Connect with us

ইসলাম কী বলে

ইসলামের দৃষ্টিতে স্বামী-স্ত্রীর বয়সের ব্যবধান

Published

on

সংসার জীবনে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পারিক সুসম্পর্ক ও ভালবাসার মর্যাদা ব্যাপক। কুরআন ও হাদিসের বর্ণনাসহ রাসুল (সা.)-এর পবিত্র জীবনে এর অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে। দাম্পত্য জীবনে সাধারণ আচার-আচরণে রয়েছে সাওয়াব, কল্যাণ ও ভালোবাসার হাতছানি। যা হতে পারে দুনিয়ার সব মানুষের জন্য গ্রহণীয় ও অনুকরণীয় আদর্শ।

অসম বিয়ের কারণে বর্তমানে দেশে একটি দম্পতিকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার শেষ নেই। নিজের মেয়ের ১৮ বছরের বান্ধবীকে বিয়ে করে আলোচনার শীর্ষে আছেন ৬০ বছরের এক ব্যক্তি। আসুন দেখে নিই স্বামী-স্ত্রীর বয়সের ব্যবধান নিয়ে ইসলাম কী বলে।

ইসলামে স্বামী-স্ত্রীর বয়সের ভারসাম্য রাখার ইঙ্গিত রয়েছে

বয়স স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আচরণগত স্বভাব ও দৈহিক বিষয়ের প্রভাবক। যদিও এ ক্ষেত্রে কোরআনের সরাসরি নির্দেশনা না থাকলেও ইঙ্গিত আছে। সুরা সাদের ৫২ নং আয়াতে বলা ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং (জান্নাতে) তাদের পাশে থাকবে সমবয়সী আয়তনয়না (জান্নাতি রমণী)।’

অন্যদিকে সুরা ওয়াকিয়ার ৩৫-৩৮ আয়াতে এসেছে, মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি জান্নাতি রমণীদের উত্তমরূপে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর তাদের করেছি চিরকুমারী, সোহাগিনী, সমবয়স্কা।’

সুতরাং, স্বামী-স্ত্রীর বয়স কাছাকাছি হওয়া বাঞ্ছনীয়। বয়সের বেশি ব্যবধানে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। যে কারণে বিবাহে বয়েসের ভারসাম্য প্রয়োজন।

রাসুল (সা.)-এর কন্যা ফাতেমা (রা.)-কে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন আবু বকর (রা.) এবং ওমর (রা.)। খলিফাদ্বয়ের উদ্দেশ্য ছিল—তাঁরা রাসুল (সা.)-এর জামাতা হওয়ার সম্মান অর্জন করবেন। রাসুল (সা.) বলেন, সে

অনেক ছোট। তাঁদের বয়স অনেক বেশি ছিল। রাসুল (সা.) বয়সের কথা বিবেচনা করে তাঁদের আবেদন নাকচ করে দেন।

উল্লেখিত ঘটনা থেকে বোঝা যায়, মেয়ের বয়স কম হলে স্বামীর বয়স অতিরিক্ত বেশি হওয়া উচিত নয়। বয়সের বেশি অসমতায় বিয়ে দেওয়াও ঠিক নয়। (ইত্তিহাফুস সায়েল বিমা লিফাতিমাতা মিনাল মানাকিবি ওয়াল ফাদাইল, পৃষ্ঠা : ৩৪-৩৬)।

উল্লেখ্য, ইসলামে সবচেয়ে আদর্শ বিয়ে হয়েছিল আলী (রা.) ও ফাতেমা (রা.)-এর বিয়ে। সে সময় ফাতেমা (রা.)-এর বয়স ছিল সাড়ে ১৫ বছর। (সিয়ারু আলামিন নুবালা, পৃষ্ঠা : ৪২৩)। তবে ইবনে সাদের মতে, সে সময় তাঁর বয়স ছিল ১৮ বছর। আর আলী (রা.)-এর বয়স ছিল ২১, মতান্তরে ২৫ বছর।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, স্ত্রী যদি স্বামীর চেয়ে বয়সে একটু ছোট হয় তাহলে ভালো। আর নারীর শারীরিক কাঠামো থাকে দুর্বল। ফলে সে আগে বৃদ্ধা হয়ে যায়। যদি দুই-চার বছরের পার্থক্য থাকে তাহলে সমতা আসে। (হুকুকুল জাওজাইন, পৃষ্ঠা ৩৭০)।

