঁকে ফাঁকে খিদে পেলে তেলেভাজা কিংবা কুড়মুড়ে কিছু কিনে পেট ভরায় আর পরিচিতজনের সাথে দেখা হলে দুদণ্ড গপ্পো করে নেয়। এক্স-ও-প্রভস নামক এই মফস্বল শহরটিরও তেমন একটি সড়ক আছে, নাম—‘কুহ মিরা বুহ’। এর দুধারে লাইমগাছের সারি। তাদের পাতার হুটোপুটিতে সূর্য আর এদিকটায় মাথা গলাবার সাহস পায় না। পথটি দিয়ে যান্ত্রিক যান চলছে, তবে সজোরে নয়, ধীরে। মাঝেমধ্যেই কিছু উদাসী পথিক হাতে আইসক্রিমের বাটি নিয়ে পথ পার হচ্ছেন, তাদের সমঝে চলতে গিয়ে গাড়িগুলোকে ব্রেক কষে গতি কমাতে হচ্ছে।
এদের দেখাদেখি আমরাও আইসক্রিমের ক্রিমে ঠোঁট ভেজাই। তারপর ওই একই তাচ্ছিল্য আর অমনোযোগী ভাবটা ফুটিয়ে তুলে পথ পার হই। ‘সেজান যেখানে জন্মেছিলেন, সেটা বোধহয় আশপাশেই হবে’—আইসক্রিমের বাটিতে চামচ ডুবিয়ে জীবনের বয়ান।
সে হতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সে বাড়ি এখন খুঁজে পাই কী করে?
নিরুদ্দেশের মতো এখানে-ওখানে হাঁটতে হাঁটতে আমরা এসে পৌঁছাই সেইন্ট সুভহ ক্যাথেড্রালের সম্মুখে। পেছনে একটি বাগান। সেখানে নুড়ি বেছানো পথ। কেউ নেই সে বাগানে। আছে কিছু পাখি আর পৌরাণিক দেবতা। ওল্ড টেস্টামেন্টের দেবতা। বেলে পাথরের উঁচু বেদিতে তাদের অধিষ্ঠান। নয়াহ কিংবা সুরার দেবতা বাক্কাস সেখানে এলডারগাছের লতানো ঝোপের আড়ালে দাঁড়িয়ে আগত দর্শকের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন।
আমরা সেখানে খানিক সময় হাঁটাহাঁটি করে ফিরে আসি পুরোনো শহরের কোটরে। এখানে প্লাস দ্য থোয়া নামক একটি চত্বর। কোবল স্টোনের কবলে পড়ে এখানকার হলদে মাটি নিজেকে গুটিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছে। চত্বরের মাঝখানটায় ফোয়ারা। পৌরসভার জল-কলের মতো করে সেখান থেকে মন্থরগতিতে জল গড়িয়ে পড়ছে নিচে। আশপাশে কিছু দোকান। একটি আমাদের নজর টানে। সেটি মাটির খেলনা আর তৈজসের দোকান। ভেতরে কেবল একজন ভদ্রমহিলা। গ্রামবাংলায় যেমন ছেলেমেয়েরা অনেক সময়ে কাদামাটি দিয়ে খেলনা তৈজস বানাতে ব্রতী হয়, অনেকটা যেন তেমনই করে এ ভদ্রমহিলাও মাটির ডেলা দিয়ে কিছু একটা বানাচ্ছেন। কৌতূহলী হয়ে তার টেবিলের কাছে যাই। আশপাশে বেশ কিছু রংতুলি। মাটির ডেলাকে নির্দিষ্ট আকার দেওয়ার সূক্ষ্ম ছুরি। আর একটা পাত্রে কিছু জল।
ইনি কি শিল্পী নাকি বিক্রেতা? জবাবটা জানা হলো উনার মুখেই। ‘আমাদের পরিবার তিন পুরুষ ধরে শিল্পী পরিবার। বলতে পারো আমরা কুমোর। সেই প্রপিতামহের হাত ধরে এসব কাজ শেখা। এখনো এই তেষট্টি বছর বয়সে এই দোকান, এই শিল্প ধরে রেখেছি।’—পূর্ণতাপ্রাপ্ত একটি মাটির হাতির পেটের দিকটায় নকশা আঁকার মুহূর্তে তিনি বলেন।
‘আপনি একাই কি এ দোকান চালান?’—একটা মিনিয়েচার চায়ের পেয়ালা হাতে নিয়ে পরখ করার সময়ে আমি জিজ্ঞাসা করি। ‘সে ছাড়া আর উপায় কি? আমার স্বামী পরলোকগত। একটা মেয়ে আছে। সে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। প্যারিসে থাকে। ছেলেটা উকিল। ও থাকে মার্সেইতে। ওরা কেউই পারিবারিক এ পেশায় আসতে চায় না। যতদিন শরীরে কুলোবে, আমি চালাব। তারপর জানি না।’—বাই ফোকাল চশমার ওপর দিকে ফাঁকা জায়গা দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে খানিকটা যেন নৈরাশ্যমিশ্রিত কণ্ঠে তিনি বলেন।
সেজানের বাড়িটি শেষঅবধি খুঁজে না পেলেও তাঁর কিছু বিখ্যাত চিত্রকর্ম রাখা আছে, এমন একটি সংগ্রহশালার সন্ধান পাই সহসাই। নাম—মুসে ঘানে। ঘানে নামক স্থানীয় এক চিত্রশিল্পীর স্মরণে এ চিত্রশালা। আর যে ভবনে এ শিল্পসম্ভার, সেটি এককালে ছিল ক্যাথলিক চ্যাপেল। ভক্তের সংখ্যা ভাটার দিকে যেতে থাকায় সেটির গড়ন কিছুটা এদিক-সেদিক করে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় কয়েকশ মূল্যবান চিত্রকর্ম; যার একটা বড় অংশই এসেছে পিকাসোর এক সুইস বন্ধুর সংগ্রহ থেকে। অনুদান হিসেবে। সেসবের মাঝে যেমন আছে পিকাসো, রেনয়া কিংবা রেম্ব্রানটের চিত্রকর্ম, তেমনি আছে ভূমিপুত্র সেজানের কিছু চিত্র-নমুনা। সেসব নিয়ে বিস্তারিত লিখতে গেলে রাত পেরোবে। তার চেয়ে বরং সেজানের দুটো ছবির কথা দিয়ে শেষ করি।
একটি মাদাম সেজানের প্রতিকৃতি। মাদাম তাঁর ডান দিকে একটু ঘাড় হেলিয়ে আছেন। পরনে বহুমূল্য অলংকার কিংবা পোশাক—কোনোটিই নেই। গির্জার সন্ন্যাসিনীদের মতো কালো গাউন। চুলগুলো মাথায় চুড়ো করে বাঁধা। চোখের মণিকোঠায় ক্লান্তির সুস্পষ্ট ছাপ। ঠোঁটের কোণে হাসি নেই। আছে বিষণ্নতা, রিক্ততা। অথচ ইম্প্রেশনিস্ট ঘরানার ছবিতে কিন্তু আমরা দেখা পাই হাস্যোজ্জ্বল, আনন্দমুখর নারীদের। তাঁদের ত্বক থেকে লালচে দ্যুতি ছড়ায়। ওষ্ঠের প্রান্তভাগে লেগে থাকে অজানা মানুষের দিকে ছুড়ে দেওয়া হাসি। অথচ এ ছবিতে সেসবের কিছুই নেই। ইচ্ছে করেই সেজান সেসব রাখেননি। কারণ, তিনি তো চেয়েইছিলেন ইম্প্রেশনিজমের লক্ষণ-বৃত্ত লঙ্ঘন করে বাইরে পা ফেলতে। আর তাই মাদাম সেজানের মুখায়বে ভেসে ওঠা হতাশা, গ্লানি, বিষাদকে ঢেকে দেওয়ার পরিবর্তে তিনি যেন আরও বেশি করে ফুটিয়ে তুলেছেন ছবির পর্দায়।
দ্বিতীয় যে ছবিটির কথা বলব, সেটি স্নানরতা নারীদের ছবি। একটি পুকুরের ধারে কুঞ্জবন। সেখানে দুটো গাছের ধারে দুদল নারী। বাঁ ধারে তিনজন। আর ডান ধারের তরুতলে আরও তিনজন। যেন দুটো ত্রিভুজ। এদের কারোরই মুখায়ব স্পষ্ট নয়। ঝাপসা। পেছনে নীল আকাশ। আকাশটা যেন ঝুপ করে নেমে এসেছে পুকুরের জলের ধারে। অনেকটা জলরঙে আঁকা ছবির মতো এখানে শিল্পীর তুলি কোনো বস্তুর নির্ধারিত সীমানা আঁকতে চায় না। আর তাই আকাশ আর জল, স্নান থেকে ফেরা নারীর নগ্ন দেহ আর পাইনগাছের কাণ্ড—এরা একে অপরের সাথে সমাপতিত হয়। মিশে যায়।
মুসে ঘানের আর বাদবাকি প্রখ্যাত ছবিগুলো দেখা শেষ হলে সাগর আমাদের পথ দেখিয়ে পেছনের দিকটায় নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে বুঝতে পারি, চিত্রশালার কর্তারা যিশুর কাছ থেকে পুরো চ্যাপেলটিই কেড়ে নেননি। এ ভবনেরই একটি ছোট কোণে তাকে নিজের মতো করে থাকার স্থান করে দিয়েছেন। দুপুরের আলো যেহেতু মরে এসেছে, তাই সেখানে ততক্ষণে জ্বলেছে সন্ধ্যা প্রদীপের আলো। তার চরণে আরও কয়েকটি মোমবাতি সমর্পণ করে আমরা মার্সেই ফিরে যাওয়ার কথা ভাবতে থাকি। v

