নারী ও পুরুষ
রেজাউদ্দিন স্টালিন
নদীই আবহমান নারীর প্রতীক
আর পুরুষ পর্বত
এখন নারীই পাহাড়
আর প্রবহমান পদ্মা পুরুষ
মেঘ– দীর্ঘ কালো কেশের উপমা
বজ্রবৃষ্টি পেশির হুঙ্কার
এখন দিগন্ত ইন্দ্রজিৎ পুরুষের বাহুর বিক্রম
বজ্রপাত নারীর ভূষণ
মরুভূমি– সীতার রিক্ত হাহাকার
সমুদ্র পুরুষদেব পোসেইডন
এখন মরুবালু পৌরুষের নিত্য পরবাস
সমুদ্র নারীর অপেক্ষার দগ্ধ ইথাকা
নতুন বিন্যাসে পুরুষ বৃক্ষ হোক বুদ্ধ গৌতম
নারী সবুজ পত্রালি
বৃষ্টি পুরুষ থাক
নারী হোক নিরন্তর হাওয়া
কখনও পুরুষ ছিল কর্ণ-সূর্যসন্তান
নারী শুধু কায়া
আজ নারী প্রখর রোদ্দুর
পুরুষ মাথাভর্তি ছায়া
অমৃত প্রাণের ক্ষুধা
আহমদ জামাল জাফরী
ব্ল্যাক আউট ডানার বিমর্ষ পালকে
লুকিয়ে পড়ে এই ব্রোঞ্জের শহর,
অদৃষ্টবাদী মানুষের মতো লুকিয়ে থাকি
নিজের উপবনে;
এই গুঞ্জরণ বৈরাগ্য সঞ্চারী অবেলায়
ছায়া হয়ে আসে আধো-জাগরণে,
পলাতক সন্দিগ্ধ হরিণের মতো
ফিরে আসি জোনাকির সবুজ প্রান্তরে।
মনে রাখি স্তব্ধতার বুকে মিশে যাওয়া প্রেম
বেদনার ডাক, খসে পড়া তারা, নিঃসঙ্গ হৃদয়ের হেম,
শূন্যতার এমন আড়ষ্ট দিনে অনন্ত বধির অন্ধকারে
স্মৃতির ভেতর জলতরঙ্গে কেঁপে ওঠে হাওয়া,
হেমন্তের কাব্য জুড়ে থাকে ফুলের অধিক মায়া-আখ্যান
শূন্যতার মগ্ন জীবন এক অপেক্ষার নাম!
অমৃত প্রাণের ক্ষুধা থেকে যায়
পৃথিবীর রঙিন মাটিতে, মায়াচুর গানে,
আমার বিষণ্ন কবিতাগুলো মহিমান্বিত অন্ধকারে
জ্বলতে থাকে নক্ষত্রের প্রাণে।
শিখা, তোর জন্য
বহ্নি কুসুম
সেবার যখন তোর সাথে দেখা
অন্য মানুষ তখন তুই
জীর্ণ শরীরে লতানো কলমির মতো
টেনে টেনে চলছে জীবন।
আমি তোর কঙ্কালসার হাতটি ধরে
নিয়ে গেলাম কৈশোরে।
সেই রঙধনুর গোধূলি– খুলে দিলাম গল্পের ঝাঁপি।
আকাশছোঁয়া স্বপ্নের ইউনিফর্ম কিশোরী
তখন বুকের ভেতর বিদায় ঘণ্টা
কে যেন বাজিয়ে যাচ্ছে অহর্নিশ।
তোর ছলছল চোখ
আমার অশ্রুর নীরবতা
কোন কথা রেখে, কোন কথা বলি!
যেন সিনেমার দৃশ্যপট পাল্টে
খিলখিল হাসি পড়ল উতরে
প্রলয়ের অশ্রু লুকিয়ে বললি–
আমি মরলে কাঁদবি তুই?
বাঁধ ভেঙে গেছে কখন অশ্রুর
ঠোঁটের কম্পন থিরথির
তুই যে আমার বুকের খাঁচার দীপ্তপাঁজর
আমি মরলে কাঁদিস তুই।
বুকের ভেতর নিঝুম কাঁদে তোর এ কবর।