তবে শরিয়তে বয়সে তারতম্যময় বিবাহ নিষিদ্ধ নয়। আবার ইসলাম এ বিষয়ে কাউকে উৎসাহও দেয়নি। এ ক্ষেত্রে প্রশস্ততা ও অবাধ স্বাধীনতা আছে। কিন্তু বিষয়টি নির্ভর করে বাস্তবতা, সমাজ, সংস্কৃতির ওপর।

প্রশ্ন উঠতে পারে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর চেয়ে ২৫ বছরের বড় খাদিজা (রা.) এবং ৪৪ বছরের ছোট আয়েশা (রা.)-কে কেন বিয়ে করেছিলেন?

প্রসিদ্ধ মত অনুযায়ী, ইসলাম প্রচার এবং ইসলামের জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর চেয়ে ১৫ বছরের বড় খাদিজা (রা.) কে বিয়ে করেন। বংশমর্যাদা, সহায়-সম্পদ, বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদি সব ক্ষেত্রেই খাদিজা (রা.) ছিলেন সমাজের মধ্যে শীর্ষস্থানীয়া। তাঁর জীবদ্দশায় রাসুল (সা.) অন্য কোনো নারীকে বিবাহ করেননি। (ইবনে হিশাম ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৮৯-১৯০; ফিকহুস সিরাহ, পৃষ্ঠা ৫৯)।

আর রাসুল (সা.) যখন তাঁর সবচেয়ে কম বয়সী স্ত্রী আয়েশা (রা.)-এর সঙ্গে দাম্পত্য সম্পর্ক শুরু করেন, তখন তাঁদের বয়স ছিল যথাক্রমে ৫৩ ও ৯। যদিও বিবাহ আরো আগেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

মহানবী (সা.) আয়েশা (রা.)-কে প্রধানত যেসব কারণে বিয়ে করেছিলেন—

১. আয়েশা (রা.)-এর পিতা আবু বকর (রা.)-এর অতি আগ্রহ ছিল যে তিনি

যেভাবে ঘরের বাইরে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গী হয়ে যাবতীয় খেদমত আঞ্জাম দেন, অনুরূপ ঘরের ভেতরও যেন তাঁর পরিবারের কেউ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর খেদমত করতে পারেন। তাই আবু বকর (রা.) মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ককে আত্মীয়তার সম্পর্কে রূপান্তর করেন।

২. সব ইতিহাসবিদ এ ব্যাপারে একমত যে, আয়েশা (রা.) ছিলেন তৎকালীন আরবের অন্যতম মেধাবী নারী। তাই মহানবী (সা.) তাঁকে বিবাহ করার মাধ্যমে ইসলামের বিধি-বিধান, বিশেষ করে নারীদের একান্ত বিষয়াদি উম্মতকে শিক্ষা দিতে চেয়েছেন।

৩. মহানবী (সা.) তাঁকে বিয়ে করেছেন ওহির নির্দেশ অনুসরণ করে। ওহির মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তাঁকে বিয়ে করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। (বুখারি, হাদিস : ৩৮৯৫)।

৪. শুধু আরবের সংস্কৃতি নয়, গোটা বিশ্বে সেই সময়ে ধর্মীয় নেতা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ—সবার মধ্যে অল্প বয়সী নারীকে বিবাহ করার ব্যাপক প্রচলন ছিল।

Advertisement
Comments
Advertisement

Trending