নির্বাচন ও গণতন্ত্র

এরা কথা বলতে পারে না

চ্যাটজিপিটিতে নতুন সুবিধা

হোয়াটসঅ্যাপের আতঙ্ক ভিডিও প্রতারণা

যাঁরা খেজুর খেতে চান না, তাঁদের জন্য কিছু তথ্য

যে কারণে ড. ইউনূসকে ৫ বছরের জন্য চাচ্ছেন সাধারণ মানুষ

সফল বিনিয়োগ সম্মেলন: অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে পৃথিবী

গ্রীন কার্ডধারীকে এয়ারপোর্টে আটক, নগ্ন করে জিজ্ঞাসাবাদ এবং গ্রীন কার্ড বাতিলের চেষ্টা

হাসনাতের ফেসবুক পোস্টে তোলপাড়

সেনাপ্রধান বুকে পাথরচাপা দিয়ে ড. ইউনূসকে মেনে নিয়েছিলেন: আসিফ
Trending
-
বাংলাদেশ2 weeks ago
যে কারণে ড. ইউনূসকে ৫ বছরের জন্য চাচ্ছেন সাধারণ মানুষ
-
বাংলাদেশ1 week ago
সফল বিনিয়োগ সম্মেলন: অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে পৃথিবী
-
কমিউনিটি সংবাদ1 week ago
নিউইয়র্কে ‘অবৈধ অভিবাসীদের বর্তমান পরিস্থিতি ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনার
-
বাংলাদেশ8 hours ago
বাংলাদেশ-চীন-পাকিস্তান সখ্য: কৌশলগত চ্যালেঞ্জে ভারত